অনলাইন ডেস্ক : ‘স্বাধীনতা লাভের পর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হওয়া শ্রীলঙ্কাকে অন্য যেকোনও দেশের তুলনায় বেশি সহায়তা করেছে ভারত। বিশেষ করে এই দ্বীপ রাষ্ট্র যখন দেউলিয়া হয়ে যায়, সেই সময় শ্রীলঙ্কার পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে নজির সৃষ্টি করেছে নয়াদিল্লি।’ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে রাইসিনা সংলাপে অংশ নিয়ে ভারতের ক্ষসতাসীন বিজেপি সরকারের এমন ভূয়সী প্রশংসা করেছেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক পডকাস্টে লঙ্কান এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভারত সরকার শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি ভারতীয় জনগণও শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছিল।

সাবরি বলেন, ‘খারাপ সময় এলে প্রকৃত বন্ধু চেনা যায়। ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। অসময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু। ভারত আমাদের জন্য যা করেছে, সেজন্য আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।’

শ্রীলঙ্কার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাকে প্রায় ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক ঋণ সরবরাহের মতো অত্যন্ত সাহসী, সিদ্ধান্তমূলক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এটি সেই রেখা যা শ্রীলঙ্কাকে আরেকটি দিনের যুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। দেউলিয়া দেশটিকে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে।

ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে ঘুরে দাঁড়াতে ভারতের সহায়তার কথা স্মরণ করে সাবরি বলেন, একেবারে সংকটের শুরুর দিকে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সেই সংকটে ভারতের হস্তক্ষেপ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি ছিল।

সংকটে বিধ্বস্ত দ্বীপরাষ্ট্রের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পুনর্গঠন কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে সবার আগে সমর্থন করেছে ভারত। তিনি বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কাকে আইএমএফের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজ পাওয়ার এক ধাপ কাছে নিয়ে যায়।

শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাইসিনা সংলাপ- ২০২৩ এ যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে সরকারি সফর করছেন। ভূরাজনীতি, ভূ-অর্থনীতি বিষয়ক ভারতের এই প্রধান সম্মেলন গত ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা।

করোনা মহামারি ও বিগত রাজাপাকসে সরকারের আর্থিক অনিয়ম-অপব্যয়, ত্রুটিপূর্ণ করনীতির জেরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের মজুত প্রায় শূন্যে নেমেছে শ্রীলঙ্কার। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র গত বছর থেকে অভূতপূর্ব অর্থ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এত গভীর অর্থনৈতিক সংকট দেখেনি শ্রীলঙ্কা।

গত বছরের মে মাসে জনবিক্ষোভ তীব্র পর্যায়ে পৌঁছানোর পর পার্লামেন্ট সদস্য রনিল বিক্রমাসিংহেকে অর্থমন্ত্রী করেন শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তারপর ওই বছরই জুলাই মাসে দিকে বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে গোতাবায়া দেশ ছেড়ে পলায়ন করার পর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন বিক্রমাসিংহে। সেই সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ও নিজের দায়িত্বে রাখেন।

গোতাবায়া গোপনে দেশ ছেড়েছিলেন গত বছর ১৩ জুলাই। তার এক সপ্তাহ আগে, ৬ জুলাই অর্থমন্ত্রী রনিল ঘোষণা করেন— দেউলিয়া হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কা।

শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে চীন ও ভারতের কাছ থেকে। দেউলিয়া ঘোষণার পর সেসব বিদেশি ঋণ কীভাবে পরিশোধ করা হবে— সেই প্রশ্ন দেখা দেয়। বকেয়া ঋণের কিস্তি প্রদানে একটি নতুন কর্মসূচিও প্রণয়ন করে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।

আইএমএফের তথ্য অনুযায়ী, চীনের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা এ পর্যন্ত ঋণ নিয়েছে ৭৪০ কোটি ডলার, ভারতের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণও ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি।