হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
বালুকা বেলায় বিচরণ করছি। অনেক স্মৃতি এসে ভিড় করে প্রতিবারই। কোনটা রেখে কোনটা বলব, ভেবে পাই না। শেষে ধ্যানে বসি যদি কিছু বা কেউ উঁকি দেয় মনের কোণে। ‘বালুকা বেলা’ কলামে এ যাবত কানাডার মূলস্রোত সম্পর্কেই লিখেছি। এবার একটু দূরে সরে গেলাম; দৃষ্টিপাত করলাম নিজ জন্মস্থানে, ঢাকায়। অনেক স্মৃতি, অনেক ঘটনা আর অনেক অভিজ্ঞান।
আজকের লেখাটা একটু স্মৃতিচারণমূলক। উদ্দেশ্য একটাই?আত্মজীবনী লেখার সুপ্ত একটা বাসনা আছে। শুরু করেছিলাম টরোন্টোতে অবস্থান করে। শেষ করতে পারব কিনা জানিনা। তবে চেষ্টা করে যাব শেষ করে যেতে, নাটকের শেষ দৃশ্যের মতো।
স্মৃতিচারণ কিংবা বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখিতে এবং কানাডীয় মেইনস্ট্রিমে লেখায় আবার খুব শিগগিরি ফিরে আসব।
আর দশটা বাঙালি ফ্যামিলির মতো আমিও আটপৌরে জীবনযাপন করে এসেছি। তবে তাতে বৈচিত্র্য একেবারে যে ছিল না, তা নয়। বরং জীবনের অনেক আনন্দঘন মুহূর্ত সৃষ্টি করেছি এবং সাধ্যের মধ্যে অনেক বিনোদনকে ছুঁয়ে দেখেছি। হয়তো কিছু আনন্দ উপাদানকে হাতের নাগালে আনতে প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ে গিয়েছিলাম, তবে তা হাতের মুঠোয় এনেছিলাম শেষাবধি। কিছু কিছু আনন্দের বিষয় ছিল আমার একান্ত নিজস্ব। যেমন, আমি বই কিনতাম এবং পড়তাম। কী ধরনের বই পড়ব, সেটা ঠিক করার আবশ্যকতা তখন ছিল না। তাই যে বই আমার ভালো লাগত, সেটাই জোগাড় করতাম বা কিনতাম। কখনও আনকোরা নতুন, কখনও বা পুরোনো বইয়ের দোকান থেকে। আর কিনতাম ক্যাসেট। গানের ক্যাসেট। কত যে তার হিসাব আমার নিজেরও ছিল না। গুলশান-১ মার্কেটে গিয়ে লং প্লে থেকে পছন্দমতো গান ক্যাসেটে রেকর্ড করাতাম বা রেডিমেড ক্যাসেট কিনে আনতাম। সেসব ক্যাসেট অনেককে দিয়ে দিয়েছি। কানাডায় গমনের প্রাক্কালে বাকি যা ছিল তার সব দিয়ে দিয়েছিলাম আমার ছোটোভাই জামিলকে।
আমি আর বন্ধু হাফিজ গুলশান চষে বেড়াতাম হাইফাই সেট বা স্পিকারের সন্ধানে। হাফিজ ছিল স্পিকারের পাগল। বোস বা হোয়্যার্ফডেল কিংবা স্যানসুই- এসব স্পিকার হাফিজের সংগ্রহে ছিল। স্পিকার নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট সে এখনও করে যাচ্ছে। একসময় আমি কান্ট্রি সং অনুরাগী হয়ে গেলাম। কেনি রজারস, জন ডেনভার প্রমুখদের গান শুনতাম। পাশাপাশি শুনতাম মডার্ন টকিংয়ের গান। কেনি রজারসের সেই গানটি ‘লুসিল’ এখনও শুনি। আর নিজেই রেকর্ড করেছি নিজকন্ঠে। আর আমি চর্চা করতাম আধুনিক বাংলা গান। পাশাপাশি গাইতাম রবীন্দ্রসংগীত। পছন্দ করি গোলাম আলি, মেহেদি হাসান আর অনুপ জালোটার গজল।
ছোটোবেলা থেকে মোহাম্মদ আলি আমাকে বিমোহিত করে রাখেন। ‘মোহাম্মদ আলি: অল টাইম গ্রেটেস্ট’ নাম দিয়ে একটি অ্যালবাম বানিয়েছিলাম। তাতে আলি সম্পর্কিত নিউজ ক্লিপিং, তথ্য, ছবি সন্নিবেশিত করেছিলাম। এই কাজটি আমি করি ইতিহাসে ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’ নামে খ্যাত আলি-ফ্রেজিয়ার যুদ্ধের পর। অ্যালবামে আলির ছবি ছাড়াও আরো অন্যান্য বিশ্ববিখ্যাত বক্সারদের ছবিও ছিল। যেমন জর্জ ফোরম্যান, চাক ওয়েপনার, রকি মার্সিয়েনো, সনি লিসটন, ফ্লয়েড প্যাটারসন, জোরা ফলি, ক্লিভল্যান্ড উইলিয়ামস প্রমুখ। এসব ছবি সংগ্রহ করেছিলাম বিভিন্ন পত্রিকা থেকে।
