হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।

জলবায়ু পরিবর্তন : প্রাসঙ্গিক ভাবনা

১৯৭২ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল মানব-পরিবেশ সম্মেলন সুইডেনের রাজধানি স্টকহল্মে। সেই সম্মেলনের স্লোগান ছিল আমাদের একটিই পৃথিবী। ২০২২ সালের ৫ জুন বিশ^ পরিবেশ দিবসের স্লোগান সেই একই- একটি মাত্র পৃথিবী। তার মানে হলো বিগত অর্ধশতকে পরিবেশের উন্নতি হয়নি বিশ^জুড়ে। বরং অতি দ্রুুত অবনতি হয়েছে। সেইসাথে জন্মলাভ করেছে জলবায়ু পরিবর্তন নামের দানবের।

মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা অলক্ষ্যেই ঘটে যাচ্ছিল। নব্বই দশকে এই বিষয়টি নাড়া দেয় বিশ^বাসীকে। তৎপর হয় জাতিসংঘ ও বিশে^র দেশগুলো। কিন্তু অ্যাকশন বা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের চাইতে হাঁকডাকই বেশি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি ব্যাপক। এখানে স্বল্প পরিসরে আমি খুব একটা বিস্তারে যাব না। শুধুমাত্র স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে আলোকপাত করব।

এই বছর বইমেলায় আমার বই ‘পরিবর্তিত জলবায়ু: বিপন্ন বিশ^’ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বইটিতে আমি বিস্তারিত আলোকপাত করেছি পরিবেশ ও জলবায়ুু সম্পর্কে।

আপনারা বুঝে নিয়েছেন যে, পঞ্চাশটি বছরে যা হয়নি, তা খুব দ্রুত সময়ে ঘটে যাবে, বৈশি^ক সমস্যার সমাধান হবে, তা কিন্তু নয়। ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে। এখন ঠেকা দেয়ার কাজটি করার বিষয়ে যে গড়িমসি করছে বিশে^র ধনী ও সম্পদশালী দেশগুলো, তার হতাশার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে বিজ্ঞানী-পরিবেশবিদ বা নীতিনির্ধারক থেকে বিশে^র সাধারণ মানুষের মাঝে। সৃষ্টি হচ্ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর. দেশে দেশে পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ুর রকমসকম। বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত হচ্ছে উদ্বাস্তু সমস্যায়। ক্যানেডা-অ্যামেরিকায় জলবায়ু বা আবহাওয়ার আকস্মিক রূপ পরিবর্তন আর বিশ^জুড়ে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া মানুষকে বিপন্ন করে তুলছে।

পৃথিবীর তাপমাত্রা শিল্পবিপ্লবের পর থেকে দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দ্রুত বৃদ্ধির বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেন সুইডিশ বিজ্ঞানী আর্হেনিয়াস ১৮৯৬ সালে। তিনি প্রমাণ করেন যে, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর এই কার্বন এমন একটি মৌল যার তাপধারণ ক্ষমতা রয়েছে। ফলে সূর্য থেকে আগত তাপ ও পৃথিবী থেকে বিক্ষিপ্ত তাপ কার্বন শোষণ করে এবং পৃথিবীর মোট তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি বাড়াতে পারে।

এই ধারণাটি প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে ১৮৮৮ সালে। ওই বছরটি ১৮৮০ সাল হতে ওই পর্যন্ত সময়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে প্রমাণিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর ষাটটিরও বেশি দেশের ২৫০০ বিজ্ঞানী অসংখ্য তথ্য-প্রমাণাদি ও প্রকাশনা ঘেঁটে মত দেন যে, মানবসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণেই পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুততম সময়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এখন প্রতিষ্ঠিত যে, দ্রুত সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন মনুষ্যসৃষ্ট। শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর স্বাস্থ্যের ক্রমশ অবনতি ঘটতে থাকে। এর জন্য দায়ী শিল্পোন্নত ও পরাশক্তির দেশগুলো। তারা এশিয়া ও আফ্রিকার সম্পদ গ্রাস করে, এই দুই মহাদেশের অনেক দেশকে শোষণ করে তাদেরকে কলোনি বানিয়ে রাখে। অন্যদিকে তারা যথেচ্ছ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে পৃথিবীকে ঠেলে দেয় পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে। ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বিধ্বংসী গ্যাস নিঃসরণ করে তারা, এবং অস্বীকার করতে থাকে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মানবসৃষ্ট। উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কার করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে; ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনে তারা নিরাপদে থাকবে বা ক্ষতি হলেও পুষিয়ে নেবে সামর্থ্য ও প্রযুক্তি দিয়ে।

