Home কলাম প্রান্তরে তেপান্তরে-৪০ – কথোপকথন: সর্বোত্তম কাজ কী

প্রান্তরে তেপান্তরে-৪০ – কথোপকথন: সর্বোত্তম কাজ কী

হাসান গোর্কি : সিদ্ধার্থ ঋষিন: আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভালো কাজ কী?
সঞ্জিব পুরোহিত: অন্যের ক্ষতি করা থেকে যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজেকে বিরত রাখা।
সিদ্ধার্থ ঋষিন: বিরত রাখা তো কাজ হলো না। আপনি এখানে তো কিছু করছেন না। ‘বিরত থাকা’ আপনার নিষ্ক্রিয়তার নির্দেশক। অর্থাৎ এখানে আপনার কোন এক্টিভিটি নেই। আমি জানতে চাচ্ছি কোন কাজটি করা সবচেয়ে ভালো।
সঞ্জিব পুরোহিত: যে কোন ধারণাকে আপনি ‘হ্যাঁ-বোধক’ এবং ‘না-বোধক’ উভয় ফর্ম- এ প্রকাশ করতে পারেন। শুধু বাক্যের গঠন পরিবর্তন করে নিলেই চলবে। আমি বলতে পারতাম, ‘অন্যের এমন ক্ষতি না করা, যা যুক্তিযুক্ত হবে’। দেখুন, এখানে বাক্যের অর্থ পরিষ্কার হচ্ছে না। কারণ, ক্রিয়া- বিশেষণটিকে সাব-অর্ডিনেট ক্লজের সাথে যুক্ত করতে হয়েছে। বিরত থাকাও একটা কাজ। যেমন, বিচারক আসামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা থেকে বিরত থাকলেন। এখানে তিনি নিষ্ক্রিয় নন।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: ব্যাকরণ বাদ দেওয়া যাক। আপনি বলুন ‘অন্যের উপকার করা’কে আপনার কাছে সর্বোত্তম কাজ বলে মনে হলো না কেন?
সঞ্জিব পুরোহিত: সেটা আমি পরে বলবো। আগে বলি, অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা সর্বোত্তম কাজ কেন। পৃথিবীতে যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদ টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে তারা-ই টিকে আছে। যেমন বাঘ তার খাদ্য নিজেই যোগাড় করে। আমাদের হরিণ ধরে দিতে বলে না। তারা নিজ দায়িত্বে হরিণ ধরে খায়। আমরা বন উজার করে তাদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বনভূমি কমে যাবার অন্য কারণ বিশ্ব-উষ্ণায়ন। সেটার জন্যও আমরা-ই দায়ী। ১৭৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে ৪০%। এটা ঘটেছে মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস পোড়ানোর ফলে।
Intergovernmental Panel on Climate Change বা IPCC-র তথ্য অনুযায়ী বৃহদাকার প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও আফ্রিকার পার্বত্য গরিলা, আন্দিজের ভাল্লুক, মেরু ভাল্লুক, পেঙ্গুইন বিশ্ব উষ্ণায়নজনিত জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে আছে। পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি দ্বায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা-ই এখন আমাদের জন্য সর্বোত্তম কাজ।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: কার্বন নির্গমন ও উষ্ণায়ন রোধ, বন, জলাশয়, নদী, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ — এসব নিয়ে গত দুই দশকে অনেক কাজ হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশ প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করেছে এবং সাধ্য অনুযায়ী তার বাস্তবায়ন করছে। গত বছর জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের পেছনে পৃথিবীতে ব্যয় করা হয়েছে ৯০ বিলিয়ন ডলার। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন প্রাণীদের জন্য পৃথিবীর অনেক দেশে জিন ব্যাংক আছে। যাহোক, আমার প্রশ্ন এটা ছিল না। আমি জানতে চেয়েছিলাম একজন ব্যক্তি মানুষের সর্বোত্তম কাজ কী।
