Home আইটি বিশ্ব বিদেশিদের মদতে শিক্ষিত তরুণীর বহুরূপী প্রতারণা

বিদেশিদের মদতে শিক্ষিত তরুণীর বহুরূপী প্রতারণা

অনলাইন ডেস্ক : তরুণীর নাম রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিয়ে করেননি। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। পড়ালেখা শেষ করে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, কিন্তু সেখানে মন বসাতে পারেননি। অল্প সময়ে ব্যবসা করে বিত্তবান (গার্মেন্টস ব্যবসার মালামাল সরবরাহ) হবেন এমন প্রলোভন দেখান বাংলাদেশে অবস্থানকারী নাইজেরিয়াসহ একাধিক দেশের নাগরিক। এভাবেই পরবর্তী সময়ে বিদেশিদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক) প্রতারণা শুরু করেন। আর গত দুই মাসেই শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা। সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এমনই তথ্য জানিয়েছেন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয়দানকারী ফারজানা।

সিআইডি পুলিশ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে বাংলাদেশি ফারজানা ও তার সহযোগী নাইজেরিয়ার ১১ জন নাগরিককে গ্রেফতার করে। সিআইডি পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।

এ ব্যাপারে সিআইডির ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মো. রেজাউল হায়দার বলেন, গত ২ জুলাই শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ভাটারা এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের সদস্য কেনিয়ার এক জন ও ক্যামেরুনের দুই নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, পল্লবী এলাকা থেকে বাংলাদেশি এক নারীসহ নাইজেরিয়ার ১২ জন নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা অভিনব উপায়ে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের সঙ্গে ফেসবুকে বন্ধুত্ব তৈরি করেন। একপর্যায়ে তারা মেসেঞ্জার থেকে উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দেন। পরে মেসেঞ্জারে এসব মূল্যবান সামগ্রীর এয়ারলাইন বুকিংয়ের ডকুমেন্ট পাঠান। উপহারের বাক্সে কয়েক মিলিয়ন ডলারের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীকে জানানো হয়। তারা ভুক্তভোগীকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের কাস্টম গুদাম থেকে সেগুলো রিসিভ করতে বলেন। এ সময় তাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করতে বলেন। তারা সেই টাকা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধের জন্য চাপ দেন। প্রতারকদের পাঠানো উপহার সংগ্রহ না করলে আইনি জটিলতার ভয় দেখাত প্রতারক চক্রটি।

রেজাউল হায়দার বলেন, ভুক্তভোগী একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে তাদের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জমা দেন। একইভাবে গ্রেফতারকৃতরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দুই মাসের মধ্যে শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে। তাদের বাংলাদেশে অবস্থানের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। আর তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আসছিল ফারজানা।

অভিযান পরিচালকনাকারী সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রতারক চক্রটি বেশ কয়েক মাস ধরে বসবাস করে আসছে পল্লবীর সি ব্লকের ৫ নম্বর অ্যাভিনিউর একটি বহুতল ভবনে। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, ১৪টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন এবং অসংখ্য সিম উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে প্রতারক চক্রের অপর সদস্যদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে।

অন্যদিকে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি রেজাউল হায়দার বিদেশি নাগরিককে বাড়িভাড়া দেওয়ার আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র ও পাসপোর্ট যাচাই করে মালিকদের বাড়িভাড়া দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি অনুরোধ জানিয়েছেন ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা থেকে বিরত থাকার।

Exit mobile version