হাসান গোর্কি : তিন হাজার একশ’ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সুমেরীয় উরুক রাজ্যের রাজা, গিলগামেশ মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র গিলগামেশ স্বপ্নে অতীন্দ্রিয় ঘটনাবলী দেখতেন। এটিই স্বপ্নের প্রাচীনতম লিখিত দলিল। দেবতারা তাকে ভাল স্বপ্ন দেখাতো। ভূতেরা দেখাতো খারাপ স্বপ্ন। দেবতারা স্বপ্নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মৃত্যুর পর তাকে ল্যান্ড অব ইটারনিটিতে নিয়ে গিয়ে অনন্ত জীবন দান করা হবে। মহাক্যবটির বর্ণনা অনুযায়ী তারা সেকথা রেখেছে। এই স্বপ্নগুলোকে তিনি পাথরে খোদাই করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
আমার এক বন্ধুও গিলগামেশের দেবতাদের মতো ঘুমন্ত মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর কায়দা রপ্ত করেছিল। তার কাছে শোনা গল্প- শৈশবে গ্রীষ্মের দুপুরবেলা মা-বাবার সাথে তার ঘুমানো বাধ্যতামূলক ছিল। এক দুপুরে তাকে ঘুমিয়ে দিয়ে মা-বাবা ঘুমিয়ে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ বন্ধু ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিল। সে উঠে মুখে কাজলের কালি মেখে, পাটখড়ির দাঁত লাগিয়ে মায়ের মুখের উপর মুখ নিয়ে বিকৃত মুখভঙ্গি করে মাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। (ছোটবেলায় আমরাও বিশ্বাস করতাম যে এভাবে ঘুমন্ত মানুষকে স্বপ্ন দেখানো যায়।) মা ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে এই অদ্ভুত প্রাণীটাকে দেখে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। এই প্রতিভাবান বন্ধুটি এখন সৌদি আরবে ডাক্তার হিসেবে কাজ করছে। এখন সে নিশ্চয়ই জানে স্বপ্ন আসলে অন্য কিছু।
‘স্বপ্ন’ শব্দটাকে আমরা যতটা পেলবতা ও প্রশান্তির আকর মনে করি ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নগুলোর বেশিরভাগ-ই সেরকম নয়। স্বপ্নে বাঘ বা শেয়ালের তাড়া খাওয়া, পরীক্ষার হলে সময়মত পৌঁছুতে না পারা, সিঁড়ি দিয়ে বাসার ছাদে উঠতে ঘেমে যাওয়া বা প্লেন মিস করে কষ্ট পাওয়ার মত ঘটনাই বেশি ঘটে। এরকম কেন ঘটে সেটা বোঝার জন্য ‘আমরা স্বপ্ন দেখি কেন’ সেটা বুঝতে পারা জরুরি। মনোবিজ্ঞানী অ্যাঁ ব্রাউনম্যান তাঁর ¯স্লপি: এ সায়েন্টিফিক পারসপেক্টিভ বইয়ে লিখেছেন, মানুষ স্বপ্ন দেখে শারীরিক বা মানসিক পীড়নের কারণে। কেউ যখন অতিরিক্ত ক্লান্তি, জ্বর, ব্যথা বা অন্য কোন ধরণের শারীরিক বা মানসিক পীড়ন নিয়ে ঘুমিয়ে যায় তখন তার আক্রান্ত স্নায়ুগুলো অস্বস্তি বা কষ্টের খবরটা মস্তিষ্কের কোষে পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে এবং কিছু সংখ্যক ঘুমন্ত কোষকে ধাক্কাধাক্কি করে ডেকে তুলতেও সক্ষম হয়। এই সুপ্তোত্থিত আধা জাগ্রত কোষগুলো তখন যা কিছু চিন্তা করে তার প্রায় সবটুকুই অবাস্তব হয়। কারণ, কিছু কোষ তখনও ঘুমিয়ে থাকে- যাদের কাছে তথ্য নেওয়া ছাড়া জাগ্রতরা একটা সুশৃঙ্খল চিন্তা সাজাতে পারে না।