হাটে যে হাঁড়ি ভাঙবে একদিন- সেটাও তারা জানত; কিন্তু কার্বন উদগীরণ বন্ধ করেনি। আদৌ করবে কিনা, বা করলে কবে নাগাদ কার্বন মাত্রা তারা কমাবে, তা সুস্পষ্ট নয়।
তাদের বিলাসিতা ও অতিরঞ্জিত কর্মকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশের মতো নাজুক ভৌগোলিক অবস্থানের দেশ; কেননা জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক- অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবার ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চল ও উপকূলীয় দেশ এবং দ্বীপদেশগুলো আসন্ন বিপন্নতার শিকার হয়েছে এবং আরও ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলো যখন সরব হয়ে উঠছে, তখন কার্বন কমাবার বদলে পরাশক্তি ও ধনী দেশসমূহ কূটচাল ও উপদেশ বিতরণে ব্যস্ত থেকেছে বরাবরই।

পরাশক্তিধর দেশগুলোর, এমনকি সারাবিশ্বের পাতি নেতৃবৃন্দ যখন বৈশ্বিক কূটচাল নিয়ে ব্যস্ত, এবং যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন করছেন, অস্ত্রের ঝনঝন শব্দ তুলছেন, যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছেন, তখন এক কিশোরী জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলের কথা জানিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠল।

নাড়া দিল বিশ্ব বিবেককে। তখন দেয়া হলো পরিবেশকর্মী সুইডিশ ষোড়শী গ্রেটা থুনবার্গকে বিকল্প নোবেল ‘রাইট লাইভলিহুড’ পুরস্কার। হয়তো বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নতুনভাবে উপলব্ধি করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলকে। কিন্তু তারা কি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আশু কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? যে ফাঁদ তারা নিজেরা তৈরি করেছেন, সেই ফাঁদে নিজেরাই আটকে যাবেন অচিরে- এই উপলব্ধিটুকু তাদের মধ্যে জাগিয়ে দেয়া কি একটা ছোট্ট মেয়ের কাজ?
যখন ফলদায়ক কিছু হচ্ছে না তখন খুদে একটা মেয়ে সরব হয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিল যে, এটি ‘বড়দের বিরুদ্ধে ছোটোদের যুদ্ধ’, আর সেটা হাতেনাতে প্রমাণ করে দিয়ে গ্রেটা রুদ্রমূর্তি ধারণ করল অনিশ্চিত এক ভবিতব্যের কথা ভেবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে খোঁচা মেরে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, আগামী পৃথিবী বর্তমান প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং অ-বসবাসযোগ্য। ক্যানেডীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে গ্রেটা সাফ জানিয়ে দিল- ‘আপনি জলবায়ু পরিবর্তনরোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’ কেবল জাস্টিন ট্রুডো নন; অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ও রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান গ্রেটা’র তোপের মুখে পড়েছেন।

গ্রেটা’র কাছ থেকে আমরা একটা নতুন শিক্ষা লাভ করেছি। সেটা হলো- রবি ঠাকুরের ভাষায়- ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’

শেষ পর্যন্ত দায় এসে বর্তাল ছোটোদের স্কন্ধে, বড়রা সেই কবে থেকেই জলবায়ু নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে মুখে ফেনা তুলে বেলাশেষে প্রমাণ করলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কুপ্রভাব প্রতিরোধের প্রয়াস যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। বরং পৃথিবীর স্বাস্থ্যের আরও ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

গ্রেটা’র আগমন যেন অনেকটা ঐশ্বরিক; যেসময় বিশ্ব নেতারা যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছেন, তেল ট্যাংকার পোড়ানোর অজুহাতে যুদ্ধের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছেন, পুতিন আক্রমণ করেছেন ইউক্রেন, তখন গ্রেটা থুনবার্গ যেন দেবীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ ঘুরিয়ে দিল যুগ যুগ ধরে লালিত একটি বৈশ্বিক সমস্যার দিকে; যা কার্যকর পদক্ষেপে সমাধানযোগ্য, অথচ একে লালন করা হয়েছে অনেক দেশের রাষ্ট্রীয় স্বার্থরক্ষায়।
গ্রেটা’র আহ্বানে ১৫০টি দেশের কয়েক লক্ষ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতার (কিংবা কূটচালের) প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল।