মোটামুটি এসএসসি পাস করার পর থেকেই আমার স্বপ্নের নায়ক হয়ে ওঠেন ব্রুস লী। ব্রুস লী’র জীবনীসহ (ডকুমেন্টারি) সব ছবিই দেখেছি একাধিকবার। ব্রুস লী মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যান (১৯৪০-১৯৭৩)। তাঁর আয়ুষ্কাল এতই কম ছিল যে, তিনি ‘গেম অভ ডেথ’ ছবিটি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি (১৯৭৩)। ব্রুস লী মারা যাবার কয়েক সপ্তাহ পরে তাঁর জগদ্বিখ্যাত ছবি ‘এন্টার দ্যা ড্র্যাগন’ মুক্তি পায়। অনেক পরে, ১৯৭৮ সালে অবশেষে মুক্তি পায় ‘গেম অভ ডেথ’। ব্রুস লী’র মার্শাল আর্টভিত্তিক ছবি পশ্চিমা বিশ্বে আলোড়ন তোলে এবং বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। অ্যামেরিকার বিখ্যাত অ্যাকশন অভিনেতা চাক নরিস মার্শাল আর্ট রপ্ত করেন এবং পশ্চিমা ছবিতে মার্শাল আর্টের পরিচয় ঘটান। তিনি ‘রিটার্ন অভ দ্যা ড্র্যাগন’ ছবিতে ব্রুস লী’র প্রতিদ্ব›দ্বী রূপে আবির্ভূত হন। ব্রুস লী’র প্রথম ছবি ছিল ‘ফিস্টস অভ ফিউরি’ (১৯৭১)। এরপর তিনি করেন ‘চায়নিজ কানেকশন’ (১৯৭২)।
গেম অভ ডেথ ছবিটি করার প্রাক্কালে ব্রুস লী একদিন মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। তাঁকে দ্রæত কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান (হংকং, ২০ জুলাই ১৯৭৩)। মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়- ‘সেরিব্র্যাল এডিমা’ রোগকে। তাঁর মৃত্যু নিয়ে অনেক প্রবাদ আছে। অনেকের মতে, ব্রুস লী’র মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক প্রেতসিদ্ধ’ কোনো অবস্থা (extraordinary bizarre circumstances). আবার অনেকে মনে করে থাকেন লী’র অপমৃত্যু আসলে ‘ওনি’-এর (জাপানিদের মতানুসারে শয়তান) কারসাজিতে ঘটে। আবার অনেকে এ-ও মনে করেন যে ব্রুস লী অভিশপ্ত ছিলেন। ব্রুস লী’র এই ‘অভিশাপ থিয়োরি’ কিন্তু বিস্ময়করভাবে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে পরবর্তীতে লী’র ছেলে ব্র্যান্ডনের অস্বাভাবিক পরিণতিতে। ‘ক্রো’ (১৯৯৪) ছবিতে অভিনয়ের সময় ব্র্যান্ডন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন (১৯৯৩)। আমি শুনেছিলাম যে, যারা ব্রুস লীকে দুনিয়া থেকে সরানোর হোতা ছিল, তাদের কোনো সদস্য বা ভাড়া করা খুনি ব্রুস লী’র সাথে করমর্দন করার সময় লী’র হাতের তালুতে মৌমাছির মতো সূ² হুল ফুটিয়ে দেয়, সেই হুলে জীবনসংহারী বিষ মেশানো ছিল। সেই বিষ ব্রুস লী’র মস্তিষ্ক অকেজো করে দেয়।
