হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।
বাংলা কাগজে আমার কলাম ‘বালুকা বেলা’য় আমার লেখালেখি চলছে বেশ অনেকটা সময় জুড়ে। লেখাটা কবে বা কতোদিন আগে শুরু করেছিলাম, মনে পড়ছে না। এর সময়কাল কতো তা-ও সঠিকভাবে বলতে পারব না; তবে এর বয়স এক বছরের কাছাকাছি হবে। সম্ভবত বালুকা বেলায় আমার লেখালেখির প্রথম জন্মদিন খুব কাছেই। কিংবা জানি না, হয়তো এর জন্মদিন পার হয়ে গেছে অজান্তে।
আমার মন ও মনন এতো গুলিয়ে যাবার পেছনে মূল কারণ হিসেবে এই মুহূর্তে আমার মস্তিষ্ক যে সিগন্যাল আমাকে দিচ্ছে তা হলো, আমার অসুস্থতা, ব্যস্ততা, সময় ও ভাবনা। এই ক’টি প্যারামিটারের কোনোটিই ঠিক নেই এই মুহূর্তে আমার দৈনন্দিন রুটিনে। তাই হোঁচট খাচ্ছি পদে পদে।
সবচেয়ে বড় বিষয়টি বোধহয় আমার শারীরিক অসুস্থতা। অ্যাজমা ও ব্লাড প্রেসারে ভুগছি। আরেকটি জোরালো কারণ আমার ভাবনা। ভাবনারা এলোমেলো ওড়াওড়ি করছে। এই দীর্ঘ সময়ে আমার নানান ভাবনার অনেকখানিই ঢেলে দিয়েছি বালুকা বেলায়। আমার রসদ ফুরিয়ে গেছেÑএমনটি আমি ভাবি না; বরং ভাবনাগুলিকে গুছিয়ে ছকে ফেলে লিখতে যে সময় ও করোটির জোর থাকতে হবে, তা এই মুহূর্তে নেই। অনেককিছুই যে আমার বলার আছে। কিন্তু সময় ও অসুস্থতা আমার জন্য বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমার শৈশব-কৈশোর-যৌবন, আমার ভ্রমণ, বিচিত্র অভিজ্ঞতা, আমার লেখালেখি ও সংগীত সাধনা প্রভৃতি বিষয়ের এক শতাংশও তো বলা হয়নি। সেসব জমে আছে আমার ভেতরে বসানো হার্ড ডিস্কে। এগুলো কপি-পেস্ট করা ও সাজানো গোছানোর জন্য অনেক সময় প্রয়োজন।
২০২৩ সাল আমার অনেক ব্যস্ত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে বছরের শুরুতেই। এবছর বইমেলায় প্রকাশিত আমার গ্রন্থ ‘পরিবর্তিত জলবায়ু: মহাসংকটের মুখে পৃথিবী’ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত হবার আগে এই গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি আমাকে অনেক হার্ড টাইম দিয়েছে। এই পাণ্ডুলিপি রচনা করেছিলাম তিনবছর আগে। প্রথম বছর এটি প্রকাশিত হয়নি। পরের বছর এর প্রচ্ছদ হয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে প্রকাশক প্রকাশ করেননি। কারণটা আমি আগের এক এপিসোডে বলেছি। আবার বলছি, ভালো কন্টেন্টস ও তার সাথে সঙ্গতি রেখে যে সমৃদ্ধ মানের বই প্রকাশ করার কথা, সেটা বজায় রেখে বই প্রকাশে চলমান অতিমারিতে আর্থিক সংকটের দোহাই দিয়ে প্রকাশক পেছিয়ে বা পিছলিয়ে গেছেন।
ফলে, প্রতিবছরের মতো ২০২২এ এসে আবারও পাণ্ডুলিপি আপডেট করার মতো কঠিন কাজটি করলাম। এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে সামনে রেখে স্ক্রিপ্ট আপডেট করে অন্য এক প্রকাশককে পাণ্ডুলিপি দিই। তাতেও সমস্যা। জলবায়ু বিষয়ে প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু আপডেট হচ্ছে। পাণ্ডুলিপি জমা দেবার পর মিশরে শুরু হয়ে গেল কপ ২৭ সম্মেলন (কনফারেন্স অব পার্টিজ ২৭। ৬-১৮ নভেম্বর ২০২২)। আরো একটি ধাক্কা খেলাম। জলবায়ু বিষয়ে আমার বই বের হবে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩এ, অথচ তাতে ইউনাইটেড ন্যাশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর কপ ২৭ সম্মেলনের উল্লেখ থাকবে না, বা সেই সম্মেলনে কী সিদ্ধান্ত হলো, তার উল্লেখ থাকবে না কিংবা সেই আলোকে বইটিতে কোনো ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ থাকবে না, তা কি হতে পারে?
ফলে আবারও গাধার খাটূনি খেটে পাণ্ডুলিপি সাজিয়ে নতুন আঙ্গিকে প্রকাশকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠালাম। মোদ্দা বিষয় হলো, এই পাণ্ডুলিপি অনেক ভুগিয়েছে আমাকে।
তারপরও ২০২৩ সালের শুরুটা আমার ভালোই হয়েছে বলে আমি মনে করি। দুই বাংলার এক গল্প সংকলনে আমার গল্প প্রকাশ, জলবায়ু বিষয়ে বইটি প্রকাশ এবং কয়েকটি ঈদসংখ্যা গল্প প্রকাশিত হবার কারণে আমি অনেক কষ্টই ভুলে যেতে পেরেছি। এরমধ্যে আমার নিরানন্দের বিষয় হলো অ্যাজমার প্রবল ছোবল। ডাক্তার দেখানো ও অষুধপত্র কেনার ধকল ও খরচ এবং অনেকদিন গান করতে না পারার আক্ষেপ ও ভয় আমাকে কাবু করে ফেলল। জীবনে আর কোনোদিন গান গাইতে পারব কিনা সেই ভয় কাজ করল ভেতরে।
এরমধ্যে অ্যাজমা একটু কমে আসার পর গান করেছিলাম। দেখলাম গলা খোলেনি। ভীত হয়ে পড়লাম। এখনও সেই ভীতির লেভেলেই আছি। তবু একদিন দু’টি গান খসড়া রেকর্ড করলাম। একটা গান আমার গানের মডেল ও ছাত্রীকে পাঠালাম ম্যাসেঞ্জারে। সে উচ্ছ¡সিত প্রশংসা না করলেও একেবারেই বাজে হয়েছে, এমনটি বলেনি। বলল যে, সামনে আরো সেরে উঠুন, আরো ভালো হবে। মনে মনে বললাম, তথাস্তু।
সামনে আবারও হাজির হবো- পাঠকের কাছে নতুন কিছু নিয়ে। কী নিয়ে লিখব তা আগাম বলতে পারছি না। পরের সংখ্যায় কী লিখব, সেটা আগে থেকে ঠিক করে রাখার অভ্যাসটি আমার এখনও তৈরি হয়নি। হলে বোধহয় ভালো হতো। সবাইকে ঈদ শুভেচ্ছা।