মনিস রফিক : চলচ্চিত্রের যাত্রাপথ ইতোমধ্যে ১২৫-এ পা দিয়েছে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নবীন আর শক্তিশালী এই শিল্পমাধ্যমকে ‘অষ্টম আশ্চর্য’ বলা হয়। আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-নিরাশা আর ভালোবাসার কথা যেভাবে এই শিল্পমাধ্যমে উঠে আসে, তা অন্য শিল্প মাধ্যমে সম্ভব হয় না। মূলত পূর্বের ছয়টি শিল্পের মিথস্ক্রিয়া আর প্রতিফলনে ঋদ্ধ চলচ্চিত্র নামের এই ‘সপ্তম শিল্পকলা’। শুরু থেকে বর্তমানের চলচ্চিত্রের যাত্রাপথটা কেমন ছিল, আর কোন কোন অনুসন্ধিৎসু ক্ষণজন্মা স্বপ্ন দেখা মানুষের স্বপ্নের ফসল এই চলচ্চিত্র, সে সব বৃত্তান্ত উঠে আসবে চলচ্চিত্রকর্মী মনিস রফিক এর লেখায়। চলচ্চিত্র যাত্রাপথের এই বাঁকগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে ‘বাংলা কাগজ’ এ।

এক.
ফ্রান্সের লিয়ঁ শহরের চিত্রকর আঁতোয়া লুমিয়ের ছবি আঁকিয়ে আর্থিক সুবিধা করতে পারছিলেন না। ফলে হুট করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ছবি আঁকা ছেড়ে দেবেন। উপার্জন করাটা তাঁর খুব বেশি জর“রি হয়ে পড়েছিল। ফলে হৃদয়ের গহীনে লালিত হওয়া আর্টের পথ ছেড়ে ফটোগ্রাফিক মাল মশলা তৈরি এবং এর সরবরাহ দেয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বসলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁর এই মাল মশলার প্রতিষ্ঠান আর নিজের জীবনের আর্থিক চাহিদা মেটানোর প্রচেষ্টা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বিস্ময়কর শিল্প মাধ্যম চলচ্চিত্রের আবিষ্কারের পথটা সহজ ও সরল করে দিয়েছিল।

আজকের যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী এই শিল্প-মাধ্যমের আবিষ্কারের সঙ্গে ফ্রান্সের আঁতোয়া লুমিয়ের (১৮৪০-১৯১১) এর নাম কখনো উচ্চারিত হয় না বরং উচ্চারিত হয় তাঁর দুই সন্তান অগুস্ত লুমিয়ের (১৮৬২-১৯৫৪) এবং লুই লুমিয়েরের (১৮৬৪-১৯৪৮) নাম। কিন্তু আঁতোয়া’র মত পিতা না পেলে অগুস্ত এবং লুই-য়ের সিনেমাটোগ্রাফের আবিস্কার হয়ত অনিশ্চিত হয়ে পড়তো আর স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর মানুষের চলচ্চিত্র শিল্পের স্বাদ পেতে আরো বিলম্ব হতো।

আঁতোয়া লুমিয়ের

আঁতোয়া লুমিয়ের রং তুলি ছেড়েছিলেন এটা সত্য, কিন্তু মনের মধ্যে প্রকৃতির যে সৌন্দর্য তাকে আলোড়িত করতো, সেই সৌন্দর্যের স্থায়িত্ব দেওয়ার জন্য তিনি ক্যামেরা হাতে নিয়েছিলেন এবং দীর্ঘ সাধনায় নিজেকে একজন খ্যাতনামা ফটোগ্রাফারের স্তরে উন্নীত করেছিলেন। তাঁর অবিরাম পরিশ্রমে নিজের ফটোগ্রাফিক মাল মশলা তৈরির প্রতিষ্ঠানটির আকার ব্যাপকতর হতে লাগলো। খুবই অদ্ভুত ব্যাপার, অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফটোগ্রাফিক কারখানা। সবচেয়ে বড় কারখানা আমেরিকার নিউ ইয়র্কের জর্জ ইস্টম্যানের ইস্টম্যান কোডাক কোম্পানির পরেই ছিল এর স্থান। নিজেদের প্রতিষ্ঠানটিকে আরো বড় আর সৃষ্টিশীল করার জন্য আঁতোয়া লুমিয়ের’র দুই সন্তান অগুস্ত এবং লুই দুজনেই পিতার সঙ্গে মগ্ন হয়ে কাজ করতে শুর“ করলেন নতুন সৃষ্টির উদ্দীপনায়। বড় জন মূলত ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করতে লাগলেন আর ছোট জন পদার্থবিদ্যায় আবেশিত লুই নতুন আবিস্কারের চিন্তায় মগ্ন রইলেন সারা সময়। তবে দুজনই ছিলেন একে অপরের পরিপূরক।