সঞ্জিব পুরোহিত: সেটা বলছি। আগে আপনার যুক্তির দুর্বল দিক বিষয়ে আমার ধারণা বলে নিই। আপনি সম্ভবত ঙঊঈউ-র রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন জীব বৈচিত্র্যের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে ৯০ বিলিয়ন ডলার। একই রিপোর্টে বলা হয়েছে যেসব শিল্প জীব বৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর সেসবের পেছনে সারা পৃথিবীতে একই সময় (২০২১ সালে) বিনিয়োগ করা হয়েছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আপনাকে জিন ব্যাংক বানাতে হচ্ছে কেন! এটাতো একজনকে বিষ পান করিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করার মতো হলো! ব্যক্তি মানুষের সর্বোত্তম কাজের প্রসঙ্গে আসি। আমার উত্তর একইÑ অন্যের ক্ষতি করা থেকে যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজেকে বিরত রাখা। ধরুন, প্রতিবেশীর সাথে আপনার সীমানা প্রাচীর নিয়ে বিরোধ আছে। আপনি পেশায় কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক। প্রতিবেশীর ছেলে আপনার ছাত্র। পরীক্ষার খাতায় সে যা লিখেছে তাতে নিরপেক্ষ বিচারে ৭০ নম্বর পাবে। আপনি পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাকে ৬০ নম্বর দিলেন এবং তার ক্ষতি করলেন। আপনি এই ক্ষতি করার ইচ্ছা সংবরণ করলে ছেলেটি নিজের যোগ্যতায় ৭০ নম্বর পেতো। এটাই সর্বোত্তম; নম্বর বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেওয়া নয়।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: আপনার কথা মতো ধরে নিচ্ছি বিরত থাকাও একটা কাজ। তবে কাজটা যে সর্বোত্তম পদবাচ্য হবার যোগ্য নয় সেটা একটা উদাহরণ থেকে বুঝতে চেষ্টা করা যাক। এই ছেলেটার কথাই ধরুন। মনে করুন, তার বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করার একটা অভিযোগ অধ্যক্ষের দপ্তরে জমা হলো। কিন্তু শুধু আমি জানি যে অভিযোগটি ভুল করে করা হয়েছে। ভুল সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ছেলেটাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হলো। আমি যেহেতু নিজে ভুল সাক্ষ্য দেইনি, সেহেতু আমি তার অনিষ্ট করা থেকে বিরত থেকেছি এবং আপনার যুক্তি অনুযায়ী সর্বোত্তম কাজটি-ই করেছি। কিন্তু আমার মনে হয় ছেলেটার বিরুদ্ধে নকল করার আনীত অভিযোগ যে ভুল তা অধ্যক্ষের দপ্তরে গিয়ে বলে আসা-ই এক্ষেত্রে সর্বোত্তম কাজ হতো।
সঞ্জিব পুরোহিত: খেয়াল করে দেখুন, আমি বলেছি ‘যুক্তিসঙ্গতভাবে বিরত থাকা’। ছেলেটি যখন ভুল অভিযোগে শাস্তি পাচ্ছে তখন আপনি সত্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছেন। এতে আপনি নিজে উদ্যোগী হয়ে ছেলেটার ক্ষতি করা থেকে বিরত থেকেছেন সত্য; কিন্তু তার ক্ষতি হওয়া ঠেকানোর সুযোগটি ব্যবহার করেননি। এটা কি ন্যায়ানুগ বা যুক্তিসঙ্গত ছিল?

সিদ্ধার্থ ঋষিন: আমি এটাকে ন্যায়ানুগ বা যুক্তিসঙ্গত, কিছুই বলিনি। আপনি বলেছেন ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকলেই চলবে। ধরুন তিন বছরের একটা শিশু পুকুর পাড় দিয়ে একা হেঁটে যাচ্ছে। আপনি তাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিলেন না। কিন্তু সে পানিতে পড়ে যেতে পারে সে সম্ভাবনার কথাটাও ভাবলেন না। শর্ত পূরণ করে আপনি বাড়ি চলে গেলেন। আপনার সংজ্ঞা অনুযায়ী এটাই তো সর্বোত্তম কাজ।
সঞ্জিব পুরোহিত: আমার সংজ্ঞা ভুল হয়ে থাকতে পারে। আমরা বাক্যটাকে এভাবে সাজাতে পারি- ‘কারো ক্ষতি করা থেকে যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজেকে বিরত রাখা বা তার ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলে ন্যায়ানুগ উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত না থাকা-ই সর্বোত্তম কাজ’।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: এটা উত্তম কাজ হতে পারে, তবে সর্বোত্তম নয়। শুধু মানুষ নয়, সব প্রাণী-ই অন্যের কিছু উপকার করে। এটাই সবচেয়ে ভালো কাজ। আপনার নিশ্চয়-ই তলস্তয়ের থ্রি কোশ্চেন গল্পের কথা মনে আছে- রাজার জানতে ইচ্ছা করলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কোনটি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী। রাজা গহিন অরণ্যে একাকী বাস করা এক জ্ঞানী ব্যক্তির সন্ধান পেলেন। উত্তর খুঁজতে সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন, জ্ঞানী ব্যক্তিটি মাটি খুঁড়ছেন। রাজা তাকে মাটি কাটার কাজে সাহায্য করলেন। এরপর বল্লমের আঘাতে আহত এক ব্যক্তিকে রাজা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুললেন। পরে সেই ব্যক্তি স্বীকার করলো যে সে রাজাকে হত্যা করার জন্য তার পিছু নিয়েছিল। রক্ষী তাকে চিনে ফেলে জখম করেছে। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর জানাতে গিয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি বলেন, রাজা তার আশেপাশে থাকা মানুষদের কল্যাণ করেছেন (মাটি কাটা ও শুশ্রূষা করার মাধ্যমে); এটাই তার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল।
