হাসান গোর্কি : আমরা সবাই ছোটবেলায় গ্রীক পুরানের একটা গল্প শুনতাম- ডিডালুস এবং তার ছেলে ইকারাস মোম দিয়ে দুই হাতে পাখির পালক লাগিয়ে আকাশে উড়তে উড়তে সমুদ্রের ওপর গেল। পিতার নিষেধ অমান্য করে ইকারাস অতি উৎসাহে অনেক উপরে উঠে গেল। একসময় সে সূর্যের কাছে চলে গেল। মোম গলে পালক আলগা হয়ে গেল। ইকারাস সমুদ্রে পড়ে গেল। এই গল্প থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমার ছোট মামাও তার কিশোর বেলায় আকাশে উড়তে চেষ্টা করেছিলেন। পরিকল্পনাটা আগে থেকে সাজানো ছিল। দুটি বড় আকৃতির কুলা ফুটা করে রশি বাঁধা ছিল। একদিন কালবৈশাখী ঝড় শুরু হবার প্রাক্কালে তিনি অনুগত বন্ধুভাবাপন্ন এক ভৃত্যের সহায়তায় দুই হাতে কুলা দুটি বেঁধে নেন এবং মাঠে চলে যান। ঝড় শুরু হলে তিনি দুই হাত প্রসারিত করেন এবং শক্তিশালী বেরসিক বাত্যাপ্রবাহের অনিয়ন্ত্রিত তান্ডবে কয়েকটা ডিগবাজি খেয়ে বিলের পানিতে পড়ে যান। আমার মা’র কাছে শুনেছি, সেই উচ্চাকাক্সক্ষী ব্যর্থ কিশোরের বিচারও নাকি হয়েছিল আমার নানার দরবারে। মামা মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। তার দু’চোখ বেয়ে নীরবে অশ্রু ঝরছিল- যতটা না শাস্তির ভয়ে তার চেয়ে বেশি উড্ডয়ন ব্যর্থতার অপমানে। হায়, নব্য ইকারাস! আজকের জ্যোতির্বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গেছে। তারপরও তা এই দুই ইকারাসের তুলনায় খুব বেশি এগোতে পারেনি। যারা মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা করেন বা কমপক্ষে আমার লেখা ‘প্রান্তরে তেপান্তরে’র ৮ম পর্ব (আকাশটা কত বড়) পড়েছেন তারা আন্দাজ করতে পারছেন কেন এমন বলা হলো।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পক্ষ থেকে পৃথিবী সদৃশ সাতটি গ্রহের সন্ধান পাবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ২০১৫’র জুলাই মাসে। নাসার বিজ্ঞানীদের দাবি, এদের মধ্যে একটি গ্রহ অবিকল পৃথিবীর মতো। তারা গ্রহটির নাম দিয়েছেন ‘কেপলার ৪৫২-বি’। পৃথিবীর সাথে খুব বেশি মিল থাকার কারণে এটাকে তারা ‘আর্থ ২.০’ও বলছেন। গ্রহটি পৃথিবীর মত পাথুরে এবং তার নক্ষত্র থেকে পৃথিবীর প্রায় সমান দূরত্ব দিয়ে ঘুরছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই দূরত্বকে বলা হয় ‘গোল্ডিলক জোন’। এটা নক্ষত্র থেকে এমন দূরত্বের এলাকা যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি বা খুব কম নয় এবং পানির তরল অবস্থায় থাকার জন্য উপযুক্ত। নক্ষত্রটি থেকে আর্থ ২.০’র যা দূরত্ব, তাতে সেখানে প্রাণের বিকাশ ঘটে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাসার বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। শুধু পৃথিবীর মত গ্রহের সন্ধান করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে কেপলার টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করে নাসা। কয়েক শতাব্দী ধরে ভিন গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর খোঁজ পাবার যে স্বপ্ন মানুষ দেখে এসেছে তা কি বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে? উত্তরটা ‘হ্যাঁ’ হলে আমরা খুশি হই কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা এখনও দূর কল্পনার মত একটা কিছু। শুধু গ্রহ খুঁজে পাওয়াই যথেষ্ট নয়; সময় ও দূরত্বের বাধা অতিক্রম করে পৃথিবীর মানুষের পক্ষে আদৌ কোনদিন অন্য কোন সভ্যতার সাথে যোগাযোগ করা হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়ে বড় সংশয় আছে। কেন সংশয়? নিচের আলোচনায় সেটা স্পষ্ট করা যাবে বলে অনুমান করছি।