এখন প্রশ্ন দাঁড়াল: বিশ্বনেতৃবৃন্দ কি গ্রেটা’র আহ্বানে যথাযথ সাড়া দেবেন, না নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য, শক্তি প্রদর্শনের জন্য আরও মারমুখি হয়ে উঠবেন। নাকি তাদের ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে ছোটোদের সাথে হাত মিলিয়ে একযোগে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন কুপ্রভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে যাবেন।

এখন বিশ^ দু’টি বড় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের নয়া চ্যালেঞ্জ আর আর জলবায়ুবিষয়ে বিশ^নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যপÍমান অনৈক্য। আশা করা গিয়েছিল মাদ্রিদ সম্মেলনে আশাজাগানিয়া কিছু হবে; কিন্তু বিশ^ আবারও নিপতিত হয় নতুন সংকটে। জলবায়ুুসংক্রান্ত মাদ্রিদ সম্মেলন সম্পন্ন হয় ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এর মধ্য দিয়ে, যা ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনভেন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর কাঠামোয় শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল।

এরপরে হলো গ্লাসগো সম্মেলন বা কপ-২৬ (কনফারেন্স অব পার্টিজ)। সেটাও শেষ হলো গ্রেটা’র ভাষায় ব্লা-ব্লা দিয়ে।

প্যারিস সম্মেলনের লক্ষ্য অর্জনে নানা অ্যাকশন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সম্প্রতি কপ-২৬ (UN Climate Change Conference of the Parties, Glasgow, 31 October–13 November 2021) অনুষ্ঠিত হলো স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সই করা দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না বাড়ে, তা নিশ্চিতকরণে ব্যবস্থা নিতে একমত হয়েছিল।
২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির উত্থানের পর এটিই সশরীরে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। চারটি লক্ষ্যকে এবারের সম্মেলনে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
-২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যতে নামিয়ে আনতে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা
-জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য বাস্তুতন্ত্র রক্ষা এবং পুনরুদ্ধার করা, প্রতিরক্ষা ও সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ, অবকাঠামো তৈরি ও কৃষি ব্যবস্থাকে স্থিতিস্থাপক করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা
-এসব কাজ সম্পাদনের জন্য প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল করার জন্য উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা রাখা এবং
-জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করা
“গ্লোবাল গোল অন অ্যাডেপ্টেশন” সংক্রান্ত বৈশ্বিক লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য “গ্লাসগো-শার্ম এল-শেইখ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম অন দি গ্লোবাল গোল অন অ্যাডেপ্টেশন” প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যা বাংলাদেশের ভবিষ্যত অ্যাডেপ্টেশন কার্যক্রমকে বেগবান করবে।

ঘুরেফিরে সেই অ্যাডেপ্টেশনের বিষয়টিই বারবার উঠে আসছে। অ্যাডেপ্টেশনই বাংলাদেশের একমাত্র অপশন। বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র ভূখণ্ডে এতো মানুষ কোথায়-কীভাবে অ্যাডেপ্টেড হবে (তা নির্ভর করে অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে কতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ), অ্যাডেপটেশন বা খাপ খাইয়ে নিতে যে পরিকল্পনা, অর্থ ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে, সেই বিষয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আমাদের মিশন ও ভিশন হতে হবে। বিশ^ উষ্ণতা বৃদ্ধিতে বা কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়ে আজকের বিশ^কে বিপর্যস্ত করায় বাংলাদেশের কোনো দায়ভাগ নেই। কিন্তু ভঙ্গুর ভৌগোলিক অবস্থান ও নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বাংলাদেশ শিকার হচ্ছে উন্নত বিশে^র লাগামহীন কার্বন নিঃসরণের কুফলে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য প্যারিস সম্মেলনের চুক্তি সুফল বয়ে আনত বিগত সাতবছরে। দৃশ্যত তা যখন হয়নি, তখন কপ-২৬ সামিট তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়িত হয় কিনা, এখন দেখার বিষয়। যদিও ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমানোর উদ্যোগ বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে যথেষ্ট নয়; তবু সেটা মন্দের ভালো।

