অনলাইন ডেস্ক : রাজধানীর বাজারগুলোতে কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলেছে সব ধরনের মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির দামও আকাশ ছোঁয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষরা।
তবে করোনাকাল ও লকডাউন চলাকালে মুরগির দাম কম ছিল। করোনার প্রভাব অনেকটা কাটিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে মুরগির দাম। গেল দেড় মাসে মুরগির দাম ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দর, যা বাজারে পাকিস্তানি কক নামে পরিচিত।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা পর্যন্ত।
শনিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। ব্রয়লার মুরগির চেয়েও দ্রুত গতিতে ছুটছে সোনালি বা পাকিস্তানি কক মুরগির দাম।
গত সপ্তাহে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম বেড়ে ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দুই সপ্তাহ আগে এই মুরগির দাম ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। অর্থাত সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৭০ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১২০ টাকা। আর এক মাস আগে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সোনালি মুরগি। এছাড়া প্রতি কেজি লেয়ারে সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুরের বর্ধিত পল্লবীর জব্বার মোল্লা কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারেও প্রতিদিন কেজি প্রতি ৫ টাকা করে বাড়ছে মুরগির দাম। ফলে অনেক ক্রেতা মুরগি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
মুরগির দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতা শরিফ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, মুরগি খাওয়া বাদ দেব। মুরগির ছাল চামড়া বাদ দিলে আমার মনে হয় ৬০০ টাকা কেজি পড়ে। এর থেকে গরুর মাংস অনেক ভালো।
পাইকারি বিক্রেতাদের দাবি, করোনার পরে হঠাত করেই বেড়েছে বিয়ে-পিকনিকসহ নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। ফলে যে হারে মুরগির চাহিদা বাড়ছে সেইভাবে মুরগির যোগান নেই। শীতে প্রান্তিক খামারিদের মুরগির বাচ্চা মারা গেছে। ফলে বড় খামারিরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বর্ধিত পল্লবীর পাইকারি মুরগির বিক্রেতা ফারুক হোসেন সরাসরি খামার থেকে মুরগি কিনে খুচরা দোকানে সরবরাহ করেন। ২৫/৩০টি দোকানে তিনি মুরগি সরবরাহ করেন। কিন্তু ধীরে ধীরে দামের কারণে মুরগি সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
ফারুক হোসেন বলেন, ছোট খামারে মুরগি সংকট। করোনা ও শীতে মুরগির দাম ছিল না। ফলে অনেক খামারিরা কম মুরগি পালন করেছে। কিন্তু হঠাত করেই করোনা পরবর্তী সময়ে বিয়ে-পিকনিকসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়েছে। ফলে মুরগির চাহিদার তুলনায় যোগান কম। ছোট খামারে মুরগি নেই, যা আছে বড় খামারে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ সূত্র জানায়, মুরগির বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়তি। পোল্ট্রি মুরগির খাবারের অন্যতম উপাদান সয়াবিন মিল। এটা ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করা হয়। সয়াবিন মিল পোল্ট্রি খাদ্যে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ থাকে। এটা কিছুদিন আগে ৩২ থেকে ৩৩ টাকা কেজি দরে আমদানি মূল্য পড়তো। অথচ এখন বিদেশ থেকে খামারে পৌঁছানো পর্যন্ত ৪৬ টাকা ৫০ পয়সা দাম পড়ে। পোল্ট্রি মুরগির খাবার জাহাজীকরণের দাম বেড়েছে। জাহাজ কন্টেইনার ঘাটতি দেখা গেছে। ফলে খাদ্যের দাম বেড়েছে। পোল্ট্রি মুরগির খাবার প্রতি কেজি ১২ থেকে বেড়ে ৩৫-৪০ টাকা, পোল্ট্রি খাদ্য তৈরির উপকরণ ভুট্টা ১২ থেকে ২৭ টাকা এবং মিটবোন মিল ৩০ থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুরগরি ৭৮ শতাংশ যোগান আসে গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি থেকে। শীতে ফ্লুর কারণে মুরগির উত্পাদন কমার পাশাপাশি অনেক মুরগির বাচ্চা মারা গেছে। এখন বাচ্চার দামের উচ্চ মূল্য। পোল্ট্রি মুরগির বাচ্চার স্বাভাবিক দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে থাকার কথা। বর্তমানে বাচ্চা মুরগির দাম ৫০ টাকা। সোনালি মুরগির বাচ্চার দাম ২০ টাকার নিচে থাকার কথা থাকলেও এখন বেড়ে হয়েছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা।
প্রতি সপ্তাহে দেশে মুরগির বাচ্চার চাহিদা ২ কোটি ৪০ লাখ। এর মধ্যে দেড় কোটি ব্রয়লার, ৮০ লাখ ফাওমি সোনালি ও ৫ লাখ হাইব্রিড সোনালি মুরগির বাচ্চা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের মহাসচিব খন্দকার মহসীন বাংলানিউজকে বলেন, শীতের সময় নানা ধরনের ফ্লুর প্রাদুর্ভাব থাকে। করোনার সময় মুরগির দামও কম ছিল। ফলে ঝুঁকি নিয়ে খামারিরা মুরগি বেশি উত্পাদন করেননি। করোনা পরবর্তী সময়ে হঠাত করেই মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম বেড়েছে। শুধু দেশি বাজারে নয়, আন্তার্জাতিক বাজারে সয়াবিন মিলের দাম বেড়েছে, যা মুরগির অন্যতম খাদ্য উপকরণ। করোনা পরবর্তী সময়ে আবার হঠাত করেই পিকনিক-বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের চাপ বাড়ছে। রমজানের ঈদের আগ মুহূর্ত ছাড়া দাম কমার কোনো কারণ দেখছি না।