সোনা কান্তি বড়ুয়া : আমেরিকার মহামানবের সাগরতীরে বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস! “আমেরিকান এরিজোনা গেজেট” শীর্ষক জনপ্রিয় পত্রিকার মতে, (April 5, 1909) পূজনীয় চীনা বৌদ্ধভিক্ষুসংঘ্ এরিজোনার আদিবাসী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যেই প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ গুহা ও বৌদ্ধমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাহা আজও বিরাজমান। ১৯০৯ সালে, অঢ়ৎরষ ৫ উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে এরিজোনার গেজেট পত্রিকায় “Before Colombus, Buddhist Monks discovered America” প্রকাশিত হবার পরও আমরা কেহ উক্ত প্রসঙ্গ নিয়ে মাথা ঘামাইনি? আজ কেন আবার ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আমাকে “সত্য মেব জয়তে” উপদেশ বাক্যটি নিয়ে (আমি) পাঠকদের দরবারে হাজির হয়েছি। বৌদ্ধভিক্ষুগণই আমেরিকা আবিস্কার করেছিলেন! কলম্বাসের পূর্বে এরিজোনার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দিরে আমেরিকা আবিস্কারের অজানা ইতিহাস!

বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল) নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ২০২১ সালে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন! ইতিপূর্বে নাস্তিক হিসেবে পরিচিত মার্ক জাকারবার্গ স¤প্রতি এক পোস্টে জানিয়েছেন, তার জীবনে ধর্মের প্রভাব পড়ছে, এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক পোস্ট।
বিগত ১৮ই অক্টোবর থেকে ২০শে অক্টোবর (২০২২) থাইল্যান্ডের মহামুক‚ট বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটি সেন্টার অঙ্গনে সম্মিলিত বিশ্ব বৌদ্ধজাতি সংগঠনের শুভ বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘের বাহাত্তরতম (৭২তম) জন্মবার্ষিকী উদযাপন মহষসমারোহে সমাপ্ত হয়েছে! থাইল্যান্ড, নেপাল, চীন, জাপান, কোরিয়া, BHUTAN তিব্বত, শ্রীলংকা, ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, মায়ানমার কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া. ইউরোপ, আমেরিকা এবং কানাডিয়ান বৌদ্ধ বিশ্ব বৌদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘ এবং বিশ্ব বৌদ্ধ জনতার সহযোগীতায় সাংস্কৃতিক (United Buddhist Community Temples) অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধের জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলীর সচিত্র প্রদর্শণী অনুস্থিত হয়েছে। মহামান্য থাইল্যান্ডের রাজা ব্জ্রলঙ্কন (His Majesty King Vajiralongkorn) থাইল্যান্ডে বিশ্ববৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদ্বোধন করেছেন। এবং উক্ত অনুষ্ঠানে পঞ্চশীল প্রদান করেন থাইল্যান্ডের মহামান্য সঙ্ঘ রাজ। অনুষ্ঠানে মাননীয় থাই সংঘরাজ, উপসংঘরাজবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রী, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ থাকার প্রয়াসে ৩৭টি রাষ্ট্রের সম্মানিত বৌদ্ধ সদস্যবৃন্দ ৫৫২ জন বৌদ্ধ জাতির এই মহান সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন!

হিন্দুরাজনীতি সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করল কেন? ভারতে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণে বিশ্বমানবতায় উদ্ভাসিত হাজার হাজার মানুষ! শুক্লা দশমীর আলোর ঝর্ণাধারায় আনন্দবাজার পত্রিকার সংবাদ, “৫ অক্টোবর, বুধবার দিল্লির অম্বেডকর ভবনে গণ ধর্মান্তরণ ছিল। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। সেখানকার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ধর্মান্তরণে উপস্থিত আপের মন্ত্রী। ধর্মান্তরণের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে হিন্দুত্ব-বিরোধী শপথ নিয়েছেন আম আদমি পার্টির এক মন্ত্রী! অভিযোগ, রাজেন্দ্র পাল গৌতম প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আমি হিন্দু দেব-দেবীর পুজো করব না।’’ বিষয়টি নিয়ে আপের দিকে আঙুল তুলেছে বিজেপি। অভিযোগ করেছে, ‘হিন্দুত্ব-বিরোধী’ প্রচার চালাচ্ছেন কেজরীওয়াল। রাজেন্দ্র সব অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, বিজেপি আসলে ‘দেশ-বিরোধী, (৫ অক্টোবর, ২০২২)!”