আমরা যখন কিছু চিন্তা করি তখন মস্তিষ্কের কোষে রক্ষিত তথ্য দিয়ে তা যাচাই করি। যেমন স্বপ্নে শেয়ালের শরীরে আমরা মানুষের মাথা দেখতে পারি। কারণ, এটা যে বাস্তবে সম্ভব নয় সে তথ্য যে কোষগুলোতে জমা আছে তারা হয়তো তখন ঘুমাচ্ছে। ফলে এই দৃশ্যে কোন অসঙ্গতি আছে কিনা সেটা যাচাই করা সম্ভব হয় না। পাগলদের মস্তিষ্কের অনেক কোষ অকার্যকর হয়ে পড়ে বলে তারা চিন্তার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা হারায় এবং এলোমেলো কাজ করে- যার সাথে আমাদের স্বপ্নে করা কাজগুলোর অনেক মিল থাকে। বয়স বৃদ্ধির সাথে আমাদের মস্তিষ্কের কোষের কর্মক্ষমতা কমে যায় বলে চিন্তার গতি হ্রাস পায়। শক্তিশালী ওষুধ খাওয়া, অতিরিক্ত মদ্যপান, দীর্ঘ সময় নির্ঘুম কাটানো- এ’ধরণের কাজগুলো যে শারীরিক পীড়ন তৈরি করে তা প্রায় নিশ্চিতভাবেই স্বপ্ন দেখার ক্ষেত্র তৈরি করে। বর্তমান সময়ের নিউরোসায়েন্স স্বপ্নকে পুরোপুরি শারীরবৃত্তীয় বিষয় মনে করে। ভাবলে অবাক লাগে যে তিনশ’ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে অ্যারিস্টটলও বিশ্বাস করতেন যে স্বপ্ন হল শারীরিক কার্যকলাপ; এতে কোন আধিদৈবিকতা নেই। আমরা অনেকে ঘুমন্ত অবস্থায় বিছানা ছেড়ে উঠে হাঁটাহাঁটি করি। এটাকে Somnambulism বা sleepwalking (বাংলায় ‘নিশিতে পাওয়া’) বলে। ‘নিশিতে পাওয়া’ যে একটা শারীরবৃত্তীয় সমস্যা সেটা অ্যারিস্টটল-ই প্রথম অনুমান করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের হিং টিং ছট কবিতায় রাজা স্বপ্ন দেখেছেন, এক বেদে তার কানে কানে ‘হিং টিং ছট’- এই অর্থহীন শব্দ তিনটি বলে উধাও হয়ে গেছে। রাজা অর্থ জানতে চান। অনেকে ব্যর্থ হবার পর এক বাঙালি জ্যোতিষী এই শব্দগুচ্ছের ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে-
ত্র্যম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ
শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ।
বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি
জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বদী।
আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি
আণব চৌম্বকবলে আকৃতি বিকৃতি।
কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ
ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভূত।
ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট–
সংক্ষেপে বলিতে গেলে, হিং টিং ছট্।’
