ইয়াসমিন আশরাফ ডোরা : দেশে দেশে ঘরে ঘরে সবখানে একই কথা কোভিড-১৯ বা করোনা। ইতিহাসের সব মহামারীকে পিছনে ফেলে কোভিড -১৯ স্থান করে নিয়েছে সবার উপরে। বিশেষ করে বর্তমান সময় বিশ্ব যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি উৎকর্ষতার শীর্ষে তখন কোভিডের আঘাতে মানুষ আতংকিত, কতো দিন এভাবে চলবে তাও জানানাই। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, চাকুরির বাজার, শিক্ষা ব্যবস্থা, মানসিক স্বাস্থ্য এক কথায় সামাজিক জীবন এক বিপর্যয় অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ইনশাল্লাহ একদিন আর সব অতীতের মহামারীর মতো কোভিডও বিদায় নেবে অথবা মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
আমাদের জীবনধারা আবার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে, আমরা কোভিডের নানান গল্প শুনবো। প্রকাশিত হবে কত বই, কত ছবি নতুন প্রজন্ম শুনবে হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের করুণ কাহিনি। বিশেষঙ্গদের মতে কোভিড শেষ হয়ে গেলেও বা নিয়ন্ত্রণে এলেও বহু দিন ধরে এর ক্ষতিকর প্রভাব নিরবে ফেলতে থাকবে।

কোভিডের সাধারণ লক্ষণ গুলি আজ কম বেশি সবার জানা হয়ে গেছে। টরণ্টোতে প্রতিটি বিভেকবান মানুষ নিজের ও অপরের মঙ্গলের কথা ভেবে যথা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। সাধারণ মানুষের এ চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

শুধু বড়রা না শিশুরাও কোভিড নিয়ে ভাবছে। ঘর থেকে বসে কাজ করা, পরিবারের সদস্যদের সাথে কিছুটা অতিরিক্ত সময় কাটানো, অফিসে বা স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে কাছে পেয়েছে, টিনএজারা মনের মতো ঘুমই নিচ্ছে, যখন খুশি উঠছে, গেম খেলেছে। অনেকের কাছে এ ছিল কিছুটা আনন্দের ব্যাপার। সব মিলে প্রথম দুইতিন সপ্তাহ মন্দ লাগেনি, বরং কারও কারও মতে বেশ ভালো কেটেছে।

কিন্তু কোভিড ধীরে ধীরে সাড়া বিশ্ব জুড়ে এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সপ্তাহ থেকে মাস এবং এখন তো বছর পার হতে চলেছে। কোভিডের দাবানলের থাবা ছোট-বড়, উন্নত এবং স্বল্পউন্নত সব দেশের উপরে পরেছে এবং কোভিড রুগির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সবার জন্য এ এক কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থা।

প্রাচীরবিহীন বন্দীশালায় মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। ভুগতে শুরু করেছে মানসিক পীড়নে। ঘরসংসার রুজি-রোজগার চাকুরি স্বাস্থ্য নানাবিধ বিষয়ে নিয়ে বড়রা চিন্তিত। কিশোর কিশোরীদের ভাবনা ওদের লেখাপড়া এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যত, ওদের প্রিয় গেম, সোস্যাল মিডিয়ায় আড্ডা বা নেণ্টফ্লিক্সে ছবি তাতেও এখন একঘেয়েমি ধরে গেছে। শিশুদের ভাবনা চিন্তার মধ্যে শুন্যতা লক্ষ্য করা যায়। স্কুল যেতে বললে স্কুল যায়, বাসায় থাকতে বললে তাই শুনে, অনলাইন ক্লাস করে, না হয় গেম খেলে আর না হয় টিভি দেখে। অজানা এক ভয় আর অনিশ্চতায় প্রতিনিয়ত দিন কাটাচ্ছে প্রতিটি মানূষ। প্রতিদিন কতটা কোভিড কেস হচেছ তা জানার জন্য সবাই উদগৃব হয়ে সংবাদ শুনে। মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি যেমন বেড়েছে তেমন বেড়েছে অনলাইন যুমের ব্যবহার বা ভারচুয়াল গেটটুগেদার, মিটিং,ওয়ার্কসপ ইত্যদি।