বৌদ্ধরা কিভাবে নমঃশূদ্র হলো? ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন (In 1235 A. D.) যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বৌদ্ধরা তা মানলো না। শুরু হলো রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার। অকথিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, বৌদ্ধরা জলে জঙ্গলে (পূর্ববঙ্গে) পালালো। ওদের পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদ চরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। ব্রাহ্মন ও উচ্চবর্ণের ভারতে রক্তাক্ত দলিত বিদ্বেষ কেন? ব্রাহ্মন ও উচ্চবর্ণের হিন্দু যেই মানব, বৌদ্ধ দলিত, রোহিঙ্গা মুসলমান ও সেই মানব (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)! ইতিহাসের আলোকে ধর্মীয় নিপীড়ন প্রতিরোধ প্রসঙ্গ প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি!

অতীশ দীপংকরের বৌদ্ধ বাংলায় মুসলমান দুর্বৃত্তপনা কেন? ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান এবং ইন্দোনেশিয়া এক সময় বৌদ্ধপ্রধান দেশ ছিলো! ইসলামি রাজনীতি বৌদ্ধধর্ম এবং বৌদ্ধ প্রধান দেশকে অজগরের মতো গিলে ফেলেছে! বাংলাদেশ মুসলমান রাষ্ট্র হয়ে বিক্রমপূর মুন্সীগঞ্জ হয়েছে! বিক্রমপূরের বজ্রযোগীনির রাজপুত্র ছিলেন অতীশ দীপংকর। বাংলাদেশে মুসলমান রাজনীতি বিক্রমপূরকে ধর্মান্ধ মুসলমান বানিয়ে মুন্সীগঞ্জ করা হয়েছে! বাংলাদেশ রাষ্ট্র অমুসলমানগণকে যেভাবে নিপীড়ন চালাচ্ছে তা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি! আজ বাংলাদেশে মুন্সীগঞ্জে অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থানে “অতীশ দীপংকর বিশ্ববিদ্যালয়” এবং আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ তীর্থস্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পাল সাম্রজ্য আমলের প্রখ্যাত পণ্ডিত ছিলেন! ধর্মান্ধ মুসলমান রাজনীতির মাফিয়া চক্রে বিক্রমপূর মুন্সীগঞ্জ হলো! বৌদ্ধ পালরাজাগণ বাংলাদেশে চারশত বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং ১০৪১ সালে অতীশ দীপংকর তিব্বতে যাবার পর বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম রাতারাতি কোথায় হারিয়ে গেল?