নিউরোসায়েন্স বলছে, মস্তিষ্কে মোটামুটি ১০০০ কোটি নিউরন থাকে। এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সংকেতের আকারে অনুভূতি পরিবহন করতে পারে। এদের দুই প্রান্তে সূ² তন্তুর মতো প্রবর্ধক থাকে। এদের বলা হয় ডেন্ড্রাইট। এরা অ্যান্টেনার মতো অন্য নিউরন থেকে সংকেত গ্রহণ করে। হিং টিং ছট্ কবিতায় জ্যোতিষ শাস্ত্রের প্রতি এক ধরণের সুকৌশল ব্যঙ্গ আছে। শব্দ-চাতুর্যে জ্যোতিষীরা কীভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিমোহিত করে এই কবিতায় তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ‘ত্রিকাল’, ‘আণব-চৌম্বক’, ‘জীবাত্মবিদ্যুৎ’, ‘ধারণা পরমা শক্তি’- এই শব্দ/শব্দগুচ্ছগুলোকে বিবেচনায় নিলে স্বপ্নের একটা ব্যাখ্যাও পাওয়া যেতে পারে, যা কিছুটা বিজ্ঞানের সাথে মিলে যাবে। ‘জীবাত্মবিদ্যুৎ’ বলতে কি রবীন্দ্রনাথ চৈতন্যপ্রবাহ (স্ট্রিম অব কনসাসনেস) বুঝিয়েছেন? এই বিক্ষিপ্ত অবচেতন চৈতন্যপ্রবাহ-ই কি স্বপ্ন? আলেকজান্ডার বেইন ১৮৫৫ সালে দ্য সেন্সেস অ্যান্ড দ্য ইনটেলেক্ট গ্রন্থে ‘স্ট্রিম অব কনসাসনেস’ বলতে মস্তিস্কের এক অনুভূতি দিয়ে অন্য অনুভূতিকে যান্ত্রিকভাবে প্রভাবিত হওয়া বুঝিয়েছেন। (সাহিত্যে এটা কাছাকাছি, তবে কিছুটা অন্য অর্থে ব্যবহৃত হয়।)
আমরা স্বপ্ন দেখি কেনো সেকথায় ফিরে আসা যাক। পীড়ন থেকে আমরা কীভাবে স্বপ্ন দেখি সেটা আমরা উপরের অনুচ্ছেদগুলোতে বুঝেছি। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায়ও আমরা মাঝে মাঝে বেশ গোছানো এবং প্রশান্তিময় স্বপ্ন দেখি। এর কারণ কী? এটাও ঘটে এক ধরণের অবদমিত মানসিক পীড়ন থেকে। সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনে করতেন, স্বপ্ন হলো অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা ও কল্পনাগুলোর প্রতিফলন। ধরুন, আপনি কখনও পাখিদের মত আকাশে ওড়ার কথা বা লটারিতে এক মিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা ভেবেছেন। অনেকটা দূর-কল্পনা বলে সেটা আর লালন করেন না। কিন্তু অর্জনগুলো কল্পনা করার সময় আপনার আকাঙ্ক্ষা তীব্র ছিল। সেকারণে মস্তিষ্কের কিছু কোষ নিজ দায়িত্বে তা সংরক্ষণ করেছে; ফলে মস্তিষ্কের অবচেতন স্তরে আকাঙ্ক্ষাগুলো থেকে গেছে। আপনি ঘুমিয়ে গেলে ঐ কোষগুলো অবদমন ভেঙে কাজ শুরু করে এবং আপনি আকাশে উড়তে যান বা লটারিতে মিলিয়ন ডলার জিতে নেন।
আমাদের স্বপ্নগুলো মাঝে মাঝে সত্যি হয়। এর বেশিরভাগ-ই কাকতালীয়। তবে কখনও কখনও তা এমন বিস্ময়কভাবে বাস্তবের সাথে মিলে যায় যে তাকে আর কাকতালীয় বলা সহজ থাকে না। নিজের একটা ঘটনা বলি —ভর্তি পরীক্ষা দিতে রাজশাহী মেডিকেলে আমার কাজিনের পিংকু হোস্টেলের দোতলার একটা রুমে উঠেছি। বøকের সবাই কক্সবাজার গেছে। রাতে স্বপ্ন দেখলাম, আমি ট্রেন লাইনে বসে আছি। একটা ট্রেন এসে আমার গলা কেটে দিয়ে চলে গেল। আমি ভাবছি, আমার লাশ বাড়িতে পৌঁছালে সবাই কান্নাকাটি করবে। আমি বোকার মতো ট্রেন লাইনে বসে থাকলাম কেনো! আমার ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে দেখলাম, রাত ১২টা