১৯৮০ বা ৮১ সালে এন্টার দ্যা ড্র্যাগন দেখি মধুমিতা সিনেমা হলে। মনে আছে, বø্যাকে কিনেছিলাম টিকেট। পরবর্তীতে দেখি ফিস্টস অভ ফিউরি। এন্টার দ্যা ড্র্যাগনের অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তার পর সারাবিশ্বে ব্রুস লী’র ছবি দেখার জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে দর্শক। কিন্তু নতুন ছবি হবে কী করে? ব্রুস লী তো নেই। এরকম চাহিদার পর লী’র পূর্বের ধারণকৃত ফুটেজ জোড়াতালি দিয়ে কয়েকটি নতুন ফাইটিং দৃশ্যের অবতারণা করা হয় এবং প্রক্সি দিয়ে ছবিও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু একটা অতৃপ্তি আজও থেকে গেছে আমাদের মনে। আমরা এখনও ব্রুস লী’র আরো অনেক ছবি চাই! কিন্তু আর দ্বিতীয় ব্রুস লী তো সৃষ্টি হবে না।
আমি একসময় ওয়েস্টার্ন সিনেমার ভক্ত ছিলাম। ক্লিন্ট ইস্টউড ছিলেন আমার আইকন। তাঁর ‘দি গুড, দি ব্যাড অ্যান্ড দি আগলি’ দেখে ওয়েস্টার্ন সিনেমার প্রতি ঝুঁকলাম। এরপর একে একে দেখে যেতে লাগলাম ওয়েস্টার্ন মুভি। দেখলাম পল নিউম্যান ও রবার্ট রেডফোর্ড অভিনীত ‘বুচ ক্যাসেডি অ্যান্ড দ্যা সানডেন্স কিড’ ছবিটি। এসব ছবি দেখার পাশাপাশি বিশ্ববিখ্যাত মুভি দেখতাম সিনেমা হলে গিয়ে। যেসবের মধ্যে ‘টু উইমেন’, ‘দি সানফ্লাওয়ার’ উল্লেখযোগ্য।
একটা সময় তো ভিসিপি/ভিসিআরের প্রচলন হলো। এইসব যন্ত্র ঘরে ঘরে স্থান করে নেবার আগে বিভিন্ন ক্লাবে বা দোকানঘরে ভিসিআর বসিয়ে দর্শনীর বিনিময়ে দেখানো হতো হিন্দি ছবি। বাইরে সিনেমা হলের ব্যানারের আদলে ঝুলত অমিতাভ-জয়া-ধর্মেন্দ্র্র-জীতেন্দ্র-শ্রীদেবীর ছবি সম্বলিত পোস্টার। ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবঘরে এই আয়োজন নিয়মিত হতো। সেই সময়েয় কয়েকটি ছবির কথা মনে আছে-গেরেফতার, শোলে, তোফা প্রভৃতি। এখানে কখনও ছবি দেখিনি, বরং ছবি চলাকালিন স্থানটা বরাবরই এড়িয়ে চলতাম।
একা প্রথম বাংলা ছবি দেখতে যাই ক্লাস নাইন বা টেনে পড়া অবস্থায়। ছবিটার নাম ছিল দি রেইন। বাংলাদেশেরই ছবি। এরপর আমি পুরোনো ময়নামতি ছবিটি দেখি আনন্দ হলে। হলে গিয়ে আমার শেষ ছবি দেখা ছিল ১৯৯৩ সালে কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবিটা। সেটা আমি, আমার স্ত্রী ও আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মিলে শ্যামলী হলে দেখেছিলাম। এরপর আমি আর হলে গিয়ে কোনো ছবি দেখিনি, সেটা শর্টফিল্ম হোক বা ক্লাসিক কোনো ছবি হোক। এর আগে অনেক ছবি, যেমন- পথের পাঁচালি, দেবদাস প্রভৃতি ছবি দেখেছি ন্যাশনাল আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে। ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে দেখেছি রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট আর আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম।
আমার দেখা একটা ছবি’র কথা বিশেষভাবে বলতে চাই। ছবিটার নাম ‘টেস্ট দ্যা বøাড অব ড্রাকুলা’। আনন্দ সিনেমা হলে ছবিটা দেখার পর আমার সবকিছু নিরানন্দময় হয়ে গেল। রাতে শুয়ে ভয় পেতাম, যখন তখন ড্রাকুলার কথা মনে হতো। ভয়ের সাথে একটা রোমাঞ্চমিশ্রিত অনুভূতি কাজ করছিল। কারণ ছবিটি উপভোগ করেছিলাম। সেটা প্রথম তারুণ্যের কচি-অনভিজ্ঞ মনের মাধুরী মেশানো কিনা জানি না। ছবিটা মনে দাগ কেটেছিল। পরবর্তীতে ড্রাকুলা নিয়ে অনেক ছবি দেখেছি, কোনোটাই সেই ছবিটার মতো মনে দাগ কাটতে পারেনি। এর একটা কারণ হতে পারে যিনি ব্রাম স্টোকারের মূল ‘ড্রাকুলা’ পড়ে ফেলেছেন তাঁর কাছে ড্রাকুলাকে