অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়েছেন দেশটির বতর্মান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ৯০ মিনিটের বিতর্কে দেশ ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়, এমনকি ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও বাক্যবাণে একে অন্যকে কুপোকাত করার চেষ্টা করেন।

বাইডেন ও ট্রাম্প পরস্পরকে ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নেতা হিসেবে কটাক্ষ করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে নিজেকে একজন দৃঢ় প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাটদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ ছিল বাইডেনের।

কিন্তু ৮১ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন তাঁর বয়স নিয়ে উদ্বেগ ছড়ানো নিন্দুকের মুখে ছাই দিতে পারেননি। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প চটপটে জবাব দিলেও অনেকটা যেন খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার আটলান্টায় সিএনএনের সদর দপ্তরে বিতর্কের জন্য উপস্থিত হন ট্রাম্প ও বাইডেন। বিতর্কের মঞ্চে মাত্র ফুটখানেক দূরত্বে দাঁড়ালেও এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পরস্পরের সঙ্গে হাত মেলাননি।

দুই নেতা গণতন্ত্র, গর্ভপাত, জলবায়ু, অর্থনীতি, অভিবাসন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও হামাস-ইসরায়েল লড়াই নিয়ে পরস্পরের অভিমত তুলে ধরেন। এমনকি বয়স, গলফ খেলা ও আইনি অভিযোগ নিয়ে পরস্পরকে ব্যক্তিগত আক্রমণও করছেন তাঁরা।

সিএনএনের একটি জরিপ বলছে, ৬৭ শতাংশ দর্শক মনে করছেন, এই বিতর্কে ট্রাম্পই জয়ী হয়েছেন। আগামী আগস্টে শিকাগোতে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে ডেমোক্র্যাটরা।
সেখানে প্রার্থী হিসেবে বাইডেনের নাম পরির্বতনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে, যদি না তিনি নিজে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

ট্রাম্পের সঙ্গে বাগযুদ্ধের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে বাইডেন বলেছেন, তাঁর মতে তিনি এই বিতর্কে ভালো করেছেন। গতকাল আটলান্টায় বিতর্ক-পরবর্তী সময়ে একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম মুখোমুখি বিতর্ক ঘিরে মানুষের মধ্যে আগ্রহ ও উত্তেজনার কমতি ছিল না।

বিতর্কের মঞ্চে বাইডেন বলেন, ট্রাম্পের আমেরিকার গণতন্ত্র নিয়ে কোনো বোধ নেই।

অন্যদিকে রাজনৈতিক সহিংসতাকে অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কি না, এ বিষয়ে ট্রাম্প জবাব দেন—স্বচ্ছ, বৈধ ও ভালো নির্বাচন হলে তিনি অবশ্যই মেনে নেবেন। গর্ভপাতের অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের অভিমত দারুণ রায় বলে মন্তব্য করলেও বাইডেন একে ভয়াবহ সিদ্ধান্ত বলেন।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলের হামলা দুই নেতার বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে শর্ত উপস্থাপন করেছেন, সেটিকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

যুদ্ধ অবসানে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ধরে রাখা এবং ইউক্রেনের ন্যাটো জোটে যোগদান বাদ দেওয়ার শর্ত আরোপ করেছেন পুতিন। তবে ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি নির্বাচনে জিতলে ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা নেওয়ার আগেই পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে যুদ্ধের নিষ্পত্তি করে দেবেন। তবে বাইডেন পুতিনকে নিয়ে বিষোদগার করেন। পুতিন পুরো ইউক্রেন ভূখণ্ড চান বলে বাইডেন দাবি করেন। এদিকে গাজায় হামাসকে নির্মূল করার পক্ষে নিজের মত প্রকাশ করেন বাইডেন। তবে জনবসতি এলাকায় কিছু অস্ত্র ব্যবহারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েলে তার কাজ শেষ করতে দেওয়া উচিত। বাইডেন সেটি করতে চান না বলেই দাবি করেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প বলেন, বাইডেন একজন ফিলিস্তিনির মতো হয়ে গেছেন। তবে ফিলিস্তিনিরাও বাইডেনকে পছন্দ করে না। কারণ তিনি দুর্বল। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গেও দুই নেতা একে অন্যকে পাল্টা আক্রমণ করেন। ট্রাম্পকে আইনের চোখে একজন দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি বলে খোঁচা দেন বাইডেন। তবে চুপ থাকেননি ট্রাম্প। তিনিও বাইডেনের ছেলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার নিয়ে পাল্টা উত্তর দেন। এমনকি হোয়াইট হাউস ছাড়লে বাইডেনও নানা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

দুই নেতার বক্তব্যে বয়সের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। বাইডেন তাঁর বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কি না, সে বিষয়ে বলতে গিয়ে তাঁর চেয়ে মাত্র তিন বছর কম ট্রাম্পের বয়স নিয়েও কথা বলেন।

ট্রাম্প জবাব দেন, তিনি তাঁর শরীরের দুটি পরীক্ষাসহ মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করিয়েছেন এবং সেগুলো প্রকাশও করেছেন। তবে বাইডেন তা করেননি বলে ট্রাম্প জানান।

সূত্র : এএফপি