বাজে। পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোরবেলা আমার বন্ধু রাজা (সে মেইন হোস্টেলে ছিল) এসে আমাকে ডেকে তুলে বলল, ট্রেনে একজন লোক কাটা গেছে। পিংকু হোস্টেলের পেছনে ১০০ গজ দূরে রেল লাইন। জানালা খুলে মানুষের জটলা দেখে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। রেল লাইনে গিয়ে দেখলাম লোকটার মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে দূরে পড়ে আছে। লোকদের কাছে শুনলাম ভোর ছয়টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা শাহ মখদুম ট্রেনে কাটা পড়েছে লোকটা। আমার চেনা প্রায় সবার জীবনে এরকম দু’ একটা স্বপ্নের ঘটনা আছে যাকে কাকতালীয় বলা কঠিন। সেগুলো লিখে আলোচনা দীর্ঘ করতে চাই না। পাঠক নিজের স্বপ্নগুলোর সাথে মিলিয়ে নেবেন। আমরা বরং এর ব্যাখ্যা খুঁজতে চেষ্টা করি।
বিষয়টা এমন হতে পারে যে বিশেষ কোন অবস্থায় আমরা সময়ের অগ্র-পশ্চাৎ ভ্রমণ করতে পারি। ঘুমন্ত মানুষের নিউরন সেলগুলো একযোগে সক্রিয় হয়ে হয়তো কখনও কালের প্রাচীর ভেঙে মহাকালে ভ্রমণ করতে থাকে। ফলে সে ভবিষ্যতের ঘটনা দেখে ফেলে। যে ঘটনা ঘটেনি তা আমরা বাস্তবে হোক আর স্বপ্নে হোক, দেখবো কীভাবে? সময় বিষয়ে আমাদের ধারণার অস্পষ্টতা থেকে আসলে আমরা এই প্রশ্নটা করছি। সময়ের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ একটা বিভ্রম। এটা আমাদের মনে এতটাই প্রোথিত যে ক্রিয়াপদের তিনটা ফর্মের বাইরে কিছু ভাবতে পারি না। যেমন খেয়েছি, খাচ্ছি, খাবো— এগুলো সময়বদ্ধ শব্দ। এই ক্রিয়াপদটির সময় নিরপেক্ষ কোন ফর্ম কল্পনা করা আমাদের ভৌত অভিজ্ঞতার কারণে সম্ভব নয়।
আমরা সময়কে বুঝি একজন পর্যবেক্ষকের একটা নির্দেশ কাঠামোর (‘spatial reference frame of the observer’) সাপেক্ষে। কিন্তু আসলে মহাজগতে সময় নিরপেক্ষ স্থান বা স্থান নিরপেক্ষ সময় নেই। মঙ্গল গ্রহের বর্তমান সময় এবং পৃথিবীর বর্তমান সময়ের গড় পার্থক্য ১৩ মিনিট। নেপচুনের সাথে এই পার্থক্য প্রায় পাঁচ ঘন্টা। মহাবিশ্বে এমন কোন স্থান নেই যেখান থেকে আমরা সময়কে নিরপেক্ষভাবে মাপতে পারি। একটা ঘটনা অন্যটার চেয়ে আগে বা পরে ঘটছে— ব্যাপারটা সেরকম নয়। আমরা আগে জন্মগ্রহণ করি না আগে মৃত্যুবরণ করি সেটা নির্ভর করবে কোন রেফারেন্স ফ্রেম থেকে পর্যবেক্ষক ঘটনাগুলো দেখছে তার ওপর। আমি যদি আজ মরে যাই আর আপনি সপ্তর্ষি মন্ডলে কারো কাছে সংবাদটা এখনই পৌঁছে দেন তাহলে তার সময়ের সাপেক্ষে সে আমার মৃত্যুর সংবাদ পাবে আমার জন্মের ৮৭০ বছর আগে। আইনস্টাইনের ভাষায় সময় হলো ‘স্টাবরনলি পারসিস্টেন্ট ইলিউশন’। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘স্থির নিবিষ্টভাবে ধারাবাহিক বিভ্রম’। সময় কীভাবে একটা বিভ্রম সে বিষয়ে প্রান্তরে তেপান্তরে- ৭ এ একটা উদাহরণ আছে, “আপনি গরম তেলে ডিম পোঁচ করতে দিয়ে আলোর গতির ৯৯.৯৯৯৯৯৯৯% গতিতে চলে এমন একটা মহাকাশযানে চেপে মহাকাশে গেলেন। কয়েকশ’ বছর মহাকাশে কাটিয়ে ফিরে এসে আপনি দেখবেন ডিমটা উল্টে দেওয়ার সময় হয়েছে।” আপনি যে কয়েকশ’ বছর মহাকাশে কাটালেন এসময় পৃথিবী কি থেমে ছিল? না। আসলে আপনি ভ্রমণটা করেছেন অতীতকালে গিয়ে। তারপর পৃথিবীর বর্তমান সময়ে ফেরত এসেছেন।
