অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো সীমান্তে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় ২৫ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে অবেশেষে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অভিবাসন আদালতের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া স¤পাদন করা হবে। বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নতুন প্রশাসন ট্রাম্প আমল থেকে মেক্সিকো সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী ও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের প্রতি সদয় হয়েছে। গত শুক্রবার তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়ার বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আগামী সপ্তাহ থেকে মাঠ পর্যায়ে অভিবাসীদের গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হবে। এপির রিপোর্ট মতে, অভিবাসীদের গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানালেও তাদের কোন পয়েন্ট দিয়ে দেশটিতে ঢুকতে দেয়া হবে কেন্দ্রীয় প্রশাসন তা খোলাসা করেনি। ওই অভিবাসীদের জাতীয়তা বা অন্য পরিচয়ও প্রকাশ করা হয়নি এখনও।
কারণ হিসাবে বলা হয়েছে যে, কোন পয়েন্ট দিয়ে তা প্রবেশ করবেন তার আগাম ঘোষণা হলে আশ্রয় প্রত্যাসীদের চাপ আচমকা বেড়ে যেতে পারে। বাড়তি চাপের ভয়টি বাইডেন প্রশাসনকে সবচেয়ে বেশি তাড়া করছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা নারী, পুরুষ ও শিশুদের যে তারা পর্যায়ক্রমে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক এপিসহ আন্তর্জাতিক অন্য মিডিয়ার রিপোর্টে তার বেশ স্পষ্ট আভাস রয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে বাংলাদেশ কমিউনিটির দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সীমান্তে অপেক্ষায় থাকা অভিবাসন প্রত্যাশী বা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি রয়েছেন। তবে গত ক’বছরে চরম দুুর্বিসহ জীবন কাটিয়ে অনেক বাংলাদেশে দেশে ফিরে এসেছেন। লাখ লাখ টাকা খরচা করে দালাল মারফত ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ঘুরে তাদের বেশিরভাগই মেক্সিকো সীমান্তে পৌঁছে ছিলেন। সেখানে তারা স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছেন এবং জেল কেটে কিংবা কারেকশন সেন্টারে থেকে পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসনের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরেছেন। ফলে মেক্সিকো সীমান্তে এখনও অবিশিষ্ট থাকা বাংলাদেশির সংখ্যা কত হতে পারে? কমিউনিটি বা স্থানীয় বাংলাদেশ মিশন সেই ধারণা দিতে পারেনি। স্থানীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বরাতে এপি জানায়, মেক্সিকো সীমান্তে আটকে পড়া অভিবাসীদের মধ্য থেকে প্রথম ধাপে ১৯ ফেব্রুয়ারি বেশ কিছু লোককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সূযোগ দেয়া হবে। তিনটি স্থান দিয়ে অভিবাসীদের প্রবেশের সুযোগ উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্থানের প্রতিটি দিয়ে দিনে ৩০০ জন করে অভিবাসীকে ঢুকতে দেয়া হবে। তৃতীয় একটি স্থান রয়েছে, অবশ্য সেই পয়েন্ট দিয়ে খুব কম সংখ্যক মানুষ প্রবেশের অনুমতি পাবে। অভিবাসী এবং জনসাধারণ ভিড় বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় বাইডেন প্রশাসন ওই তিন স্থানের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তবে টেক্সাসের ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি হেনরি কুয়েলার বলেন, কর্মকর্তারা তাকে টেক্সাসের ব্রাউন্সভিল, এল পাসো এবং সান দিয়েগোর সান ইসিড্রো ক্রসিং দিয়ে অভিবাসীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী নীতির জের ধরেই মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়নি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে দ্য মাইগ্রেন্ট প্রোটেকশন প্রটোকল কর্মসূচি চালু করা হয়। প্রায় ৭০ হাজার অভিবাসী এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের ক্ষমতার ব্যবহার এবং কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়াই তার পূর্বসূরীর অভিবাসন নীতি বাতিল করার আদেশে দ্বিতীয় দফায় সই করেছেন। এ আদেশের মধ্যেদিয়ে ক্ষমতায় আসার প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি পারিবারিক বিচ্ছেদ, সীমান্ত সুরক্ষা এবং আইনী অভিবাসনের বিষয়ে ৯টি নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রস্তাবিত আইন অনুসারে দেশটিতে থাকা আনুমানিক এক কোটি ১০ লাখ অভিবাসীকে আইনী মর্যাদা ও নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন রোধে নেয়া আইনী এবং অবৈধ পদক্ষেপের ব্যাপক পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মায়োরকাস বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র সরকার ফের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও মানবিক অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ কারণেই আমরা অভিবাসন নীতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছি। এর আগে যে নীতি ছিল, সেটি মার্কিনিদের জাতিগত মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না।