অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ৪ নভেম্বর আইভরি কোস্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে, সব পক্ষ যেন আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলে এবং তাদের মধ্যে জাতীয় মতভেদ দূর করে। মজার বিষয় হচ্ছে, ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চরম মতবিরোধ চলছে। একপক্ষ ভোট জালিয়াতি থেকে শুরু করে ভোটারদের ভোটদানে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলছে। এটাই শুধু নয় জাতীয় মতভেদ এখন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সবসময় বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের নির্বাচন, গণতন্ত্রসহ অন্যান্য মূল্যবোধ নিয়ে বিবৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন নিজেদের নির্বাচনকে বিতর্কিত করার কারণে এই মূল্যবোধ সংক্রান্ত তাদের বিবৃতি ও মতামতের গুরুত্ব এখন যেকোনও সময়ের থেকে কম।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন নিয়ে হয়তো তারা হাসাহাসি করতো। এখন আমরা তাদের নির্বাচন নিয়ে হাসাহাসি করি।’ তিনি বলেন, ‘জর্জ বুশের নির্বাচনের সময় থেকে তাদের যে নৈতিক কর্তৃত্ব সেটি কমতে শুরু করেছে এবং এটি দ্রুত কমছে। এখন ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র নৈতিকতা নিয়ে চিন্তাও করে না।’
ট্রাম্পের ব্যবহার ‘কূটনৈতিক ভদ্রতাসম্পন্ন’ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) যুক্তরাষ্ট্রের বড় ক্ষতি করেছেন এবং জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলেও তার পক্ষে দুই শিবিরে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রকে এক করা দুরূহ হবে।’
যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দুই শিবিরে বিভক্ত বলে মনে করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এমনকি তারা মুখোমুখি বসতে রাজি নয় এমন অবস্থায় চলে যাচ্ছে যা আগে কখনও ছিল না।’ আগে যারা হেরে যেত তারা সম্মানের সঙ্গে ফলাফলকে মেনে নিতেন কিন্তু এটি নষ্ট হয়ে গেছে বলে মনে করেন মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের ছেলে টুইট করে ভিডিও ছেড়েছে যে ব্যালট পুড়িয়ে ফেলছে। এরকম দৃশ্য আমরা উন্নয়নশীল দেশে দেখে থাকি। আমার মনে হয় তখন মার্কিনীরা হাসতো এবং আমাদের নিয়ে মজা করতো কিন্তু এখন সময় হয়েছে আমরা তাদেরকে নিয়ে মজা করবো।’
২০০০ সালে জর্জ বুশের নির্বাচনের সময়ে মামলা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ে বাংলাদেশে ইউএসএআইডি এর আইন উপদেষ্টাকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আলাপের এক পর্যায়ের আমি বললাম তোমরা মনে করো পৃথিবী তোমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং তোমরাই একমাত্র গণতন্ত্র বোঝ কিন্তু তোমরা বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র নিয়ে একটি শিক্ষা নিতে পারো। ১৯৯৬ সালে জাস্টিস হাবিবুর রহমান সাহেব যেভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে সেখান থেকে তোমরা শিক্ষা নিতে পার।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এখন যুক্তরাষ্ট্রে যা হচ্ছে তার সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বের অনেক মিল আছে কিন্তু আমার মনে হয় এর ফলাফল তৃতীয় বিশ্বের মতো হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে গণতন্ত্র নিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে জটিলতার সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো যখন অন্যদেশের গণতন্ত্রসহ নিয়ে বিবৃতি দেয় তখন বিষয়টি হাস্যকর হয়ে যায়।’
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা কেটে যাবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকবে বলে মনে করেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তবে এই জটিলতা যদি না কাটে তবে মার্কিন প্রভাব অনেকাংশে কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জটিলতা কেটে গেলে তখন যুক্তরাষ্ট্র বলবে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঝামেলা মিটে গেলে হয়তো তারা তাদের প্রভাব ফিরে পাবে।’