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জাতীয় পরিচিতি একেবারে বিলুপ্ত করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম সামরিকায়ন জোরদার করেছে! বিগত ২৩ বছরেও পার্বত্য সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, সমস্যা আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে। মৌলবাদী ও জুম্ম বিদ্বেষী কিছু ইসলামী গোষ্ঠী কর্তৃক সুপরিকল্পিতভাবে জুম্মদেরকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার কার্যক্রম জোরদার হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে সরকার পূর্ববর্তী শাসকদের মতো দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বিগত ২৩ বছরেও পার্বত্য সমস্যার কাক্সিক্ষত সমাধান হওয়া তো দূরের কথা, সমস্যা আরও জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে জাতির পিতৃ হত্যা ও বাহাত্তরের সংবিধান হত্যা মহাপাপ! মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস রাজাকার ও জামায়াতে ইসলামী! এবং বাংলাদেশের সামরিক প্রশাসকগন রাষ্ট্রদ্রোহী ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামরিক প্রশাসকগণ এবং উগ্র জামায়াতে ইসলামী দলটির এতো ভয়ঙ্কর ষড়য়ন্ত্র ছিল কেন? রামু জামায়াত ধর্মান্ধগণের ফেসবুকে ভুয়া আইডিতে বৌদ্ধ পল্লী ধ্বংস! বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ১০ বছরে ও সংবিধান প্রজ্বলিত ধ্রæবতারা! হিংসা মানুষজাতির সর্বনাশের পথ। বাংলাদেশে বৌদ্ধগণকে নিশ্চিহ্ন করতে ২৯শে সেপ্টেম্বর (২০১২ সাল) বাংলাদেশে মৌলবাদের তান্ডবে রামুর বৌদ্ধ বিহার ধ্বংস যজ্ঞের একটি শোকাবহ দিন ট্রæথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন ডে! ধর্মান্ধদের নর নারী হত্যালীলার বীভৎস উল্লাস মানবজাতির ধর্ম নয়! রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ১০ বছর অতিবাহিত হলেও মামলার বিচার এখনো শুরু না করে বৌদ্ধধর্মকে খারাপ সাব্যস্ত করে, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে কালেক্ট’র স এডিশন ‘বুদ্ধ ’ শীর্ষক বই লিখেছেন! অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মতে “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।” অহিংসা মানব জাতির পরম আশ্রয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কোরআন অবমাননার অভিযোগে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে কয়েকশ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহারসহ ১২টি বিহার ও ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার ১০ বছরেও ১৮টি মামলার একটি মামলার ও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় মানববন্ধনে বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, যারা সা¤প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটিয়েছিল, তারা দুর্বৃত্ত। আমরা তাদের শাস্তি চাই। “আজকের বকওয়াস রাজনীতির কারনে মুসলমান না হলে কি বাংলাদেশের আদর্শবান নাগরিক হওয়া যায় না? ধর্মের নামে অত্যাচার ও হিন্দু বৌদ্ধ জনপদে মৌলবাদী তান্ডব দাহন কেন? ইতিহাস কিন্তু বড় নির্মম! জামাত মৌলবাদীরা মুসলিম হয়ে সে নিজ ধর্ম নিয়ে এতো ধোকা বাজির সত্য কখনো চাপা থাকে না! জনগণের ক্ষমতায়নের গণতন্ত্র বাস্তবে মুসলমান ধর্মান্ধ শাসকশ্রেণির কর্তৃত্ববাদে রূপ নিয়েছে। সমাজতন্ত্রকে মুক্তবাজারি পুঁজিবাদী জোয়ারে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

১৮৭৫ সালে আমেরিকার বৌদ্ধ আন্দোলনের অগ্রদূত মহাত্মা কর্নেল হেনরি ষ্টিল অলকট থিউসোফিক্যাল সোসাইটির মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় (সিংহল) গিয়ে মুখোমুখি বৌদ্ধধর্মের পক্ষ নিয়ে খ্রীষ্ঠান পন্ডিতদের সাথে তর্ক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তিান বিশ্ববৌদ্ধ ফেলোশিপের পতাকা এবং আন্তর্জাতিক বৌদ্ধধর্মের রত্নমালা (ক্যাতেসিজম) সম্পাদনা করেছিলেন। তাঁরই অনুপ্রেরনায় শ্রীলঙ্কার অনাগারিক ধর্মপাল তাঁর পুরানো ডেভিড নাম ত্যাগ করে ধর্মপাল নামে পরিচিতি হয়েছিলেন।

১৮৭৯ সালে লন্ডন টাইম পত্রিকার সম্পাদক বিখ্যাত” লাইট অব এশিয়া শীর্ষক গৌতমবুদ্ধের জীবনী ইংরেজি ভাষায় কবিতা রচনা করে জগৎ জুড়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। স্যর এডউইন আর্নল্ডের লেখা দ্য লাইট অব এশিয়া’ এবং তাঁর এই বইটিতে শীর্ষক গৌতমবুদ্ধের দর্শনের অতি বিশ্বস্ত প্রতিফলন ঘটেছে! কিন্তু এটা সত্য যে মহাত্মা গাঁধী, জওহরলাল নেহরু, বাবাসাহেব আম্বেডকরের মতো ভারতীয় নেতাদের জীবনে তা এক সুরের মতো বয়ে গিয়েছে। আবার অন্য দিকে ভারত বা এশিয়ার বাইরেও আন্তর্জাতিক স্তরে গৌতম বুদ্ধকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লেখা দ্য লাইট অব এশিয়া ’-র অবদানকে আজ অস্বীকার করা অসম্ভব। পাঁচ জন নোবেলজয়ী— রুডইয়ার্ড কিপলিং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ডব্লিউ বি ইয়েটস, ইভান বুনিন, টিএস এলিয়ট। বাকি ছ’জনের মধ্যে রয়েছেন লিয়ো টলস্টয়, ডি এইচ লরেন্স, হর্হে লুই বর্হেস, হেরম্যান মেলভিল-এর মতো নাম! বাঙালি থেকে ব্রিটিশ, রুশ, মার্কিন সাহিত্যিকরা মুগ্ধ এই জীবন-কবিতায়। ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে মহামতি সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম POLITICAL হিন্দুধর্ম! কোন হিন্দু মন্দিরে সকাল বিকাল বুদ্ধ পূজা না করে ও গৌতমবুদ্ধ হিন্দু রাজনীতির অবতার হ’ল!