সঞ্জিব পুরোহিত: এ’ ধরণের গল্প কিছুটা ‘রিলিজিয়াস সারমন’ এর মতো। এগুলো মানুষের সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভালবাসা, উদারতার অনুপ্রেরণা তৈরি করে, যার খুব কম অংশ-ই বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায়। যেমন ধরুন, এই গল্পটা পড়ার পর আপনি রিকশা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। মাঝপথে গিয়ে আপনি দেখলেন, ঘর্মাক্ত চালক রিকশা টানতে পারছে না। বাকি পথটুকু আপনি তাকে সিটে বসিয়ে রিকশা চালিয়ে গেলেন। এরকম ঘটলে আমরা বুঝতাম যে এই গল্প থেকে নেওয়া শিক্ষা আপনি বাস্তবায়ন করেছেন। যে ধারণার প্রয়োগযোগ্যতা কম সেটাকে সর্বোত্তম বলা চলে না। এর বিপরীত একটা ঘটনা (এই গল্পটা আপনি জানেন; তবু) শুনুন- গ্রীক দার্শনিক ডায়োজিনিস বাস করতেন পরিত্যক্ত বিশাল একটা মদের পিপায়। তাকে সবাই খ্যাপাটে দার্শনিক বলে জানতো। এথেন্স জয়ের পর আলেকজান্ডার এই জ্ঞানী মানুষটিকে দেখতে গেলেন। নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, “আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?” ডায়োজিনিস বললেন, “আপতত একটু সরে দাঁড়াও, যাতে রোদটুকু আমার কাছে আসতে পারে, কারণ তুমি আমাকে যা দিতে পারো না তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারো না।” এখানে দেখুন ডায়োজিনিস তার ক্ষতি করা থেকে আলেকজান্ডারকে বিরত থাকতে বলছেন।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: আমরা যদি পরস্পরকে সাহায্য না করি তাহলে তো পৃথিবী অচল হয়ে যাবে। আমি আমার সন্তানদের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকলে কি আমার দায়িত্ব পালন করা হয়ে যাবে? বিল গেটস তার প্রায় সমস্ত সম্পত্তি মানব কল্যাণে দান করে দিয়েছেন। এটা তার দিক থেকে সর্বোত্তম কাজ নয় কেনো? আমাদের বুঝতে হবে, অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে-ই সভ্যতা আজ এই স্তরে এসেছে।
সঞ্জিব পুরোহিত: আপনি এখনও আমার প্রথমে দেওয়া সংজ্ঞাটা-ই ধরে রেখেছেন। পরে আমরা, “ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেলে ন্যায়ানুগ উদ্যোগ গ্রহণ থেকে বিরত না থাকা” ক্লজটি যোগ করেছি। আপনি যদি বোঝেন আপনার পুত্র লেখাপড়া না করলে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়বে তাহলে আপনার ন্যায়ানুগ উদ্যোগ হবে তার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা। বিল গেটস তার সমস্ত সম্পত্তি দান করে যেটা করেছেন সেটা দ্বিতীয় সর্বোত্তম কাজ। সর্বোত্তম কাজটি তিনি আগেই করে রেখেছেন- যেমন তিনি রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অথবা মানুষ হত্যার জন্য কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে তার টাকা দান করা থেকে বিরত থেকেছেন। অক্সফোর্ড মারটিন স্কুলের ডাটা অনুযায়ী গত দেড়শ বছরে দুর্ভিক্ষে পৃথিবীতে ১২৮ মিলিয়ন মানুষ মারা গেছে। আর এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধে মারা গেছে ঠিক দিগুণ- ২৫৮ মিলিয়ন মানুষ। জাতিগত দাঙ্গা হিসেবে নিলে সংখ্যাটা হয়তো ৩০০ মিলিয়ন হবে। দুর্ভিক্ষে সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ খুব কম। কিন্তু যুদ্ধে সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৭০ মিলিয়ন মানুষ নিহত হবার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪ ট্রিলিয়ন ইউ এস ডলার, যা ১৯৬০ সালের বিশ্বের মোট জিডিপি-র ৩ গুণ ও ১৯৭২ সালের সমান। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে কমপক্ষে ২০০০ টি যুদ্ধ হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমাণটা একবার ভাবুন। এই ক্ষতি না হলে সভ্যতা এখন যেখানে আছে তার চেয়ে হয়তো হাজার খানেক বছর এগিয়ে থাকতো।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: আপনি বলছেন যুদ্ধ না হলে কী হতে পারতো। এটাও তো একটা কল্পনাবিলাস। অন্যের উপকার করা যেমন বাস্তবায়নযোগ্য পরামর্শ নয়, যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার পরামর্শও সেরকম একটা অযথার্থ উপদেশ। দিবেন্দুদার ভাষায় প্রপঁচিত পরামর্শ। রাষ্ট্র যেমন ‘নেসেসারি ইভিল’ যুদ্ধও সেরকম একটা অনাকাঙ্ক্ষিত অনিবার্যতা। আপনি বলেছেন বাস্তবায়নযোগ্য না হলে সে পরামর্শের কোন মূল্য নাই।
সঞ্জিব পুরোহিত: যুদ্ধের প্রসঙ্গ আমি যুক্তি হিসেবে আনতে চাইনি। আবার মূল প্রসঙ্গে আসি— কেন কাউকে সাহায্য করা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভালো কাজ। মানুষ যখন থেকে দল বেঁধে বাস করতে শুরু করে তখন থেকেই পরস্পরকে সাহায্য করে বেঁচে ছিল। গায়ে পড়ে অন্যের উপকার করতে যায়নি। সম্পদের আর্থিক মূল্য এবং মালিকানা তৈরি হবার পর বন্টনের প্রসঙ্গ এসেছে। সাহায্য করার ধারণা তার-ই একটা অংশ। ধরুন, আপনি আপেল কেনার জন্য আমাকে ১০০ টাকা দিয়ে আমাকে সাহায্য করলেন। অরণ্যবাসী আদিম মানুষের এই সাহায্যের দরকার হতো না। তারা ঈশ্বরের মালিকানাধীন গাছ থেকে আপেল পেড়ে খেতো। ঈশ্বরকে টাকা দিতো না। আর দিলেও ঈশ্বর সেই টাকা দিয়ে কী করতেন! অন্য সব প্রাণী এখনও সেই তরিকাতেই টিকে আছে। আপনি যদি পৃথিবীর সব বনে বানরদের জন্য পাখির ডিম, কলা আর কচি পাতা সরবরাহ করতে থাকেন তাহলে তারা আপনার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং জীবনীশক্তি হারাবে। বাংলাদেশ এক সময় ধনী দেশগুলোর সাহায্যের আশায় বসে থাকতো। প্যারিস কনসোর্টিয়ামে কত টাকা বরাদ্দ হলো সেটা ছিল সেসময়ের সংবাদপত্রে বছরের সবচেয়ে বড় শিরোনাম। এখন সাহায্য প্রায় ৯০ ভাগ কমে গেছে। ফলে আমরা সাবলম্বী হচ্ছি।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: ক্লাসে যখন আপনি ছাত্রদের কোন বিষয় বুঝিয়ে দেন তখন তাদের সাহায্য করেন।
সঞ্জিব পুরোহিত: আমি প্রথমত তাদের ভুল পথে চালিত করা থেকে বিরত থাকি। এরপর আলোচ্য বিষয়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করি যাতে তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে এবং নিজেই একটা ধারণা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়। প্রায়-ই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা এমন কিছু ধারণা উদ্ভাবন করে ফেলে যা আমি আগে ভাবিনি। অনেক বিষয়ের নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে তারাও আমাকে সাহায্য করে। তাদের কাছেই বরং আমি বেশি শিখছি।

সিদ্ধার্থ ঋষিন: ডায়োজিনিস এবং আলেকজান্ডারের একটা গল্প আপনি বলেছেন। আমিও একটা বলতে চাই।
সঞ্জিব পুরোহিত: বললে কৃতার্থ হই।
সিদ্ধার্থ ঋষিন: এটা আপনার বলা ঘটনার অনেক পরের ঘটনা। আলেকজান্ডার তখন ডায়োজিনিসের পুরাদস্তুর শিষ্যত্ব নিয়েছেন। প্রায়-ই গুরুর আস্তানায় যান। একদিন তিনি ডায়োজিনিসকে জিজ্ঞেস করলেন, “মহাত্মন, আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?”
ডায়োজিনিস বললেন, “আগে বলো, তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?”
– গ্রীসের বাকি অংশটুকু দখল করা।
– তারপর?
– পুরো এশিয়া মাইনর নিজের আয়ত্তে আনা।
– তারপর?
– পুরো পৃথিবী দখল করে নেওয়া।
ডায়োজিনিসের লেগে থাকেন, “তারপর?”
—তারপর, বাড়িতে বসে অবসর কাটাবো।
ডায়োজিনিস বললেন,
—তুমি বিশ্ব জয় করার পর যা করবে সে কাজটি আমি আগেই শুরু করে দিয়েছি।
hassangorkii@yahoo.com
রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা।

Exit mobile version