হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
‘বালুকা বেলা’ কলামে ইতোমধ্যেই অসংখ্য এপিসোড লিখেছি। এখন মনে হচ্ছে যেনো দিন দিন খেই হারিয়ে ফেলছি। আমার মনন ও মেধা ক্ষয়িত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থামলে চলবে না। জীবন বহমান, চলমান। থেমে গেলে হেরে যেতে হবে। হেরে গেলে সবাই বলবে আমি লেখক জাতির কলংক। এই এক না ‘পারা’র জন্য অন্যসব লেখার ওপর কালিমা পড়তে পারে।
আসলে আমি এমন এক জাতের ‘লেখক’ যে পারতপক্ষে নোবেলপ্রাপ্ত লেখকদেরও অনুসরণ করি না। তাদের লেখা পড়ার অভ্যাস আছে। পড়ি, তবে দস্তয়ভস্কির লেখা থেকে কোনো অংশ মেরে দিয়ে আমার বলে চালিয়ে দিতে পারি না বিধায় লিখতে আমার কষ্ট হয়। আমার মনে হয়, লেখার কাঠামো যতো শক্তিশালীই হোক না কেনো, বিখ্যাত লেখকদের লেখা অনুপ্রবেশ করালে সেটা কোনো না কোনো বিদগ্ধ পাঠকের নজরে পড়বেই। আর তাতে, লেখক ক্যারিয়ারে নকল মালের স্থায়ী সিল পড়ে যাবে।
আর সে কারণেই মনে যখন যা আসে লিখি। একটা গল্প আমি বহু আগে লিখেছিলাম একটা বিদেশি লেখা অনুসরণ করে। এক্সপেরিমেন্টাল আরকি। দেখি কী হয়। সেটি ‘পরবাস’এ প্রকাশিত হয়েছিলো। যদিও গল্পের শেষে আমি লিখেছিলাম, একটি বিদেশি কাহিনির ছায়া অবলম্বনে।
এবারের আমাদের সময় ঈদসংখ্যায় আমার একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘পঙ্গু যুবকের ‘ইতি’ কথা।’ ইতিকথা নয়; ‘ইতি’ কথা। কেননা, প্রোটাগোনিস্টের নাম সোহেল–সে পঙ্গু আর তার প্রেয়সীর নাম ইতি। সে-ও খুঁড়িয়ে হাঁটে, কেননা তার মেয়েবেলায় সে পোলিও আক্রান্ত হয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। ভাই, মিললো তো? মানে খাপে খাপ, মন্টুর বাপ। গল্পটি সম্পর্কে এখনও অবশ্যি কারোর মত পাইনি। হয়তো পাবো। তবে আমি তৃপ্ত। এজন্য যে, মৌলিকত্ব থেকে দূরে সরে যাই না আমি।
এই গল্পটি নিয়ে এক নাট্যনির্মাতা মন্তব্য করেছিলেন যে, এর প্লট অসাধারণ। তখন এর নাম ছিলো ‘আংটি।’ পরে অবশ্য নাম বদলে দিই। নানা কারণে গল্পটি টিভি নাটক পর্যন্ত গড়ায়নি। টিভি নাটক পর্যন্ত গড়াতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। ঈদসংখ্যায় গল্পটি গেছে, সে-ই ঢের।
আমার অনেক প্রকাশিত গল্প বা গল্পের বই থেকে অনেক সাইট বা আন্তর্জাল পত্রিকা রিপ্রোডিউস করেছে। পয়লা পয়লা হিসেব ছিলো আমার এমন কতোগুলো রিপ্রোডাকশন হয়েছে। এখন আর হিসেব নেই। যারা করবার, তারা করুন, কিন্তু ‘ভুল’ করে আবার আমার নামের বদলে নিজেদের নাম বসিয়ে দেবেন না। সেটা গর্হিত অপরাধ।
আমি বরাবর সৌন্দর্যের পিয়াসী ও প্রয়াসী। তাই অন্যেরা সৌন্দর্য ও সততা বজায় রাখুন, তা চাই আমি। আমার একটি হিট গল্প, ‘মাধবী’ অনেক স্থানে রিপ্রোডিউস করা হয়েছে। আমার ভাগ্য ভালো যে, লেখকের নাম অন্য কারোর নামে হয়নি।
আমার আরেকটা অভ্যেস আছে–লিখতে আমি সময় নিই। নইলে সরস গল্প বা প্রবন্ধ তৈরি হবে কেমন করে? যদিও একথা আমি কখনও বলিনি যে, আমার সব গল্প-প্রবন্ধই সুখপাঠ্য বা এক বসায় শেষ করার মতো। আমার কোনো কোনো লেখা কারোর ভালো না-ও লাগতে পারে। আবার কোনো কোনো লেখা পাঠকের পছন্দের তালিকায় চলে আসে।
২০২৩ সালে বইমেলায় প্রকাশিত আমার জলবায়ুবিষয়ক গ্রন্থ ‘পরিবর্তিত জলবায়ু: মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’ সুলেখক হাসান ইকবাল অনলাইনে কিনে পুরো বইটি পড়ে বলেছিলেন–আপনার গ্রন্থ পড়ে অনেকেই নাখোশ হবেন। বইটি অপাঠযোগ্য তা নয়; বরং বহুলতথ্য, আমার গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে ঠাঁসা বইটি। হাসান ইকবাল থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবার ইঙ্গিত করেছেন।
এই যে, জলবায়ু ফান্ড আসে, টেকনোলজি আসে, আসে অনুদান। এসব কোথায় যায়। বিশেষ একটা শ্রেণির উদরে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছি তারা কারা। এই দিকটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে হাসান ইকবাল ফেসবুকে বিরাট স্টেটাস দিয়েছেন। আমি পরিশ্রম দিয়ে, মেধা খাটিয়ে, রাত জেগে বই লিখি। আর খাদকেরা সেই বই দেখে শিক্ষা নেয়া তো দূরের কথা-ফন্দি আঁটতে থাকেন নতুন করে। আমার আজকের এই লেখায় কেউ যদি আমার ঔদ্ধত্যের বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত পেয়ে থাকেন কবে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন। আমি সততার কথা বলি। সেটা ঔদ্ধত্যের মতো মনে হতে পারে। সত্য কথা একটু তিক্ত হবেই।
বলতে ইচ্ছে করে-ধরণী দ্বিধা হও।