চলচ্চিত্র আবিস্কারের শুরুর মাহেন্দ্রণটি ১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মকালে। ইতোমধ্যে টমাস আলভা এডিসন (১৮৪৭-১৯৩১) ও ডব্লিউ কে এল ডিক্সন (১৮৬০-১৯৩৫) ১৮৮৮ সালে কিনোটোস্কোপ আবিস্কার করেছেন। পঞ্চাশ ফুট দৈর্ঘ্যরে চলমান ছবি এই যন্ত্রের মাধ্যমে দেখা যেতো। বিশাল আকৃতির এই যন্ত্রটিতে কেবলমাত্র একজন ছবি দেখতে পারতেন। ১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মে টমাস আলভা এডিসন প্যারিসে কিনোটোস্কোপ-এর প্রদশর্নীতে আঁতোয়া লুমিয়েরকে আমন্ত্রণ জানালেন। প্রথমবারের মত তিনি কিনোটোস্কোপ দেখে নিজ শহর লিয়ঁতে ফিরে এসে দুই সন্তানকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শুধু বলেছিলেন, ‘তোমরা এর থেকে ভালো কিছু করার চেষ্টা কর। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।’

১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্যারিসের গ্রান্ড ক্যাফেতে লুমিয়ের’দের অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত পৃথিবীর প্রথম চলচ্চিত্রের পোস্টার

পিতার অনুপ্রেরণা গভীর উদ্দীপনার জন্ম দিয়েছিলো অগুস্ত ও লুই লুমিয়ের’র মনে। বিশেষ করে লুই লুমিয়ের যিনি পদার্থবিদ্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে ভালোবাসতেন। চলমান আলোকচিত্র গ্রহণের উপযোগী ক্যামেরা আবিস্কারের নেশায় দীর্ঘ গবেষণা ও পরিশ্রমের পর তিনি এক ধরনের ক্যামেরা ও প্রোজেকটর যন্ত্রের আবিস্কার করতে সফল হলেন। প্রখ্যাত সমালোচক ও চলচ্চিত্রের ঐতিহাসিক জর্জ সাঁদুল বলেছেন, লুই লুমিয়ের ডিটেলের প্রতি এত গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন বলেই প্রকৃত অর্থেই তাঁকে সত্যিকারের চলচ্চিত্রের প্রথম স্রষ্টা বলা যায়। অগুস্ত লুমিয়েরও ছোট ভাইয়ের কৃতিত্ব বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করে উল্লেখ করেছেন, তাঁর ভাই এক রাতের মধ্যে চলচ্চিত্র আবিস্কার করেন। আর সেই রাতে সৃষ্টির বেদনায় লুই মাথার যন্ত্রণা এবং নানারকম দুঃস্বপ্ন দেখে খুবই কষ্ট পাচ্ছিলেন।

তবে এটা স্বীকার্য যে, চলচ্চিত্রের মত একটা জটিল বৈজ্ঞানিক আবিস্কার হঠাৎ করে কারো মাথায় এক রাতে আসেনি। বরং দীর্ঘ হাজার হাজার বছরে মানুষের চলমান দৃশ্যের স্থায়ী প্রতিফলনে যে স্বপ্ন ও আগ্রহ এর ধারাবাহিকতার একটা চূড়ান্ত মুহূর্ত হতে পারে লুই লুমিয়ের’র সেই অস্থির রাত।

‘সিনেমা’ শব্দটির উৎপত্তিগত বিষয়টি ল্য করলে আমাদের ফিরে যেতে হয় অনেক পেছনে। গ্রীক ‘কিনেমা’ শব্দটি থেকে ‘সিনেমা’ শব্দটি এসেছে; যার অর্থ গতি। আমরা যদি স্পেনের প্রাচীন গুহা আলতামিরায় ফিরে যাই তাহলে দেখি, একটি বাইসন দৌড়াচ্ছে; যার পায়ের সংখ্যা ছয়টি। দৌড়ানোর সময় নিশ্চয় আমাদের মনে হয় কোনো প্রাণীর পায়ের সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রায় দশ হাজার বছরের প্রাচীন সেই গুহাশিল্পী হয়ত বাইসনের সেই গতির রূপটাই ধরতে চেয়েছিলেন।

যুগে যুগে আমরা গুহাচিত্র, ধোঁয়া-সংকেত (Smoke-signal), চীনা ছায়া নাটক (ঝযধফড়-িঢ়ষধু) বা মধ্যযুগের ম্যাজিক-লন্ঠনের (Shadow-play) মাঝে দেখি মানুষ কিভাবে ঘটমান গতিকে রূপ দিতে চেয়েছেন।