২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সম্মেলনে এটিকে আরও জোরদার করার কোনো বিকল্প ছিল না। তা সত্তে¡ও সম্মেলনে যুগান্তকারী কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিশে^র প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছ থেকে কার্বন কমানোর জোরালো ও সুস্পষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি কিন্তু এই সম্মেলনেও পাওয়া যায়নি। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য এই সম্মেলনে একটি রুল বুক প্রণীত হয়েছে। আর এই রুল বুকের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিশ্রুতিগুলো খতিয়ে দেখবেন বিশেষজ্ঞরা!
কপ-২৬এর মূল লক্ষ্য ছিল তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখার আশা বাঁচিয়ে রাখা, সেই উদ্দেশ্য সাধিত হলেও এটা কীভাবে পরিপূর্ণ সফলতা পাবে, তা কিন্তু তর্কাতীত নয়। খোদ কপ-২৬ সভাপতি অলোক শর্মার ভাষায়, ‘আমরা ১.৫ ডিগ্রির লক্ষ্যমাত্রার আশা বাঁচিয়ে রেখেছি, কিন্তু এর নাড়ি বড়ই দুর্বল।’

প্যারিস চুক্তির আওতায় বিশ্বের উন্নত দেশসমূহ ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে একশ’ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

কপ-২৬এর প্রাক্কালে আইপিসিসি (The Intergovernmental Panel on Climate Change (IPCC)) ও ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জোর দিয়ে বলেছিল, ব্যাপক হারে কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেশগুলোকে নতুন ও উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। কপে কিছুটা হলেও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে ১২ মাসের মধ্যে নতুন পরিকল্পনা জমা দিতে হবে। জাতিসংঘকে ব্যাখ্যা করে বোঝাতে হবে তাদের নীতি ও পরিকল্পনা কীভাবে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণ করবে।
এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, একমাত্র আইপিসিসি এর জন্মলগ্ন থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই প্যানেলের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল বিভিন্ন বছরের ও সময়ের রিপোর্ট-এর সুপারিশগুলো যদি উন্নত দেশ আমলে আনত, আজকে বিশে^ জলবায়ু পরিবর্তনের চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। বরং একধরনের বিনাশী প্রচারণা ছিল তার উল্টোপিঠে যে, জলবায়ু পরিবর্তন মানবসৃষ্ট নয়!

অনস্বীকার্য যে, শিল্পবিপ্লবের পর থেকে সাম্রাজ্যবাদী ও পরাশক্তির দেশগুলো বিলাসিতায় ও আরাম-আয়েশে থেকে, পৃথিবীর সিংহভাগ ভূখণ্ডকে চরম বিপদের মুখে ফেলেছে জলবায়ু পরিবর্তন নামের দানবের জন্ম দিয়ে।

তারা জেগে থেকেও ঘুমের ভান করে পড়ে ছিল। তারা জানত, এই পৃথিবীটা আমাদের নয়; আমরা শুধুমাত্র একে ধার নিয়েছি আগামী প্রজন্মের কাছ থেকে:
‘We do not inherit the Earth from our ancestors; we borrow it from our children.Õ Cree Indian prophecy
সম্মেলন ব্যর্থ ধরে নিলে বলতে হয় যে, ব্যর্থতা দিয়ে যার শুরু তার ব্যর্থতার দায়ভাগ বাংলাদেশের নয়। মাদ্রিদ সম্মেলন শেষ হয়েছিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ দিয়ে, যার অর্থ ছিল বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ আদায়ে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনালের যে দীর্ঘ সময় ও জটিল ম্যাকানিজমের মধ্য দিয়ে যাবে, সেই সময় ও পরিশ্রমে বাংলাদেশ নিজস্ব উদ্যোগে অনেক এগিয়ে যেতে পারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও অ্যাডেপ্টেশনের দিকে। সেইক্ষেত্রে প্রয়োজন ফান্ড ও ক্ষতিপূরণ।

বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবাদী সুইডেনের গ্রেটা থুনবার্গ কপ-২৬কে ব্যর্থ বলে আখ্যায়িত করে গøাসগোতে শত শত মানুষের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ বিশ্বজুড়ে দেড় হাজারেরও বেশি স্থানে জলবায়ু কর্মীরা রাস্তায় নেমেছিলেন। বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে পৃথিবীর উত্তাপ বৃদ্ধিকারী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ব্যাপকভাবে হ্রাস করার জন্য আরও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নিশ্চিত করার দাবি তোলেন তারা।

সম্মেলন শুরুর আগেই ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্বন নিঃসরণবিষয়ক যে পরিকল্পনা (এনডিসি) জমা দিয়েছে সেটি অনুযায়ী, বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের পরিবর্তে দুই দশমিক সাত ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে যা হবে মানবজাতির জন্য ভয়ানক।

কপ-২৬ এর সভাপতি অলোক শর্মা সম্প্রতি বলেন, “দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বিশ্বের ৭০ কোটি মানুষ চরম দাবদাহের শিকার হবে। দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে দুইশ’ কোটিতে।”

সম্মেলনে প্রথমবারের মতো ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশের জন্য তহবিলের পরিমাণ ১৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে উন্নীত করে ৪৩১ মিলিয়ন ডলার করা হয়েছে। বিষয়টা এভাবে ভাবা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের জন্য একটা অন্যতম অপশন হলো বিভিন্ন কপ সম্মেলনে যে ফান্ড ঘোষণা করা হয়, তার থেকে সামান্য কিছু প্রাপ্তিযোগ।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি হলো আর্থিক অনুদানের অপেক্ষায় থাকা। সেটা পাওয়া যাবে; তবে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। আবারও দ্বারস্থ হওয়া, নিজেদের বিপন্নতাকে তুলে ধরা ও নেগোশিয়েশন চালিয়ে যাওয়া। এগুলো কি খুব ক্লান্তিকর নয়? অভ্যন্তরীণ পরিবেশদূষণ ও প্রাতিবেশিক অবনয়নের জন্য ধরে নিলাম আমরাই না হয় দায়ী, কিন্তু বৈশ্বিক অবনতির জন্য তো আমরা দায়ী নই, অথচ বৈশ্বিক বিপর্যয়ের ধকল যাবে আমাদের ওপর দিয়ে। এটা বারবার কেন তাদের কাছে বিস্তর কাগজপত্র/প্রমাণাদি নিয়ে হাজির হয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে?

একটা সম্মেলনে কোনো প্রতিশ্রুতি থাকলে, সেটার অপেক্ষায় বাংলাদেশকে বসে থাকতে হয়। পরের সম্মেলন পর্যন্ত সেটা প্রাপ্তির জন্য নানা দেনদরবার আমাদেরকে করতে হয়। দেনদরবার বলতে আসলে এখানে একধরনের ধকলের বিষয় থাকে, একটা এফোর্ট দিতে হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সেটা কঠিন কাজ, আমাদেরকে সর্বক্ষণ তাড়িয়ে বেড়ায় ঘরের সমস্যা। তবুও আমাদেরকে এই কাজটি করতে হবে সাফল্যের সাথে।

জলবায়ু সম্মেলন সেই শেয়াল পণ্ডিত ও কুমিরের সাতটা বাচ্চার কথাই আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয়। মা কুমির তার সাত বাচ্চাকে বিদ্যায় দিগ্গজ করার জন্য শেয়াল পণ্ডিতের হাতে তুলে দেয়। শেয়াল একে একে ছয় বাচ্চাকে খেয়ে হজম করে ফেলে। একদিন মা কুমির সাত বাচ্চাকে দেখতে চাইলে শেয়াল একটা বাচ্চাকে সাতবার গর্ত থেকে উঠিয়ে-নামিয়ে সাতবার দেখায়। পশ্চিমা বিশে^র আচরণ আমাদের মতো দেশগুলোর প্রতি অনেকটা শেয়ালের চালাকির মতো। কিছু বেনেফিট তো আমাদের হবেই। তবে তা অপ্রতুল। আমরা দেখতে চাই র‌্যাডিকেল কিছু, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে ভিজিবল কিছু আমাদেরকে পেতে হবে। সম্মেলনের মাইক্রোফোনের ভেতর দিয়ে ভেসে আসা শব্দ আমাদের কর্ণকুহর আর ধারণ করতে পারছে না। আমরা দেখতে চাই কোটি কোটি মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-বাস্তু আর নির্মল প্রকৃতি।