আমাদের এ গ্যালাক্সিতে গ্রহের সংখ্যা কত তার হিসেব করার উপায় নেই, যেমন উপায় নেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালি কণার সংখ্যা জানা। কোন গ্রহ থেকে প্রতিফলিত আলো তার পিতৃনক্ষত্র থেকে বিচ্ছুরিত আলোর তুলনায় হাজার কোটি ভাগের এক ভাগও নয়। তাই পৃথিবী থেকে কোন গ্রহ দেখতে পাবার সম্ভাবনা খুবই কম। স¤প্রতি বিজ্ঞানীরা অতি শক্তিশালী রেডিও দুরবিন ব্যবহার করে মহাকাশে হাজার চারেক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন। কেপলার ৪৫২-বি সেগুলোর একটি। মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা তারাদের একটা বড় অংশ যুগল তারা (ডাবল স্টার)। এদের গ্রহজগৎ থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ এরা নিজেরাই পরস্পরকে আবর্তন করতে থাকে; ফলে সেন্টার অব গ্রাভিটি তৈরি হয় না। বাকি নক্ষত্রগুলোর প্রত্যেকটির গড়ে পাঁচটি করে গ্রহ থাকলে আমাদের গ্যালাক্সিতে গ্রহের সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ কোটি। প্রত্যেক সৌরজগতে গড়ে একশটি উপগ্রহ থাকলে ছায়াপথের মোট উপগ্রহের সংখ্যা দাঁড়ায় কুড়ি লক্ষ কোটি। এ হিসেবে মানুষের জানা মহাবিশ্বে নক্ষত্রের সংখ্যা হবার কথা একশ ষাট কোটি কোটি কোটি। গ্রহের সংখ্যা আটশ কোটি কোটি কোটি। এখন বিজ্ঞানীরা জানেন আকাশটা আমাদের মনোরঞ্জনের জন্য আলোকবিন্দু শোভিত চাঁদোয়া বা খুঁটিবিহীন ছাদ নয়- ট্রিলিয়ন, ট্রিলিয়ন গ্রহ-নক্ষত্রে পূর্ণ অসীম শূন্যস্থান।
তাই মহাবিশ্বে আমরা ছাড়া আরো বুদ্ধিমান প্রাণী আছে কিনা এ নিয়ে তাদের আগ্রহের সীমা নেই। হয়তো এটা আমাদের দূর্ভাগ্য যে আমরা জানি না মহাবিশ্বের বিশাল বিস্তার জুড়ে ঠিক এই মুহূর্তে কত সহস্র কোটি গ্রহের জনমানবহীন নৈঃশব্দতাড়িত প্রান্তরে তাদের উপগ্রহের রুপালি বা সোনালি আলোর বান ডেকেছে; গন্তব্যে ছুটে চলার চাঞ্চল্যে পাগলপারা কত লক্ষ স্রোতস্বিনীর কলকল ধ্বনি মিলিয়ে যাচ্ছে নিঃসীম দিগন্তে; গদ্যের গাম্ভীর্যে বলীয়ান আদিগন্ত বিস্তৃত কত কোটি সমুদ্রে জোয়ার এসেছে; অথবা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে কত শত কোটি জনপদ। বিজ্ঞানী কার্ল সেগানের মতে ‘মহাবিশ্বটা আসলে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ; প্রাণের অস্তিত্ব আছে কোটি কোটি গ্রহে।’ যদি ব্যাপারটা সেরকম-ই হয়ে থাকে তাহলে সেটা আমাদের বোঝার আশা নেই।
পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র হলো সূর্য। দ্বিতীয় নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টরি। এটি যুগল তারা, তাই সেখানে গ্রহ জগৎ থাকার সম্ভাবনা নেই। এখন পর্যন্ত তৈরি সর্বোৎকৃষ্ট নভোযান চলে আলোর গতির .০০০১% বা ১০,০০০ ভাগের ১ ভাগ গতিতে। মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রæতগামী নভোযান পাইওনিয়ার-১১ ছুটতে পারে বুলেটের গতির ত্রিশ গুন গতিতে- সেকেন্ডে ৩০ কিলোমিটার। ঐ গতিতে পৃথিবীর তৃতীয় নিকটতম তারা এরিডেনাস নক্ষত্রমন্ডলের এপসাইলেন এরিডানি এবং চতুর্থ নিকটতম তারা সেটাস নক্ষত্রপুঞ্জের (তিমি মন্ডল) টউ সেটিতে পৌঁছুতে পাইওনিয়ারের সময় লাগবে এক লাখ বছরের কিছু বেশি। (পৃথিবী থেকে এদের দূরত্ব যথাক্রমে ১০.৭ ও ১১.