Home কলাম বাহাত্তরের সংবিধানের কাছে পরাজিত জামাতের সা¤প্রদায়িক রাজনীতি

বাহাত্তরের সংবিধানের কাছে পরাজিত জামাতের সা¤প্রদায়িক রাজনীতি

সোনা কান্তি বড়ুয়া : ‘ধর্ম যার, যার, রাষ্ঠ্র সবার’! প্রীতি ও প্রেমের পুন্য বাঁধনে বাংলাদেশে মনুষ্যত্বের গণপ্রজাতন্ত্রীক নিদর্শন বাহাত্তরের সংবিধান! বাহাত্তরের সংবিধানতত্তে¡র মর্মভেদী প্রাণপুরুষ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ ধ্বজা উড়ায়ে অভ্রভেদী রথে বাংলাদেশ আইনসভায় প্রবেশ করে বাঙালি এনলাইটেনমেন্টের নবযুগে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ ঘোষণা করেছিলেন। সংবিধানানুসারে বাংলাদেশ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নহে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল তাতে এই নতুন রাষ্ট্রে চারটি স্তম্ভের উল্লেখ আছে (যাহা জামাত ও “মসজিদ মিশন” মানে না)। যথা : (১) গণতস্ত্র (২) জাতীয়তাবাদ (৩) সমাজতস্ত্র এবং (৪) ধর্মনিরপেক্ষতা।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একটি ঈদ এসেছিল বাঙালির জীবনে। দীর্ঘ একমাস রোজা শেষে নভেম্বরের ২০ তারিখের সেই দিনটি ছিল শনিবার। মুসলিমদের জন্য সংযমের মাস হলেও, সেই রমজানজুড়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অসহায় নারী-পুরুষদের ওপর নৃশংস তান্ডব চালায় জামায়াত, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা। জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাড়ি-ঘরেও লুটপাট এবং অগ্নি সংযোগ করে হানাদাররা। আগুনের লেলিহান শিখা ও কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে বাংলার আকাশ। এমনকি কোথাও কোথাও রাজাকারদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় মা-বোনেরাও। বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তে স্নাত বাংলাদেশ রাষ্ট্র সকল স¤প্রদায়ের দেশ। অমানবিক ধর্মীয় উন্মাদনায় ৭১-এর পরাজিত জামাতের ধর্মান্ধ শক্তিই বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিশাপ!

জামাতের ধর্মীয় আবেগ ব্যবহারের নিখুঁত পরিকল্পনায় কোরআন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে ফেইসবুকে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে রামুর বৌদ্ধ বিহার (২০১২) ও কুমিল্লা দূর্গাপূজায় (২০২১) ধ্বংসযজ্ঞ কেন? ধর্মান্ধ জামাতের বাংলাদেশে হিন্দু ও বৌদ্ধদের মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিন! এবং জামাত হিন্দু বৌদ্ধদের মুসলমান বানষচ্ছে! জামাতের আক্রমণের শিকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেন? সাংবিধানিকভাবে ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ; এক মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ত্রিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তে স্নাত সকল স¤প্রদায়ের রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কোনোভাবে একটি বিশেষ স¤প্রদায় কিংবা ধর্মস¤প্রদায়ের দেশ নয়; ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রও নয়। কিন্তু রাষ্ট্রের পবিত্র সংবিধানে যখন বিশেষ কোন ধর্মের তিলক চিহ্ন জুড়ে দেয়া হয়, তখন রাষ্ট্রের দর্পণে অপরাপর ধর্মে, সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী নাগরিকগণ নিজেদের কতটা নিরপেক্ষ অবয়বে দেখতে পান? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআন মজীদে ঘোষনা করেছেন, “অন্য ধর্মের ধর্মস্থান ধ্বংস কর না (কোরআন, ২২ ঃ ৩৮)। অন্য ধর্মকে গালাগাল কর না ( ৬ : ১০৬)।