নিয়ে নির্মিত ছবিগুলোর কোনোটিই ভালো লাগবে বলে আমার মনে হয় না। ‘টেস্ট দ্য ব্লাড অভ ড্রাকুলা’ দেখার সময় ব্রাম স্টোকারের বিশ্ববিখ্যাত হরর কাহিনি ড্রাকুলা আমি পড়িনি। ছবিটা ভালো লাগার এটা একটা কারণ হতে পারে। অন্য কারণ হতে পারে যে আমার জীবনে প্রথম দেখা হরর ছবি। তৃতীয় আরেকটি কারণ হতে পারে টেস্ট দ্য ব্লাড অব ড্রাকুলা-এর নির্মাণশৈলী। আরো একটা কারণ বোধহয় ছবিটাতে মূল ড্রাকুলার অনেকখানিই ছিল। মজার ব্যাপার হলো ড্রাকুলা’র মালমশলা নিয়ে অসংখ্য ছবি হয়েছে। অসংখ্য নাম দেয়া হয়েছে সেসবের। ড্রাকুলা আর ভ্যাম্পায়ার নামটা এসেছে শতবার, ব্লাড শব্দটাও এসেছে। এমনকি মূল ড্রাকুলার অন্যতম চরিত্র প্রফেসর ভ্যান হেলসিং-এর নামটাও এসেছে মুভির নাম হিসাবে। আমি নিজেও ড্রাকুলাকে নিয়ে নির্মিত কয়েকটি ছবি দেখেছি, যেমন- দি লাস্ট রাইটস অব ড্রাকুলা, টেস্ট দ্য ব্লাড অব ড্রাকুলা, কাউন্ট ড্রাকুলা, এবং ড্রাকুলা (১৯৯২)।
সবশেষ ছবিটার দৃশ্যায়ন বেশ ভালো ও ব্রাম স্টোকারের বর্ণনাকে যথাসাধ্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হলেও নির্মাণে বেশ তড়িঘড়ি ভাব পরিলক্ষিত। এছাড়া কিছু যৌনতার দৃশ্য সংযোজন করা হয়েছে। তবে, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা পরিচালিত ও কলম্বিয়া পিকচারস-এর ব্যানারে নির্মিত এই ছবিটি মূল ড্রাকুলার অনেকখানিই ধারণ করেছে। ড্রাকুলাকে নিয়ে নির্মিত এপর্যন্ত কোনো ছবিই মূলানুগ হয়নি। যা হয়েছে তা পরিচালকদের/ স্ক্রিপ্টরাইটারদের উর্বর মস্তিষ্কের যাবতীয় কাজকারবার। কিন্তু কেন! কারণ দুঁদে লেখক ব্রাম স্টোকারের কাউন্ট ড্রাকুলা’র অভিনব রচনারীতি। আর এর সাইকোলজিক্যাল দিকগুলো। সর্বোপরি, এর লোকাল কালার মানে সেটিংস। জার্মানি, রোমানিয়ার ট্র্যান্সিলভ্যানিয়া অঞ্চল, ইংল্যান্ড এবং কয়েকটি সাগর, যেমন বে অভ বিস্কে, দার্দানালেস প্রণালী, বø্যাক সী-এসবের বর্ণনা। পুরো ড্রাকুলাই লেখা হয়েছে ডায়রি/জার্নালে লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে। অনেকটা ইপিসল্যারিধর্মী (পত্রাকারে)। জোনাথান হারকার, মিনা হারকার, ড. সেওয়ার্ড চরিত্রগুলো তাদের অনুভূতি/অ্যাকশন প্রকাশ করছে ডায়রির মাধ্যমে। এতে আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য/অপ্রাকৃত বিষয়গুলো যে ঘটছে-সে ধারণা পাঠকদের মধ্যে বদ্ধমূল হয়। আরেকটি বিষয়, ড্রাকুলা’র অশুভ প্রভাবের শিকার হয়ে যে চরিত্রগুলো অস্বভাবী আচরণ করছে, তাদের বিবরণ পড়ার সময় পাঠকদের সর্বক্ষণ একটা উৎকন্ঠা থাকে, এই বুঝি (মিনা বা ড. সেওয়ার্ড কিংবা স্বয়ং ভ্যান হেলসিং) ড্রাকুলার অশুভ অদৃশ্য প্রভাবে ড্রাকুলার অধীন হয়ে গেল। মিনার ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটিই প্রায় ঘটে যাচ্ছিল! সবচেয়ে বড় বিষয়, যারা ড্রাকুলার প্রভাবাধীন তারা কিন্তু সেটা জানে না। যেমন লুসি। সে ড্রাকুলার শিকার কিন্তু সে তা জানে না! বিষয়গুলো এমনি সূ² ও সাইকোলজিক্যাল যে, স্টোকার এসব বর্ণনার লক্ষ্যে আর প্রকৃত আবহ ফুটিয়ে তুলতে আশ্রয় নিয়েছেন অভিনব পদ্ধতি। ফলে