৯ আলোকবর্ষ।) খবরাখবর নিয়ে ফিরে আসতে আরো এক লাখ বছর। দুই লাখ বছর মহাশূন্যে কাটাতে রাজি হবে এমন নভোচারী যেমন পাওয়া যাবে না, এত দীর্ঘ সময় হিউস্টনের মহাকাশ কেন্দ্রে ধৈর্য ধরে বসে থাকতে রাজী এমন বিজ্ঞানীও পাওয়া যাবে না। অতএব এরকম কোন প্রকল্প শুরু না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এ গ্যালাক্সির দূরতম নক্ষত্রে পৌঁছুতে ঐ নভোযানটির লাগবে একশ কোটি বছর। আর সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডাতে পৌঁছুতে লাগবে দুই হাজার তিনশ কোটি বছর। অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে মানুষের হাতে যে প্রযুক্তি আছে তা দিয়ে নক্ষত্রান্তরে পাড়ি জমানোর চিন্তা করা বৃথা। যে নতুন পৃথিবীর আবিস্কার নিয়ে আমরা এত হৈ চৈ করছি সেটা আমাদের পৃথিবী থেকে ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছে। সবচেয়ে দ্রুতগামী নভোযানে করে সেখানে যেতে সময় লাগবে ২৬ মিলিয়ন বছর, মানে দুই কোটি ষাট লাখ বছর। ফিরে আসা সহ হিসেব করলে পাঁচ কোটি কুড়ি লাখ বছর। আমরা যদি এখন কোন রেডিও বার্তাও পাঠাই এবং আর্থ ২’র বাসিন্দারা সেটা পেয়ে আমাদের ফেরত বার্তা পাঠায় তাহলে সেটা পৃথিবীতে আসবে এখন থেকে ২৮০০ বছর পর — ৪৮২১ সালে।
তাই সম্ভাব্য কোন সভ্যতার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে বিজ্ঞানীরা বেছে নিয়েছেন বেতার সংকেতকে যা আলোর গতিতে চলে। নাসার বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে মহাকাশে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেতার সংকেত পাঠিয়েছেন। সুদূর কোন গ্রহের উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন কোন প্রাণী যদি ঐ সংকেত ধরার এবং প্রতি সংকেত প্রেরণের ক্ষমতা অর্জন করে থাকে তাহলে তাদের সাথে একটা যোগাযোগ তৈরি হতে পারে এই আশায় । মহাকাশে যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে থাকে তাহলে তারাও হয়তো চারিদিকে বেতার সংকেত ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা বিশাল আকৃতির শক্তিশালী বেতার দুরবিন বসিয়েছেন। ডিসেম্বর ২০২০-এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ উদ্বোধন করেছে চায়না, যার ডিসের ব্যাস আধা কিলোমিটার। এটা পোর্টরিকোয় যুক্তরাষ্ট্রের বসানো এরিসবো অবজারভেটরি থেকে সক্ষমতা ও আকারে বড়। এগুলোর সাহায্যে সংগৃহীত মহাজাগতিক বেতার তরঙ্গগুলো বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন পরীক্ষা করে দেখছেন এগুলো কোন বার্তা বহন করে কিনা। তারা এমন একটি অর্থপূর্ণ ধ্বনিগুচ্ছের অপেক্ষায় আছেন যেটা আসার সম্ভাবনা হয়তো লক্ষ কোটি ভাগের এক ভাগ।
আসলে সকল সমস্যার উৎস হলো দূরত্ব। মহাবিশ্বের ব্যাপ্তির তুলনায় আলোর গতিকে কোন গতি বলা চলেনা। অদ্ভুত শোনালেও ব্যাপারটা আসলে তা-ই। একটা পিঁপড়া যদি ২ মিনিটে ১ ফুট গতিতে হাঁটতে শুরু করে তাহলে সে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসবে ৫০০ বছরে। কোন আলোকরশ্মি যদি আমাদের অনুমিত মহাবিশ্বটা একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে চায় তাহলে তার লাগবে সাড়ে চার হাজার কোটি বছর। ধরা যাক কানাডার থাউজেন্ড আইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় কোটি দুয়েক পিঁপড়ার একটা করে জোট বাস করে। এদের মধ্যে আন্তগোষ্ঠী যোগাযোগ তৈরি হবার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। কেউ যদি একধাপ এগিয়ে বলেন সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোঠায় তাহলেও তাকে দোষ দেয়া যাবে না।
