তামিম রায়হান, কাতার : কাতারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে কঠোর নিয়মকানুন ধাপে ধাপে শিথিল করা হচ্ছ। দীর্ঘ চার মাস ধরে স্থবির জনজীবন স্বাভাবিক করার তৃতীয় ধাপ শুরু হচ্ছে আগামী ১ আগস্ট থেকে। এদিন থেকে কাতারে ফিরতে পারবেন বিদেশি কর্মী ও পারিবারিক ভিসার অভিবাসীসহ এ দেশের ভিসা আছে—এমন যেকোনো ব্যক্তি।
২১ জুলাই রাতে কাতারের যোগাযোগ কর্তৃপক্ষ ও কাতার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিদেশিদের কাতার আসাসংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে দেশ ও ক্যাটাগরিভেদে বিদেশিদের ফেরার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা প্রক্রিয়া ও নিয়ম নির্ধারণ করেছে কাতার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, বাংলাদেশে আটকে থাকা কাতারপ্রবাসী কর্মীরা ১ আগস্ট থেকে দুটি শর্ত মেনে কাতারে ফিরতে পারবেন। প্রথমে কাতার কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ওয়েবসাইট কাতার পোর্টালে কাতারে ফেরার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। এতে অনুমতি মিললে কাতারে আসার পর ওই কর্মীকে নির্ধারিত হোটেলে এক সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এই কোয়ারেন্টিনের খরচ কোম্পানিকেই বহন করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে অবশ্য কাতার কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বিদেশি কর্মীদের ফেরার অনুমতি দেওয়ার বেলায় সরকারি ও আধা সরকারি খাতে কর্মরত কর্মীদের চাহিদা ও কাতারের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পারিবারিক ভিসায় যাঁরা কাতারে থাকেন, তাঁরা বাংলাদেশ থেকে কাতারে ফেরার পর নিজ খরচে এক সপ্তাহের জন্য হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এক সপ্তাহ পার হওয়ার পর তাঁদের করোনার পরীক্ষা করা হবে। করোনার ফল নেগেটিভ হলে বাসায় আরও এক সপ্তাহের জন্য হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আর পজিটিভ হলে কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে আইসোলেশনে যেতে হবে।
কোন কোন হোটেলে প্রথম সপ্তাহের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে, ইতিমধ্যে সেগুলোর তালিকা ডিসকোভার কাতার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তবে কিছু কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই এক সপ্তাহের জন্য হোটেল কোয়ারেন্টিনের পরিবর্তে এক সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টিন প্রযোজ্য হবে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, হার্টের সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তি, ক্যানসার চিকিৎসাধীন ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও মা, লিভার ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী শিশু ও শিশুর মা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে অসুস্থ ব্যক্তি।
এদিকে কাতার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিশ্বে কম ঝুঁকিপূর্ণ ৪০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করে জানিয়েছে, এসব দেশ থেকে কাতারে এলে বিমানবন্দরে করোনা টেস্ট করা হবে এবং ১০টি শর্ত মেনে চলার শপথনামায় স্বাক্ষর করে এক সপ্তাহের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে হোটেল কোয়ারেন্টিনের কোনো প্রয়োজন নেই। এসব দেশের তালিকায় রয়েছে ব্রুনেই, ভিয়েতনাম, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, মালটা, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, দক্ষিণ কোরিয়া, এস্তোনিয়া, নরওয়ে, লিথুনিয়া, লাটভিয়া, জাপান, সাইপ্রাস, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, স্লোভাকিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, মরক্কো, পোল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, স্লোভেনিয়া, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, চেক, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, আলজেরিয়া, তুরস্ক, আইসল্যান্ড, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া ও এন্ডোরা।
কাতারে ২১ জুলাই পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৪৩০ জন। তবে এঁদের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৪ হাজার ১৯১ জন। ফলে, আর আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৭৯ জন।
এ পর্যন্ত কাতারে করোনায় ১৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২১ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ১৬৮ জনের।