মাহাফুজুল হক চৌধুরী, সাইপ্রাস : শিরোনাম দেখে নিশ্চয় অবাক হয়েছেন। অবাক হওয়ারই কথা। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২৫১ পয়েন্ট নিয়ে ৯৫তম দল হিসেবে সাইপ্রাসের নাম রয়েছে। অন্যদিকে ৯১৪ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৭তম। ইউরোপের ৫৫টি দলের মধ্যে সাইপ্রাস র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৬। ইউরোপের
র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১৫টি দল হচ্ছে স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, রাশিয়া, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ইউক্রেন, তুর্কি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, স্কটল্যান্ড, চেক রিপাবলিক। সাইপ্রাসের পরেই গ্রিস, সুইজারল্যান্ড, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সুইডেন, নরওয়ের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর অবস্থান।

সাইপ্রাস একটি ছোট দেশ হলেও ফুটবলে অনেক শক্তিশালী একটি দেশ হিসেবে পরিচিত। এ দেশে
রয়েছে প্রায় ২২টির মতো ঘরোয়া নামীদামি ক্লাব। প্রতিটা ক্লাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয়
দলের ফুটবলাররা সেখানে খেলেন। সাইপ্রাস ইউরোপের দেশ হওয়ায় হয়তো কখনো বিশ্বকাপে
খেলতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত। তবে জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, গ্রিস, জাপানের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে অসংখ্য ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে সাইপ্রাসের। এসব দেশের সঙ্গে জিততে না পারলেও ড্র করেছে অনেকবার।

সাইপ্রাসের ছোট বাচ্চারাও অসাধারণ ফুটবল খেলে। দেখে মনে হয় এদের পায়ে ফুটবল–শিল্পের ছোঁয়া
লেগে আছে। সাইপ্রাসের মানুষের কাছে প্রধান শৌখিনতা হচ্ছে ফুটবল খেলা। ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অগনিত অনলাইন ব্যাটিং শপ। যেখানে রাতদিন টাকার বিনিময়ে অনলাইনে বাজি চলে। এ দেশের শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ফুটবল খেলার জন্য পাগল। ছোট্ট একটি দেশে জাতীয় এবং ঘরোয়া মিলিয়ে প্রায় ১০০টির মতো ফুটবল স্টেডিয়াম রয়েছে, যা বিশ্বে আর কোন দেশে আয়তনের তুলনায় এত স্টেডিয়াম নেই। তাই হয়তো এ দেশের ফুটবল এত উন্নত।

যাহোক, এবার আসল কথায় আসি। সাইপ্রাস জাতীয় দলের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় দলের সঙ্গে ফুটবল ম্যাচ হবে, এটা হয়তো আমরা কখনো ভাবতেও পারি না। ভাবতে না পারলেও তাতে কী? স্বপ্ন দেখতে তো আর মানা নেই। সেই স্বপ্নটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। অবশেষে সেই স্বপ্নের জের ধরে জাতীয় দলের সঙ্গে জাতীয় দল খেলতে না পারলেও এখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ দেশের সিপ্রিয়টদের সঙ্গে খেলে কিছুটা হলেও তাদের কাঙ্কিত লক্ষ্যে পৌঁছেছে। উজ্জ্বল করেছে বাংলাদেশের নাম।

গতকাল রোববার নিকোশিয়ায় একটি স্কুলের ফুটবল স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম সাইপ্রাসের একটি
প্রীতি ম্যাচের আয়োজন করেছিল প্রবাসী বাংলাদেশি রাসেল রহমান। খেলায় অংশ নেন রাসেল রহমান, শামীম হোসাইন, জুয়েল আহমেদ, ওমর ফারুক, এনামুল হোসাইন সাইমন ও মাহাফুজুল
হক চৌধুরী। করোনাভাইরাসের কারণে প্রতি দলে ছয়জন করে খেলোয়াড় নির্ধারণ করা হয়।

ম্যাচের শুরুর দিকে সাইপ্রাস আক্রমণাত্মকভাবে বাংলাদেশের জালে একের পর এক গোল দিয়ে বসে। বিরতির পরে বাংলাদেশও তাদের ১ গোল দেয়। সাইপ্রাস ৬ এবং বাংলাদেশ ১ গোলে খেলা শেষ হয়।
খেলায় বাংলাদেশ হারলেও সাইপ্রাসের খেলোয়াড়েরা বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে এমন একটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে পেরে তারা দারুণ উচ্ছ্বসিত। ভবিষ্যতে আরও প্রীতি ম্যাচ খেলবে বলে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

খেলায় হারের ব্যাপারে আয়োজক রাসেল রহমান বলেন, ‘খেলায় হারজিত থাকবে। তা ছাড়া সাইপ্রাস কোন মানের দল তা সবাই জানে। তারা নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে, তারা প্রফেশনালি ফুটবল খেলে। আমরা বাংলাদেশি প্রবাসীরা কাজ করে তাদের সঙ্গে যে খেলতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।

খেলায় হারজিত নয়, আমি চেয়েছি খেলার মাধ্যমে সাইপ্রাসে বাংলাদেশের নামটা ছড়িয়ে দিতে। আমরাও যে ফুটবলে পিছিয়ে নেই, তা তাদেরক জানাতে চেয়েছি।’