হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
কবিতা ও ছড়ার ছড়াছড়ি
বললে পেত্যয় যাবেন না যে, দুয়েকটি কবিতা/ছড়াও রচনা করেছিলাম আমি। সেসব অবশ্যি হারিয়ে গেছে। জানিনা, চুরি হয়েও যেতে পারে। যে সময়টায় এই কবিতাগুলো লিখেছিলাম, সেসময়ে দুয়েকটি মেয়ের সাথে চিনপরিচয় ছিল আমার, আর সঙ্গত কারণেই কবিতা বেরুতে থাকে। আমার সংগ্রহে ছিল ‘ছন্দের বারান্দা’ আর ‘কবিতার কাস’ বই দুটো। এর সাথে যোগ করলাম পুরোনো পুঁথির মতো দেখতে কবিতা লেখা শিখবার একটি বই। ধুমসে পড়তে লাগলাম বইগুলি। বইটই পড়ে শেষে অনেকগুুলো কবিতা রচনা করলাম। এরমধ্যে একটি সনেটও ছিল। সেগুলো পাণ্ডুলিপি আকারে সাজালাম। গুণী প্রচ্ছদশিল্পী মামুন কায়সার ভাইকে দায়িত্ব দিলাম প্র”ছদ তৈরি করতে। তিনি থাকতেন গোপিবাগ প্রথম লেনে। আর আমি তখন গোপিবাগ ছেড়ে বিক্রমপুর হাউসে আস্তানা গেঁড়েছি।
কী যে হলো, কিছুদিন ধরে কেবল কবিতার কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। শেষে গল্পকার বন্ধু আর এক কবি-বন্ধুকে কবিতাগুলো দেখালাম। তারা ভূয়সী প্রশংসা করল। গল্পকার বন্ধু তো বলেই ফেলল- ‘গল্পকারের চাইতে কবি হিসাবেই মনে হয় বেশি ভালো করতেন আপনি।’ আর দেখালাম আমার বন্ধু নোবেলকে। সে তখন এক প্রেমিকার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে একের পর এক কবিতা রচনা করে যাচ্ছিল।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, পাণ্ডুলিপিটা হারিয়ে গেল। হারাবার কারণও আছে। পাণ্ডুলিপিটা নিয়ে কবি আল মুজাহিদীর কাছে গিয়েছিলাম। তাকে সেটা দেখাতে তিনি আমাকে নিরুৎসাহিত করলেন। তিনি চাচ্ছিলেন আমি গল্পকারই থাকি। আমি সেই যে হতোদ্যম হলাম আর কবিতার দিকে যাইনি। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপট আমার ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি-পরবর্তী জীবন। পাণ্ডুলিপিটা বহুদিন অনাদরে পড়ে রইল আমার একান্ত কক্ষের বুকশেল্ফের ওপর। তারপর একদিন ভুলে গেলাম সেটার কথা। বহুদিন পর সেটার কথা মনে পড়ল। কিন্তু ওটা আর পাইনি। কয়েক বছর পর আমার পুরোনো একটা ডায়েরি ঘেঁটে কয়েকটি কবিতার প্রথম খসড়া বা কাঁচামাল পেলাম। সেখান থেকে আবার নতুন করে কয়েকটি কবিতা রচনা করলাম। জানিনা, সেগুলো কবিতা হয়েছে কিনা। হলে কেমন হয়েছে তা পাঠকই বিচার করুন। জীবনানন্দ দাশের কবিতার আদ্যার নিয়ে একটা কবিতা বানিয়েছিলাম-
জীবনানন্দ দাশের কবিতার আদ্যারে কবিতা
এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি
সারারাত দখিনা বাতাসে,
আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে…।
আলো-অন্ধকারে যাই-মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে।
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।
দূর পৃথিবীর গন্ধে ভরে ওঠে আমার এ বাঙালির মন।
সন্ধ্যা হয়-চারিদিকে শান্ত নীরবতা;
খড় মুখে নিয়ে এক শালিখ যেতেছে উড়ে চুপে।
ধানকাটা হয়ে গেছে কবে যেনক্ষেতে মাঠে পড়ে আছে খড়।
সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো;
পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন।
সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বলোনাকো কথা ওই যুবকের সাথে।
সুচেতনা, তুমি এক দূরতম দ্বীপ
বিকেলের নত্রের কাছে; সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে
নির্জনতা আছে।
যেখানে রূপালি জ্যোৎস্না ভিজিতেছে শরের ভিতর
হাজার বছর ধরে শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ।
আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি!