কারণ প্রথমত পিঁপড়াদের পক্ষে বিষয়টা কল্পনা করা দুঃসাধ্য হবে। আর দ্বিতীয়ত এমন কোন প্রযুক্তি তাদের হাতে নেই যা দিয়ে তারা দ্বিতীয় কোন গোষ্ঠীর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে পারে এবং এরকম একটা দূরত্ব পাড়ি দিতে পারে । মহাবিশ্বে যদি হাজার কোটি গ্রহেও উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী থেকে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হবার সম্ভাবনা ঐ পিপীলিকা গোষ্ঠীসমূহের তুলনায় লক্ষ বা কোটি ভাগের এক ভাগ। আমরা যেমন মহাবিশ্বে নিজেদের একমাত্র বুদ্ধিমান প্রাণীগোষ্ঠী ভাবছি, সাতক্ষীরার পিঁপড়াদের কাছেও তেমনি মনে হবে পুরো বাংলাদেশে তারা ছাড়া কোন বুদ্ধিমান প্রাণী নেই। তবু ধরে নেয়া যাক এদের একটা উৎসূক দল তাদের মত উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীগোষ্ঠীর সন্ধানে অভিযান শুরু করলো এবং নিশ্চিত হলো যে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের থাউজেন্ড আইল্যান্ড-এ তাদের স্বগোত্রীয়রা বাস করে। তারা যদি সাতক্ষীরা থেকে থাউজেন্ড আইল্যান্ড-এর দিকে হাঁটতে শুরু করে তাহলে এখানে পৌঁছুতে তাদের মোটামুটি আড়াইশ বছর সময় লাগবে। [আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার জন্য তাদের একটা ফেরি লাগবে! বাংলায় নাম হতে পারে ‘পিপীলিকা প্রতরণ’। (প্রতরণ অর্থ অতিক্রমণ) ইংরেজিতে ‘দ্য জায়ান্ট ডিসকভারি’]।
আর মানুষ মহাকাশযানে চেপে ঘন্টায় এক লাখ মাইল গতিতে (যেটা মহাকাশ যানের সর্বোচ্চ গতি) ছুটলেও নিকটতম সম্ভাব্য জনপদ তিমি মন্ডলে পৌঁছুবে এক লাখ বছরে। তাই মহাবিশ্বে হাজার কোটি গ্রহেও যদি বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে থাকে তাহলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকবে খুবই কম। কারণ সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে গড় স্থানিক দূরত্ব হবে শ’খানেক আলোকবর্ষ। তবে একই সৌরজগতে দুই বা ততোধিক গ্রহে যুগপৎভাবে সভ্যতার বিকাশ ঘটে থাকলে যোগাযোগটা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। হয়তো (সায়েন্স ফিকশনে আমরা যেরকম পড়ি) এরকম অনেক সৌরজগত আছে যেখানে দুই প্রতিবেশী গ্রহের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, টেলিযোগাযোগ, আত্মীয়তা অথবা যুদ্ধবিগ্রহ চলছে। যদি নিদেনপক্ষে একশ কোটি গ্রহেও (যা মহাবিশ্বের মোট সম্ভাব্য গ্রহের সংখ্যার আটশ লক্ষ কোটি ভাগের একভাগ) প্রাণের বিকাশ ঘটে থাকে তাহলেও সেগানের ভাষায় বলা চলে, ‘‘মহাবিশ্ব জুড়ে বুদ্ধিমান প্রাণীরা কিলবিল করছে”।
আমাদের প্রযুক্তিগত সামর্থ্য সীমিত। তাই কল্পনাটাকে ছোট করে আনা যাক। সৌর জগতের সবগুলো গ্রহের আকার ও জলবায়ু যদি পৃথিবীর মত হতো, সেখানে মানুষ বাস করতো এবং খুব দ্রæতগতির বিশালকায় (এয়ারবাস ৩৮০’র মতো) নভোযান তৈরির প্রযুক্তি সবার হাতে থাকত তাহলে এতদিনে সৌরজগতটা সোলার ভিলেজে পরিনত হতো। আমি বলতাম, “আমার মেজো ভাই মাইনিং এর চাকরি নিয়ে গত মাসে শুক্র গ্রহে গেছেন।” আপনি বলতেন, “আমার ছোট বোন ডাক্তারি পাস করার পর চাকরি নিয়ে গত বছর বৃহস্পতি গ্রহে গেছে।” কিছু এডভেঞ্চার প্রিয় মানুষ নাগরিকত্ব নিয়ে শনির উপগ্রহ টাইটানে চলে যেতো। বিত্তবান মানুষরা ইউরেনাসের উপগ্রহ এরিয়েলের নির্জন প্রান্তরে যেতো অবকাশ যাপন করতে। বাস্তব না হলেও কল্পনা করে তো শান্তি পাওয়া গেল!
hassangorkii@yahoo.com
আগস্ট ০৪, ২০২১, রয়্যাল রোডস ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া, ব্রিটিশ কলম্বিয়া।