কাঁচ ঘষে ছোট জিনিস বড় করে দেখা, অর্থাৎ ‘লেন্স’ আবিস্কার, মানব সভ্যতার পুরনো এক আবিস্কার। তবে ১৬৪০ সালে এথেনসিয়াস কারচার তাঁর ম্যাজিক-লণ্ঠনে যীশু খ্রীষ্টের জীবনের ঘটনাসমূহকে যখন একটা চলমান রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন, সেটাকে ঘটমান গতিকে ধরার একটা উল্লেখযোগ্য প্রয়াস বলতে হবে। আর এই ঘটমান গতিকে ধরাই হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পের মূলকথা।

অগুস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের

আর চলচ্চিত্র বিজ্ঞানের মূলসূত্র, ‘অবিরত দৃষ্টিতত্ত¡’ (Persistence of Vision), প্রাচীনকাল থেকেই বিজ্ঞানীদের এই বিষয়টি ভাবিয়েছে। সহজভাবে বললে ‘অবিরত দৃষ্টিতত্ত¡’ হচ্ছে- আমরা যখন একটা জিনিস দেখি এবং তা থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্য আরেকটা জিনিস দেখি; এ দুয়ের মাঝে আমাদের চোখে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও (সেকেন্ডের ভগ্নাংশ) আগের দেখা চিত্রটার রেশ লেগে থাকে। চলচ্চিত্রে পর পর সাজানো একটা শট থেকে আরেকটা শটে দর্শককে টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টি বিজ্ঞানগত ভিত্তিটা হচ্ছে- এই ‘অবিরত দৃষ্টিতত্ত¡’। যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে মানুষের জ্ঞান বাড়াতে সাহায্য করেছেন। অ্যারিস্টটল ও আর্কিমিডিসের আলোকবিদ্যা, ইউকিডের আলোর গতির তত্ত¡ পেরিয়ে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির ‘ক্যামেরা অবসকিউরা’কে গ্রহণ করে, পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীদের লেন্সের নানা গবেষণা এবং নিসেফোর নিপসের ফটোগ্রাফিক ইমেজকে ধারণ করে আজকের ফিল্ম ও চলচ্চিত্রের বিকাশের পথ সহজতর হয়। ফলে আজকের চলচ্চিত্রের আবিস্কারের পথ হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের চিন্তা ও সাধনার সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য ঘটনা জড়িত রয়েছে। তারপরও যে সব সৃষ্টিশীল প্রাণ প্রত্যভাবে একে বর্তমান রূপ দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বলতে হয়, লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ের ক্যামেরা, ইস্টম্যানের সংবেদনশীল ফিল্ম ও ম্যারের আবিস্কৃত প্রজেক্টরের সংমিশ্রণেই আজকের চল”িচত্রের জন্ম। এর আগে প্রতিভাবান ক্যামেরাম্যান এতিয়েন মারে ফটোগান নামে রিপিট শট রাইফেলের মতো এক ধরনের ক্যামেরা আবিস্কার করেছিলেন যা দিয়ে পর পর গুলি ছোঁড়ার ভঙ্গিমায় এক সঙ্গে পর পর অনেকগুলো ফ্রেম শুট করা সম্ভব ছিলো। সে ক্যামেরা এখন আর ব্যবহার হয় না। কিন্তু চলচ্চিত্রের ‘শ্যুটিং’ শব্দটার উৎপত্তি ওখান থেকেই।

লুমিয়ের ভ্রাত্বদ্বয় তাদের প্রথম চলচ্চিত্রটি শুট করেছিলেন ১৮৯৫ সালের ১৯ মার্চ। ১৫ মার্চ এর মধ্যে তারা তাদের প্রথম চলচ্চিত্রটির শুটিং এর সব আয়োজন শেষ করেন। ছবিটির নাম ‘ওয়ার্কারস লিভিং দ্য লুমিয়ের ফ্যাক্টরি’। ওই ছয় দিনের যেহেতু ১৯ তারিখ ছাড়া প্রতিদিন বৃষ্টি হয়েছিল সে জন্য ধারণা করা হয় সেই দিনই পৃথিবীর ইতিহাসে লুমিয়েরদের দ্বারা প্রথম ছবির শুটিং হয়েছিল। মাত্র ৪৬ সেকেন্ডের ছবিটিতে দেখা যায় লুমিয়েরদের কারখানা থেকে শ্রমিকরা বের হচ্ছেন যাদের অধিকাংশই ছিলেন নারী শ্রমিক। তারা যখন কারখানা থেকে বের হচ্ছিলেন তখন কেউই ক্যামেরার দিকে তাকাননি। ফলে ধারণা করা হয় তারা শুটিং এর বিষয়টা জানতেন।