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে।
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে-এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়-হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে।
আমাদের আক্দের পর স্ত্রীকে নিয়ে একটি কবিতা রচনা করেছিলাম। কোনো এক শুভক্ষণে গিফটের সাথে এই কবিতাটাও পাঠিয়েছিলাম ওর কাছে-
শালপিয়ালের বনে
একটি মাধবী রাতে তোমাকে নিয়ে
সাজাবো কথামালার ডালি
শালপিয়ালের বনে।
হলুদ জোছনা পড়বে গলে গলে
মেঘ-চুল উড়িয়ে তুমি তখন ভরে দেবে গানে
দখিনা হাওয়ার দোদুল দুলে
শালপিয়ালের বনে।
গহিন বনে স্তব্ধ হবে শব্দ
তোমাকে নিয়ে কইবো কথা তারাদের সাথে।
তোমার হলুদ শরীর চুঁইয়ে নামবে
জোছনার ঢল-
সে সুধারস আকন্ঠ পানে হবো মাতাল
স্বপ্নের ঝিঁঝিঁরা বাজাবে মাদল
বন-শরীরের ডালে।
বুনোফুলের গন্ধস্নাত তোমার অবয়বে
প্রজাপতি মাখাবে মহুয়ার রেণু
শালপিয়ালের বনে।
একটি রাত শুধু উতলা হবো
জোছনার বানে-
তুমি ঝাপ দেবে
তোমাকে খুঁজে সাঁতরাবো আমি
জোস্নাজলের বানে।
লুকোচুরি খেলা চলবে স্তব্ধগহিনে
মহুয়ার বনে।
শুধু একটি স্বপ্নরাত কাটাবো দুজনে
মধু-শালপিয়ালের বনে।
পরবর্তীতে অমর একুশে উপলক্ষে দুয়েকটি লিটল ম্যাগের বিশেষ অনুরোধে ঢেঁকি গিলেছিলাম-
একুশে সেই পাদপীঠ
প্রতিদিন অরুণোদয়ে
প্রতি নিস্তব্ধ রাতের তারার আলোয়
মুক্তির বাণী এসে লাগে দেহমনে
আনন্দময় সুগভীর বৈরাগ্য
মিলন সঙ্গীতের রাগ।
আরণ্যক ঋষি শুনতে পান
বৃরে বাণী।
বুদ্ধদেব যে বোধিদ্রুমের তলায়
পেয়েছিলেন মুক্তিতত্ত¡-
একুশে সেই পাদপীঠ
চাতাল বেয়ে যার একদিন নেমে এলো
শিশু স্বাধীনতা।
মুক্তির বাণী দোয়েলের কন্ঠে শিস দিয়ে যায়
মজ্জায় মজ্জায় সরল সুরের কাঁপন জাগে।
একুশে সেইসব কাঁপন লয়ে আসে
আসে স্বাধীনতা, বন্ধনহীন
মূর্ত হয়ে।
স্কুলজীবনে আমার বিভীষিকা ছিল অংক। কিছুতেই অংক ঢুকত না মাথায়। অংকের কাসে নিস্পন্দ হয়ে বসে থাকতাম। এই রোগটি আমার পিতারও ছিল। কিন্তু অবাক কান্ড যে, তিনি অংকে লেটারমার্ক পেয়েছিলেন! আব্বাই বলেছিলেন যে তিনি এই অসাধ্য সাধন করেছেন মুখস্থবিদ্যার জোরে! আরো চিন্তার বিষয়, আমার মেজপা-ও অংকে লেটারমার্ক পেল। পেল সবচেয়ে ছোটোবোন শোভা। এরকম আশ্চর্র্যতম কান্ড একের পর এক ঘটে যেতে লাগল। আমি ভেবে পেলাম না কীভাবে তা সম্ভব। পরে ভেবে দেখলাম যে, তারা সবাই অংক বাদে সব বিষয়ে অতিরিক্ত ধীশক্তিসম্পন্ন ছিল, তাই তারা পরীক্ষার আগে শুধু অংকই পড়ে গেছে আর করে গেছে! আমার ক্ষেত্রে তা হলো না। অংক মুখস্থ করতে লজ্জা লাগছিল। তাই যেনতেন ভাবে অংক শিখলাম। ফলে টেনেটুনে পাস করলাম। অংকের প্রসঙ্গ টানলাম এজন্য যে, স্কুলজীবনে ছড়া/কবিতা বা গদ্য/পদ্য পড়তে ভীষণ পছন্দ করতাম। অংক-টংক থোড়াই কেয়ার করতাম। ছোটোকাল থেকেই সেসব ছড়া, বাণী, কবিতা বা গল্প তীব্র রেখাপাত করেছিল মনে। সবাইকেই করে। কিন্তু আমি পরবর্তীতে এসব গল্প/ কবিতা দ্বারা অনুপ্রাণিত হই এবং লেখার জগতে প্রবেশ করি।
