অনলাইন ডেস্ক : চালের দাম বাড়লে সাধারণত আটার ওপর চাপ বাড়ে। কিন্তু বর্তমান বাজারে চালের চড়া দামের সঙ্গে স্বস্তি দিচ্ছে না আটাও। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গমের আমদানিতে টান পড়েছে। এতে দেশের বাজারে অনেক দিন ধরে প্যাকেট ও খোলা দুই ধরনের আটার দামই বাড়তি। ভরসা ছিল ভারতের গম। কিন্তু গত শুক্রবার গম রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। দেশের আটার বাজারে এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত একদিনের ব্যবধানে খুচরায় খোলা আটার দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আটার দাম হঠাৎ বাড়তে থাকায় অনেক খুচরা বিক্রেতা নতুন করে আটার বস্তা কিনছেন না। গতকাল রবিবার রাজধানীর মালিবাগ বাজারের বেশকিছু দোকান ঘুরে শাহীন স্টোর নামের একটি দোকানে খোলা আটা পাওয়া গেল। একদিনের ব্যবধানে আটার দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে বলে জানান এ দোকানের ব্যবসায়ী সোহেল। তিনি বলেন, ঈদের পরে খোলা আটা ৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করা গেছে। এখন তা ৪০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না, ৪২ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে গত বুধবার আটার বস্তা (৫০ কেজি) ১৮৫০ টাকায়, অর্থাৎ ৩৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। রোজার শুরুতে এ বস্তা ১৫৫০ টাকাতেও পাওয়া গেছে। এখন সে বস্তা ১৯৫০ টাকা। ভূইয়া স্টোরের ব্যবসায়ী শিপন জানান, খোলা আটার দাম অনেক বেড়েছে। তাই নতুন করে খোলা আটা কেনা হয়নি। গমের সংকটের কারণে মিলগেটেই নাকি সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বাড়তি। পাইকারিতেই দাম ৪০ টাকায় ঠেকেছে শুনেছি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলীর সাদ্দাম মার্কেট বাজার ঘুরেও একই তথ্য জানা গেছে। সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মিলন স্টোরের মিলন হোসেন বলেন, খোলা আটা কেজি ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ আটা কয়েকদিন আগের কেনা, ৩৮-৩৯ টাকা কেজি কেনা। আটা প্রায় শেষ, আজ পাইকারিতে খোঁজ নিয়েছি। শুনলাম এরই মধ্যে দাম বেড়ে গেছে।
কারওয়ান বাজারের মা ট্রেডার্সের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান জানান, ঈদের আগে থেকেই পাইকারিতে খোলা আটার দাম বাড়তি। ঈদের পরেও এক দফা বেড়েছে। এখন নতুন করে দাম বাড়ছে। মিলগেটে দাম বেড়ে যাওয়ায় পাইকারিতে দাম বাড়ছে। আমাদের হাতে দামের নিয়ন্ত্রণ নেই। প্যাকেটকৃত আটার দামও বাড়ছে বলে জানান মালিবাগ বাজারের বিপ্লব স্টোরের ব্যবসায়ী সোলেমান। তিনি বলেন, ব্র্যান্ডের প্যাকেট আটার দাম দুই কেজির প্যাকেট এখন ৯০ টাকা। ঈদের আগে ছিল ৮০ টাকা। কোম্পানির ডিলার এসে আজ ৯২ টাকা দরে অর্ডার নিয়ে গেছে। নতুন এ আটা বাজারে এলে দাম আরও বাড়বে। ময়দার দুই কেজির প্যাকেট এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। রোজায় যা ৯০-৯৫ টাকাতে বিক্রি করেছি।
চালের পরই বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য গম। দেশে বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন চাল ও ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়। যুদ্ধের কারণে গত ফেব্রুয়ারির পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে গম রপ্তানি বন্ধ। এতে ভারতের ওপর নির্ভরতা বাড়ে। এনবিআরের হিসাবে, গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন গম আমদানি হয়। এ সময়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে কোনো গম আসেনি। ভারত থেকে এসেছে ৬৩ শতাংশ। বাকিটা এসেছে কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) শুক্রবার এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে ইতোমধ্যে যেসব ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়ে গেছে তা রপ্তানি হবে। এছাড়া খাদ্য ঘাটতিতে থাকা দেশের সরকারের অনুরোধের বিপরীতে ভারত সরকার অনুমতি দিলে রপ্তানি হবে।