মানবতার জয়গানে দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ট্রধর্ম নয়! ১৯৭২ সালের ৪ই নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদ গৃহীত এবং ১৯৭২ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রথম খন্ডে প্রকাশিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, “রাষ্ঠ্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।” আইনের শাসনে কোরআন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই জামাতের মিসকিন, মুরতাদ, ও কাফের, প্রথায় হিংসায় উন্মত্ত সা¤প্রদায়িক রাজনীতি! সকল স¤প্রদায়ের নাগরিকগণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পবিত্র আমানত, সে আমানতের সুরক্ষা দেয়া, নাগরিকবৃন্দের প্রাপ্য সেবা বুঝিয়ে দেয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। ইসলাম ধর্মকে ‘অপব্যবহার করে’ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের তদানিন্তন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাঙালি জাতির বাংলা ভাষা বলা ও লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন! বিশ্বশান্তি স্থাপন করতে পৃথিবীর সর্বপ্রথম বাংলা বইয়ের নাম “চর্যাপদ এবং বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ!

বঙ্গবন্ধু গোলাম আযমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিলেন এবং জামাতের সা¤প্রদায়িক রাজনীতি করার অধিকার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারা (পরাজিত জামাত) হত্যা, লুটপাট, অমানবিক ধর্মীয় উন্মাদনায় সকল স¤প্রদায়ের নাগরিকগণকে লাঞ্চনা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন, বিচার করে শান্তি দিয়েছিলেন। এমনকি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীতে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের ব্যাপারেও বঙ্গবন্ধু দৃঢ? মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু কাদের কারসাজিতে তারা শাস্তি পেল না, আশা করি সচেতন সমাজ একদিন খুঁজে বের করলেন এবং জনসমক্ষে তা প্রচার করবেন।

এখন প্রশ্ন, এসব দালালকে দেশে ফিরিয়ে আনলো কে? রাজনীতি করবার সুযোগ দিয়েছে কে? মহান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলে প্রচার করা হয়, সেই মেজর জিয়াউর রহমান। যিনি সংবিধান লঙ্ঘন করে সামরিক শাসনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। মওলানা মান্নান, আব্দুল আলীমসহ কুখ্যাত রাজাকারদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে তার মন্ত্রিসভা সাজিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন রাজাকার শাহ আজিজকে। আর ‘রাজাকার রাজাকার ভাই ভাই, পাকিস্তানি ঐক্য চাই’ এই আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী একাত্তরের খুনি গোলাম আযমকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছিল।
যারা সা¤প্রদায়িক চেতনার আলখাল্লা পরে একে কেবল একটি বিশেষ স¤প্রদায়ের দেশ বলে হুঙ্কার দেন, বক্তৃতা বিবৃতি দেন, তা সাংবিধানিক অর্থে সাংঘর্ষিক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত লিখেছেন, “জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার বাহক শক্তিটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে জনগণের সম্পদ হরিলুট করেছে এবং গবেষণার তথ্যানুসারে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতির বার্ষিক নিট মুনাফা আনুমানিক ২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ৬৬৫ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে (ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি ইত্যাদি); দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮.৮ শতাংশ ৪৬৪ কোটি টাকা আসে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশন থেকে; বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুচরা, পাইকারি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ২৬৬ কোটি টাকা আসে ১০.৮ শতাংশ; ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০.৪ শতাংশ ২৫৬ কোটি টাকা; স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসে ৯.২ শতাংশ ২২৬ কোটি টাকা; রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে আসে ৮.৫ শতাংশ ২০৯ কোটি টাকা, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্য প্রযুক্তি থেকে আসে ৭.৮ শতাংশ ১৯৩ কোটি টাকা, আর রিকশা, ভ্যান, তিন চাকার সিএনজি, কার, ট্রাক, বাস, লঞ্চ, স্টিমার, সমুদ্রগামী জাহাজ, উড়োজাহাজের মতো পরিবহন-যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭.৫ শতাংশ বা ১৮৫ কোটি টাকা। বিগত চল্লিশ বছরে (১৯৭৫-২০১৪) মৌলবাদের অর্থনীতি সৃষ্ট ক্রমপুঞ্জীভূত নিট মুনাফার মোট পরিমাণ হবে বর্তমান বাজার মূল্যে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা।