তিনি সক্ষম হয়েছেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভয়াল কাহিনিটি তৈরি করে ফেলতে। বইটিতে মারামারি, কাটাকাটি, গলগলিয়ে রক্ত ঝরানো, হুমকি ধামকি- কিছুই নেই! কিন্তু তবু এটি ভয়াল, রোমহর্ষক। আবার এসব অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোকে বিশ্বাসযোগ্য করানোর জন্য স্টোকার কিন্তু পাত্রপাত্রীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়, অঞ্চলবিশেষে বা অন্যান্য মানুষের মধ্যে কোনো অতিনাটকীয়তার বর্ণনা আনেননি। কী ঘটে গেছে তা জানে পাত্রপাত্রী আর জানে পাঠক। ‘আজকের দিনটা খুব সুন্দর। স্বর্ণালি রোদ চারিদিকে,’ এরকম বর্ণনায় আমরা ভালো অনুভব করি। ড্রাকুলাতেও সেরকম। কিন্তু আমরা ভীত থাকি এই বুঝি ভয়ঙ্কর অশুভ কিছু ঘটে যাচ্ছে! ডায়রি বা জার্নালের বিবরণটাই স্টোকারের কাহিনির মূলস্তম্ভ ও কাঠামো। একেকটা বিবরণ যদি বুঝতে পারেন বা এর সাইকোলজিক্যাল দিকগুলো ধরে ফেলতে পারেন, তাহলে আপনার প্রতিটি লোমকূপ শিউরে উঠবে। মেরুদণ্ড দিয়ে নামবে শীতলপ্রবাহ।
এখন, এসব বিষয় সিনেমাতে চিত্রায়িত হবে কেমন করে? তাই ড্রাকুলার ওপর সিনেমাগুলো হয়েছে এলোমেলো ও অসংলগ্ন কাহিনি বা কাঠামোয়। এমনকি ড্রাকুলার একটি সিনেমায় ড্রাকুলার প্রাসাদের সামনে মোটরগাড়িতে করে এসেছে অভিযাত্রীরা- এমন দৃশ্যও চিত্রায়িত হয়েছে!
‘Listen to them? children of the night. What music they make.’
‘There is a reason why all things are as they are.’
‘I am all in a sea of wonders. I doubt; I fear; I think strange things, which I dare not confess to my own soul.’
উদ্ধুতিগুলো ড্রাকুলা থেকে নেয়া। কী অসাধারণ! কী দর্শনসমৃদ্ধ! এসব কি চলচ্চিত্রায়ন সম্ভব? না। তাই ড্রাকুলার কাহিনির অন্তত দশ শতাংশ যোগান দেয়, এমন চলচ্চিত্রও কিন্তু হয়নি। আরেকটা বিষয়ে ইঙ্গিত না করে পারছি না। সেটা হচ্ছে ড. সেওয়ার্ডের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেনফিল্ড চরিত্রটি। সে ড্রাকুলার অপার্থিব প্রভাবের অধীন। সে এমনকিছু রক্ত পানি করা আচরণ করছে, একমাত্র ব্রাম স্টোকারই পারেন যার প্রকৃত বর্ণনা দিতে। ড. সেওয়ার্ড বুঝতে পারেন যে, তাঁর রোগী Zoophagous (life-eating) ম্যানিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু কেন এবং সে যে ড্রাকুলার অশুভ প্রভাবের শিকার, তা সেওয়ার্ড জানেন না। রেনফিল্ড প্রাণশক্তি অর্জনের জন্য প্রথমে মাছি খেতে শুরু করে। তারপর সে মাকড়শা খেতে লাগল। এরপর সে খেতে শুরু করল চড়–ই পাখি। গোটা চড়–ই, পাখাশুদ্ধু! তার বিশ্বাস, জীবন্ত প্রাণী খেলে সে তার মহাগুরুর (ড্রাকুলা) খুব কাছে চলে যাবে! এভাবে ড্রাকুলার ভয়াল নিষ্ঠুর খেয়ালের (তৃষ্ণার) শিকার হয়ে ড্রাকুলার ভাগ্যহীন বলী বিচিত্রতম আচরণ করে।
