সোনা কান্তি বড়ুয়া : বৌদ্ধ বাংলার অতীত ও ঐতিহ্যে বাংলাদেশ বিরাজমান। প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) বাল্যকালে যে বাংলা লিপি অধ্যায়ন করেছিলেন তা বাংলা বিশ্বকোষে (১৩শ ভাগ, পৃঃ ৬৫) সগৌরবে বিরাজমান সত্তে¡ ও হিন্দুরাজনীতি বঙ্গাব্দ প্রতিষ্ঠায় বুদ্ধের নাম বাদ দিয়ে হিজরি সাল নিয়ে মিথ্যা বঙ্গাব্দ রচনায় ইতিহাস কলঙ্কিত হয়। বিশ্বের ধর্ম প্রচারকদের মধ্যে একমাত্র গৌতমবুদ্ধ (রাজপুত্র সিদ্ধার্থ) ২৬০০ বছর পূর্বে বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করার গৌরবোজ্জ্বল কাহিনীর সচিত্র খন্ডচিত্রের ইতিহাস ভারতের অজন্তা গুহায় আজ ও বিরাজমান। আজ ও প্রত্মতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত¡, নৃতত্ব ও ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং পালরাজত্বকালে বৌদ্ধদের অবদানে চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ছিল ২৫৬৫ বঙ্গাব্দ (১৪২৮ নয়)।
বাংলার বুক জুড়ে মাটির নীচে ও উপরে বুদ্ধমূর্তি বিরাজমান। প্রাচীন বাংলাদেশে মহাস্থানের পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) বসে গৌতমবুদ্ধ দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা এবং সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন। পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে সশ্রদ্ধ বন্দনা করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা লিখেছিলেন, “ওই নামে ধন্য হলো একদিন তব জন্মভূমি / আর বার সেই নাম / এ দেশের নগরে প্রান্তরে দান কর তুমি।” বুদ্ধভূমি পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ! প্রায় ২৬০০ বছর পূর্বে বাংলাদেশের বগুড়ায় মহাস্থানগড়ে ঐতিহাসিক স্মৃতিখন্ড পবিত্র বুদ্ধ তীর্থভূমি যেখানে গৌতমবুদ্ধ তাঁর অমৃতময় ধর্ম প্রচার করেছিলেন, সম্রাট অশোক সেই মহান পুণ্যভূমিকে স্মরনীয় করার জন্যে বৌদ্ধবিহার (বাসু বিহার) ও বুদ্ধচৈত্য নির্মান করেছিলেন এবং আজ ও সম্রাট অশোকের “প্রাচীন বাংলা ভাষায়” (ব্রাহ্মী লিপিতে) শিলালিপিটা কলকাতা জাদুঘরে বিরাজমান।
ইতিহাস চুরি ও তত্তে¡র ফাঁদে ১৯৩১ সালে মহাস্থানে (বগুড়া) ছয় লাইনের একটি ব্রাহ্মীলিপিতে উৎকীর্ণ সম্রাট অশোকের শিলালিপিকে অস্বীকার করে বিতর্কিত বঙ্গাব্দ (১৪২৯) রচিত হয়েছিল।দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতি বাংলা বর্ণমালা ইতিহাসের সাথে বঙ্গাব্দের কোন মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি অধ্যয়ন করলে আজ ১৪২৯) বঙ্গাব্দ না লিখে বাঙালি জাতির পঞ্জিকায় ২৫৬৬ বঙ্গাব্দ লেখার ইতিহাস জড়িত ছিল। অনেকের মতে, বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং বাংলাদেশে মাটির নীচে অনেক বুদ্ধমূর্তি এবং বৌদ্ধ বিহার পাওয়া গেছে। বৌদ্ধধর্ম, বাংলাভাষা ও বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হয়েছে রাজপুত্র সিদ্ধার্থের (গৌতমবুদ্ধ) বঙ্গলিপি অধ্যয়ন!
