অনলাইন ডেস্ক : দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন নীতিমালায় বড় ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্টে খোলার নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেশে বিনিয়োগ করে এ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দেশেই সরাসরি পুনঃবিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। মুনাফাসহ বিনিয়োগের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই বিদেশে নিয়ে যাওয়া যাবে। এফসি অ্যাকাউন্টে বৈদেশিক মুদ্রা রেখেই সেগুলো খরচ করার সুযোগ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও বন্দর, ব্যাংকিং সেবা, অবকাঠামোগত সুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেয়া হয়েছে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য। এর বাইরে কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড়ও রয়েছে ।

তবে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শুধু নীতিমালায় ছাড় দিয়ে বিদেশি বিনিয়োগ টানা যাবে না। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে আগে দেশি বিনিয়োগকারীদের পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে। তারা বিনিয়োগ শুরু করলেই তাদের হাত ধরে আসবে বিদেশি বিনিয়োগ। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে আস্থার সঞ্চার ঘটাতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনার পর চীন থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। এর আলোকে তারা ইতোমধ্যে পদক্ষেপও গ্রহণ করছে। এসব বিনিয়োগ আকর্ষণে ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা বেশ তৎপরতা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশও জাপানি বিনিয়োগ টানতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এ ছাড়াও চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বড় বড় কোম্পানিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও চীন থেকে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়া ও পণ্য আমদানি কমিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এসব বিনিয়োগ ধরার জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যে কারণে নীতিমালায় ছাড় দেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ টানতে হলে গুচ্ছ পরিকল্পনা দিতে হবে। শুধু একপক্ষীয় পদক্ষেপ নিয়ে হবে না। ব্যবসা করার সব ধরনের নীতিমালা সহজ করতে হবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসকে কার্যকর করতে হবে। তাদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে।

সূত্র জানায়, ইউরোপের দেশগুলোয় বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করেছেন। করোনার কারণে এসব বিনিয়োগে এখন ভয়াবহ মন্দা। অনেক প্রবাসী ব্যবসা বন্ধ করে দেশে চলে এসেছেন। তারা এখন দেশেই বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। এ কারণে প্রবাসীদের বিনিয়োগ টানতে তাদেরও বড় ধরনের ছাড় দেয়া হয়েছে। করোনার প্রভাবে প্রায় ১৩ লাখ প্রবাসী দেশে চলে এসেছেন। এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ প্রবাসী দেশে কর্মসংস্থান করতে পারলে তারা বিদেশে যাবেন না।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশিরা পুঁজি বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফা সরাসরি দেশে বিনিয়োগ করতে পারতেন না। এগুলোকে বিদেশি ব্যাংকের হিসাবে নিয়ে তারপর দেশি ব্যাংকের হিসাবে এনে বিনিয়োগ করতে হতো। এখন সরাসরি এসব মুনাফা বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিনিয়োগ করা অর্থসহ মুনাফা বিদেশে নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিতে হতো। এখন অনুমতি ছাড়াই এসব বিদেশে নেয়া যাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। বিদেশি কর্মীরা তাদের বেতনের ৭৫ শতাংশ বিদেশে নিয়ে যেতে পারবেন। আগে ৫০ শতাংশ নিতে পারতেন। আগে বিদেশি ও প্রবাসীরা বিনিয়োগ করলে দুটি হিসাব খুলতে হতো। একটি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব এবং অপরটি টাকা হিসাব। বৈদেশিক মুদ্রার হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমা করে সেগুলো টাকা হিসাবে স্থানান্তর করতে হতো। এখন সরাসরি বৈদেশিক মুদ্রা হিসাব থেকেই একটি অংশ খরচ করা যাবে। বিদেশি প্রবাসীদের আগে ব্যাংক হিসাব নিজেদেরই পরিচালনা করতে হতো। এখন তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন।

বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে অনিবাসী টাকা হিসাবে যে অর্থ জমা থাকবে, সেগুলো তারা শেয়ারবাজারেও বিনিয়োগ করতে পারবেন। আগে এগুলো বিনিয়োগ করতে পারতেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালম মুর্শেদী বলেন, নীতিমালা শিথিল করার বিষয়টি ইতিবাচক। এর সঙ্গে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি অফিসের বিভিন্ন নিবন্ধন নীতিমালা সহজ করা জরুরি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন বিদেশিরা এককভাবে বিনিয়োগ করতে চান না। তারা যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে চান। যৌথ বিনিয়োগ নীতিমালায় আরও শিথিলতা আনা জরুরি।

এদিকে সম্প্রতি পরিচালিত সানেম ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, করোনার কারণে দেশে ব্যবসার মুনাফা, বিনিয়োগ বহুলাংশ কমে গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, করোনার প্রভাব মোকাবেলা করতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।