অনলাইন ডেস্ক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি। দলটি মনে করে, গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নিলেও প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শুরু না হওয়া এবং নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের আগ্রহ পরিলক্ষিত না হওয়ায় গত এক মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমে কিছুটা অসন্তোষ ছিল দলটিতে। এ অবস্থায় দেশের ছয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্বে প্রত্যাশিত সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন ড. ইউনূস। তার এই উদ্যোগের ফলে দেশ দ্রুত নির্র্বাচনের পথে হাঁটবে বলে মনে করে দলটি।
গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. শাহদীন মালিক।
প্রধান উপদেষ্টার এ ভাষণ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, সেখান থেকে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন ফিরে পাওয়ার একটি পথদেখতে পাচ্ছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ এবং এ জন্য গঠিত কমিশনের প্রধান হিসেবে যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের যোগ্যতা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। অতএব আমরা ভালো কিছু আশা করছি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনে রদবদলে সরকারের একজন উপদেষ্টার কার্যক্রমে বিএনপির মধ্যে এখনো ক্ষোভ রয়েছে। সেই উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে দলটি।
বিএনপির এক নেতা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা যেমন সহযোগিতা করব, তেমনি কোনো ভুলত্রুটি করলে বা ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসরদের কোনোরকম সুবিধা দিলে তা নিয়েও কথা বলব। প্রয়োজনে আমরা রাজপথেও গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখাব। এ ছাড়া সংস্কারের লক্ষ্যে শুধু কমিশন গঠন করলেই চলবে না, সেই কমিশনের কাজেও গতি থাকতে হবে।
জানা গেছে, রাষ্ট্র মেরামতে দল-ঘোষিত ৩১ দফার পক্ষে জনমত গড়তে কাজ করবে বিএনপি। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে দলটি। গতকালও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি।
এ অবস্থায় আগামীকাল ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারে এবং ১৫ সেপ্টেম্বর বিশ^ গণতন্ত্র দিবসে রাজধানীতে সমাবেশ এবং ঢাকার বাইরে শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকাল সাড়ে ৩টায় সমাবেশ হবে। গত ১৪-১৫ বছরে যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে নিয়ে; যারা পঙ্গু হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের নিয়ে সমাবেশটি হবে। এতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, আবৃত্তি, কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানটি হবে বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। এ সমাবেশ হবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সমাবেশ। অর্থাৎ আমরা যে একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডের মধ্যে আছি, এখন গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য আমরা এই সমাবেশটি গুরুত্বের সঙ্গে করতে চাই। ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরের মহানগরে র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি নেতারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপে না রাখলে বা ভুলত্রুটি ধরিয়ে না দিলে ভিন্ন শক্তি সরকারকে বিরাজনীতিকরণের দিকে ধাবিত করতে পারে। এ বিষয়ে তারা সতর্ক ও সোচ্চার থাকবেন।