ভারতের জাতীয় পতাকা ও এমবেøমে বৌদ্ধধর্মের ধর্মচক্র প্রচারে বিশ্বজয়! অনেকের মতে, বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ! নেপাল সরকার বুদ্ধের সম্মানে বুদ্ধ বিমান (BUDDHA AIR) নামকরণ এবং বুদ্ধের নামে নেপাল মুদ্রা চালু করেছেন। ১৯০৭ সালে নেপালের সাবেক রাজকীয় লাইব্রেরী থেকে মহামহোপধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ‘চর্যাপদ’ আবিস্কারের মাধ্যমে। গৌতমবুদ্ধের পূর্বে সংস্কৃত ভাষার কোন লিপি ছিল না। পরে সম্রাট অশোকের শিলালিপির ভাষা পালিভাষা (ব্রাহ্মী) (প্রায় ৪০টা ভাষায় বর্ণমালার জনক), অনুকরন করে দেবনাগরী লিপি বা বর্ণমালা প্রতিষ্ঠিত হয়। সমস্ত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে লিপির কোন স্থান নেই। কারন স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নন। তাই কলিকাতার বিখ্যাত কেন্দ্রীয (ইম্পেরিয়েল) লাইব্রেরীতে গৌতমবুদ্ধের ছবি বিরাজমান।
বৌদ্ধ জাতকে রামায়ন এবং মহাভারত আবিস্কার! “LUDERS এর লেখা “LEGEND IN THE EPICS AND IN THE PALI JATAKAS“ বই এবং RENATE SÖHNEN – THIEME এর লেখা “BUDDHIST TALES IN THE MAHABHARATA” বই ২টি (Please find it in your Google) প্রকাশে স্বীকার করেছেন হিন্দু ব্রাহ্মণ লেখকগণ বৌদ্ধ জাতককে বদলায়ে মহাভারত বানিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ওঠে ইউরোপের German & ব্রিটেনে। বিখ্যাত ইউরোপীয়ষন সাহিত্যিকগণকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে, তাঁরা বার বার ফিরে এসেছেন বই ২টির কাছে। ক্রমশ তার আঁচ পড়তে থাকে আমেরিকা ইউরোপের অন্যান্য রাজ্যে। ছড়াতে থাকে গোটা বিশ্বেই।
কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” এবং “দুষ্কালের দিবানিশি” গ্রন্থদ্বয়ে দক্ষিন এশিয়ার হিন্দু মুসলমান শাসকগণ কর্তৃক বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের রক্তাক্ত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। বখতিয়ার খিলজির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস!
* ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থ! ১২০১ সালে বখতিয়ার খিলজির হিংসার আগুন সম্রাট ধর্মপালের (৭৭০- ৮১০) প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় (বিহার, ভারত), ধ্বংস করে দিল। রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে! .
* ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী “জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আইএস নাম দিয়ে বাংলাদেশকে অচল করার চেষ্টা হয়েছে। শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলা করা হলো। ক্রমাগতভাবে হামলা হতে থাকলো। এর মধ্যেই হলি আর্টিজানে হামলা হলো। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে আমেরিকা বলেছিল বাংলাদেশ শেষ হয়েছে গেছে। সেখান থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে দেখানো ও প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে (JULY 24, 2022) তাদের সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করছে। বিশ্বব্যাপী ইসলামকে উগ্রবাদ সন্ত্রাসবাদের ধর্ম হিসেবে আখ্যা দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সেটি বাংলাদেশে সম্ভব হয়নি। যেখানে সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি ধর্মপ্রাণ মুসলমান দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের স্থান নেই। এটা বিদেশ থেকে ভাড়া করা জিনিস। এদেশের কৃষক-শ্রমিক, সাধারণ জনগণ, আলেম-ওলামা, মসজিদের ঈমাম, শিক্ষকদের সহযোগিতায় সমর্থনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও বুকে ব্যানার লাগিয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলেছে, আমরা জঙ্গিবাদ চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটিটিসি এবং পরে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধর্মান্ধ রাষ্ট্র নয়, তা সারা পৃথিবীতে প্রমাণ করতে সক্ষম বাংলাদেশ। যে কারণে বাংলাদেশ সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানে পরিণত হয়নি। যদিও উস্কানি নিয়ে বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থটি সব ভাষাতেই অনুবাদ করার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাহলে সবাই বুঝতে পারবে ইসলাম শান্তির ধর্ম; এখানে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান নেই।
