Home কলাম বালুকা বেলা : অন্য হাওয়া বাংলা নববর্ষে

বালুকা বেলা : অন্য হাওয়া বাংলা নববর্ষে

হাসান জাহিদ : কথাশিল্পী হাসান জাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্যে, আর কানাডায় পড়াশুনা করেছেন সাংবাদিকতা ও কালচার এন্ড হেরিটেজ বিষয়ে। তিনি ইকো-কানাডা স্বীকৃত পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের লেখক হাসান জাহিদ ‘বালুকা বেলা’ কলামে ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকের কাছে তুলে ধরবেন তাঁর প্রিয় সব বিষয়ের অনুসন্ধিৎসু ক্যানভাস।

অন্য হাওয়া বাংলা নববর্ষে
সময়ের সাথে সাথে যেমন অনেককিছু বদলায়, কালের হাওয়ায় যখন নৌকার পাল ফুলে ফেঁপে ওঠে, ভেসে বেড়ায় দূরান্তে, তেমনি অতি আধুনিকতা ও যান্ত্রিক জীবন যাপন গ্রাস করে নিতে চলেছে চিরপরিচিত বৈশাখকে।
স্বাধীন ভ‚খণ্ডে আমরা আবার ফিরে পাই বৈশাখকে, ফালগুনকে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে, এবং এমনি আরও বহুমাত্রিক সংস্কৃতিকে।
তবে, বিশেষভাবে এবারের (১৪৩০) এর বৈশাখের অন্য এক রূপ আমরা দেখি। হঠাৎ করেই যেন বদলে গেল পহেলা বৈশাখের রূপ। জলবায়ু পরিবর্তনের উত্তপ্ত প্রভাব, কোভিড-১৯, খাদ্যে ভেজাল আর সবচেয়ে বড়কথা, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য। এই অগ্নির মুখে জাতি পুড়ে প্রায় ছাই। সেইসাথে পুড়ছে দালানকোঠা আর মার্কেট।

বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তু, খরার কবলে পড়েছে উত্তরা ল। একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠি আজ বিপন্ন। এই সময়টায় ফিরে এসেছে বৈশাখ। পান্তা-ইলিশের বৈশাখ এবার অনেকের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তবে দূর থেকে দেখাটাই সার। কেনার সামর্থ্য ক’জনারই বা আছে। কষ্টে কেমন ফাঁপর লাগে ভেতরটা। আমাদের জাতীয় মাছ, আমাদের গর্ব এই মাছ একদিকে বিপন্ন জাটকা নিধনের ফলে, অন্যদিকে কোহিনূর হীরকের মতো এর অগ্নিমূল্য আমাদের বৈশাখের আনন্দকে অনেকটাই ম্লান করে দেয়। বোধহয়, পান্তা-ইলিশের কোনো বিকল্প আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।
এরপরের বৈশাখগুলোতে হোক পান্তা পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ ও আলুভর্তা। আমরা অনেক দিক থেকেই বিপদগ্রস্ত। দু’মুঠো আহারের জন্য একটা বৃহত্তর গোষ্ঠিকে নিত্য সংগ্রামরত থাকতে হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।

ব্রিটিশ বেনিয়াদের পরে এই দেশকে ভোগদখল করে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকগণ। তাদের কাছ থেকে মুক্তিলাভের পর আমরা এখন বন্দি হয়ে আছি সিন্ডিকেট বেনিয়াদের জালে। একটা ধুম্রজাল পাক খাচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। বিভিন্নসূত্র বলছে, আমাদের দেশের ওষুধেও ভেজাল। সেদিন আমার এক ঘনিষ্ঠজন (তিনি ডাক্তার) জানালেন, মোনাস ১০ ট্যাবলেট এর নকল বেরিয়েছে বাজারে। আমি শ্বাসকষ্টের কারণে মোনাস ১০ খাই। খাদ্য. মাছ আর ফলমূলে ফরমালিন মেশানোটা তো রীতিমতো কালচারে পরিণত হয়েছে। এখন বলুন, ভেজাল ওষূধ আর ফরমালিনযুক্ত খাদ্য খেয়ে ক’দিন বেঁচে থাকতে পারবে একজন রোগী, এমনকি একজন সুস্থু মানুষ?

আমাদেরকে ধৈর্য ধরতে হবে, সংযম পালন করতে হবে। প্রতিবাদী হতে হবে। হাত গুটিয়ে বসে না থেকে রুখে দিতে হবে সিন্ডিকেট দানবদের। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে বাস করেও আশাবাদী। দেশ একদিন দুর্নীতিমুক্ত হবে। মানুষেন বিবেক জাগ্রত হবে।

Exit mobile version