রেনফিল্ডের মৃত্যুটা বীভৎস ও হৃদয়বিদারক। ড্রাকুলা রেনফিল্ডকে দিয়েই পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তারপর তাকে থেঁতলে মেরে ফেলে শুধুমাত্র ড. সেওয়ার্ড আর ভ্যান হেলসিংদেরকে সতর্ক করতে। লুসি’র অন্তিম মুহূর্তের দৃশ্যটি কার বর্ণনায় (ডায়রিতে) উপস্থাপিত হয়েছে, তা আমার মনে পড়ছে না। সম্ভবত মিনা’র বর্ণনা। সে দৃশ্যে আছে: পাশে দণ্ডায়মান বাগ্দত্তকে (নামটা ভুলে গেছি) মদির আহ্বান জানিয়ে লুসি তার ঠোঁটে চুমু খেতে বলল। প্রেমিক ঝুঁকে পড়ে সে কাজটি করতে গেলে ভ্যান হেলসিং একলাফে কাছে এসে এক ঝটকায় সরিয়ে দেন প্রেমিককে। এতে জ্বলে ওঠে লুসি’র দুই চোখ আর প্রেমিক ভীষণ বিরক্ত হয় ভ্যান হেলসিং-এর ওপর। কিন্তু বর্ণনাটা এমনভাবে আছে, লুসি’র কামনামদির নিষ্ঠুর চোখের লাস্যময় দিকটি ছাপিয়ে সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রফেসরের প্রতি কৃতজ্ঞতার একটা ছটা। তারপর লুসি চোখ বোজে অনন্তকালের জন্য। আসলে যে আহ্বানটি লুসি’র মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল, সেটা লুসি করেনি। প্রফেসর প্রেমিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়াতে তাই জ্বলে উঠেছিল লুসি’র নারকীয় চোখ। কিন্তু মুমূর্ষু লুসি’র ভেতরের ভালো সত্তাটি ঠিকই বুঝেছিল যে প্রফেসর ঠিক কাজটিই করেছেন।
আপনারা যারা মূল বইটি পড়েছেন তারা ড্রাকুলার চলচ্চিত্রায়ন দেখতে যাবেন না। তাহলে আশাভঙ্গ হবে। তারচেয়ে যেটা আপনি আপনার বুদ্ধি দিয়ে, আপনার মনন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন, সেই চিত্রই ধরে রাখুন মনের মাঝে। আপনাদের মধ্যে শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ পড়েননি, এমন সংখ্যা বিরল বলেই বিশ্বাস করি। তাই যারা মূল দেবদাস পড়ে, সেটাকে লালন করে তারপর হাল আমলের হিন্দি দেবদাস ছবিটা দেখেছেন, তারা কি বিশাল একটা ধাক্কা খাননি? তাই বলছিলাম, যে চিত্রপট মনে তৈরি হয়ে গেছে সেটার ওপর অনর্থক কেন রঙতুলি চালাই?
ড্রাকুলা কি সত্যিই ছিল? উত্তর হচ্ছে: ছিল। রোমানিয়ার একটি অংশ- ওয়ালাচিয়ার রাজা ছিলেন ভ্লাড তৃতীয়। সেই রাজার আতঙ্ক উদ্রেককারী কুখ্যাতিই ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার কাঁচামাল।
ভ্লাড তৃতীয় ১৪৩১ সালে ট্রানসিলভানিয়ার এক পার্বত্যাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। ওই স্থানটি আজকের রোমানিয়ায় অবস্থিত। তার বাবা ছিলেন দ্বিতীয় ভ্লাড ড্রাকুল। দ্বিতীয় ভ্লাডের নামের সঙ্গে উপনাম ড্রাকুল বা ড্রাগন যুক্ত হয়েছিল, তিনি পবিত্র রোমান সম্রাটের সমর্থন নিয়ে অর্ডার অব দ্যা ড্রাগন নামে একটি খ্রিস্টান মিলিটারি অর্ডার চালু করার কারণে। দ্বিতীয় ভøাডের নামের সঙ্গে ড্রাগন কিংবা ড্রাকুলা যুক্ত হলেও আজকে আমরা ড্রাকুলা বলতে যে রক্তচোষাদের জানি তা দ্বিতীয় ভ্লাডের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। তিনি অনেকটা শান্তিপ্রিয়ই ছিলেন। তবে তারই সন্তান তৃতীয় ভ্লাডের ক্ষেত্রে উপাধিটি যথাযোগ্য। স্টোকারের উপন্যাসের ড্রাকুলা চরিত্রটি বাস্তব জীবন থেকে নেয়া। এমন এক ব্যক্তিকে তিনি ড্রাকুলা হিসাবে দেখিয়েছেন যার কাছে রক্ত ছিল খুবই প্রিয়। সেই রক্ত, মানুষের রক্ত। মানুষের তাজা রক্ত তার চিত্তে নেশা ধরাত এমন এক ব্যক্তিকেই তিনি তাঁর বইতে ড্রাকুলা হিসাবে দেখিয়েছেন। ওয়ালাচিয়া রাজ্যের প্রিন্সই ছিলেন স্টোকারের বইয়ের ড্রাকুলা। তাকে ভ্লাড দ্য ইমপেলার নামে ডাকা হতো। ব্রাম স্টোকার এখান থেকেই ড্রাকুলা নামটি গ্রহণ করেন এবং ড্রাকুলার নিষ্ঠুর প্রেতসদৃশ্য কাজকারবারের আলোকে সৃষ্টি করেন তাঁর কাউন্ট ড্রাকুলা নামের কাল্পনিক চরিত্রটিকে।
