অনলাইন ডেস্ক : ঋতু পরিক্রমায় এখন বর্ষা হলেও এই সময় বাজারে অল্পতেই বিভিন্ন ধরনের ফলমূল পাওয়া যায়। বলা যায় এখন মৌসুমই চলছে ফলের। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা ধরনের ফল দেখা যায়। মৌসুমী ফল ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় আপেল, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আঙুর, ড্রাগনসহ অন্যান্য ফল দেখতে পাওয় যায়। যা আমরা কিনে থাকি এবং বাসা-বাড়িতে এনে পরিবারের সব সদস্যদের সঙ্গে মিলে খেয়ে থাকি।
বাজারে ফল কিনতে গিয়ে সন্দেহ কাজ করে, সেটি হচ্ছে ফরমালিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিনের মতো ক্ষতিকর উপাদান মেশানোয় ভয়ে অনেকে ফল কেনা বন্ধ করেছেন। ফলে বাড়ির বয়স্ক ও শিশুরাও ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ফল ও শাক-সবজিতে ফরমালিন দেয়া প্রসঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র পুষ্টিবিদ মো. ইকবাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, ফল বা শাক-সবজিতে ফরমালিন দেয়ার প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রোটিনজাতীয় খাদ্য সংরক্ষণেই ব্যবহার করা হয় উপাদানটি। এ জন্য নিশ্চিন্তে সব ধরনের ফল ও শাক-সবজি খাওয়া যেতে পারে।
তবে এরপরও যদি সন্দেহ হয় ফল ও শাক-সবজিতে ফরমালিন রয়েছে, তারপরও সেসব খাওয়া যাবে। এ জন্য খাওয়ার আগে ফল ও সবজি অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ফরমালডিহাইড হচ্ছে পানিতে দ্রবণীয়, যা পানিতে ভালো করে ধুলে গায়ে থাকা ফরমালিন দূর হয়। তবে ফল পাকানোর জন্য কার্বাইড বা এই জাতীয় উপাদান ব্যবহৃত থাকলে, সেসব ফল সরাসরি খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
কার্বাইড এসিটিলিন গ্যাস নির্গমণের মাধ্যমে গরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। এতে ফলের মধ্যে ইথিলিন তৈরি হয় এবং অল্পতেই পেকে যায় সেই ফল। ক্ষতিকর এই কার্বাইডের সঙ্গে ফলের সংস্পর্শ হয় না। তবে সংস্পর্শ হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। ফল পাকানোর জন্য কার্বাইডের থেকে ইথোফেন কিছুটা নিরাপদ। দুটির মধ্যে যে উপাদানই ব্যবহার করা হোক না কেন, এর পরিমাণ অবশ্যই নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে হবে। তা না হলেই ভয়ের কারণ।
এছাড়া কৃত্রিমভাবে পাকানো ফলের পুষ্টিগুণ নির্ভর করে থাকে তার পরিপক্বতার ওপর। ফল যদি পরিপক্ব হয় তাহলে কৃত্রিম উপায় পাকানো যেতে পারে। এতে এই ফলের পুষ্টিগুণ প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফলের অনেকটা কাছাকাছিই থাকে। তবে ফল যদি অপরিপক্ব হয়, তাহলে তার পুষ্টিগুণ কমে থাকে।
বাজারে চলতে-ফিরতে অনেক সময় দেখা যায় শাক-সবজি রঙিন পানিতে ডুবিয়ে সাজিয়ে রাখছেন বিক্রেতারা। আসলে এসব ফরমালিন নয়, রং। যা শাক-সবজি সংরক্ষণে নয়, শুধুই রঙিন দেখায়। সস্তা মানের রং ব্যবহার করলে সেসব শাক-সবজি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য বাজার থেকে কিছু কেনার আগে ভালো করে দেখে তবেই কেনা উচিত।
সতর্কতা, ফল অপরিপক্ব হলে তা যদি কৃত্রিম উপায়ে পাকানো হয়, তাহলে সেটি না নেয়াই ভালো। আম, কলা ও পেঁপে খাওয়ার আগে পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর খোসা ফেলে নিরাপদের বিষয়টি নিশ্চিত করে খেতে হবে। একসঙ্গে একাধিক ধরনের ফল খাওয়া যাবে না। এতে অ্যাসিটির সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দিন বা রাতের প্রধান খাবারের সঙ্গে ফল না খাওয়াই ভালো। তবে স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন। আর যাদের কিডনি ও ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ রয়েছে, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফল খেতে হবে।