অতি ছোটোকালে আমি নাকি একটা কবিতা রচনা করেছিলাম। একটা কবিতা বা গানের কথা ছিল- ‘রাঙাবউ যায় যমুনার ঘাটে।’ আমি এর সাথে যোগ করে দিলাম-‘পিছলা খাইয়া হাঁটে।’ ব্যস, অতি ক্ষুদ্র বয়সে, যখন নাকি আদুরি নামের একটা ছাগীর দুধ খেয়ে জীবন ধারণ করছিলাম, সেইসময় কবিতা রচনা মানে তো বড় হয়ে রবি ঠাকুর বা নজরুল হওয়া! অনেকটা কাল ধরে অবশ্যি আমার মধ্যে আর কবি হবার কোনো আলামত দেখা যায়নি। দেখা গেল আঁকিয়ে হবার লক্ষণ। সেইসাথে ভাস্কর হবার আরেকটি অভিলক্ষণ দেখা দিল। এঁটেলমাটি দিয়ে ভাস্কর্য বানাবার মতো গুণও প্রস্ফুটিত হলো।
আমার স্পষ্ট মনে আছে: যখন অক্ষরজ্ঞানও হয়নি আমার, তখন দেয়া হলো আদর্শলিপি আর ছবির বই। ছবির বইয়ে মাথায় মুকুট-পরিহিতা যে অভিজাত মহিলার ছবি ছিল, সেখানে পড়তে হতো- ‘মহারাণী ভিক্টোরিয়া’ আর আরো একটি ছবি ছিল, সেখানে পড়তে হতো- ‘মহাকবি ইকবাল।’ লেখা পড়তে পারতাম না। বড়রা বললে আমি সেটা মুখ’ করতাম। তারপর আঙ্গুল দিয়ে ছবি নির্দেশ করে দেখালে তোতাপাখির মতো বুলি আওড়ে যেতাম। ছবির পাশাপাশি ছিল ছড়া এবং চিত্রের মাধ্যমে কাহিনি। একটা ছড়া ছিল- ‘আতা গাছে তোতাপাখি ডালিমগাছে মৌ, এত ডাকি তবু কথা কয় না কেন বউ।’ এখানে একটা খুব মজার বিষয় বলছি আপনাদেরকে। বিষয়টা হলো, আমার ছেলে শাহদিবের জন্ম হবার পর থেকে ওর সাথে বিচিত্র ও অ-বোধগম্য ভাষায় কথা বলতাম। সুকুমার রায়ের চেয়েও বেশি রকমের আবোলতাবোল ভাষা প্রয়োগ করতাম। তো ওকে একদিন ‘আতা গাছে তোতাপাখি’ ছড়াটি এভাবে শোনালাম:
‘তোতাগাছে আতা পাখি, মৌ গাছে ডালিম,
এত ডাকি তবু কথা কয় না কেন হালিম।’
ছেলেবেলার আরেকটি ছড়া খুব মনে পড়ে- ‘আমাদের ছোট গাঁয়ে ছোট ছোট ঘর থাকি সেথা সবে মিলে নাহি কেহ পর।’ অথবা ‘আমড়াগাছের ঝোপের ভেতর মৌমাছিদের বাসা মাঝখানে তার চাক রয়েছে প্রকাণ্ড এক খাসা।’ আরো মনে পড়ে রবি ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে…।’ কিংবা নজরুলের ‘ভোর হলো দোর খোলো, খুকুমণি ওঠরে।’ আরো একটি আবোলতাবোল ছড়া- ‘কাক বলে কা-কা, হুতুম বলে তুয়া, শিয়াল বলে আমার শাদি হুক্কা কিয়া হুয়া’।
আরো পড়েছি- ‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি’, ‘পিপীলিকা, পিপীলিকা, দলবল ছাড়ি একা…’, ‘ছোটপাখি ছোটপাখি, দাঁড়াও না একবার ভাই..।’ এই কবিতাটি আমার আম্মাও গৃহ¯’ালি কাজ সারতে সারতে আবৃত্তি করতেন। আসলে আমাকে উৎসাহ যোগাতেন। পড়লাম ‘সফদার ডাক্তার, মাথাভরা টাক তার, খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে…।’ আরো পড়লাম-‘বাবুরাম সাপুড়ে কোথা যাস বাপুরে…।’