১৮৭৯ সালে লন্ডন টাইম পত্রিকার সম্পাদক বিখ্যাত ’লাইট অব এশিয়া’ শীর্ষক গৌতমবুদ্ধের জীবনী ইংরেজি ভাষায় কবিতা রচনা করে জগৎ জুড়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। বিভিন্নদেশের বৌদ্ধ বিহারে ইসলামি জঙ্গীদের তান্ডব দাহন হলে ও ইউরোপ এবং আমেরিকায় বাংলাদেশের প্রাচীন পালরাজত্ব ও বঙ্গরত্ন অতীশ দীপঙ্কেরের বৌদ্ধধমের্র বিপুল বিজয়। বৌদ্ধধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্যে ১৮৯৪ সালে আমেরিকান বৌদ্ধ লেখক পল সারাস ’দি গসপেল অব বুড্ডিজম’ রচনা করেছিলেন। অনাগরিক ধর্মপাল সহ চীন, শ্রীলঙ্কা এবং জাপানী বৌদ্ধদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমেরিকা এবং কানাডায় অনেক মন্দির স্থাপিত হয়েছিল। আমেরিকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্যে ১৮৯৭ সালে লেখক পল সারাস জাপানী জেন (ধ্যান) বৌদ্ধধর্মের মহাপন্ডিত মহামহোপাধ্যায় ডি টি সুজুকিকে আমেরিকায় আসার নিমন্ত্রন করলেন। ডি টি সুজুকির বৌদ্ধ ধ্যানের বক্তৃতামালা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় সমুহ এবং বুদ্ধিজীবি জগতে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী স¤প্রতি এক সংক্ষিপ্ত পোস্টে বলেন, “প্রিসিলা, ম্যাক্স আর আমার পক্ষ থেকে শুভ বড়দিন এবং শুভ হানুক্কাহ-র শুভেচ্ছা।” তার এক ভক্ত ওই পোস্টে তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলে মন্তব্য করেন, “আপনি কি একজন নাস্তিক নন?” নাস্তিকতা থেকে সরে বৌদ্ধ ধর্মের! জাকারবার্গ এই মন্তব্যে সাড়া দিয়ে লেখেন, “না। আমি ইহুদি হিসেবে বেড়ে উঠেছিলাম আর তারপর আমি এমন কিছু সময় কাটিয়েছি, যেখানে অনেক কিছু প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আমি বিশ্বাস করি ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” জাকারবার্গের স্ত্রী বৌদ্ধ ধর্মালম্বী আর জাকারবার্গও একই ধর্মের অনুসারী হতে যাচ্ছেন। ২০১৫ সালে চীন সফরে জাকারবার্গ দেশটির শিয়ানে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড গুজ প্যাগোডা-তে এক প্রার্থনাতেও অংশ নেন। “প্রিসিলা বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী এবং সে আমাকে তার সঙ্গে প্রার্থনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। বৌদ্ধধর্ম একটি আশ্চর্যজনক ধর্ম আর দর্শন। সময়ের সঙ্গে আমি এই সম্পর্কে আরও জেনে চলেছি। আমি আশা করছি, এই ধর্মের মূল বিশ্বাস সম্পর্কে খুব দ্রæত আমি বুঝতে পারব”-প্যাগোডার সামনে হাঁটু গেড়ে বসা এক ছবি সংবলিত পোস্টে তিনি এই কথা লেখেন।

ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, হল্যান্ড, জার্মানি এবং আমেরিকার প্রাচ্যবিদ্যায় আগ্রহী পণ্ডিতদের সমন্বয়ে ও সহায়তায় ‘আদি ইংলিশ টেক্সট সোসাইটি’র {The Early English Text Society (EETS)} আদলে ব্রিটেনের থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পালি টেক্সট সোসাইটি {Pali Text Society} এবং এটির উদ্দেশ্য হলো পালি পুস্তক সমূহের অনুবাদ, প্রচার ও প্রসার।