সকল ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষ থাকা রাষ্ঠ্রশক্তির বাঞ্ছনীয় বা ষ্টেট ট্রিটস অল রিলিজিয়নস উইদ আউট ফিয়ার (ভয়) এন্ড ফেভার (আসক্তি বা ভালো লাগার কারনে)। ধর্ম কে অপব্যবহার করে মানুষ পশু হয়েছে বার বার অনেকবার। ইওরোপীয়ান এনলাইটেনমেন্টের আলোকে সংবিধানে রাষ্ঠ্রধর্ম থাকা উচিত নয়। ক্ষমতার লোভে জেঃ জিয়া এবং জেঃ এরশাদ সহ জন প্রতিনিধিগণ বাহাত্তরের সংবিধানকে বার বার অনেকবার হত্যা করে নিজেদের রাজনৈতিক লোভ লালসা চরিতার্থ করতে ইসলাম ধর্মকে অপব্যবহার করে রাষ্ঠ্রধর্ম ইসলাম!
১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে (মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত সাতটি আসনসহ) জয়লাভ করে। আপামর জনগণ তাঁকে ছয়দফা মতবাদের পক্ষে নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট প্রদান করে। ছয় দফা বাস্তবায়নের দায?িত্ব তাঁর উপরই বর্তায়। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের সব প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রমনা রেসকোর্সে একটি ভাবগম্ভীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং শপথ নেন যে, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সময় তারা কখনও ছয়দফা থেকে বিচ্যুত হবেন না।

১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল, শুক্রবার, জুমার নামাজের পর পাঞ্জাবি-টুপি পরে শান্তি কমিটির ব্যানারে পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে রাজপথে মিছিল বের করেছিল জামাতের স্বাধীনতা বিরোধী এই উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা। ধর্মীয় আবেগ ব্যবহারের নিখুঁত পরিকল্পনায় অংশ হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল মুসলিমদের ধর্মীয় ছুটির দিন শুক্রবারকে। মিছিল শুরুর স্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছিল বৃহত্তর মসজিত বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটকে। সময়টাও ছিল ঠিক নামাজের পর। এরপর ইসলাম রক্ষার ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিন্দু এবং বৌদ্ধ নির্যাতন চেয়েছিল এই হিংসায় উন্মত্ত স্বাধীনতা বিরোধীরা। পরাজিত জামাতের ধর্মীয় রাজনীতির পিঠোপিঠি এসেছিল ধর্মীয় উন্মাদনাময় বিভাজন-উত্তর রাজনীতি! বিভাজনের পাশাপাশি ঘটেছিল “বিভাজনেরমধ্যে বিভাজন”।

ধর্ম যাই হোক না কেন, এই দেশে আমরা সবাই ভাই। আমরা চাই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স¤িপ্রতির বন্ধন অটুট থাকুক। অতএব বাংলাদেশকে একটি অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকে এগোতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল ইসলামে বিশ্বমানবতা, সার্বজনীনতা, ঈমান, এবং বাহাত্তরের সংবিধান। ইসলামে সন্ত্রাস এবং সা¤প্রদায়িক রাজনীতির কোন স্থান নেই। কারন যিনি পাকিস্তান আমলে ‘মুসলিম’ শব্দটি আওয়ামি লীগ থেকে বাদ দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদ্রোহী ধর্মান্ধ জামায়াতে ইসলামী জঙ্গীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত হয়ে পাহাড়ে নতুন নামে তৎপর আল–কায়েদা মতাদর্শী জঙ্গিগোষ্ঠী (প্রথম আলো , প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২১ বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা )! বাংলাদেশে পরাজিত জামাতের ধর্মব্যবসা থামেনি। জামাত এখনও কোরআন এবং ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্মব্যবসায়ীদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই কি ধর্মান্ধ “জামায়াতের উগ্র সা¤প্রদায়িকতার কোরআন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মিসকিন, মুরতাদ, কাফের, প্রথার বিভাজনের ধর্ম? ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা ‘সওয়াব’ এর আশায় জোর করে মুসলমান করেছে হিন্দুদের, না হলে মৃত্যু। “পিস কমিটির ইচ্ছানুযায়ী বিবাহযোগ্য নব মুসলিম কন্যাদের একটি অংশ পিস কমিটির অনুগত যুবকদের বাড়ীতে তুলে দেবার ব্যবস্থা করা হয় (মুনতাসীর মামুন, রাজাকারের মন, পৃষ্ঠা ৯১)।” অদূরদর্শী বি এন পির রাজনৈতিক নেতাগণ ধর্ম ব্যবসায়ীদের সাথে হাত মিলিয়েছে এবং সা¤প্রদায়িক স্বার্থে আবিলতায় পঙ্কিল হয়ে আছে বাংলার ধর্মব্যবসায়ীদের মনমানস-জগত। সময় থাকতে সাধু সাবধান। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের বিবিধ প্রাপ্তি ও কার্যকলাপে কতটা বৈষম্যহীন অবস্থানে দেখতে পান?- তা ভাববার অবকাশ থেকে যায়।

