হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
হাওরে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে! অবাক হওয়ার মতো খবর বৈকি। শৈশব থেকে শুনে এসেছি ইলিশ সমুদ্রের মাছ; কেবল প্রজনন মওসুমে (বর্ষাকালে) সাগরের গভীর জল ছেড়ে নদীর মোহনায় এসে ডিম ছাড়ে, আর তখনই জেলেদের জালে ধরা পড়ে ওরা এবং মানুষের রসনার নিবৃত্ত করে। ইলিশ মাছ বড়সড় দীঘিতে (হাওর) ধরা পড়েছে বলে কস্মিনকালেও শুনিনি। মুরুব্বিস্থানীয়দের মতো বলতে ইচ্ছে করছে–ঘোর কলিকাল! অবশ্যি দীঘিতে ইলিশ প্রাপ্তি কোনো অশুভ কিছু নয়, বরং আশাব্যঞ্জক এবং বাদাম চিবোনোর মতো একটা মজাদার ক্রিসপি বিষয়। কলিকাল শুধু এই অর্থে যে, মনুষ্যসৃষ্ট কাজকর্মে, এমনকি প্রকৃতিতেও কেমন সব উল্টোসিধে কাজকারবার চলছে!
খবরটি প্রথম দেখেছিলাম পত্রিকায় ২০১৬ সালে। ভেবেছিলাম এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তারপর অতি সাম্প্রতিক সময়ে হাওরে ইলিশ ধরা পড়ার ঘটনা আবার দেখলাম পত্রপত্রিকায়।
২২ জুন ২০১৬ বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটা নি¤œরূপ:
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই হাকালুকি। দেশীয় মাছের আধারও বলা হয় এই হাওরকে। কিন্তু এই হাওরে যদি বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে পাওয়া যায় তাহলে কেমন হয়। সত্যিই এই ঘটনাই ঘটছে হাকালুকি হাওরে।
বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর দুয়েকটা ইলিশের দেখা মেলে এ জলাধারে। তবে এবার (২০১৬) বর্ষার শুরুতে ধরা পড়ছে অনেক অনেক ইলিশ। গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে নোনা পানির এই মাছ। হাকালুকি হাওরে ইলিশ মাছ ধরা পড়া প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার জেলার মৎস্য কর্মকর্তা শফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলো দিয়ে হাকালুকি হাওরে ঢুকছে এসব ইলিশ। তবে মাছগুলো আকারে ছোটো হয়, স্বাদও পদ্মার ইলিশের মতো নয়। তিনি জানান, হাওরে ঢুকে পড়া ইলিশ তাদের খাদ্যাভ্যাস মতো খাবার না পেয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। খাবারের অভাবে একসময় মাছগুলো মারা যায়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়–কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে হাকালুকি হাওরের বেশ কয়েকটি সংযুক্ত খাল রয়েছে। বর্ষায় খালগুলো পানিতে ভরে উঠলে কুশিয়ারা নদী থেকে প্রচুর মাছ হাওরে ঢোকে।
প্রতিবছর হাওরে জেলেদের জালে মাঝেমধ্যে ইলিশ ধরা পড়ে থাকে। কিন্তু এবছর বর্ষার শুরুতেই জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। জেলেরা জানান, জালে ধরা পড়া বেশিরভাগ ইলিশের ওজন ২০০-৫০০ গ্রাম। সর্বোচ্চ ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশও ধরা পড়েছে। হাওর থেকে ধরা পড়া ইলিশ বাজারে অন্য ইলিশের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় বলে জানান তারা। ভারতের বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জের আমলশীদ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে সুরমা ও কুশিয়ারা নাম ধারণ করে প্রবেশ করেছে। কুশিয়ারা নদীটি পদ্মার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আগাম বন্যা বা পাহাড়ি ঢল নামলে হাকালুকি হাওরের পানি কুশিয়ারা নদী দিয়ে পদ্মায় গিয়ে নামে। ফলে ইলিশ মাছ প্রজননের জন্য স্রোতের বিপরীতে আসতে থাকে। একসময় তারা হাকালুকি হাওরে ঢুকে পড়ে।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সাল থেকে হাকালুকি হাওরে বর্ষাকালে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। তবে এবার আগাম বন্যার কারণে অন্য বছরের তুলনায় বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তা, মৎস্য গবেষক গবেষণা করে যদি হাওরের ইলিশের বিকল্প খাবার উদ্ভাবন করেন, অতি আহরণের বিষয়টি কমিয়ে আনতে পারেন, সরকারের নীতিনির্ধারণীতে এই বিষয়টি প্রাধান্য পায়, তাহলে হাকালুকি হাওর ইলিশের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে। এই ইলিশের আগমন, সংরক্ষণ ও বড় হয়ে ওঠার জন্য স্থানীয় জনসাধারণ ও জেলেদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিও নেয়া যেতে পারে।