ইব্রাহীম চৌধুরী, নিউইয়র্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাকে দেশের অনেক মানুষই ভালোবাসেন না। আর এ কারণেই হয়তো আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন ‘প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’ ২৬ জুন ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেছেন।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক সেইন হেনরিকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য জো বাইডেনকে প্রথমে বিদ্রূপাত্মক আক্রমণ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘নিজেকে সুন্দর বা অসুন্দরভাবে প্রকাশের কোনো ইচ্ছা নেই। তবে ওই লোক (জো বাইডেন) দুটি বাক্যকে এক করে কথাই বলতে পারেন না। আর তিনিই কিনা আপনাদের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন। এর কারণ হলো হয়তো দেশের অনেক মানুষ আমাকে ভালোবাসেন না। তবে আমি কেবল আমার কাজটাই করে যাচ্ছি।’
জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়টা মোটেই ভালো যাচ্ছে না। এনপিআর, পিবিএস নিউজ আওয়ার ও ম্যারিস্ট পরিচালিত সর্বশেষ জনমত জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে জনমত ৪০ শতাংশ এবং বিপক্ষে ৫৮ শতাংশ বলে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই জরিপে ৪৯ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডকে মোটেও সমর্থন করেননি।
ট্রাম্পের এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার এক দিন আগে পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে জো বাইডেনও ট্রাম্পকে বিদ্রূপ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেছিলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শিশুর মতো আচরণ করছেন। প্রেসিডেন্ট শিশুদের মতো বিশ্বাস করতে চান না এসব ঘটছে। মনে হচ্ছে ট্রাম্প ছাড়া আর সবার ওপরেই করোনাভাইরাস প্রভাব ফেলেছে। প্রেসিডেন্টের কাজ এটা নিয়ে চিৎকার করা নয়, বরং যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে এর জন্য কিছু করা।
এর আগের সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছিলেন, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ছাড়াই মিইয়ে যাচ্ছে। যদিও আমেরিকার অন্তত ৩০টি রাজ্যে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটছে এখন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওকলাহোমাতে তাঁর নির্বাচনী সভায় বলেছিলেন, টেস্ট বেশি হচ্ছে বলে সংক্রমণের হারও বেশি দেখাচ্ছে। এ কারণে টেস্টিং কমিয়ে আনার জন্য বলেছেন—ট্রাম্পের এমন কথা বলার পর সমালোচনা শুরু হয়। পরে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কৌতুক করেই এমনটি বলেছিলেন।
আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি এস ফাউসি বলেছেন, করোনাভাইরাস চলে যাচ্ছে না, কেউ তাঁদের টেস্ট কমিয়ে আনতেও বলেননি। টেস্টিং বেশিই করা হবে।
গত চার মাসের কম সময়ে করোনায় সংক্রমিত হয়ে আমেরিকায় ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। সারা বিশ্বে শীর্ষ মৃত্যুর দেশ আমেরিকায় প্রায় ২৬ লাখ মানুষের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর নগরী নিউইয়র্কসহ পাশের অন্য দুটি রাজ্য নিউজার্সি ও কানেটিকাটে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব রাজ্যে আমেরিকার অন্যান্য রাজ্য থেকে আসা লোকজনের জন্য কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
আসছে নভেম্বরে নিজের পুনর্নির্বাচনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। মহামারির কারণে আমেরিকার অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে, বেকারত্ব চরমে উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য দ্রুত খুলে দিয়ে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনাই ট্রাম্প তাঁর পুনর্নির্বাচনের জন্য জরুরি মনে করছেন। ট্রাম্পের সমর্থকেরাও মনে করেন, দেশের অর্থনীতি চাঙা হলেই ট্রাম্প ঘুরে দাঁড়াবেন। এ কারণেই সবকিছু দ্রুত খুলতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাস আমেরিকার মানুষের কাছে যেমন দুঃস্বপ্ন, তেমনি এটি সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্যও দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।