১৯২৮ সালে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালির আত্মপরিচয়ের খোঁজে পন্ডিত ও ভাষাতত্ত¡বিদ ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুলাহ (ইংরেজীতে তাঁর পি.এইচ. ডি. থিসিসি ছিল) ‘বুড্ডিষ্ট মিষ্টিক সংস (বা বৌদ্ধ চর্যাপদ)’ শীর্ষক বই লিখেছেন এবং ধর্মের গোড়ামি ত্যাগ করে ঐতিহাসিক উৎস নিরুপণ করতে গিয়ে বলেছেন, “আমরা বলিতে পারি যে বৌদ্ধগানই (চর্যাপদ) যেমন একদিকে গজলের, তেমনি অন্যদিকে বৈষ্ণব পদাবলীর মূল উৎস। বৌদ্ধগানের শূন্যতা বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধা হয়েছে!“ ভাবতেও আশ্চর্য লাগে যে ১৯০৭ সালের আগে বাংলাদেশে বাংলা ভাষার প্রথম গ্রন্থ ‘চর্যাপদ’ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও মামলার বিচার এখনো শুরু না করে বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে , ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে কালেক্ট’র স এডিশন ‘বুদ্ধ’ শীর্ষক বই লিখেছেন! উগ্র ইসলামপন্থী জঙ্গীরা হিন্দুধর্মের ও বৌদ্ধ’ধর্মের অবমাননা’ করে পক্ষপাতদুষ্ট কেন? ধর্মান্ধদের অন্য ধর্মের প্রতি ভয়ঙ্কর বিদ্বেষটাই নর নারী হত্যাযজ্ঞ! মনের ঘরে বসত করে ক ‘জনা? ২৯শে সেপ্টেম্বরের (২০১২ সাল) বাংলাদেশে রামুর বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসযজ্ঞ শোক! প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে সরকার কর্তৃক সমর্থিত এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য হলো সকল সংখ্যালঘুকে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশকে খাঁটি ইসলামী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলা! আজ দেশ ও জগৎ জুড়ে যে গভীরতম অসুক তার জন্যে মানুষের সবর্গ্রাসী লোভ!
১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়, এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ চক্রান্তে (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডিতে “বৌদ্ধগণ” ভারতে হিন্দু রাজনীতির ক্রীতদাসে পরিনত হয়ে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” গ্রন্থে হিন্দু মুসলমান (বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র বখতিয়ার খিলজির) রাজনীতির বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের ভয়াবহ ইতিহাস বর্ণনা “তুর্কী আক্রমন অত্যাসন্ন। তবু সামন্ত-মহাসামন্তদের অত্যাচারের শেষ নেই। সেই অত্যাচার রুখে দাঁড়ায় কখনো অন্ত্যজেরা, কখনো বৌদ্ধেরা (Page 50)!” ধর্মের নামে বৌদ্ধ জনতার জান মাল লুঠ হ’ল।
হলায়ুধ মিশ্র মন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ারের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! হিন্দু মুসলমান রাজনীতির মাফিয়া চক্রে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! আমাদের জাতীয় বিবেকের জবাবদিহিতার শক্তি মরে ধর্ম নামক বিভিন্নভয় ভীতির কবলে। হলায়ুধ মিশ্র মহামন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধবাংলা জয় এবং কারণ দেশ ও ভাষা বাঙালীর কাছে নিরেট বাস্তব, অতিশয় অপরিহার্য। চর্যাপদ পাঠ এবং গবেষণার সময় মনে হবে বাংলা কেবল একটি দেশ নয়, সে একটি সভ্যতা, একটি সংস্কৃতি, একটি অপাপবিদ্ধ জীবনাদর্শ বা জীবন দর্শনের প্রতীক, যার মর্মবাণী হল বিশ্ব মানবতাবাদ “আমার এই ঘর ভাঙিয়াছে যেবা / আমি বাঁধি তার ঘর। / আপন করিতে গুরিয়ে বেড়াই,/ যে মোরে করেছে পর। (কবি জসীম উদ্দীনের লেখা)!
