অনলাইন ডেস্ক : মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব ও লকডাউনের মধ্যেও থেমে নেই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। মঙ্গলবার কর্মকর্তারা বলেন, সরকারের উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। এ ছাড়া এগিয়ে চলছে দেশের আরও তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চট্টগ্রামের শাহ আমানত, সিলেট ওসমানি, কক্সবাজার এবং অভ্যন্তরীণ রাজশাহী শাহ মখদুম, যশোর, সৈয়দপুর, বরিশাল ও খুলনা খানজাহান আলী বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ। এরই মধ্যে এসব বিমানবন্দরে উন্নয়নমূলক বেশ কিছু কাজ শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এসব উন্নয়ন প্রকল্প।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, মহমারি করোনার মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় দেশের আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর যাত্রী, কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতার মান ও পরিধি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বদলে যাবে বিমানবন্দরগুলোর চেহারা।
কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে দুটি মেগা প্রকল্পসহ ১৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে চলমান এমন উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। দুই হাজার কোটি টাকার কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথমধাপ)। বাগেরহাটে খানজাহান আলি বিমানবন্দর তৈরির লক্ষ্যে চলছে জমি অধিগ্রহণের কাজ। ২৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবন নির্মাণ কাজের পত্র যাচাই বাছাই চলছে, দ্রুত এ কাজের কার্যাশে দেওয়া হবে। এছাড়া ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে ওভারলেকরণ প্রকল্প, ২১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একই বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল বিল্ডিং নির্মাণ কাজ। ৫৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ে ওভারলেকরণ কাজ, ৩২২ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর বিমানবন্দরের টার্মিনালের আধুনিকায়ন ও ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের উন্নয়ন ও পার্কিং নির্মাণ প্রকল্প। এদিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে ১৩০০ কোটি টাকার চুক্তিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করা হয়। পাশাপাশি বরিশাল বিমানবন্দর এবং রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও নবরূপায়ণের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই বদলে যাবে বিমানবন্দরগুলোর চেহারা। এতে দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়াবে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত।
এ ব্যপারে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনকারী বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবুল মালেক বলেন, চলতি বছরের মধ্যেই অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তখন বদলে যাবে সব বিমানবন্দরের চেহারা। বেবিচকের এই প্রকৌশলী আরও বলেন, করোনার মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব বিমানবন্দরে উন্নয়ন কাজ চলছে। প্রায় এক হাজারের বেশী দেশি-বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিদিন পরীক্ষা করা হয় এসব শ্রমিকের স্বাস্থ্য। বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথকভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার প্রথম পর্যায়ের কাজ প্রায় শেষের দিকে। জুলাইয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগেই এ বিমানবন্দরের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের পত্র প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে অনুমোদনের জন্য ফাইল মন্ত্রণালয়ে আছে। সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে ওভারলেকরণের কাজ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। বিদ্যমান রানওয়েকে শক্তিশালী ও প্রশস্তকরণের পাশাপাশি নির্ভরযোগ্য লাইটিং সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে। রানওয়ের কাজ শেষ হলে এবং জ্বালানি ডিপো চালু হলে সিলেট থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেট করা যাবে। শাহজালালের মেগা প্রকল্প থার্ড টার্মিনালের জন্য জেনারেল হ্যাঙ্গার নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রস্তাবিত এ টার্মিনালের জন্য যে জমি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে বর্তমানে ভিভিআইপি লাউঞ্জ ও জেনারেল এভিয়েশনের হ্যাঙ্গার রয়েছে। এগুলো হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উত্তর সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্থানান্তর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কক্সবাজার, যশোর ও সৈয়পুর বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণ কাজ চলতি বছরের মধ্যে শেষ হবে। বিশ্বমানের এসব টার্মিনালে আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে এবং এসব টার্মিনাল পরিচালনা শুরু হলে কক্সাজার, যশোর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের যাত্রী ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ হবে। কর্মকর্তারা বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়নে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দেশের অন্যতম কর্মব্যস্ত এ বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক হাবকরার লক্ষ্যে বিশাল একটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখানকার বর্তমান ডিপোর চার লাউঞ্জকে সংস্কার, কনভয় বেল্ট ও নতুন একটি অ্যারাইভ্যালটার্মিনাল তৈরি করা হবে।
যশোর বিমানবন্দরে ৩২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন ও পার্কিং জোন নির্মাণের কাজ এ বছরেই শেষ হবে। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই সেটি উদ্বোধনের তোড়জোড় চলছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এ বিমানবন্দরে নতুন করে একটি দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। যেখানে থাকবে নতুন কনভেয়ার বেল্ট, অ্যারাইভ্যাল ও ভিআইপিলাউঞ্জ। চট্টগ্রামের শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করার জন্য ৫৪০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলতি বছরেই শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বেবিচকের নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্র ক্রয় করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বমানের ইডিএস সিস্টেম বা এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম। কার্গোতে ইডিএস ও আরএ থ্রি এরিয়া সংযোজনের মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিং আরও নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করা হয়। জানা গেছে, প্রতি বছরই তাদের রাজস্ব আয় বাড়ছে। চলতি প্রকল্পগুলো শেষ হলে একদিকে যেমন উন্নত হবে দেশের সার্বিক বিমান চলাচল ব্যবস্থা। অন্য দিকে তেমনি বৃদ্ধি পাবে দেশের রাজস্ব আয়। এ লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের উপর সর্বোচ্চ জোর দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পগুলোর কাজ আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে শেষ হবে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই বদলে যাবে বিমানবন্দরগুলোর চেহারা।