আশির দশক থেকে নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল ভিসিআরের দাপটের সময়কাল। প্রথমে এলো ফুনাই ভিসিপি। মানে ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার। এরপর এলো ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার, সংক্ষেপে ভিসিআর- এখনকার ডিভিডি প্লেয়ারের মতো। পার্থক্য, ভিসিআর চালাতে হতো টেপ সম্বলিত বড় ক্যাসেট দিয়ে আর এখন ডিভিডি চালানো হয় ডিভিডি বা ভিডিও সিডি দিয়ে। সেই সময় সপ্তাহের দুদিন ছুটিতে ভিসিআরে অসংখ্য ছবি দেখেছি। আমি যে ভিসিআরটি কিনেছিলাম সেটা হলো হেভি ডিউটি এবং দামি। মডেল ছিল ন্যাশনাল এনভি ৩৭০। সেসময়ে আমার দেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে ছিল ইস্টউডের ‘দি পেইল রাইডার’ ব্রুক শিল্ডস অভিনীত ‘দি ব্লু ল্যাগুন’ ও ‘এন্ডলেস লাভ।’ ফিবি কেট্স অভিনীত ‘প্যারাডাইস’। একই সময়ের এই দুই মনকাড়া সৌন্দর্যের তরুণী বিশ্বের কোটি কোটি তরুণ-তরুণীর মন জয় করে ফেললেন। এরিখ মারিয়া রেমার্কের ‘অল কোয়ায়েট অন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ বইটির বাংলা অনুবাদ পড়েছিলাম। একই সময়ে দেখে ফেললাম মুভিটিও। ছবিটা দেখার পর আমার মন কেমন করে উঠেছিল।
আবু ইসহাকের ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ দুইবার পড়েছিলাম। আর মধুমিতা হলে যখন ছবিটি দেখলাম তখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো যে, চেষ্টা, শ্রম ও কমিটমেন্ট থাকলে ভালো ছবি তৈরি করা খুবই সম্ভব। দৃশ্যায়ন, অভিনয় আর কাহিনির ধারাবাহিকতায়/ সংলাপে ছবিটি উপভোগ্য ছিল। বাংলাদেশের অধিকাংশ পরিচালকেরা ছবি বাণিজ্যায়নের যে ট্রেন্ড এখন অনুসরণ করছেন তা ধ্বংস ডেকে এনেছে সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণশিল্পে। যেকোনো বাণিজ্যিক ছবিতে অশ্লীলতা এখন একটি প্রধান শর্ত আর আমাদের চলচ্চিত্রের নায়িকা/সহনায়িকা/এক্সট্রাদের সংলাপ/নাচ, পোশাক/অঙ্গভঙ্গি এমনি বিচ্ছিরি যে, তা কোনো সূত্রে ফেলা যায় না। এসব ছবি দেখে দর্শকরা যে পরিমাণ উত্তেজিত হয়, বোধকরি বøুফিল্মেও তারা সে পরিমাণ উপাদান পান না। তাই এসব ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য লাভ করে মূলত একটি জায়গাতেই। আর কাহিনি ও সংলাপের কথা কী বলব। এখনকার সব বাংলা ছবির কাহিনি কিন্তু একই! শুধু একেক পরিচালক একেকভাবে উপস্থাপন করেন। আর সংলাপ শুনলে তো ভিড়মি খেতে হয়, কানে যেন কেউ গরম সিসে ঢেলে দেয়। যেসব সেট তৈরি হয়, তাতে রুচি ও মেধার লেশমাত্র থাকে না। আর নাচের একটি ভঙ্গিই, মানে লম্ফঝম্ফ ও শারীরিক কসরতের ঢং সব ছবিতে এক ও অভিন্ন! আর অভিনয়? সেসব অতিনাটকীয়তায় ভরপুর। অভিনয় যে একটা শিল্প, তা বোধকরি অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভুলে গেছেন। বর্তমানে বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে অশিক্ষা, অরুচি আর অজ্ঞতার এতটাই আগ্রাসন যে এ বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত হতে দেখলে আঁতকে উঠি।