১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ঠ্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ‘শেক শুভোদয়া’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন । তিনি তাঁর রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর গোপন ষড়যন্ত্রে রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজি কে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সা র পুঞ্জীভূত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। এমনকি রাজা লক্ষন সেনের সভাকবি উমাপতি ধর পরে বখতিয়ার খিলজির সভাকবি হলেন কেন? ইহাই বাংলাদেশে রাষ্ঠ্রধর্মের ট্রাজেডি। তুর্কী আক্রমন অত্যাসন্ন। তবু বাংলার হিন্দু সামন্ত-মহাসামন্তদের বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারের শেষ নেই। সেই অত্যাচার রুখে দাঁড়ায় কখনো অন্ত্যজেরা, কখনো বৌদ্ধেরা বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস জুড়ে গৌতমবুদ্ধ বিরাজমান। বিশ্বকোষ (১৩শ ভাগ, পৃষ্ঠা ৬৫) থেকে একটি ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি উল্লেখ করা গেল, “কিয়ৎকাল পরে সিদ্ধার্থ গুরুগৃহে গমনের পূবেই তিনি ব্রাহ্মী- বঙ্গলিপিসহ ৬৪ প্রকার লিপি অবগত ছিলেন।” লেখক মুকুল সাহার মতে, “সমস্ত ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতিতে লিপির (BANGLA or HINDI SCRIPTS) কোন স্থান নেই। ধর্মের ঘৃতে রাজনীতির মধু মিশে বিষক্রিয়া হয় এবং জাতিভেদ প্রথার মাধ্যমে বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি ও রাষ্ট্রশক্তি ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি করে বিধান দিলেন, “স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। “দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ, ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্রæয়ারি ১৯৯২)।” গৌতমবুদ্ধ দক্ষিন এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন।
বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। বিখ্যাত চৈনিক পরিব্রাজক ইউয়েন চোয়াঙ ৬৩৯ খৃষ্ঠাব্দ থেকে ৬৪৫ খৃষ্ঠাব্দের মধ্যে পুন্ড্রবর্ধন (বগুড়া) পরিভ্রমন করেন। তিনি তখন বাংলাদেশে অনেক বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠান ছাড়া ও নগরের (বগুড়া) কাছে এক বিরাট বৌদ্ধ বিহার দর্শন করেন। ধর্মচক্র মূদ্রা বা ভূমিস্পর্শ মূদ্রায় বজ্রসত্ত¡ বা বুদ্ধকে বর্ণনা করার মতো কলম, অথবা এঁকে দেখাবার মতো তুলি আমার নেই। শুধু আমি আমার বিদ্যাবুদ্ধিতে এটুকু বলতে পারি বাংলাদেশের বুদ্ধমূর্তির চিত্রে এমন একটা কিছু আছে যার জন্যে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়। বাব বার ফিরে ফিরে এঁকে দেখলে ও চোখ ক্লান্ত হয় না, পীড়িত হয় না। বাংলাদেশে একাধিক বুদ্ধমূর্তি আছে যা নাকি শুধু বিভিন্ন পদার্থ দিয়ে বানানো নয়, যেন তাঁর মধ্যে হাজার বছর ধরে বন্দী হয়ে আছে শিল্পীর অনুক্ত কথা, একটি অপ্রকাশিত ধ্যানের মন্ত্র। যা খোলা নয়, ঢাকা। বিশ্বসমাজ সুখী হও সুখী হও / এ মৈত্রী ভাবনা। / দিবা নিশি হিত সুখ করিনু প্রার্থনা। ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর (৯৮২ – ১০৫৪) তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল? বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত (730 A. D. to 1130 A. D.) বছর রাজত্ব করেছিলেন! কর্নাটকের রাজা বিজয় সেনের বাংলাদেশ দখল করাতে একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশী বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। দেশ এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গ! সম্রাট অশোকের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বৌদ্ধদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধদেরকে দলিত বানিয়ে হিন্দুধর্মের নামে নীচু জাত করে মনুষ্যত্ব কেড়ে নিল (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)।
মুসলমানরা ধর্মে ইসলামানুরাগী হলেও জাতিতে তারা বৌদ্ধ ছিলেন। মন্ত্রী আজ (২৪ জুলাই) দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সংকলিত ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এন্টি টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজি মোঃ কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার), শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্রান্ড ইমাম শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। ধন্যবাদ জানান এটিইউ’র ডিআইজি মোঃ মনিরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে এন্টি টেররিজ ইউনিট পেশাদারিত্বের সাথে জঙ্গি, চরমপন্থী দমনে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাস বা কারো ওপর আক্রমণের কোন স্থান নেই। অথচ কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
