অনলাইন ডেস্ক : কভিডের কারণে আর্থিক ক্ষতিতে পড়া বাংলাদেশের ৩৪৮টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও। রপ্তানি আদেশ বাতিল, দেরিতে মূল্য পরিশোধ, সময়মতো কাঁচামাল সংগ্রহ করতে না পারার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
কভিড-১৯: এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পোশাক কারখানা এবং শ্রমিকদের জীবনে প্রভাববিষয়ক এক গবেষণায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। আইএলও পরিচালিত বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচির অধীনে এই গবেষণা চালানো হয়েছে। বুধবার জেনেভায় আইএলওর সদর দপ্তর থেকে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া অঞ্চলের তৈরি পোশাক উৎপদানকারী ১০টি দেশকে এই জরিপের আওতায় আনা হয়। দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ ছাড়াও রপ্তানিকারক এসব দেশের তালিকায় রয়েছে চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা বন্ধের তথ্য নেওয়া হয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। কারখানাগুলো বন্ধের কারণ হিসেবে বলা হয়, ৬০ শতাংশ কারখানায় তিন সপ্তাহর মতো উৎপাদন বন্ধ ছিল। ৪০ শতাংশ কারখানায় ২৬ থেকে ৩৫ কর্মদিবস উৎপাদন বন্ধ ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তবে ইন্দোনেশিয়া সে পথে হাঁটেনি। দেশটিতে এক দিনের জন্যও ছুটি ঘোষণা করা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা হয়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ায় আইএলওর বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচির আওতায় থাকা ৭০ শতাংশ কারখানা কভিডে বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানা কাজের অভাবেই বন্ধ হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রপ্তানি আদেশ বাতিল, চাহিদা কমে আসা, লকডাউনের কারণে এশিয়া অঞ্চলের এই দেশগুলোতে অনেক কারখানা লে-অফে (সাময়িক বন্ধ) বাধ্য হয়েছে। এতে অনেক শ্রমিকও বেকার হয়েছে। কোন দেশের কত কারখানা, সে তথ্য উল্লেখ না করে প্রতিবেদেন বলা হয়, বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচির অধীনে থাকা অন্তত ৬০ শতাংশ কারখানা কিছুসংখ্যক শ্রমিককে কাজ থেকে বাদ দিয়েছে। বন্ধ কারখানাগুলোর অন্তত ১০ শতাংশ কারখানা এখন আর কাজে নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভাইরাস বাড়তে থাকলে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমবে। ফলে ২০২২ সালের আগে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দৃশ্যমান নাও হতে পারে। এ কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে পোশাক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। একই কারণে পোশাকের টেকসই সরবরাহ চেইন, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো বিষয়গুলো ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলবে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বহুপাক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে আইএলও। বিশেষত শ্রমিকের উপার্জন, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান এবং করোনায় টিকে থাকার উপায় বের করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।