ইউএনবি : বিবিসির ১০০ নারীর তালিকায় এবার বাংলাদেশের দুই নারী স্থান পেয়েছেন। তার মধ্যে কক্সবাজারের রামুর মেয়ে রিমা আক্তার রিমু একজন।
বাবা কৃষক, মা গৃহিনী। গ্রামে পড়ালেখার তেমন ছোঁয়া লাগেনি। পরিবার, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাকে পেছনে ফেলে নিজেকে আলাদা করে গড়ে তুলেছেন রিমা। তার প্রেরণা শেখ হাসিনা আর পিছিয়ে থাকা থেকে সামনে আসার সেতু হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা জাগো নারী ফাউন্ডেশন।
রিমা শুধু নিজেকে তৈরি করেননি। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের শিক্ষায় দূত হিসেবে কাজ করছেন। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক এবং ‘কক্সবাজার ইয়াং উইমেন লিডারস ফর পিস’র সদস্য। এ কর্মসূচি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক অফ উইমেন পিসবিল্ডা পিসবিল্ডার্স এর অংশ। গোলযোগপূর্ণ দেশগুলো থেকে আসা নারীদের ক্ষমতায়ন করে তাদেরকে নেতৃত্বে নিয়ে আসা এবং শান্তির দূত করে তোলাই পিসবিল্ডার্স নেটওয়ার্কের লক্ষ্য।
রিমা রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় মানবিক কাজ করেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য লিঙ্গ ও বয়স ভেদে যথপোযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী ও মেয়ে শিশুদেরকে শিক্ষার আওতায় আনতেও ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
এছাড়া, বেতার সম্প্রচার এবং থিয়েটারের মাধ্যমে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করেছেন রিমা।
রিমার ‘জাগো নারী ফাউন্ডেশন’ এর সহকর্মীরা জানায়, তিন বছর ধরে রিমা ‘জাগো নারী ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক পরিচালিত ইয়াং উইমেন লিডার্স ফর পিস এর কক্সবাজারের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সব সময়।
স্থানীয় সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দেয়ার পাশপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা শুরুর পর ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা দানে কাজ শুরু করেন রিমা সুলতানা রিমু। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এই মহত্ ও সাহসী কাজে জড়িত রয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দান ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বাল্য বিয়ে রোধ, যৌতুক, সহিংসতাসহ সামাজিক নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন আলোকিত তরুণী রিমা।এসব সামাজিক নানা কাজের মধ্যে শিক্ষকতা দিয়ে তিনি বিশ্ব জয় করলেন।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে তরুণী রিমা বলেন, `আমি বাংলাদেশে লিঙ্গ সমতা আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অধিকার আদায়ের জন্য নারীর শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি। কোনো সম্মাননা পাবো- এই আশাতে নয়, সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আমি সেবামূলক কাজে জড়িত হয়েছি।
‘আমার এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এতো বড়ো সম্মাননা পাবো কখনো ভাবিনি। এই সম্মাননা পেয়ে আমি নিজেকে গর্বিত এবং ভাগ্যবান মনে করছি,’ বলেন তিনি।
রিমা আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন কৃষক হলেও আমার সব কাজে সব সময় সমর্থন দিয়েছেন। পুরো পরিবার আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তাদের সমর্থন ও উত্সাহে আমার এই অর্জন।’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে রিমা বলেন, ‘আমি ভবিষ্যতেও শিশু শিক্ষা এবং সুবিধা বঞ্চিত নারীদের উন্নয়নের কাজ করতে চাই। বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য আমি কাজ করতে চাই; যারা সম্ভবনাময়ী সত্ত্বেও সুযোগ-সুবিধার অভাবে সব সময় বঞ্চিত থেকে যায়।’
জাগো নারী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা বলেন, ‘রিমার এই অর্জন শুধু জাগো নারী বা কক্সবাজারের জন্য নয়; এটা পুরো বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটা অর্জন। তার এই অর্জনে নিশ্চয়ই দেশের সব মানুষ আনন্দিত হয়েছেন। তার অসামান্য অর্জন প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়ন প্রচেষ্টার প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি।’
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১০০ জন নারীর একটি তালিকা প্রকাশ করে বিট্রিশভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা দান এবং প্রভাব বিস্তারের ওপর ভিত্তি করে ১০০ জন নারীকে নিয়ে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। চলতি বছরও ২৪ নভেম্বর বিবিসি এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
তবে শুধু রিমা না, অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীদের এই তালিকায় বাংলাদেশ থেকে আরও এক নারী রিনা আক্তার স্থান পেয়েছেন।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, এবার ১০০ নারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশকিছু বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে। যারা পরিবর্তন আনতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মহামারির এই কঠিন সময়েও তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের আলাদা করতে সক্ষম হয়েছেন মূলত তাদেরই এ তালিকায় রাখা হয়েছে।