কামাল কাদের : মফস্বল শহর। তারই মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে নদীটি। নাম তার “নীল শালুক”। নদীটির প্রস্থতা দেখে একে নদী না বলে একটা বড় রকমের খাল বললে অতুক্তি করা হবে না। নীল শালুক নদীটি অজানা অতীতকে পিছনে ফেলে বর্তমানকে সাথে নিয়ে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত হয়ে সোজা মিশে গেছে এক বিরাট নদীর পেটের ভিতর। স্থানীয় লোকরা বলাবলি করে, দেশে কত নদীই তো শুকিয়ে চর হয়ে যায়, তবুও নীল শালুক আজ ও মৌন হয়ে কত জনের সুখ-দুঃখের কাহিনী নিয়ে জেগে আছে এই শহরটায়।

স¤প্রতি শামসুর রহমান সাহেব এই শহরে পুলিশ সুপারিন্টেন্ড অর্থাৎ এস,পি, হয়ে এসেছেন। বদলীর চাকরি। ঢাকা শহর থেকে প্রমোশন পেয়ে এখানে এসেছেন। জাদরেল পুলিশ অফিসার। ভীষণ রাশভারী লোক। উনার মুখের হাসি দেখা মানে অমাবস্যার চাঁদ দেখার মতো। প্রতিবেশী লোকের ধারণা, প্রায় সময়ই অপরাধীদের সংস্পর্শে থাকার ফলে বোধ হয় উনার মুখ মন্ডলে এই গম্ভীর ভাবের লক্ষণ প্রতিফলিত হয়। অরণ্য রহমান তাদের একমাত্র সন্তান। তাই স্বভাবতই আদরের কোনো কমতি নাই, ফলে ভরা যৌবনের বেপরোয়া ভাবটা ওর চরিত্রে পেয়ে বসে।

পুলিশ কোয়ার্টারগুলি ঠিক নীল শালুক নদীর পাশেই। তার সাথে সারি সারি বিরাট আকারের বিলাতী বাদাম গাছগুলি দৌত্যের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ভোরবেলায় সূর্য উঠার আগেই সবুজ টিয়া পাখীদের কিচির মিচির মিষ্টি শব্দে আশে পাশের সবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অরণ্য প্রতি সকালে তার বেডরুমের জানালা দিয়ে চেয়ে দেখে টিয়া পাখীগুলি দল বেঁধে বাদাম গাছের বাদামগুলি মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে খেয়ে চলছে। প্রায়ই পাখীদের মাঝে বাদামের ভাগাভাগী নিয়ে তুমুল ঝগড়াও হয়ে যায়। এরকম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে অরণ্যের মন্দ লাগে না। কখনো কখনো কৌতূহলবশত সে দৌড়ে গিয়ে কিছু বাদাম কুড়িয়ে নিয়ে আসে। আবার কখনো কখনো ভোরে ঘুম থেকে জেগে আনমনে নদীর পানে চেয়ে থাকে। দেখে অসংখ্য নৌকা পাল বেয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছে, কেউবা ঘাটের তীরে নৌকা ভিড়িয়ে মাল উঠানো নামানো করছে। রাজধানীর ছেলেকে এই মফস্বল শহরের অভিজ্ঞতা যেন এক নুতন জীবনের স্বাদ এনে দেয়।

ছোট্ট শহর, তাই এস,পি, সাহেবের ছেলেকে সবাই চেনে এবং সমীহ করে চলে। অরণ্যও সেটা উপলব্ধি করতে পারে। সে রাস্তা-ঘটে বাবুয়ানার মতো চলা ফেরা করে। অনেক দোকানে কোন টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে গেলে দোকানীরা পয়সা নিতে চায়না, বলে “আরে, এস,পি সাহেবের ছেলে যে, আপনার কাছ থেকে পয়সা নেবো! ছি, ছি, কি যে মনে করেন আমাদেরকে”। ফলে লজ্জায় অনেক দোকান থেকে তার কেনাকাটা করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তাছাড়া অনেক দোকানী গরীব লোক। সে বুঝতে পারে তাদের কাছ থেকে পয়সা না দিয়ে কোনো কিছু নেয়াটা ভালো দেখায় না।

অরণ্যের মফস্বল জীবন সুখে সাচ্ছন্দে চলে যাচ্ছে। সে লোকাল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। কলেজে যাতায়াত করার জন্য তার বাবা একটা হোন্ডা মোটর সাইকেল কিনে দিয়েছেন। সে কলেজে যাওয়া আসা ছাড়াও অন্যান্য সময়ে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মোটর সাইকেল নিয়ে সারা শহর চষে বেড়ায়। মাঝে সাঝে বন্ধু বান্ধবদের পাল্লায় পড়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। তবে এস, পি, সাহেবের ছেলে হওয়ার সুবাদে আসন্ন বিপদ থেকে পার পেয়ে যায়। কখনো কখনো সে নিজেকে প্রশ্ন করে, “কেন আমি এমন আজে বাজে কাজ করি?”!!

