অনলাইন ডেস্ক : চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বনির্ধারিত সম্ভাব্য বিদেশ সফরের সব পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সফর বাস্তবায়ন করে থাকে। তাছাড়া হাইপ্রোফাইল যে কোনো ইনকামিং ভিজিট যা রাষ্ট্রীয়ভাবে ভিভিআইপি মর্যাদা পায় সেই সব সফরও রাষ্ট্রাচার অনুবিভাগ বাস্তবায়ন করে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান খুব দ্রুত হলেও সরকার প্রধান ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো সফরে না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে মহামারিকালে অনুষ্ঠেয় ভার্চুয়াল বৈঠকগুলোতে যথাসম্ভব ঢাকার প্রতিনিধিত্ব রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এবারের সামিটটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে।

এটি ভার্চুয়ালি হবে। সেই সামিটে করোনার মতো আকস্মিক এবং গোটা বিশ্বকে কাবু করা জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্যোগ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। প্রধানমন্ত্রী মূল অধিবেশনে বক্তৃতা করা ছাড়াও সাইড লাইন ইভেন্টে অংশ নেবেন। সেগুনবাগিচা এটা নিশ্চিত করেছে যে, করোনার পরিস্থিতিতে বদলে যাওয়া দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগে বাংলাদেশও খাপ খাইয়ে নিতে চায়। তা-ই ভার্চুয়াল বৈঠকগুলোতে যতটা সম্ভব ঢাকার অংশগ্রহণ এবং প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে সরকার প্রধানের নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে। প্রত্যেকটি ফোরামে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।

স্মরণ করা যায়, ভ্যাকসিন সামিট এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের কোভিড-১৯ নিয়ে আলোচনাসহ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত বহুপক্ষীয় বিভিন্ন ফোরামে প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল অংশগ্রহণ ছিল। তাছাড়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে টেলিফানে বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর আলোচনা হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীও বিভিন্ন ফোরামে অংশ নিচ্ছেন।

কীভাবে হবে জাতিসংঘ অধিবেশন: এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপিসহ বিশ্ব মিডিয়ার রিপোর্ট মতে, ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল উভয় প্রতিনিধিত্বের মিশেলে হবে আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার কারণে ইতিহাসে এই প্রথম ব্যতিক্রমী এমন অধিবশন হবে। যেখানে বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণ হবে ভার্চুয়ালি, তবে তাদের একজন প্রতিনিধি ফিজিক্যালি অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত থাকতে পারবেন। এএফপি’র রিপোর্ট মতে, জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর কাছে সভাপতি নাইজেরিয়ার তিজানি মুহাম্মাদ বন্দের পাঠানো পত্রে অধিবেশন সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত আগামী ২২ থেকে ২৯শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে, যাতে বিশ্ব নেতাদের আগে থেকে রেকর্ডকৃত ভাষণ সমপ্রচার করা হবে। মুহাম্মাদ বন্দে লিখেন, আমি ধারণা করছি, মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং সশরীরে উপস্থিতিতে ব্যাপক পরিসরে সভা আয়োজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এবং সম্ভবত এই মহামারি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেও বিভিন্ন মাত্রায় বিরাজমান থাকতে পারে। এ অবস্থায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের প্রতিনিধির (প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, কোনো মন্ত্রী বা জাতিসংঘ দূত) পূর্ব প্রচারে নিষেধাজ্ঞা সংবলিত (এম্বারগুয়েড) সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের একটি ভাষণ অধিবেশন শুরুর কমপক্ষে পাঁচদিন আগে অবশ্যই জাতিসংঘে পাঠাতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের হল মঞ্চ থেকে ভাষণ সমপ্রচার বা পাঠ করার সময় প্রত্যেক মিশনের একজন করে কূটনীতিক সরাসরি চলা অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, গত মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুঁতেরেস বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে বিশ্ব নেতাদের মিলিত হওয়া অসম্ভব হতে পারে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম কূটনৈতিক সমাবেশ। বিশ্ব নেতাদের এ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের মধ্যে আরো কয়েক শ’ সভা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এসব সভার মধ্যে অনেক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও থাকে।

স্মরণ করা যায়, ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত সংস্থাটির সাধারণ পরিষদের অধিবেশন কখনো বাতিল করা হয়নি। তবে, তা দু’বার স্থগিত করা হয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হামলার কারণে এবং আর্থিক সংকটের কারণে ১৯৬৪ সালে এটি স্থগিত ছিল, তবে পরবর্তীতে তা হয়েছে।