আরো একটু বড় হয়ে পড়লাম জসিমউদ্দিনের ‘আসমানী’ আর একটি বিশেষ কবিতা- ‘ধানের খেতে বাতাস নেচে যায় চপল ছেলের মতো…।’ কবি ও কবিতার নাম মনে নেই। পড়লাম- আহসান হাবীবের ‘মেঘনা পাড়ের ছেলে’ আর হুমায়ূন কবিরের ‘মেঘনার ঢল।’ আরেকটি কবিতা- ক্লাস সিক্সে পড়েছিলাম সম্ভবত- ‘তিনদিন হতে খাইতে না পাই/ নাই কিছু মোর ঘরে/ দারা পরিবার বাড়িতে আমার উপোস করিয়া মরে।’ তারপর পড়লাম যতীন্দ্র মোহন বাগচী’র ‘কাজলা দিদি’, জসিমউদ্দিনের ‘নিমন্ত্রণ’ আর নজরুলের ‘কামাল পাশা।’ পড়লাম কাজী কাদের নেওয়াজের ‘ওস্তাদের কদর।’ পড়লাম- নজরুলের ‘চল চল চল, উর্ধ্বগগনে বাজে মাদল…।’
আরো অসংখ্য ছড়া কবিতার কথা মনে পড়ে। তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ কবিতাটি। আর রবার্ট ফ্রস্টের ‘স্টপ বাই আ উড ইন আ স্নোয়ি ইভনিং’ কবিতাটি দুটি। এই দুটি কবিতা পড়েছিলাম নটরডেম কলেজে আইএ’র সিলেবাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে পড়াকালিন অনেক রচনা/উপন্যাস/কবিতা রেখাপাত করেছিল মনে। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেখাপাত করেছিল- এমিলি ব্রন্টির ‘উইদারিং হাইট্স’, ই. এম. ফরস্টারের ‘আ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়া’, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ প্রভৃতি। টি. এস. এলিয়টের ‘দি ওয়েস্টল্যান্ড’, আর ইংরেজি সাহিত্যের পাঁচ রোম্যান্টিক দিকপালের (শেলী-কিটস-বায়রন-কোলরিজ-ওয়র্ডসওয়র্থ) কবিতাগুলো দারুণ ভালো লাগত।
সবশেষে, সাম্প্রতিককালে লিখেছি একটি ইংরেজি কবিতা:
Ode On A Banyan Tree
The silence was louder than words
Under the banyan tree,
And connected my thoughts-
It wasnÕt our part for having old age banyan tree,
Yet it gave the sublimity, and flavor of my tropical weather-
The silence pervaded the whole shebang,
There was silence on the beach,
And the silence over the vast sands, and glittering seawater,
Silence on the skyscrapers, and the horizon beyond„
The banyan trunks turned out to be huge black snakes,
After being shown his Anaconda, and the Amazon macaw,
The chubby man just wound up his stuff after the dayÕs show.
I squatted on the trunks,
But was stuck up, negotiating a conundrum,
Letting the silence win over the turmoil inside„
Who wins in life?
Silence or turmoil?