তিনি কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার আহবান জানান।
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রচুর ইসলামিক কনটেন্ট দেখা যায়। যেখানে কোনো সেন্সর নেই, কোন মডারেটর নেই, কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে অজস্র নতুন নতুন তথ্য ঢুকছে। এর কোনটা সঠিক আর কোনটা বেঠিক তা বোঝা মুশকিল। এসবের বিরুদ্ধে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের কথা বলতে হবে।
আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামী চিন্তাবিদরা অজানা কারণে কথা বলতে চান না। যারা ইসলামি চিন্তাবিদ এবং যারা ওয়াজ-মাহফিল করেন তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেন না। আইজিপি বলেন, ইসলামকে অপবাদ দিয়ে বলা হয়, এই ধর্মটাই হচ্ছে জঙ্গি। সারা বিশ্বে গত ৪০ বছর ধরে এ ধরনের প্রচারণা চলছে। ইসলামকে সন্ত্রাসের ধর্ম, রক্তপাতের ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, হলি আর্টিজান হামলার পরে আমাদের দেশের আ্যম্বাসিগুলো পরিবার ছাড়া আ্যম্বাসি ঘোষণা করা হলো। এরপর প্রতি সপ্তাহে ঘোষণা আসতে থাকলো বাংলাদেশে কারা কারা আসতে পারবে না। বিমানের মাধ্যমে তখন অনেক দেশ কার্গো বন্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সকলের সহযোগিতায় আমরা যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা হ্যান্ডেল করতে না পারতাম তাহলে দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যেত।
পুলিশ প্রধান বলেন, অনেকেই বলেছিলো জঙ্গিবাদ থেকে বাংলাদেশ কখনো বেরোতে পারবে না। আল্লাহর রহমত আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সব সময় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে। জঙ্গিবাদের থ্রেট এখনো যায়নি। সারা বিশ্ব থেকে এ থ্রেট না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের দেশেও থ্রেট থাকবে। তিনি বলেন, পুলিশ নীরবে-সরবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
আইজিপি বলেন, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। এজন্য ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে কাউন্টার নেরেটিভ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থের প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অতিরিক্তি আইজি মোঃ কামরুল আহসান বলেন, এন্টি টেররিজম ইউনিট একটি নবগঠিত সংস্থা। জঙ্গিবাদ দমনের পাশাপাশি জঙ্গিবাদ বিরোধী সচেতনামূলক কাজও করে থাকে এ ইউনিট। জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতামূলক কাজের অংশ হিসেবে কোরআন হাদিসের সঠিক তথ্য তুলে ধরে ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ গ্রন্থটি সংকলন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। তিনি গ্রন্থটি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করে এর বহুল প্রচার করার আহবান জানান। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
উল্লেখ্য, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ’ গ্রন্থে ইসলামের পরিচিতি থেকে শুরু করে জিহাদসহ বহুল আলোচিত ও চর্চিত ৪৪টি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। দেশবরেণ্য ১৫ জন আলেম, গবেষক, অধ্যাপক ও খতিব বইটির সম্পাদনা পরিষদে যুক্ত ছিলেন। প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায?িত্ব পালন করেছেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। গ্রন্থটি গ্রন্থনা, রচনা ও সংকলন করেছেন মুফতি সদরুদ্দীন মাকনুন এবং মাওলানা মিরাজ রহমান।
স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। মন বলে, “প্রতিদিন আমি হে জীবন স্বামী / দাঁড়াব তোমার সন্মুখে।” তবু তা যে অছে তা অনুভব করা যায়, উপলব্ধি করা যায় পবিত্র মন ও শ্রদ্ধা নিয়ে উক্ত বুদ্ধমূর্তির সামনে এসে দাঁড়ালে। রাজ সিংহাসনের ক্ষমতার চেয়ে ও শক্তিশালি ক্ষমতা মহাজ্ঞান বা বুদ্ধত্ব। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ তাঁর নিজের মৃত্যুহীন প্রান জনকল্যাণে দান করে প্রমান করেছেন তিনি সর্বত্যাগী; জীবন্ত শক্তিবান মহাজ্ঞানী বিশ্বপ্রেমিক মহাপুরুষ করুনাঘন বুদ্ধ। বাংলার কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘বুদ্ধবরণ’ কবিতায় (বেলা শেষের গান) লিখেছেন,
“বঙ্গে এল বুদ্ধবিভা, কিন্তু সে নাই বেঁচে,
নগর পুন্ড্রবর্ধনও নেই স্বপ্ন হয়ে গেছে;
নেই বালিকা উপাসিকা, আমরা তারই হয়ে,
বরণ করি বুদ্ধবিভা চিত্তপ্রদীপ লয়ে;
চৈত্য দিয়ে যতেœ ঘিরি বুদ্ধবিভূতিরে,
নিরঞ্জনা তীরের স্মৃতি ভাগীরথির তীরে।”
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages)“ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!