হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
ইংরেজি শব্দ ব্যাম্বুজল। ব্যাম্বু কথাটা থাকলেই যে কিছু একটা খারাপের দিকে মোড় নেবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যাম্বুজল (bamboozle) শব্দটিও তাই। Noun হলো bamboozlement. এর সোজাসাপ্টা অর্থ কাউকে ধোঁকা দেয়া বা ঠকানো। তবে এটিকে সর্বাধিক যে অর্থে ব্যবহার করা হয়, তা হলো কাউকে ধন্ধে ফেলা। যা সত্য নয়, তা নানাভাবে সত্যায়নের প্রচেষ্টা।
ব্যাম্বু’র অর্থ তো সবাই জানে। বাঁশ শব্দটা আরো সহজ-সরল। বাঁশের কীর্তিকাহিনী আছে অনেক। এই মুহূর্তে একটা কৌতুকের কথা মনে পড়ছে। এটা সত্যি ঘটনাও হতে পারে। সত্যিকারে ঘটবার মতো সব উপাদানই এতে রয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ঘটনা। এক লোক খালের পাশে বসে দা দিয়ে লম্বা কতোগুলো বাঁশের গিঁট ছাড়াচ্ছিল। খালের এই পাশে বসা আরেক লোক সেটা মনোযোগ দিয়ে দেখছিল। একপর্যায়ে এইপাড়ের লোক বলে উঠল, ‘দেইখ্য মিয়া, বাঁশ যেন আমার গতরে (গায়ে) না লাগে।’ ওই পাড়ের লোক বলল, ‘তুমি মিয়া বইয়া রইছ হেই পাড়ে, বাঁশ তোমার গতরে কেমনে লাগব?’ এই পাড়ের লোকটি তখন বলল, ‘না, এমনেই, আলাপসালাপ করলাম আর কি।’
আমার আজকের এই পর্বটি তেমনি থোড়া সে গপসপ আরকি। আর ব্যাম্বু দিয়েই সেটা শুরু করলাম। এমন একটা বিষয় নিয়ে শুরু করা উচিত, যাতে অনেকদিন ধরে না লিখতে পারার মন্দা ভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারি। গত কয়েকমাস সঙ্গীত চর্চায় ব্যস্ত ছিলাম। তারপর তো বাংলা কাগজ থেকে বলা হলো কলাম লিখতে। ব্যস, আরম্ভ করে দিলাম। বেশ কয়েক কিস্তি প্রকাশও করলাম। তাই দেরি করাটা পুষিয়ে নিতে ব্যাম্বু আলোচনাটা লাগসই মনে হচ্ছে।
বিষয়টি এমনভাবে ভাবা যাক- কেউ হয়তো আপনার চোখের সামনে বাঁশ নাড়ছে। অনেকটা প্রলোভনের মতো। এখন এই বাঁশটা সে আপনাকে দেবে নাকি আপনাকে দান করে দিবে, আপনি বুঝতে পারছেন না- আপনাকে ড়াবৎযিবষস বা আচ্ছন্ন করে ফেলা। আর এই অর্থেই এরা শব্দটা ব্যবহার করে।
এখানকার এই ব্যাম্বুজলে আমিও আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। অনেক সহজ বিষয়কে তারা এতো জটিল করে তোলে যে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছিলাম প্রতিনিয়ত। এটা বিশেষভাবে এখানকার পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি এই জালে জড়িয়ে গেছিলাম বলেই কথাটা পাড়লাম।
এখানকার একজন টিচার তার সাবজেক্টের বাইরে একটা বাড়তি কথা বলতে চায় না। এরা যা জানে, সেটাতেই থাকবে। কোনো যুক্তিতর্ক এখানে চলবে না। আমি আমার অ্যাসাইনমেন্টে ক্রিয়েটিভ অনেককিছু যোগ করেছি। সেগুলো ভুল সেটা তারা বলেনি কিন্তু তারা এর তারিফও করেনি। ওরা বলেছে আমি ওদের ফরমেট অনুসরণ করিনি। টিচাররা এই ফরমেট নিয়ে বড্ড বেশি সময় নষ্ট করে বলে আমার মনে হয়।
