অনলাইন ডেস্ক : দেশে করোনার ভ্যাকসিন জানুয়ারি মাসে আমদানির আশা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই ভ্যাকসিন বা টিকা বিতরণের তৎপরতা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। ভ্যাকসিন আসলে প্রথম ধাপে কারা কারা পাবেন, তার একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশেজানুয়ারি মাসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে- এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তার আওতায় পর্যায়ক্রমে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।
প্রথম চালানের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন কারা পাচ্ছেন সে প্রশ্ন এখন জোরালো হচ্ছে। সব দেশেই ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মী এবং বয়স্করা অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন দেয়া হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। ১০ ধরনের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
প্রথমে এই তালিকা থেকে কারা কতজন পাবেন তাও নির্ধারণ প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা অচিরেই এই অগ্রাধিকার তালিকা প্রকাশ করবো।
যে ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন: মুক্তিযোদ্ধা, করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘ মেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী, গণপরিবহন কর্মী। ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরো জানান, বয়োজ্যেষ্ঠ বলতে ষাটোর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিদের বোঝানো হচ্ছে। ভ্যাকসিনের অগ্রাধিকার তালিকা ও বিতরণ পদ্ধতি নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এই পরিকল্পনায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিতরণ কৌশলও রয়েছে। তিনি বলেন, এই অগ্রাধিকারভুক্ত সবাই একবারে ভ্যাকসিন পাবেন না। কোন পর্যায়ে কত ভ্যাকসিন আসবে তার উপরে নির্ভর করছে কতজন পাবেন। তবে অগ্রাধিকারের বাইরে সাধারণ মানুষের জন্যও ভ্যাকসিন থাকবে। তারাও কীভাবে পাবেন তারও একটা নিয়ম করা হয়েছে। ভ্যাকসিন আসার আগেই এই সবকিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রথম ধাপে কারা ভ্যাকসিন পাবেন তার একটি তালিকার তথ্য দিয়েছে ডয়েচে ভেলে। এতে দেখা যায় প্রথম ধাপে মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন দুই লাখ ১০ হাজার, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন ৩ লাখ, বেসরকারি কর্মী রয়েছেন ৭ লাখ, স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন এনজিও কর্মী রয়েছেন দেড় লাখ। গণমাধ্যম কর্মী রয়েছেন ৫০ হাজার। জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৫ হাজার জন। পুলিশ বাহিনীর সদস্য দু’লাখের উপরে। ক্যানসার, যক্ষ্মা আর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী ধরা হয়েছে এক লাখ দুই হাজারের মতো। সেনাবাহিনীর জন্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ। সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধি ধরা হয়েছে ৭০ হাজার।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, আমরা ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছি। তবে তার মধ্যে জনপ্রতিনিধি ছিল বলে আমার মনে হয় না। আর আমরা ওই ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছে তাদের জন্য বলেছি। যেমন চিকিৎসক অগ্রাধিকার পাবেন। কিন্তু যে চিকিৎসক সরাসরি চিকিৎসা কাজে যুক্ত নন তিনি পাবেন না। পুলিশের কথা বলেছি। কিন্তু যে পুলিশ সদস্য সরাসরি ফিল্ডে কাজ করেন না তিনি পাবেন না। অগ্রাধিকার নীতি প্রসঙ্গে দেশের এই খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট বলেন, করোনায় এখন পর্যন্ত বৃদ্ধরা বেশি মারা গেছে। আর তারা আমাদের বাবা-চাচা। আবার যারা করোনার চিকিৎসা করেন তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এ পর্যন্ত ১০৯ জন ডাক্তার মারা গেছেন। আসল কথা হলো যাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তাদের আগে দেয়া হবে। তার মতে, বাংলাদেশে করোনার টিকার জন্য যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে, সারা বিশ্বেও একইভাবে করা হচ্ছে। আর এটা যাতে নিশ্চিত হয় তার জন্য নীতি হলো করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক বলেন, ভ্যাকসিন বিতরণের প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছি। কাজ শেষ হলেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। তবে ভ্যাকসিন বিতরণের প্ল্যান মন্ত্রণালয়ে আগে জমা দিয়েছি। প্রথমে সম্মুখ যোদ্ধারা পাবেন। এক্ষেত্রে প্রথমে সরকারি-বেসরকারি মিলে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে দেশে।