অরণ্যদের প্রথম শ্রেণীর পুলিশ কোয়ার্টারের অদূরেই দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের কোয়ার্টার। তারই মাঝ খানে বিশাল এক খেলার মাঠ। সেখানে প্রতিদিন ভোর বেলায় পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর লোকজন প্যারেড করে আর বিকেল বেলায় ফুটবল, ভলিবল প্রভৃতি খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

ফুটবল অরণ্যের প্রিয় খেলা। ঢাকায় থাকতে সে নিয়মিত ফুটবল খেলতো। একসময় নামকরা ফুটবল খেলোয়াড় হবার শখ ও হয়েছিল। কিন্তু সে শখ আর পূর্ণ হতে পারিনি। কারণ বাড়ি থেকে লেখাপড়ার দিকে মনোযোগ দেয়ার নির্দেশ ছিল বেশি। পুরোনো অভ্যাসে দরুন পুলিশ এবং আনসারদের খেলা দেখে ফুটবল খেলার আগ্রহটা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো। একদিন মাঠে গিয়ে ক্যাপ্টেন সাহেবকে মনের কথাটা জানালো। ক্যাপ্টেন সাহেব কথাটা শুনে বললো, “অরে আপনি আমাদের সাথে খেলবেন ,এ যে আমাদের সৌভাগ্য! তবে ঐ যে ওখানে লম্বা মতো সুন্দর চেহারার ভদ্রলোকটি যার হাতে বলটি দেখছেন, আর মুখে বাঁশি রয়েছে তার সাথে আপনাকে কথা বলতে হবে। উনি আমাদের লিডার। বয়সে তিনি আমাদের বাবা -চাচার সমান, কিন্তু সবার কাছে উনি ‘মুন্সী ভাই’ বলে পরিচিত। উনি একজন পুলিশ সার্জেন্ট”।

অরণ্য ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞাসা করলো, “মুন্সী ভাই লোক কেমন? দেখে তো মনে হয় আমার বাবার মতো রাশভারী লোক”। সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন সাহেব উত্তর দিলেন, “আরে না, না, উনি একজন মাটির মানুষ, কথা বললেই বুঝতে পারবেন”। অরণ্য মুন্সী ভায়ের সামনে গিয়ে বললো, “মুন্সী ভাই, আমি আপনাদের সাথে ফুটবল খেলতে চাই, দলে নেবেন নাকি?” মুন্সী ভাই হেসে বললেন, “আরে তুমি না আমাদের স্যারের ছেলে, কি নাম জানি তোমার?”
“অরণ্য, অরণ্য রহমান”।

“বেশ সুন্দর নাম”, তারপর একটু থেমে বললেন, “বাহ্, তোমার ফিগারটিতো একেবারে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের মতো। তোমাকে দেখে আমাদের সময়ের স্বনামধন্য খেলোয়াড়” নবী চৌধুরীর কথা মনে পরে গেলো, উনিও পুলিশ দলে খেলতেন। বাঙালি হলেও উনি সব সময় পাকিস্তান জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হতেন। সে যাই হউক ওসব অনেক দিনের কথা তুমি কাল থেকে লেগে পড়ো, আমি ক্যাপ্টেনকে বলে দিব। তোমাদের মতো তরুণদের আমাদের দলে দরকার।

রোজকার মতো সকালে নীলশালুক নদীর কলতান আর তার সাথে সবুজ টিয়াপাখীর কিচির মিচির শব্দে অরণ্যের ঘুম ভাংগে। বিকেলে পুলিশ এবং আনসারদের সাথে ফুটবল খেলে প্রতিদিনের কর্মসূচি এভাবে শেষ করে। দিনগুলি সুন্দর কাটছে। ইতিমধ্যে মুন্সী ভায়ের অমায়িক ব্যবহারের ফলে অরণ্য এবং মুন্সী ভাইয়ের মাঝে একটা শ্রদ্ধাসুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

একদিন ভোরবেলায় অরণ্য নদীর তীরে তাকিয়ে দেখে একটা আট /নয় বছরের ছেলে বাদাম গাছের নীচে থেকে বাদাম কুড়িয়ে তাদের কোয়ার্টারের কাটা তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ওপারে চলে গেলো যেখানে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা থাকে। প্রতিদিনই ছেলেটি এভাবে কাটা তার ডিঙ্গিয়ে বাদাম কুড়িয়ে চলে যায় ওপারে। তারের বেড়ার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকে ১৫ /১৬ বছরের হালকা -পাতলা গড়নের এক সুন্দরী মেয়ে। পরে ছেলেটি তার কুড়ানো বাদামগুলি মেয়েটির হাতে তুলে দেয়।