একটা প্যারাগ্রাফের কয়টি বাক্য হবে গুনে গুনে সেটাও তারা বলে দেয়। বুঝতে পারি না, এই জাতি উন্নতির এতটা শিখরে কেমন করে উঠল। সহজ উত্তরটা বোধহয় এরকম হতে পারে যে, শিখরে ওঠার প্রাক্কালে তারা একরকম ছিল, উঠবার পর আবার অন্যরকম হয়ে গেছে। অন্যদিকে, আমরা বাঙালিরা নিজেদেরকে অনেক চালাক-চতুর মনে করি। কিন্তু হাজারো চালাকি চাতুর্যের বিরুদ্ধে ওদের একটা মাত্র ফরমেট একাই একশ’। এবং এইসব ফরমেট চাকরিপ্রাপ্তি, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ, পড়াশোনা, শিখরে আরোহণ করা- যাবতীয় সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর একান্ত করুণভাবেই প্রযোজ্য। তা না হলে বাংলাদেশি একজন পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অড জব করতে হতো না। আরো একটা ‘সুবিধা’ তারা নেয়। ভাষার সুবিধা। তাদের ঝড়োগতির ন্যাটিভ ল্যাঙ্গুয়েজের (ইংরেজি) তোড়ে অনেক বাংলাদেশি বা অন্য দেশের মানুষেরা রীতিমতো চোখে অন্ধকার দেখে।
আমি জার্নালিজম পড়ছিলাম। জার্নালিজমের টেকনোলজি বা প্রিন্টিং-এর টেকনোলজি এখানে যা, বাংলাদেশেও কিন্তু প্রায় একইরকম। হয়তো বাংলাদেশে তার সংখ্যা কম বা বেতন পরিস্থিতি কিংবা কাজের পরিবেশ এখানকার মতো মানসম্মত নয়। কিন্তু এরা ধরে নেয় আমরা অনেক পেছিয়ে আছি। যদি নিতান্তই আমাদের জ্ঞান কিছুটা হলেও প্রতিষ্ঠিত করে ফেলি তখন তারা এখানকার কথা বলে। আমাদেরকে সবকিছু বিচার করতে হবে ওদের আদলে। এরা মেইনস্ট্রিমের সম্পৃক্ত হতে বলে আমাদেরকে অথচ মেইনস্ট্রিমে ঢোকার পর্যাপ্ত মালমশলা তারা সরবরাহ করবে না। আপনাকে মেরেও ফেলবে না, আবার মাথা উঁচু করে বাঁচতেও দেবে না। এদের স্ট্রাকচারটাই এরকমভাবে সাজানো। কিন্তু মুখে তারা বলবে উল্টোটা। কিছুতেই স্বীকার করবে না যে, তারা আপনাকে বাধ্য করছে ওদের প্রথা অনুসরণ করতে। তারা বলবে, তোমাকে তাল মিলিয়ে চলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তো এসব নিয়ে কে তর্ক করবে। যুক্তিতর্ক করে যে সময় নষ্ট হবে তারচেয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিটা লুকিয়ে রেখে কোনো স্টোরে ধোয়ামুছার কাজে ঢুকে গেলে বরং ভালো।
আমি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাই না বা নিজের কোনো দোষত্রুটি লুকিয়ে রাখতে চাই না। জানি, আমি যতই ইংরেজি ভালো জানি না কেন, যতই ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখি না কেন, সেটা স্টোরে চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তারা দেখবে আমি অন্তত পঞ্চাশ কেজি মাল হ্যান্ডল করতে পারি কিনা। আরেকটা কথা হলো, আমি ইংরেজি