আমি টিভি ‘নাটক’ কমই দেখতাম। ‘দাদাগিরি’ আর ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ দেখতাম কখনোসখনো। খবরের জন্য স্থানীয় চ্যানেলগুলো দেখতাম। আসলে আমি আর আমার ছেলে শাহদিব নানা স্পোর্টস চ্যানেল, অ্যানিমেল প্ল্যানেট, ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক, আর বিভিন্ন বিদেশী মুভি চ্যানেলগুলোতে এতই মগ্ন থাকতাম যে, লোকাল চ্যানেলের অনুষ্ঠান বা ‘নাটক’ দেখার সময় দুজনের হতো না। তবে অধুনা আমি দুয়েকটি বাংলা নাটক দেখি। এক পরিচালক আমার একটি গল্প পড়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তার অনুরোধে আমি সেই গল্প অবলম্বনে চিত্রনাট্য তৈরি করে দিই। নাটকটি এনটিভিতে প্রচারিত হয়। বর্তমানে আরো চিত্রনাট্য লিখছি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বা বার্কলে’স ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, ম্যান ইউনাইটেড-এর খেলা কিংবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকলে অনায়াসে রাতজাগার কাজটি সেরে ফেলতে পারতাম। অবশ্যি টিভি নাটককে ‘নাটক’ বলতে আমি নারাজ। বলা যেতে পারে টিভি শো। (অথবা অন্যকোনো যথাযথ নাম আপনারা দিতে পারেন)। আর কোনো শো ধারাবাহিকভাবে হলে তাকে বলা যেতে পারে টিভি সিরিয়াল।
নাটক বলতে আমি বুঝি মঞ্চনাটক বা পথনাটক। মহিলা সমিতিতে বা অন্য কোনো মঞ্চে যা মঞ্চস্থ হয়। নাটকের জন্মই তো হয়েছে মঞ্চে। একা, সপরিবারে এবং বন্ধুবান্ধব নিয়ে মঞ্চনাটক দেখেছি। তবে অল্পসংখ্যক দেখেছি। ঠিক বলতে পারব না কেন আমি সাহিত্যসংস্কৃতির এই অমূল্য ক্ষেত্রটিকে এত অবহেলা করলাম। আমার দেখা মঞ্চনাটকগুলোর মধ্যে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘গোরুরগাড়ির হেডলাইট’ প্রভৃতির নাম মনে পড়ছে। অন্যদিকে, অপেক্ষাকৃত সা¤প্রতিক সময়ে যে সিনেমাগুলো আমার ভালো লেগেছে সেগুলোর কয়েকটি হলো ঘানি, আগুনের পরশমণি প্রভৃতি।
কিংবদন্তি কন্ঠশিল্পী মরহুম বশির আহমেদের বাসায় যেতাম সংগীত শিখতে। সপ্তাহে দুদিন বা একদিন। আমাদের বাসা বিক্রমপুর হাউস থেকে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লায় যেতাম বেবিট্যাক্সিতে চেপে। একটা উল্লেখযোগ্য সময় পর্যন্ত সেখানে তালিম নিয়ে তারপর হঠাৎ থেমে গেলাম। বোধহয় আমার বিয়ের কথাবার্তা বা আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরে যাব। যাব-যাব করে পার করে দিলাম লম্বা সময়। সংগীতশিক্ষা থেমে গেল। আমার জীবনের একটি গর্হিত অন্যায় পদক্ষেপ। এবং ভুল। আমার বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন লেখায় (নিজ সম্পর্কে) বর্ণনায় আপনারা দেখতে পাবেন যে, আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই কনসিস্ট্যান্ট ছিলাম না। ভুল করে, ঠেকে গিয়ে তারপর মানুষ শেখে। ভুল শুধরায়। আমি তা-ও পারিনি।