রাষ্ট্রদ্রোহী জামাত মৌলবাদীরা বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মুসলমান রচিত ইসলাম ধর্মের পাঠ্য বইতে (Class Five Pages 16 & 17) বলছে “অমুসলিমরা ‘মিথ্যাবাদী’, ‘লোভী’, ‘পশুর অধম’ – শেখাচ্ছে বইসরকারি পাঠ্যবইয়ে অমুসলিমদেরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিতান্তই আপত্তিকর এবং বিব্রতকরও বটে। প্রতিদিন বাংলাদেশের জনতা ধর্ম অপব্যবহারের জন্যই দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে ক্ষয় হচ্ছেন। মুসলমান যেই মানব, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্ঠান সহ পাহাড়িরা ও সেই মানব সন্তান বা আশরাফুল মাখলুকাত। সংবিধানে রাষ্ঠ্রধর্ম যোগ করার ফলে বাংলাদেশে পাকিস্তানের লাল মসজিদ মার্কা রাজনীতি করার সুযোগ সমাগত।” বাঙালি এনলাইটেনমেন্ট যুগে জনৈক জনপ্রিয় কবির ভাষায়, “বিশ্বমানব হবি যদি শাশ্বত বাঙালি হও, সম্পূর্ণ বাঙালি হও।”কোরান অবমাননার রাজনীতি!

Mr. Kamal Pasha লিখেছেন, “পৃথিবীতে ১৩% লোক নাস্তিক। চীনের ১৫০ কোটি লোকের মধ্যে দুই কোটি মুসলমান। কে আস্তিক বা নাস্তিক তা আল্লাহ ভাল করে জানে। আল্লাহ সবাইকে সৃষ্টি করে খাওয়ায়, সংরক্ষণ করে। বরং যারা নাস্তিক তারা পৃথিবীর সভ্যতা সমৃদ্ধশালি করেছে।

আধুনিক সভ্যতার যত ইন্সট্রুমেন্ট ডিজিটালাইজেশন মোবাইল, বিদ্যুৎ শক্তি, যানবাহন,সৌর শক্তি, উপগ্রহ তৈরি করে কখন বৃষ্টি হবে,অনাবৃষ্টি, ঝড়, তুফান, আকাশের কি আছে,না আছে সবই নাস্তিকেরা আবিষ্কার করেছে। বাবুনগরীর পকেটে নাস্তিকের মোবাইল, যে ফ্যানের নীচে বসে লম্বা লম্বা বয়ান মারে, বিদ্যুৎটাও আবিষ্কার করেছে কাফেরা,ইহুদিরা, (Hospital) হ্সপাতালে জম্মের সময় ডেলিভারির সব যন্ত্রপাতি নাস্তিক, কাফের, ইহুদিদের বানানো।

কেন ব্যবহার করে নাসারা কাফেরদের আবিষ্কার?”
বাংলাদেশে ক্ষমতার লোভে জেঃ জিয়া এবং জেঃ এরশাদ সহ জন প্রতিনিধিগণ বাহাত্তরের সংবিধানকে বার বার অনেকবার হত্যা করে নিজেদের রাজনৈতিক লোভ লালসা চরিতার্থ করতে ইসলাম ধর্মকে অপব্যবহার করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষনা করেছিল।
পছন্দ অপছন্দের কারনে / দৈনিক যুদ্ধে কুরুক্ষেত্র ও কারবালা,
বিভিন্ন ধর্মের দেশে সংবিধানে / কেন রাষ্ট্রধর্মের ঠেলা?
হযরত মোহাম্মদের (সা:) মদিনায় বিদায় ভাষনে /
বিসমিল্লাহ ছিল না কেন, / কোন কারনে?
সংবিধান রাষ্ট্রের দলিল, ধর্মগ্রন্থ নয়, / রাগ বিরাগের বশবর্তী না হওয়ার
অঙ্গীকারে রাষ্ট্রধর্ম ভয়।
গভীর ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ঠ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলেন। কবির ভাষায়,
এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রান
মরনে তাহাই তুমি করে গেলে দান।”

হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্ঠান সহ সর্ব ধর্মের মানুষ একত্রে মানুষের ভাই বোন আত্মীয় স্বজন। কোন মানুষ অন্য মানুষের শত্রæ নয়। যে কোন ধর্মের নামে মানব সন্তান হত্যা ও রক্তপাত ধর্ম নয়। জামাতের রাজনীতি হিন্দু বৌদ্ধদের মুসলমান বানষচ্ছে! গত ২২ জানুয়ারি ২০২১ একদল সচেতন ম্রো ছাত্র স্থানীয় এনজিওকর্মী ও সমাজকর্মীদের সহযোগিতায় কক্সবাজারের ‘ঈদগাহ উপজাতীয় মুসলিম কল্যাণ সংঘ’ নামক এক প্রতিষ্ঠান থেকে এই শিশুদের উদ্ধার করে। মীরজাফরের সাথে ইংরাজ শাসদের চক্রান্তের মতো ১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র’র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয় এবং প্রাচীন বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন ( প্রসঙ্গত : কথা শিল্পী শওকত আলীর লেখা প্রদোষে প্রাকৃত জন)।

জামাতের ইসলামি জঙ্গীরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার কাছে পরাজিত হয়ে দিনের পর দিন কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিন্দু বৌদ্ধ নির্যাতন করছে কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ফেইসবুকে কোরাণের উপর পদচিহ্ন দিয়ে রামুর বৌদ্ধ বিহার ভাঙা র মহোৎসব কেন? জামাতের হিংসায় উন্মত্ত রাজনীতির এই নতুন ভাইরাসটা হলো কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ নির্যাতন! কুমিল্লায় কোরান অবমাননার গুজব ছড়িয়ে হিন্দুদের উপর চলছে ভয়া বহ সা¤প্রতিক হামলা। কোরআন যেন মুসলমান রাজনীতির হাতিয়ার না হয়! এই পদ্ধতি বদলানোর কি উপায় নাই? বৌদ্ধ ও হিন্দুদের কান্না বাংলাদেশে এখনও থামেনি! বাহাত্তরের সংবিধান এবং রাষ্ট্রধর্মের ট্রাজেডি! রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বাংলাদেশের কিছু লোকের জানোয়ারের মতো হিংস্রতা রয়েছে!

The great writer হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’ এবং The great writer Dr. আনিসুজ্জামানের ‘কাল নিরবধি’ তে সাতচল্লিশ থেকেই দেশভাগের তথা বাস্তুচ্যুতির কিছু সুদূরপ্রসারী অন্দরশায়ী মানসিক-সাংস্কৃতিক প্রভাব বোধহয় অধরাই থেকে গিয়েছে! অচিরেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু চাইলেন, সংখ্যালঘুরা নিজ নিজ দেশে থেকে যান। ফলে পূর্ব সীমান্তের (Easter n India) ধারাবাহিক অশ্রুপাতের অনিবার্য নির্মমতা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় যথার্থ সহমর্মিতা পায়নি।

রাষ্ট্রধর্মের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মুসলমান রচিত ফেইসবুকে কোরাণের উপর পদচিহ্ন’ দিয়ে রোহিঙ্গা জামাত ও মৌলবাদীরা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বৌদ্ধবিহার বুদ্ধমন্দির ও বাড়ি ধ্বংস করেছে ২০১২ সালে ২৯ শে সেপ্টেম্বর ভয়াল কালো রাতে! বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করার নাম বৌদ্ধ বিহারে ধর্মান্ধ মুসলমানগনের আক্রমণ! দেশদ্রোহী জামাতের রাজনীতি হিন্দু বৌদ্ধদের মুসলমান বানষচ্ছে! ধর্মকে রাজনীতির কারণে তরোয়ালের মতো ব্যবহার করার জন্যে ১৯৪৭ সালের ১৪ই ও ১৫ই আগষ্ট “পাকিস্তান ও ভারত” স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হ’ল! মানুষের দেশ মানুষের মনেরই সৃষ্টি!

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!

Exit mobile version