অনলাইন ডেস্ক : যুদ্ধক্ষেত্রে বিপর্যয়ের মুখে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো ইউক্রেনজুড়ে ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণ করেছে রাশিয়া। সোমবার সকালের দিকে রাশিয়ার চালানো এই হামলায় ইউক্রেনের শত শত শহর ও হাজার হাজার বাড়িঘর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া এতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত তিনজন।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিগাল বলেছেন, তিনটি অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে সারাদেশের শত শত শহর ও গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
সকালের দিকে কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে অন্তত পাঁচটি হামলা হয়েছে। এর পাশাপাশি দিনিপ্রোপেৎরোভস্ক এবং সুমি অঞ্চলেও হামলা করেছে রুশ সৈন্যরা। শ্যামিগাল বলেন, রুশ সন্ত্রাসীরা আবারও ইউক্রেনের তিনটি অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো আক্রমণ করেছে। এর ফলে শত শত বসতি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রাশিয়ার নিন্দা জানানোর পরদিন গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের ৪০টিরও বেশি শহর ও বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। দেশটির কর্মকর্তারা রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এই তথ্য জানান।
সোমবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, কিয়েভের মধ্যাঞ্চলে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেনের সৈন্যরা গুলি চালিয়ে রুশ ড্রোন ভূপাতিত করার চেষ্টা করেছে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে যান। বিস্ফোরণ এবং কমলা রঙের শিখা দেখা যাওয়ার পর সকালের দিকে কিয়েভের আকাশে বিমান-বিধ্বংসী রকেট ছুড়তে দেখা যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কিয়েভের একটি আবাসিক ভবনে রাশিয়ার হামলায় অন্তত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনের ভেতর থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। জরুরি সেবা কর্মীরা আগুন নেভানো চেষ্টা করছেন।
এদিকে, ইউক্রেনে বিপর্যয়ের মুখে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পারমাণবিক হামলার হুমকির জেরে সৃষ্ট তুমুল উত্তেজনার পর নিয়মিত পারমাণবিক প্রতিরোধ মহড়া শুরু করেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো। সোমবার পশ্চিম ইউরোপে শুরু হওয়া এই মহড়া পুরো অক্টোবর জুড়ে চলবে বলে জানিয়েছে ন্যাটো।
তবে ৩০ দেশের এই সামরিক জোট জোর দিয়ে বলেছে, ন্যাটোর নিয়মিত এবং পুনরাবৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। মস্কো ইউক্রেন আক্রমণ করার আগেই এই মহড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং বর্তমান পরিস্থিতির সাথে এর কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।
মহড়ায় মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান এবং ৬০টির বেশি যুদ্ধবিমান অংশ নেবে। মহড়া চলাকালীন বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর সাগরের আকাশজুড়ে এসব বিমান নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে।
ইউক্রেনে রুশ সৈন্যদের বিপর্যয়ের কারণে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পারমাণবিক তর্জন-গর্জন বৃদ্ধি পেলেও মহড়া বাতিলের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ। গত সপ্তাহে ন্যাটোর এই মহাসচিব বলেছেন, আমরা যদি এখন হঠাৎ করে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে একটি নিয়মিত, দীর্ঘ-সময়ের পরিকল্পিত মহড়া বাতিল করি, তাহলে সেটি অত্যন্ত ভুল সংকেত পাঠাবে।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।