জীবন মানেই ছোট বড় সমস্য থাকবে, কোভিডের সমস্যা তো এখন কারও একার সমস্যা নয়। সরকার হতে শুরু করে ডাক্তার শিক্ষক গভেষক সবাই চিন্তিত কোভিডকে নিয়ে। সমাজে এমন মানূষ পাওয়া যাবেনা যে কোভিড নিয়ে কম বেশি বিচলিত নয়।

কোভিডের মধ্যে ভালো থাকার প্রায়স, প্রত্যেককে তার নিজেদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যর কথা ভাবতে হবে আরো ভাবতে হবে আমরা কিভাবে এই ভয়ংকর মহামারীর সাথে লড়বো। দেখতে হবে পরিবারের মানূষগুলি কেমন আছে? পরস্পরের প্রতি সহনশীলতার মনোভাব অবলম্বন করা, সবার সাথে ভালোবাসা দিয়ে কথা বলা, ছোট বড় প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, বিশেষ করে কিশোর কিশোরী ও শিশুদের প্রতি অতিযত্নবান হওয়া, এই বিষয় গুলি একান্ত প্রয়োজন। প্রত্যেক কে একটি রুটিন বা নিয়মের মধ্যে চলতে হবে এবং তা যেন আবার কারো উপর কোন অতিরিক্ত প্রেসার তৈরি না করে এবং সবাই যেন কিছুটা ফ্রি সময় নিজের মত করে পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাসায় কথাবার্তা, গল্পগুজবের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কথায় কথায় কেন, কি, কোথায়, এই সব প্রশ্ন না করাই ভালো। সবাই মিলে কোন নতূন রান্না করা, ছেলে বেলার গল্প করা, যে শখ সময়ের অভাবে আগে করা হয় নাই তা নতুন করে আরম্ভ করা, কোন সৃজনশীল কাজ করা, যারা ধর্মকর্ম করতে ভালোবাসেন তারা এই সূযোগ হাতছাড়া নাকরে বরং সময়টার সদব্যাবহার করা।

আমার নিজের কথাই বলি প্রায় ৬/৭ মাস ঘরে বসে কাজ করছি কিন্তু গতো সপ্তাহে টানা এক সপ্তাহ অফিশ যেতে হয়েছিল, তখন মনে হয়েছে এত লম্বা সপ্তাহ কখন শেষ হবে। তাই যখন সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, কোভিড বিদায় নিবে তখন এই বাসায় বসে বসে কাজ করা, সোসাল মিডিয়ায় সময় কাটানোর সূযোগ হারাবার জন্য আমরাই আবার আপশোস করবো।
তাই মানসিক দুশচিন্তা থেকে নিজে কে বেরকরে আনতে হবে। এই সময় মানসিক ভাবে সুস্হ্য থাকা একান্ত প্রয়োজন। কোভিড আমাদের সামাজিক ভাবে একে অপরের থেকে শারীরিক দূরত্ব সৃষ্টি করলেও পরস্পর প্রতি মানবিক অনুভুতি বৃদ্ধি করেছে।
সব শেষে শুধু একটাই প্রার্থনা কোভিড তুমি বিদায় হও আমরা আগের অবস্হায় ফিরে যেতে চাই।
* অসূস্থ্যতা বোধকরলে টেলিহেল্ত অনটারিও তে ফোন করতে পারেন ১-৮৬৬-৭৯৭-০০০০
* কমুউনিটি তথ্যের জন্য ফোন করেন ২১১ বা text করেন ২১১৬৬
* টরণ্টো সিটির অনুসন্ধানের জন্য নম্বন হলো ৩১১
ঁ Public hot line 416 338 8221
* কোভিড সংক্রান্ত লিগাল বিষয় জানতে হলে দেখতে পারেন https;//stepstojustice.ca/covid-19.