ব্রিটেনের ম্যাজিস্ট্রেট থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ (১৮৪৩-১৯২২) বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করে ইংরেজী ভাষায় পালি বৌদ্ধ দর্শন চর্চা, অনুবাদ ও লণ্ডনস্থ “পালি টেক্সট সোসাইটি” প্রতিষ্ঠার জন্য অতি বিখ্যাত হয়ে আছেন। পালি – ইংরেজী সাহিত্যে এক অনন্য অবদানকারী দিক্পাল থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ {Thomas William Rhys Davids}(১৮৪৩-১৯২২) তিনি ইংল্যাণ্ডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এসেক্স কাউন্টির কোলচেস্টার- এ ১২ মে ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন থমাস উইলিয়ম ডেভিডস্ ছিলেন একজন বিখ্যাত পাদ্রী ও মাতা ছিলেন সানডে স্কুলের শিক্ষিকা। মি. রিস্ ডেভিডস্ ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেবার লক্ষ্যে ব্রেসলউ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা অধ্যাপক এ.এফ. স্টেনল্জের অধীনে ‘সংস্কৃত’-এ পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি অধুনা শ্রীলঙ্কায় (তদানীন্তন ‘সিলোন’) ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হন। থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ ছিলেন পালি শাস্ত্রের মহাপণ্ডিত এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত পালি টেক্সট সোসাইটির মাধ্যমে ত্রিপিটকের প্রায় সমগ্র পুস্তকাবলী অনূদিত হয়েছে (নিপুন বড়ুয়া)!

১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের থমাস্ উইলিয়ম রিস্ ডেভিডস্ Danish Scholar ফৌসবল সম্পাদিত জাতক প্রথম খণ্ডের ইংরেজী অনুবাদ করেন “বুদ্ধিস্ট বার্থ স্টোরিজ” {Buddhist Birth Stories} নামে এবং পরবর্তীতে অধ্যাপক ম্যাক্স মূলার কৃত “সেক্রেড বুকস্ অব দ্য ইস্ট” {Sacred Books of the East}এর অন্তর্গত দ্বিতীয় ভাগ, যেটি বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ক, সেটি হতে সূত্র পিটকের নির্বাচিত অংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। ১৮৮১ সালে তিনি মর্যাদাপূর্ণ হিলবার্ট লেকচারস্ দেয়ার জন্য আমন্ত্রিত হন। তাঁর লেকচারের বিষয় ছিলো- “দ্য অরিজিন এন্ড গ্রোথ অব রিলিজয়ন এজ ইলাউসট্রাটেড বাই সাম পয়েন্টস্ ইন দ্য হিস্টোরি অব ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজম” {The origin and Growth of Religion as illustrated by some points in the History of Indian Buddhism}।

পালি টেক্সট সোসাইটি প্রতিষ্ঠা বিষয়ে তিনি বলেন- “আদি বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র বইগুলো আমাদের জন্য বিশ্বের ইতিহাসের একমাত্র ধর্মীয় আন্দোলনের ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণ করেছে যেগুলো খ্রিস্টধর্মের সাথে ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। ২০ ১২ সালে ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী মহামান্য জর্জ অসবোর্ন রাজনীতির রাজসিংহাসন ত্যাগ করে বেীদ্ধ ভিক্ষু হয়েছেন এবং নেপালের গভীর জঙ্গলে ধ্যান প্রশিক্ষণ বৌদ্ধ মন্দিরে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ উক্ত সংবাদ পাঠে পুলকিত এবং আনন্দ বোধ করছেন যে, বাংলাদেশের পাহাড়পুরের মতো কানাডায় ১,৭০০ একরের বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার নির্মিত হচ্ছে অহিংসা পরম ধর্ম মানব সমাজে প্রচারের জন্যে।

