অনলাইন ডেস্ক : চার বছর আগে এমনই এক বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কখনো স্বভাবগুণে, কখনো আবার ক্ষমতাবলে সব কিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করা সেই ট্রাম্প বুধবার (২০ জানুয়ারি) ক্ষমতা ছাড়ছেন অনেকটা অন্য রকমভাবে।

প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ট্রাম্প এতটাই বিপর্যস্ত যে নিজের উত্তরসূরিকে শুভেচ্ছা জানানোর মানসিক শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল না হলেও ‘স্বাভাবিক’ ছিলেন না ট্রাম্প। অন্তত নেতিবাচক নানা নজির তৈরি করায় মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটা আলাদা অধ্যায় হয়ে থাকবেন তিনি।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় (স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কমলা হ্যারিস। ওয়াশিংটনের ক্যাপিটলে হবে তাদের অভিষেক অনুষ্ঠান।

যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি হোয়াইট হাউসে তাদের উত্তরসূরিদের স্বাগত জানান। কিন্তু জো বাইডেন ও জিল বাইডেন যখন হোয়াইট হাউসে পা রাখবেন, তখন ওয়াশিংটন শহরেই থাকবেন না ট্রাম্প ও মেলানিয়া। গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, বুধবার কাকডাকা ভোরেই হোয়াইট হাউস ছাড়ার কথা তাদের। সকাল ৮টায় মেরিল্যান্ড বিমানঘাঁটিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শেষ সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন ট্রাম্প। এরপর সেখান থেকে যাবেন ফ্লোরিডায়, যেখানে আগেই নিজের সব আসবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে যখন বাইডেন শপথ নেবেন, তখন ফ্লোরিডায় অবস্থান করবেন ট্রাম্প। বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে না থাকার কথা আগেই নিশ্চিত করেছেন তিনি। জো বাইডেন ও জিল বাইডেনকে হোয়াইট হাউসে বরণ করে নেবেন প্রধান আপ্যায়নকারী টিমোথি হারলেথ। ট্রাম্পই এই হারলেথকে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যিনি একসময় ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে চাকরি করতেন।

গত ০৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার কারণে ক্যাপিটল হিলের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। ওয়াশিংটনে মোতায়েন করা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় ২৫ হাজার সদস্য। এফবিআইয়ের আশঙ্কা, ট্রাম্পপন্থীরা আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করতে পারে। এমনকি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোনো কর্মীও হুমকি হয়ে উঠতে পারেন বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাককার্থি। যদিও তেমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে গতকাল আশ্বস্ত করেছেন দেশটির অস্থায়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ক্যাপিটলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৫ হাজারের বেশি ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তাদের অতীত ঘেঁটে দেখা হচ্ছে। যদিও অভ্যন্তরীণ হুমকির কোনো গোয়েন্দা তথ্য আমাদের কাছে নেই। ’

বিকেলে শপথ অনুষ্ঠানের পর আরলিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রিতে আরেকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বাইডেন। সেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডাব্লিউ বুশ ও বারাক ওবামাও উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠান যখন শেষ হবে, ততক্ষণে বাইডেন ও জিলকে বরণ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলবে হোয়াইট হাউস।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সকালের মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের সবাই হোয়াইট হাউস ছাড়বেন। এরপর পুরো এলাকায় শুরু হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এ জন্য হোয়াইট হাউসের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাশাপাশি বাইরে থেকেও অনেক কর্মী ভাড়া করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসের গালিচা থেকে শুরু করে জানালার পর্দা— সবই পাল্টানো হবে বিকেলের মধ্যে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যে বিশ্ব ডোনাল্ড ট্রাম্প রেখে যাচ্ছেন, তা সামাল দেওয়া বাইডেনের জন্য খুবই কঠিন হবে। ০৬ জানুয়ারির ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে শুধু বিভাজনের রাজনীতির সূত্রপাতই ঘটায়নি, একই সঙ্গে কংগ্রেস ভবনকে রাজনৈতিক সহিংসতার মঞ্চ হিসেবে রূপ দিয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলাও বাইডেনের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এছাড়া তার জন্য পররাষ্ট্রনীতির হিসাব-নিকাশও জটিল করে রেখেছেন ট্রাম্প। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে কঠিন এক সমীকরণ তৈরি করেছেন বাইডেনের জন্য। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতেও পূর্বসূরি বারাক ওবামার পথে হাঁটেননি বাইডেন। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ‘একলা চলো’ নীতি প্রয়োগ করে বিশ্বদরবারে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য অনেকটা খাটো করে ফেলেছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি বাইডেন দিয়েছেন, সেটাকে অনেক দূরের গন্তব্য হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে বাইডেন যখন দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, তখন ডুমসডে ক্লকের কাঁটা মধ্যরাতের দিকে আরো ১০০ সেকেন্ড এগিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী অর্থে ডুমসডে ক্লকে যখন রাত ১২টা বাজবে, তখন বিশ্বে প্রলয় ঘটবে। বিশ্বে যখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়, তখন এই ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টার দিকে এগিয়ে দেন এটির তত্ত্বাবধানে থাকা বিজ্ঞানীরা। ১০০ সেকেন্ড এগিয়ে যাওয়ায় এই ঘড়ির কাঁটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যরাতের সবচেয়ে কাছাকাছি চলে এসেছে। বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণে সেই কাঁটা কতটা পেছাবে, এখন সেই অপেক্ষায় থাকবে বিশ্ব। সূত্র: সিএনএন, এএফপি, গার্ডিয়ান।