এভাবে বেশ কয়েক দিন ধরে চলছে।একদিন অরণ্য মজা করার জন্য ছেলেটিকে খপ করে ধরে ফেললো। ধরার সাথে সাথে ছেলেটি ভয়ে কাঁদতে শুরু করলো। আর তৎক্ষণাৎ কুড়ানো বাদামগুলি তার হাত থেকে খসে মাটিতে পরে গেল। কাঁদো কাঁদো সুরে ছেলেটি বললো, “আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আর কখনও এখানে আসবো না”। সে দূরে দাঁড়ানো তার বোনকে লক্ষ্য করে বললো, ওই যে দূরে আমার বড় বোন দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য এখানে আসা। সে বিলাতী বাদাম খুব পছন্দ করে। প্রত্যেক দিন ভোর বেলায় সে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বাদাম কুড়াবার জন্য এখানে নিয়ে আসে”। ছেলেটির ভীরু ভীরু চেহারা দেখে অরণ্যের করুনা হলো। ছেলেটির হাত খানা ছেড়ে দিয়ে বললো, “যাও তোমার বোনকে এখানে নিয়ে এস। ওরা যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে ছিল সেখান থেকে ছেলেটি তার বোনকে উদ্দশ্য করে চেঁচিয়ে ডাকতে শুরু করলো, “সুরভি আপু, সুরভি আপু, তোমাকে উনি ডাকছেন”। এবার অরণ্য মেয়েটির দিকে একটু ভালো করে তাকালো, মনে হলো রাগে তার ফর্সা মুখখানি লাল হয়ে গিয়েছে। মফস্বলের শাড়ী পড়া মেয়েটিকে দেখে কবির ভাষায় বলা যায়, ওই রাগী চেহারার মাঝেও যেন এক মাধুর্য ছড়িয়ে রয়েছে। তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে মেয়েটি অরণ্যের সামনে এসে সোজা তীক্ষ্ন ভাষায় প্রশ্ন করলো, “আমার ছোট ভাইটিকে আটকিয়ে রেখেছেন কেন?

বাদাম চুরি করেছে তাই, অরণ্যের স্বাভাবিক উত্তর।
আমার ভাই বাদাম চুরি করে নাই, মাটিতে পড়ে ছিল তা কুড়িয়ে নিয়েছে, সুরভি দৃঢ়তার সাথে বললো। ওই একই হলো, অরণ্যের আপোষহীন মন্তব্য।
কেন এক হবে? সুরভির পাল্টা প্রশ্ন, ওই বাদাম গাছগুলির মালিক কি আপনারা?
না অরণ্য হালকা ভাবে জবাব দিলো।
তা হলে আর্থিক দিক থেকে আমার ভাই তো আপনাদের কোনো ক্ষতি করে নাই। আপনি কোন আক্কেলে এটাকে চুরি বলছেন? ধরলাম আমার ভাই বাদাম চুরি করেছে, তাহলে আপনাকেও আমি চোর বলতে বাধ্য হবো। কারণ আমরা আপনাকেও বাদাম কুড়াতে দেখেছি। বাদাম কুড়াবার আগে আপনিও কি কারো কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নিয়েছিলেন? নিশ্চয়, না!! এক নাগাড়ে কথাগুলি বলে সুরভি হুট করে ভায়ের হাত ধরে চলতে শুরু করলো। এদিকে অরণ্য হতভম্বের মতো হাঁ করে দাঁড়িয়ে তাদের যাত্রা পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।

ওই ঘটনার পর থেকে অরণ্য নিজের মনের অজান্তে নীল শালুক নদীর আশে পাশে তাকিয়ে থাকে, ভাই-বোনদের এক পলকে দেখার আশায়। কিন্তু দেখা মেলে না। মনটা সব সময়ে বিষন্ন হয়ে থাক। মনের এই আকুতির উত্তর সে খুঁজে পায় না। সে কি হারিয়েছে আর কিবা খুঁজে বেড়াচ্ছে, তা সে নিজেও জানে না।