বলায় যতটা দক্ষ হই না কেন, আমার উচ্চারণ তো আর ন্যাটিভদের মতো নয়, না অতো সাবলীল। আর তারা আগে থেকেই ধরে নেয় যে, আমি যেহেতু বাংলাদেশি সেহেতু আমি ইংরেজি জানি না বা কম জানি। তাই তারা আগে থেকেই আমার প্রতি একটা উদাসীন বা অবজ্ঞার ভাব ধারণ করে। এর ফলাফল কিন্তু ভালো না; মানে আমাদের বাঙালিদের জন্য এটা একটা মন্দ দিক। দেখা গেল যে, আমি কোনো সুপারস্টোরে কিছু কিনলাম, বিল পরিশোধের জন্য কাউন্টারে দাঁড়ালাম। কাউন্টারে একজন শেতাঙ্গ আর আমার পাশে একজন শেতাঙ্গ ক্রেতা অপেক্ষমাণ। সূ²ভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, তাদের ভেতরে লুকনো অবজ্ঞাটি কোনো না কোনো ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
আমি একদিন ভিক্টোরিয়া সাবওয়ে স্টেশনে ট্রেনে চড়ার টোকেন কেনার জন্য কাউন্টারে ডলার বাড়িয়ে ধরেছিলাম। কাউন্টারের মহিলাটি শেতাঙ্গ নয়, বø্যাক। মহিলাটি কাউন্টারের ভেতরে বসা আরেকটি মহিলার সাথে কথা বলছিল। আমার তখন কøাসের দেরি হয়ে যাচ্ছিল। বলেই ফেললাম- তাড়াতাড়ি করো। আমার তাড়া আছে, তুমি আমাকে দেরি করিয়ে দিচ্ছ। ব্যস, সাথে সাথে বোমা ফাটল। মহিলাটি চিৎকার করে উঠল। আমি বললাম, তোমার চিৎকারে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। তুমি তোমার সাথীর সাথে পরে কথা বলো, আগে আমার টোকেন দাও। মহিলাটি গজগজ করছিল। আমি টোকেন নিয়ে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করলাম না। টোকেন নিয়ে ফিরে যাবার সময় পেছন থেকে মহিলার ক্রুদ্ধ স্বর শুনলাম।
আমাদের কিছু স্বজাতি চলনসই একটা চাকরি জুটিয়ে হঠাৎ ভোল পাল্টে ফেলে। তাদের মধ্যে দিগি¦জয়ের পাশাপাশি একটা অহংবোধ দানা বাঁধে। অথচ শেতাঙ্গদের বিরূপ আচরণের শিকার হলে তখন তাদের অহংবোধ কাজ করে না। শেতাঙ্গরা অঙুলি প্রদর্শন করলে তারা প্রতিবাদ করে না। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের এই পাইনডেল প্রোপার্টি লিমিটেড। এখানে বসবাসকারী বাঙালিদের বাসার কোনো মেরামত কাজ করতে বা কোনো সমস্যার সমাধান করতে তারা গড়িমসি করে। কালক্ষেপ করে। কিন্তু শেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে তারা কার্য সম্পাদন করতে মুহূর্তমাত্র বিলম্ব করে না। আমি একদিন সিঙ্কের টেপ নষ্ট হয়ে যাবার জরুরি অভিযোগ করেছিলাম। সেই কাজটা তারা জরুরিভিত্তিতে করেনি। করেছে ঢিলেঢালা ভাবে।
