কবির আল মাহমুদ, স্পেন : করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে আটকে পড়াদের স্পেনে ফেরাতে বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ বিমান। স্পেনে বাংলা গণমাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪১০৯ বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট রাজধানী মাদ্রিদে ১৯ জুন অবতরণ করবে।
এর আগে একবার সময়সূচি নির্ধারণ হলেও কিছু সমস্যার কারণে তা অনির্ধারিত রাখা হয়। অবশেষে সবকিছু চূড়ান্ত করেই স্পেনের উদ্দেশে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঘোষণা করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার (১৩ জুন) এ–সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী শুক্রবার (১৯ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট স্পেনের উদ্দেশে রওনা দেবে। ফ্লাইট নম্বর বিজি ৪১০৯/১৯, উড়োজাহাজটি ২৭৩ জন (সম্ভাব্য) যাত্রী নিয়ে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সরাসরি মাদ্রিদ বিমানবন্দরে ১৯ জুন স্পেন সময় বেলা সোয়া ৩টায় অবতরণ করবে। ইতিপূর্বে কখনো স্পেনে বাংলাদেশ বিমানের সরাসরি কোনো ফ্লাইট অবতরণের ঘটনা ঘটেনি, সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
স্পেনে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশি, যাঁরা দুই দেশে জরুরি রাষ্ট্রীয় সতর্কতা ঘোষণার আগে বাংলাদেশে সফর করেছিলেন এবং বর্তমানে চলমান লকডাউনে বাংলাদেশ থেকে স্পেনে ফেরত আসতে পারছেন না, তাঁদের একটি বিশেষ চার্টার্ড বিমানে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ১৫ মে অনলাইন আলোচনা সভার আয়োজন করে স্পেন বাংলা প্রেসক্লাব। যেখানে অংশগ্রহণ করেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও মিশন উপপ্রধান এম হারুণ-আল রাশিদ। তিনি বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মে বাংলাদেশ দূতাবাস বাংলাদেশে আটকে থাকা স্পেনপ্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়াবিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে আগ্রহীরা দূতাবাস এবং স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় ফ্লাইটসংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পাদন করেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ বিমান তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বিশেষ ফ্লাইটের শিডিউল প্রকাশ করেছে। স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি বনি হায়দার মান্না এই বিশেষ ফ্লাইটের প্রস্তুতির জন্য মূল সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জানান, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বাত্মক সহযোগিতাসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই চার্টার্ড ফ্লাইটের শিডিউল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে আটকে পড়া স্পেনপ্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে, বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমানের এই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানের ওই উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসে ২২ জন এবং ইকোনমি ক্লাসে ২৪২ জন যাত্রী ঢাকা থেকে সরাসরি মাদ্রিদে আসতে পারবেন। বিজনেস ক্লাসের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ইকোনমি ক্লাসের জন্য ৯০ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪ জুন থেকে বাংলাদেশ বিমানের অফিস থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেনা যাবে।
স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ জানান, বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্পেন বাংলা প্রেসক্লাব বিষয়টি সামনে আনে। পরে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ টক শোর আয়োজন করে স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়।
স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনি জানান, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাব শুধু গণমাধ্যমকর্মীদের নয়, বরং বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বিশেষ দায়বদ্ধতার জন্য এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে। মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বাত্মক সহযোগিতা, স্পেনের প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব খোরশেদ আলম মজুমদার, ভালিয়ান্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী, বাংলাদেশ থেকে স্পেনপ্রবাসী মাসুমের রহমান, আমিনুর রাজ্জাক, ওয়াসিম মিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলা কাগজের উপদেষ্টা খায়রুল ইসলামসহ স্পেনের বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য এই বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯ জুন বিমান বাংলাদেশ মাদ্রিদে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশে আটকে পড়া স্পেনপ্রবাসী বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকের রেসিডেন্ট কার্ড ও পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অনেকে কাজে যোগ না দিতে পারায় চাকরি হারানোর অনিশ্চয়তাসহ স্পেনে ফেলে যাওয়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তদারকি করতে না পারায় চরম অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিলেন। অনেকে পরিবার স্পেনে রেখে দেশে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উৎকণ্ঠায় করোনা মহামারির সময়কাল পার করছেন। তাই ১৯ জুনের চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে স্পেনের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারার নিশ্চয়তায় কিছুটা হলেও অনেকের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।