ফ্রান্সে ফরাসী নাগরিক বেীদ্ধ ভিক্ষু হয়েছেন (উপসম্প্দা গ্রহন)! বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত ফরাসী নাগরিক ডেভিড জুলিয়ান গত ১৮ নভেম্বর (২০২১) রবিবার ফ্রান্সের সেইন্ট ডেনিসস্থ কুশলায়ন বুড্ডিষ্ট মেডিটেশন সেন্টারে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথমে প্রব্রজ্যা এবং পরে উপসম্প্দা গ্রহন করেন (সংবাদ দাতা রাসেল বড়ুয়া)। তার নামকরন করা হয় মেত্তা জ্যোতিঃ ভিক্ষু। বিশেষ সুত্রে জানা যায় তার পরিবার ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি বিশেষ অনুরাগী হয়ে ওঠেন। তার সর্বশেষ প্রতিফলন এ শুভ উপস¤প্রদা। এই পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে পন্ডিতপ্রবর ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথের, ভদন্ত জ্যোতিঃসার থের সহ প্রাজ্ঞ ভিক্ষু সংঘ, ডেভিড জুলিয়ানের মা-বাবা, বোন এবং এই মন্দিরের দায়ক-দায়িকারা উপস্থিত ছিলেন।

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানব সভ্যতায় বৌদ্ধধর্মের ধ্যান পদ্ধতির দুর্লভ অবদান নিয়ে টাইম ম্যাগাজিন চলমান আমেরিকান সমাজে বৌদ্ধদর্শনের মূল্যায়ণ করেছেন। প্রসঙ্গত: বাঙালি জাতির প্রথম গ্রন্থ চর্য়াপদের বিষয়বস্তু ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং বিশ্বমানবতাবাদী সর্বকালের বৌদ্ধ দর্শন। একুশে ভাষা আন্দোলনের আলোকে বাংলা ভাষা এবং একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে “কত প্রান হল বলিদান / লেখা আছে অশ্রুজলে।” ঢাকার আমেরিকা দূতাবাস আমার লেখা ইংরেজি বই ”সত্যের সন্ধানে (IN QUEST OF TRUTH) শীর্ষক বৌদ্ধ উপন্যাস পাঠে সন্তুষ্ঠ হয়ে বিগত ১২ মে ১৯৮৯ সালে (আমাকে) আমেরিকা ভ্রমনের সরকারি নিমন্ত্রন পত্র আমার ঠিকানায় প্রেরন করেছিলেন। ১৯৮৭ সালে চীন ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী সমিতি আমার লেখা ইংরেজি বই আনবিক যুগে বৌদ্ধ চিন্তা ও ধ্যান প্রসঙ্গ (Buddhist thought & Meditation in the Nuclear Age) শীর্ষক বৌদ্ধ গ্রন্থের ত্রিশ হাজার কপি আমেরিকার লাইব্রেরি অব কংগ্রেসসহ বিশ্বজুড়ে পরিবেশন করেছেন।

টাইম ম্যাগাজিনে সর্ব প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ছিল : “আমেরিকানদের সাথে বৌদ্ধধর্মের আন্তরিক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক” (আমেরিকানস ফ্যাসসিনেশান উইথ বুড্ডিজম) এবং মহামান্য দালাইলামর নিকট সশ্রদ্ধ চিত্তে আমেরিকান স্ত্রী ও পুরুষ দলে দলে বৌদ্ধধর্ম গ্রহন করেছেন (টাইম, ১৩ অক্টোবর ১৯৯৭ সাল)। American সরকার ও জনতা নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বৌদ্ধভিক্ষু দালাইলামাকে সশ্রদ্ধার সাথে আমেরি কান সরকারের দুর্লভ সুবর্ণ পুরস্কার প্রদান করেছেন।

“তিব্বতে সাত বছর” শীর্ষক সিনেমায় অভিনয় করেছেন হলিউডের বিখ্যাত নায়ক ব্রাড পিট। আন্তরীকভাবে হলিউডের বিভিন্ন কোম্পানি তিব্বত এবং বৌদ্ধসংস্কৃতিকে নিয়ে সিনেমার গল্প ও প্লট লেখা শুরু করেছেন। ১৯৮৭ সালে (১৯ থেকে ২৬ নভেম্বর) আমেরিকার লজ এ্যানজেলস মহা নগরীতে বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব সঙ্ঘের ষোড়শ মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আমেরিকার বৌদ্ধ সংঘটনসমূহকে বৌদ্ধ শাসন হিতকর কর্মে উজ্জীবিত করেছে।

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE, (516 Pages) সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি