অনলাইন ডেস্ক : গবেষণা, লেখালেখি আর মতপ্রকাশে সরব ছিলেন তিনি। বিশ্বাসী ছিলেন জাতীয়তাবাদে। বিনয় তাকে আলাদা করতো অন্যদের থেকে। ভিন্নমতের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রবিজ্ঞান চর্চার একটি অধ্যায়ের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন তিনি। সে অধ্যায়ের অবসান হলো। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার ভোরে রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি।
তার মৃত্যুতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোক জানিয়েছেন। শোক প্রকাশ করেছেন তার অসংখ্য ছাত্র। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের জন্ম ১৯৩২ সালে অবিভক্ত বাংলার মালদহে। ভারত ভাগের পর তার পরিবার চাঁপাই নবাবগঞ্জে চলে আসে। শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজে পড়ালেখা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের নির্বাচিত ভিপিও ছিলেন এমাজউদ্দীন আহমদ। রাজশাহী কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তার পেশাজীবন শুরু। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন। পরে ১৯৭০ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। দীর্ঘদিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে প্রক্টর ও প্রো-ভিসি’র দায়িত্বও পান। ১৯৯২ সালে ভিসি’র দায়িত্ব পান তিনি। ১৯৯৬ সালে পদত্যাগ করেন। প্রভোস্ট নিয়োগ নিয়ে তখনকার শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগ করেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে একুশে পদক পান এমাজ উদ্দীন আহমদ। শত নাগরিক কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নানা বিষয়ে এমাজউদ্দীন আহমদের পরামর্শ নিতেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা, মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা, তুলনামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট, সমাজ ও রাজনীতি, গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ অর্ধশতাধিক বই লিখেছেন প্রফেসর এমাজউদ্দীন। সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লিখতেন। সভা-সেমিনারেও নিজের মতামত প্রকাশ করতেন। তার স্ত্রী সেলিমা আহমদ ২০১৬ সালে মারা গেছেন। অধ্যাপক দিলরুবা শওকত আরা ইয়াসমিন ও অধ্যাপক দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন তার দুই কন্যা। দুই ছেলের মধ্যে জিয়া হাসান ইবনে আহমদ সরকারি কর্মকর্তা, তানভীর ইকবাল ইবনে আহমদ একজন চিকিৎসক।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও সংগঠন শোক জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। বয়োজ্যেষ্ঠ এই শিক্ষাবিদ মৃদুভাষী ও সৌজন্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার সকালে এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় তার মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি এভাবে হঠাৎ করে চলে যাবেন- এটা আমরা কেউ বিশ্বাস করতে পারছি না। কারণ কয়েকদিন আগে পর্যন্ত আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি ভার্চুয়ালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীর আলোচনায় এসেছিলেন। তার এই চলে যাওয়া আমাদের জন্য একটি বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি করলো এবং তার এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আমরা বিএনপি’র পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং পরম করুণাময় আল্লাহ্তায়ালার কাছে এই দোয়া চাইছি, আল্লাহ্তায়ালা তাঁকে যেন সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়ে বেহেশ্ত নসিব করেন।
এমাজউদ্দীন আহমদের ছেলে জিয়া হাসান ইবনে আহমদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল এবং পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সদরুল আমিন, কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবেক ছাত্রনেতা সুরঞ্জন ঘোষসহ বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে এমাজউদ্দীন আহমদের বাসায় যান বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইকবালুর রহমান রোকন, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপি নেতারা। তারা সদ্য প্রয়াত প্রবীণ এই শিক্ষকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডি’র সভাপতি আ.স.ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ পৃথক শোকবার্তায় অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করেছেন।