ভজন সরকার : (১)
হঠাৎ দেখা আলোর ঝিলিক
হঠাৎ তোমার আসা
হঠাৎ করেই বিরহ দিন
হঠাৎ ভালোবাসা।

হঠাৎ নিমিষ অনন্ত ক্ষণ
হঠাৎ থমকে যাওয়া
হঠাৎ দুপুর গনগনে রোদ
হঠাৎ উতল হাওয়া ।

হঠাৎ তোমায় পাঠাই কথা
হঠাৎ বাঁধো সুরে
হঠাৎ আমার একান্ত যা
হঠাৎ বীণার তারে ।

হঠাৎ যখন রবীন্দ্রনাথ
হঠাৎ চোখে ভাসেন
হঠাৎ কেন? প্রাত্যহিকই
তিনিই পাশে বসেন।

(২)

খুব বেশী বাসি হলে ফেলে দিও
যদি হই খুব পুরানো, সযত্নে নিও
কোন নতুন খাতা। লিখো গান
সুর বেঁধো আশাবরী ইমন কল্যাণ!

খুব বেশী পর মনে হলে চলে যেয়ো
ভোরের ভৈরবী রাতের বেহাগে গেয়ো
তবুও মনে রেখো, যতটুকু রাখা যায়
চন্দ্রকোষও ভুল করে মূলতানী গায়।

“তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে।
যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে।”

(৩)

ইচ্ছে হলে হাত বাড়াও
ইচ্ছে হলে জলেই ডুবে থাকো
আমি তো ঠায় ভেসেই আছি
দুহাত ধরে সাঁকো ।

তোমার যদি ঘুম না আসে
শূন্য ঘরে একা
সুরের বীণায় ভাসিয়ে দিও
আমার যে গান রাখা ।

“আমারে করো তোমার বীণা
লহো গো লহো তুলে …।”

(৪)

হঠাৎ যদি বদলে যায় দিন
হঠাৎ করেই তোমার কাছে আসা
তোমার যে গান প্রাণ ছুঁয়েছে
সে গান শুনেই গানের তানে ভাসা।

অসীম যখন সীমায় বাঁধি
তোমার গানের সপ্তসুরে
তুমি তখন শুধুই আমার
তোমার ব্যাপ্তি হৃদয় জুড়ে

“অসীম ধন তো আছে তোমার
তাহে সাধ না মেটে….”

(৫)

ঘরটা ছোট, বারান্দাটাও।
জানলা খোলা। আলোর ছাঁট।
হাওয়া দিচ্ছে। পর্দা গুটাও।
দুয়ার খোলো। চাঁদের হাট…
বাইরে যাবে? ভাবছো, একা?
রবীন্দ্রনাথ আছেন সাথে।

“নিবিড় অমা তিমির হতে
বাহির হ’ল জোয়ার-স্রোতে
শুক্লরাতে চাঁদের তরণী…”

(৬)

যেখানে তার লুট হ’তেছে
সেইখানে কেউ দাঁড়ায় হঠাৎ
পিছলে পড়ে যাচ্ছি নিচে
হঠাৎ ধরি তোমার দু’হাত।

যখন দেখি কেউ কোথা নেই,
তুমি এসে দাঁড়াও হঠাৎ
তেমন আপন কেউ নাই আর
তুমি ছাড়া রবীন্দ্রনাথ।

“এ পরবাসে রবে কে হায়
কে রবে এ সংশয়ে সন্তাপে শোকে।
হেথা কে রাখিবে দুখভয়সঙ্কটে
তেমন আপন কেহ নাহি এ প্রান্তরে হায় রে”।

(ভজন সরকার : কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রকৌশলী। হ্যামিল্টন, কানাডা)