তাই আমাদেরকেই হাল ধরতে হবে খাপ খাইয়ে নিতে ও বিশ^ দরবারে তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ আদায়ে। আর প্রাপ্ত ফান্ডের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে নজরদারি করতে হবে যেন লাভের গুড় পিঁপড়েয় না খায়।

কপ ২৭ সম্মেলন ২০২২ যথারীতি বড় রকমের কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হলো কপ ২৭ সম্মেলন। জলবায়ু আলোচনায় যে বিষয়টি সবসময় প্রাধান্য পাওয়ার কথা, অর্থাৎ তাপমাত্রা কমিয়ে এনে জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি কমাতে বিশে^র ধনী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেবার কথা, তার সুরাহা এই সম্মেলনেও হয়নি। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, গাছ লাগানো হলো, কিন্তু তার পরিচর্যা করা হলো না। বৈশি^ক তাপমাত্রা কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কাজটিই হচ্ছে না। গোড়ায় যে গলদ, তা সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে লালন করা হচ্ছে বিশে^র কতিপয় মহাশক্তিধর দেশগুলোর জন্যই।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ধরে রাখতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির ব্যাপারে কোনো সমঝোতা হয়নি।
মিশরে কপ-২৭ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গরিব দেশগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা দিতে একটি তহবিল গঠন করার বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বের দেশগুলো। কপ ২৬ এ ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ এর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেখানে দরিদ্র দেশগুলোকে আর্থিক সাহায্য ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রæতি এই সম্মেলনে এলেও কোনো কোনো দেশের জন্য, বিশেষত বাংলাদেশের জন্য খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়াবে। আবার সেই নেগোশিয়েশন, তদ্বির আর আশাহত হবার বিষয়টি তো রয়ে গেল। লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থ আদায়ে বাংলাদেশকে যে জটিল মেকানিজম ও পদ্ধতির ভেতর দিয়ে যেতে হবে সেটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

তহবিল গঠনে ‘সন্তুষ্ট’ হলেও জলবায়ু মোকাবিলায় কোনো চুক্তি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ঝুঁকিতে থাকা দেশ এবং পরিবেশ কর্মীরা।
ক্ষতির শিকার দেশগুলোর জন্য তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত মিশরের শারম-আল-শেখে রাতভর ব্যাপক আলোচনার পর ভোরের দিকে কপ-২৭ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট শামেহ শুউক্রি সম্মেলনের চূড়ান্ত এজেন্ডা উপস্থাপন করেন, কোনো আপত্তি ছাড়াই সেটি মেনে নেন আলোচকরা!

ধনী দেশগুলোর নিঃসরিত কার্বনের কারণে তৈরি হওয়া এই তহবিলের টাকা দিয়ে তারা ঝড়, বন্যা এবং অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজে লাগাবে! কতটা কাজে লাগবে, ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ কতটা উপকৃত হবে সে বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকে যায়।
বহুদিন ধরে ক্ষতির শিকার দেশগুলো ক্ষতিপূরণ হিসাবে নগদ অর্থ দেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল।
যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের পর জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “ন্যায়বিচারের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

খুব দ্রুত এই সমঝোতা হলেও তহবিলে কোন্ দেশ, কীভাবে আর কত টাকা দেবে, সেসব বিষয় এখনও পরিষ্কার হয়নি। খুব শিগগির সেই উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
এভাবে বছর যেতে থাকবে, আবার আরেকটি নতুন সম্মেলনে অনেক প্রশেরœ উত্তর ঝুলন্ত থেকে যাবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও তার কুপ্রভাব, ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য কেন হুমকি হয়ে উঠল, কীভাবে হলো, আগামী পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য রাখতে কী করে যেতে হবে বর্তমান পৃথিবীকে- এসব এখন বিপন্ন বিশ্ববাসীর সামনে ক্রসওয়ার্ড পাজল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশে^র প্রভাবশালী দেশসমূহের নেতাগণের ভাবখানা এরকম যে- দেরি হয়ে গেলে লেট হয়ে যাবে, আর লেট করলে দেরি তো হবেই। আমরা কার্বন নির্গত করব, তোমরা তা খাবে। বিনিময়ে কিছু কড়ি পাইলে পাইতেও পারো।