এখানকার এক বাঙালি ছেলেকে কতিপয় শেতাঙ্গ মেরে তক্তা বানিয়ে দিয়েছিল। কেউ প্রতিবাদ করেনি। আমি করেছিলাম। ছেলেটির বাবা আমাকে জানায় বিষয়টি। ইউনিভার্সিটির ছাত্র। ডাউনটাউনের এক রেস্তরাঁয় পার্টটাইম কাজ সেরে বাসায় ফিরছিল অনেকরাতে। ভিক্টোরিয়া স্টেশনে, তথা বাড়ির পাশে এসে সে আক্রান্ত হয়। দুর্বৃত্তরা ছেলেটাকে প্রবল মারধর করে তার সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। তার বাবা আমাকে ছেলের দুর্দশার কথা জানায়। আমি পুলিসের সাথে কথা বললাম ইস্টইয়র্ক অবজারভারের রিপোর্টারের পরিচয়ে। এখানকার স্থানীয় বাংলা পত্রিকায় রিপোর্ট ছাপালাম। টরোন্টো অবজারভার অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করলাম। অন্য এক পত্রিকার সম্পাদককে বললাম যুবক ছেলের ওপর বর্বর হামলার নিন্দা জানাতে। সেই নিন্দাজ্ঞাপনের রেফারেন্স দিলাম আমার রিপোর্টে।
আমাদের কানাডায় আগমনের আগে একবার একটা অঘটন ঘটে গেল। একদম বাংলাদেশি স্টাইলে। বাংলাদেশি স্টাইল বললাম এই কারণে যে, বাংলাদেশে এরকম ঘটনা আকছার ঘটে। অনেকেই অনেককিছু চেপে যান লোকলজ্জার ভয়ে। কেউ অস্বীকার করতে পারবেন বাজারে গিয়ে বা মার্কেটে কোনো একটা জিনিস কিনতে গিয়ে বা কিনে ফেরত দিতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হননি? হয়েছেন। আমি নিজে হয়েছি। আমার স্ত্রী হয়রানির শিকার হয়েছে। মোহাম্মদপুরে থাকতে কৃষিমার্কেট থেকে একবার অনেক দাম দিয়ে একটা শ্যাম্পু কিনে আমার স্ত্রী বাসায় এসে দেখল সেটা নিম্নমানের, মানে নকল। সে সেটা ফেরত দিতে গেলে দোকানি অস্বীকার করল যে সে এটা বিক্রি করেনি। দোকানি খারাপ ব্যবহার করল আমার স্ত্রী’র সাথে। সেসময় ওর কয়েকজন ছাত্রী আশেপাশে কেনাকাটা করছিল। তারা সব শুনে দোকানির ওপর চড়াও হতেই দোকানি শ্যাম্পু ফেরত নিয়ে টাকা ফিরিয়ে দিল।
তাজমহল রোডে চশমা ডেলিভারি নিতে গিয়ে বারবার একই কথা শুনতে হলো তাকে যে, চশমা রেডি হয়নি এখনও। স্ত্রী দোকানির কাছে চশমা কবে পাওয়া যাবে জানতে চাইলে দোকানি খারাপ ব্যবহার করল। আমার স্ত্রী আমাকে জানাল। পরে আমার হস্তক্ষেপে চশমা পাওয়া গেল।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেছিলাম কিন্তু অগ্রসর হতে পারিনি। সেই ক্ষেত্রগুলো হলো মাছ, মাংস ও সব্জি বিক্রেতা। বাংলাদেশের সব দোকানি যে খারাপ তা বলছি না। বরং অনেকক্ষেত্রেই তারা ভালো ও সহনীয়। কিন্তু কানাডায় এসে কোনো দোকানির কাছে আমি অপ্রত্যাশিত আচরণ আশা করিনি। শাদায় শাদায় সবাই একাট্টা। আর কালোয় কালোয় একে অপরের প্রতি ভীষণ মমত্ববোধ তাদের। অতি শাদা আর অতি কালোদের মধ্যে আবার বেশ গলাগলি ভাব। মাঝখানে আমাদের মতো আধা-শাদা, আধা-কালো বা তামাটে বর্ণধারীরা পিষ্ট হচ্ছে। যেহেতু আমি তামাটে, তাই এখানকার দোকানি আমার সাথে বাংলাদেশের দোকানির মতো আচরণ করল। ইউরিন ইনফেকশনে ভুগছিলাম। আমার ডাক্তার আমাকে প্রথমে কিছু টেস্ট দিলেন। আল্ট্রা সনোগ্রাম ও ইউরিন টেস্ট হলো। ডাক্তার দেখেশুনে বললেন, ইউরিন্যারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। তিনি আমাকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিতে বললেন আর অ্যান্টিবায়োটিক দিলেন। আমি আমাদের ক্রেসেন্ট টাউনের মেইন ড্রাগ মার্টে ওষুধ কিনতে এলাম। ফার্মাসিস্ট জানাল, তারা সবগুলো ট্যাবলেট দিতে পারছে না। আপাতত আমাকে তিনদিনের দিচ্ছে, বাকিটা যে কোনোদিন এসে নিয়ে যেতে পারি আমি। রাজি হলাম, এজন্য যে এরা তো আর বাংলাদেশি খারাপ আচরণকারী দলের দোকানদার না যে গড়মিল করবে। তাছাড়া আমার পরীক্ষা চলছিল, অন্য জায়গায় গিয়ে ওষুধ কিনতে গেলে অনেকটা দূরে যেতে হবে হেঁটে। সময় নষ্ট হবে। এসব বিবেচনা করে ওষুধ নিয়ে নিলাম। তারা একটা রিসিট দিয়ে দিল। তাদের কথা অনুয়ায়ী পরদিনই আমার ওষুধ পাবার কথা। পরদিন আমি যাইনি। তার পরের দিন গেলাম। কিন্তু ওষুধ নেই। কেন! জেনেরিক মিলিয়ে ওষুধটা এখনও সংগ্রহ হয়নি। আমি বললাম, আমার ট্যাবলেট ফুরিয়ে গেছে; এখন ওষুধ না পেলে আমার গ্যাপ হয়ে যাবে, আর বিশেষত অ্যান্টিবায়োটিকে বিরতি পড়লে তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তারা পরদিন বাকি ওষুধগুলো দিয়ে দেবে বলেই আমি আপাতত তাদের স্টকে যা ছিল নিয়েছিলাম। তারা ‘না’ করে দিলে নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে খেয়ে ফেলতাম না! শপারস’ ড্রাগ মার্টে গিয়ে ওষুধ কিনতাম। আমাকে প্রতি বারো ঘন্টা অন্তর দু’টি ট্যাবলেট খেতে হচ্ছিল। তার তখন একই জেনেরিকের ডাবল পাওয়ারের দুইটা ট্যাবলেট দিয়ে জানাল যে, কালই দিয়ে দেবে তারা বাকি ওষুধ। আমি যেন ডাবল পাওয়ারের একটি করে খেয়ে কোনোক্রমে চালিয়ে দিই। এই পর্যায়ে আমি বললাম, আমার ওষুধ খাওয়াতে যে গ্যাপ হয়েছে তার দায়দায়িত্ব কে নেবে? যদি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়? আর যেহেতু তোমরা জানো, তোমাদের কাছে আমি ওষুধ নিতে আসব তাহলে তোমরা কেন সংগ্রহ করোনি? তারা বলল, আমরা চেষ্টা করেছি। বললাম, তোমাদের চেষ্টার আমি থোড়াই কেয়ার করি। পয়সা দিয়ে ওষুধ কিনব, সেখানে চেষ্টা, অপচেষ্টা বা প্রচেষ্টার তো দরকার হবার কথা কথা না। ব্যস, তারা কেমন অন্যরকম রূপ ধারণ করল। আমি বললাম, তোমরা আমার সময় ও ওষুধের কার্যকারিতা- দু’টোই নষ্ট করছো। তাদের একজন গরম ভাব দেখাল। আমিও গরম হয়ে উঠলাম। বললাম, আমার সময় নষ্ট করছো তোমরা আর বিপাকে ফেলেছ আমাকে। তোমাদেরকে করুণা করে আমি ইতোমধ্যেই নাইন-ওয়ান-ওয়ানে কল করিনি। তোমরা আমাকে বাধ্য করো না এই মুহূর্তে পুলিস কল করতে। তখন তাদের গরম ভাব কমল। তারা বলল, কাল অবশ্যই তারা ওষুধ আনিয়ে রাখবে। বললাম, মনে থাকে যেন। নড়চড় হলে ওষুধের ব্যবসা তোমাদের ইয়ের মধ্যে সেঁধিয়ে দেব। যাইহোক, পরদিন ওষুধ পেলাম।
আজ এই পর্যন্তই। সামনের বার আবারও আসব বালুকা বেলায় বিচরণের গল্প নিয়ে।