দিন চলে যায়। রোজকার মতো অরণ্যের ও দিন বয়ে যাচ্ছে। তবে তার কাছে সব সময়ে মনে হয় কি যেন তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। একদিন ফুটবল খেলতে গিয়ে এক বিরাট কান্ড ঘটে গেল। প্রতিপক্ষের ‘ফুলব্যাকের’ একটা বলের শট সোজা অরণ্যের পেটের মধ্যে আঘাত করলো। বলের প্রচন্ড আঘাতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো,তারপর তার আর কিছুই মনে রইলো না। যখন তার চোখ খুললো তখন দেখতে পেলো সে মুন্সী ভাইয়ের বাসায় এক চৌকির উপর শুয়ে আছে। তার দিকে উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে মুন্সী ভাই, ভাবি এবং সেই হারানো দুই ভাই বোন।

অরণ্য পরে জানতে পেরেছে ব্যপারটা কি হয়েছিল। সে যখন ফুটবলের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে গেল তখন সবাই মিলে তাকে ধরাধরি করে মুন্সী ভাইয়ের বাসায় নিয়ে এলো। মুন্সী ভাইয়ের কোয়ার্টারটি ঠিক মাঠের পাশেই। এবং সে এও জানতে পারলো যে, মুন্সী ভাইয়ের পরিবারের সবার সেবায় সে সুস্থ হয়ে উঠেছে।

যখন অরণ্যের জ্ঞান ফিরলো তখন মুন্সী ভাই অরণ্যকে জিজ্ঞাসা করলো, অরণ্য, এখন কেমন ফিল করছো? অরণ্য মলিন মুখে অস্ফুট স্বরে উত্তর দিলো, ‘ভালো’। বাবার কথাটি শুনে সুরভি তৎক্ষণাৎ ভর্সোনার শুরে বললো, উনার নাম অরণ্য হতে যাবে কেন? এতো সুন্দর নামের উনি যোগ্যই নন। উনার নাম অরণ্য না হয়ে ‘জঙ্গল’ হওয়া উচিত। মুন্সী ভাই সুরভির দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুই ওকে চিনিস নাকি? সুরভি তাচ্ছিল্যর সাথে জবাব দিলো, “উনাকে চিনবোনা, উনি তো এস,পি, সাহেবের একমাত্র আদুরের ছেলে”। সুরভির খোঁচা দেয়া কথাটি শুনে অরণ্যের মনটা হোঁচট খেলো। তার আর বুঝতে বাকি রইলোনা, সুরভির সাথে সেদিনের ব্যবহারের সে উচিত জবাব পেয়ে গেল। মনে মনে নিজেকে অনেক হেয় ভাবতে শুরু করলো, আজ তো ওদেরই সেবায় সে সুস্থ হয়ে উঠেছে।

সেদিনের ঘটনার পর বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। সব সময় অরণ্য আপনমনে নীল শালুক নদীর দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকে, হয়তো আবার দেখা পাবে এই ভরসায়। কিন্তু দেখা মিলছে না। হঠাৎ করে একদিন ভোর বেলায় সে দেখতে পেলো অদূরে নীল শালুক নদীর শান বাঁধানো ঘাটে সুরভি তার ছোট ভাইটির সাথে বসে আছে। অরণ্য চট করে গায়ে একটা শাল গড়িয়ে ঘাটের দিকে ছুট দিলো, তারপর সুরভির সামনেএসে মুখ-মুখী দাঁড়ালো। সুরভি অরণ্যকে দেখেই হকচকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, এস,পি, সাহেবের ছেলে যে, আজ কোন মহাচোর ধরতে এসেছেন? অরণ্য সুরভির চোখে চোখ রাখলো, গভীর ভাবে দেখলো সুরভির সন্দেহ ভরা চাহনি। সে উত্তর দিলো, সেদিন তোমাদের বাড়ীতে সেই সোনাঝরা সন্ধ্যায় মহাচোর ধরা পড়ে গেছে। আজ তোমার কাছে সে নিজে এসে ধরা দিতে এসেছে। তুমি কি সেই মহাচোরকে তোমার হৃদয়ে একটু জায়গা করে নিতে পারবে? এই বলে অরণ্য তার পকেট থেকে কুড়ানো বাদামগুলি সুরভির একেবারে গায়ের কাছে এসে নত হয়ে বললো, আমিই সেই মহাচোর!

সুরভি হাত বাড়িয়ে বাদামগুলি অরণ্যের কাছ থেকে নিলো, তারপর অরণ্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখ, দেখ, নদীর ওপারে এক ঝাক নীল শালুক দল বেঁধে খাবারের অন্বষণে ঘোরা ফেরা করছে, কি সুন্দরই না লাগছে, তাই না! অরণ্য নদীর ওপারের দিকে তাকালো, দেখলো প্রকৃতির সৌন্দর্য আর তার সাথে ভোরের সদ্য তাজা ফুলের সুবাসের মতো তার হৃদয় রোমাঞ্চে ভোরে উঠলো। শেষ