শ্রমিক ছাড়াও ছবিটিতে দেখা যায় একটি কুকুর, একটি বাইসাইকেল এবং দুটো ঘোড়া। ফলে স্বভাবতই বলা যায়, চলচ্চিত্রের প্রথম চরিত্র হচ্ছে শ্রমিক শ্রেণী, কুকুর এবং ঘোড়া। পরবর্তীতে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় একক শট এর মোট ১,৪২৫টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন; যার কোনোটিরই দৈর্ঘ্য এক মিনিটের বেশি নয়। তাদের ছবিগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘এ ট্রেন রিচেস দ্য স্টেশন’, ‘এ বোট লিভস্ দ্য হারভার’, ‘বেবি এ্যাট ব্রেকফাস্ট টেবিল’, ‘ওয়াটারিং দ্য গার্ডেন’, ‘হর্স ট্রিকস্’, ‘রাইডার্স’, ‘ফিশিং ফর গোল্ড ফিশ’ ও ‘জাম্পিং অন দ্য বাংকেট’।

১৮৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্যারিসের গ্রান্ড ক্যাফেতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বারের মত অগুস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের কুড়ি মিনিটের অনুষ্ঠানে তাদের নির্মিত দশটি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করেন। এরপর তারা প্যারিসের একটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। প্রথম কয়েকদিন দর্শকদের বিশেষ কোনো ভিড় হয়নি, তারপর ধীরে ধীরে এটা এমনই জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকলো যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়লো গোটা দুনিয়ায়।
লুমিয়েররা যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও পাকা ব্যবসায়ীর মতো আগের বছরেই বেশ কয়েকটি ক্যামেরা ও প্রজেক্টর তৈরি করে রেখেছিলেন। তাদের বিশ্বাসী কিছু লোককে ক্যামেরাম্যান ও প্রজেক্টর অপারেটরের কাজও শিখিয়ে রেখেছিলেন। এসব ট্রেনিংপ্রাপ্ত লোকদের মাধ্যমে লুমিয়েররা তাদের আবিস্কৃত চলচ্চিত্র পাঠাতে লাগলেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।

ভারতবর্ষে লুমিয়েরদের প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হলো বোম্বাই শহরে ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই। যে কয়েকটি স্বল্প দৈর্ঘ্যরে ছবি তখন দেখানো হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘এ্যারাইভাল অফ এ ট্রেন’, ‘সী বেদার্স’, ‘লন্ডন গার্ল ড্যান্সার্স’ ও ‘ওয়াটারিং দ্য গার্ডেন’। কলকাতায় ছবিগুলো দেখানো হয় পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯৭ সালে। ১৮৯৮ সালের ১৭ এপ্রিল বেডফোর্ড সিনেমাটোগ্রাফ কোম্পানি ঢাকার ক্রাউন থিয়েটারে প্রথম চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী করে।

লুমিয়েররা আর্ক-লাইট প্রজেক্টরে তাঁদের ছবি দেখাতেন। প্রতি সেকেন্ডে ১৬ ফ্রেম করে ছবি পর্দায় পড়তো। বর্তমানে প্রতি সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেম করে পড়ে থাকে। ফলে তাদের ছবিগুলো দেখলে মনে হয় চরিত্ররা ছুটোছুটি করছে অর্থাৎ ফাস্ট মোশন হচ্ছে।

অগুস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের-এর অদ্ভুত আবিস্কার যখন পৃথিবীর মানুষের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এবং তাদের প্রচুর বিত্ত-বৈভবের মালিক বানিয়েছে, তখন বাবা আঁতোয়া লুমিয়ের নীরবে সন্তানদের সাফল্য দেখেছেন আর মনের আনন্দে সুখ অনুভব করেছেন। তিনি খুব গর্ব অনুভব করতেন এই ভেবে, তাঁর দুই সন্তান তাঁর কথা রেখে তাঁকে পৃথিবীর মানুষের কাছে সম্মানিত করেছে।

তরুণ বয়সে যে আঁতোয়া লুমিয়েরের গভীর উদ্দীপনা ছিল রং তুলি নিয়ে ছবি আঁকানোয়, সেই আঁতোয়া জীবনের মাঝখানে নিজেকে ছবি আঁকা থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন মূলত আর্থিক কারণে। তবে সন্তানদের সাফল্য এবং চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর স্বপ্ন পূরণ তাকে আবার পুরদস্থর চিত্রশিল্পী বানিয়েছিল। ১৯১১ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি প্রায় সব সময়ই ছবি আঁকায় নিমগ্ন থাকতেন। (চলবে)