স্পোর্টস ডেস্ক : দীর্ঘ এক মাসের লড়াইয়ের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুত। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নেমেছে ভারত। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনের কেনসিংটন ওভালে শিরোপা নির্ধারনীর ম্যাচে মাত্র ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে রোহিত শর্মার দল। তবে সেই চাপ সামাল দিয়ে কোহলির অর্ধশতকে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ভারত। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখান থেকে কুইন্টন ডি কক ও ত্রিস্টান স্টাবস দলের হাল ধরে দলকে জয়ের ভীত তৈরিও করে দেন।
মাঝে ক্লাসনের মারকুটে ব্যাটিংয়ে জয় শুধু সময়ের ছিলো প্রোটিয়াদের। সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এসে ৭ রানের জয়ে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে ভারত। একই সঙ্গে ২০১৩ সালের আইসিসির কোনো ট্রফি জয়ের ১১ বছর পর শিরোপা পেল রোহিত-কোহলিরা।
ভারতের দেওয়া ১৭৭ রানের লক্ষ্য দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন কুইন্টন ডি কক ও রিজা হেনড্রিক্স। বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই সাজঘরে ফিরেছেন রেজা হেনড্রিকস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বুমরাহ তুলে নিলেন প্রোটিয়া ওপেনার হেনড্রিক্স।
জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন রেজা হেনড্রিকস। ৫ বল খেলে ১ চারে ৪ রান করে যান তিনি। এরপর তৃতীয় ওভারে ফেরেন অধিনাক এইডেন মার্করাম। আর্শদীপ সিং এর বলে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা রিশাভ পান্থের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৫ বলে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
এরপর তৃতীয় উইকেটে ব্যাট করতে নামা স্টাবসকে নিয়ে শুরু চাপ সামাল দেন ডি কক। এই দুই জনের ব্যাটে পাওয়া প্লেতে ৪২ রান তুলে প্রোটিয়ারা। তবে দলীয় ৭০ রানে স্টাবস আউট হলে ভাঙে ৫৮ রানের এই জুটি। এরপর ক্রিজে আসা হেনরিখ ক্লাসেনকে নিয়ে ব্যাট করতে থাকেন ডি কক।
তবে দলীয় ১০৬ রানে ৩১ বলে ৩৯ রান করে আউট হন ডি কক। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসা ডেভিড মিলারকে সঙ্গে নিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন ক্লাসেন। ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন এই দুই ব্যাটার। মারমুখী ব্যাটিংয়ে ২৩ বলে ফিফটি তুলে নেন ক্লাসেন।
তাতে জয়ের ভীত পেয়ে যায় প্রোটিয়ারা। জয় শুধু সময়ের ব্যাপার ছিলো তাদের। তবে অর্ধশতকের পর দলীয় ১৫১ রানে ২৭ বলে ৫২ রান করে ফিরে যান ক্লাসেন। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে ফিরে আসে ভারত। ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি মার্কো জানসেন। ৪ বলে মাত্র ২ রান করে আউট হন তিনি। জানসেনকে আউট করে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখান পেসার জসপ্রীত বুমরাহ।
শ্বাসরুদব্ধকর ম্যাচে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রোটিয়াদের প্রোয়জন হয় ১৬ রানের। প্রথম বলে ছয় মারতে যেয়ে বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ এক ক্যাচে মিলারকে সাজঘরে ফেরান সূর্যকুমার। দলীয় ১৬১ রানে ১৭ বলে ২১ রান করে আউট হন মিলার।
এরপর শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে ৭ রানের জয়ে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তুলে ভারত।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ভারতের হয়ে ইনিংস শুরু করেতে আসেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এই দুই জনের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। প্রথম ওভারেই ১৫ রান যোগ করেন দুজন। তবে দ্বিতীয় ওভারে এসে জুটি ভাঙেন কেশভ মহারাজ। প্রথম দুই বলে রোহিত শর্মার হাতে বাউন্ডারি হজম করা কেশব মহারাজ চতুর্থ বলে সফলতা পান। তার বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে হেনরিখ ক্লাসেনকে ক্যাচ তুলে নেন রোহিত।
গত দুই ম্যাচে টানা অর্ধশতকের পর রোহিত আজ ৫ বলে ৯ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। নতুন ব্যাটার ঋষভ পান্থ পরের বলটি ডট দিতে সমর্থ হলেও ষষ্ঠ বলে পরাস্ত হন। সুইপ করতে গেলে পন্তের ব্যাটে টপ এজ হয়ে মাথার ওপর নিয়ে চলে যায় উইকেটকিপার কুইন্টন ডি ককের হাতে। ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির সহায়তা নিয়ে আউট দেয়া হয় পান্থকে।
প্যাভিলিয়নে যাবার আগে শূন্য রানে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার ও উইকেটরক্ষক। এরপর বাইশগজে ব্যাট হাতে আসেন সূর্যকুমার যাদব। বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো খেলা এই মারকুটে ব্যাটার নিজেকে মেলে ধরতে ব্যার্থ হন আজ। উইকেটে থিতু হবার আগেই দলীত ৩৪ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। যাবার আগে ৩ রান করেন তিনি।
দ্রুত তিন উইকেট পড়ার পর প্রমোশন পেয়ে পাঁচে ব্যাটিং করতে নামলেন অক্ষর প্যাটেল। দলের স্বীকৃত এই বোলার বিরাট কোহলিকে নিয়ে দলকে স্বস্তি এনে দেন। তাদের ৭২ রানের জুটিতে দলের স্কোর একশো পার হয়। তবে এরপরই দলীয় ১০৬ রানে কুইন্টন ডি ককের চমৎকার থ্রোতে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রানআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। যাবার আগে ৩১ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।
এরপর ব্যাট হাতে উইকেটে আসেন শিবম দুবি। তাকে সঙ্গে রানের চাকা সচল রাখেন কোহলি। ইনিংসের ১৭তম ওভারে নিজের অর্ধশতকও তুলে নেন বিরাট। এরপর প্রোটিয়া ব্যাটারদের ওপর চড়াও হন তিনি। তবে দলীয় ১৬৩ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি। সাজঘরে যাবার আগে ৭৬ রান করেন তিনি। শেষ দিকে দুবির ২৭ রানের ক্যামিও তে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মার দল। প্রোটিয়াদের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ দুইটি করে উইকেট নেন কেশব মহারাজ ও অ্যানরিখ নরখিয়া।