তাহলে ভবিষ্যৎ দেখা যাবে কীভাবে? আগেই বলেছি ‘ভবিষ্যৎ’ ধারণাটাও একটা বিভ্রম। কিন্তু আলোচনা চালু রাখতে এর বিকল্প কোন শব্দও নেই। ধরা যাক আপনি আপনার বন্ধুর সাথে একটা ফ্ল্যাটে থাকেন। আপনারা জানালা দিয়ে দেখতে পান পাশের ফ্ল্যাট থেকে স্কুল ড্রেস পরা একটা শিশু প্রতিদিন বেরিয়ে যায়। আপনাদের ফ্ল্যাট থেকে ঐ ফ্ল্যাটটির দূরত্ব ৩০ আলোকবর্ষ। আপনি বললেন, শিশুটি বড় হয়ে ডাক্তার হবে। আপনার বন্ধু বলল, সে ইঞ্জিনিয়ার হবে। আপনারা ৫০০ টাকা বাজি ধরলেন এবং এখনই বাজিটার জয়-পরাজয় নির্ধারণ করতে চাইলেন। আপনারা একটা অলৌকিক যানে চেপে এক সেকেন্ডে ঐ ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হয়ে দেখলেন শিশুটি ডাক্তারি পাশ করে চাকরি করছে। আপনি ৫০০ টাকা জিতে বাড়ি ফিরলেন। এরপর জানালা দিয়ে আবার সেই পুরনো দৃশ্যই দেখতে থাকলেন— সে প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছে। আপনি তার ফ্ল্যাটে গিয়ে যে দৃশ্য দেখে এসেছেন সেটা দেখার জন্য আপনাকে আরও ত্রিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে; কারণ তার শরীর থেকে বিচ্ছুরিত আলো ৩০ আলোকবর্ষ পথ পাড়ি দিয়ে আপনার চোখে আসতে ৩০ বছর সময় নেবে। কিন্তু আপনি যদি একই সাথে এই দুটি ফ্ল্যাটে অবস্থান করতে পারেন তাহলে আপনি সর্বত্র বিরাজমান সত্ত¡া (অমনিপ্রেজেন্ট এনটিটি)’র মতো অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ একসাথে দেখবেন।
আবার একটা গল্প বলার সময় হয়েছে। এক বাসার পোষা বিড়ালটা চুরি করে খেতে শুরু করেছে। মা তার কিশোর ছেলেকে বিড়ালটাকে দূরে কোথায় ছেড়ে দিয়ে আসতে বললেন। ছেলে অনেক দূরে তাকে ফেলে এলো। সন্ধ্যাবেলা বিড়াল এসে হাজির। পরদিন ছেলেটা বিড়াল নিয়ে আবার চলে গেল এবং সারাদিন পার করে সন্ধ্যাবেলা ফিরে এলো। মা জিজ্ঞেস করলেন,
– এতো দেরি হলো কেনো?
– বিড়াল ফেলতে শহরের শেষ প্রান্তে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম।
– তারপর?
– বিড়ালের পেছন পেছন এলাম।
স্বপ্নের কথা লিখতে গিয়ে আমিও এতটা দূরে চলে গেছি যে প্রসঙ্গে ফিরতে আমারও একটা বিড়াল দরকার। রাতের ঘোর লাগা স্বপ্নাতুর এই তৃতীয় প্রহরে বিড়াল পাই কই!
“স্বপ্নমঙ্গলের কথা অমৃতসমান
গৌড়ানন্দ কবি ভনে, শুনে পুণ্যবান।”
পাঠক বরং নিজ দায়িত্বে ‘গৌড়ানন্দ কবি’র উপসংহারটা বুঝে নিন।
hassangorkii@yahoo.com
আগস্ট ২৫, ২০২১, রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া।