অনলাইন ডেস্ক : কানাডিয়ান যারা তাদের আয়কর (ট্যাক্স) রিটার্ন দাখিল করেন না তারা বছরের পর বছর ধরে যে কি পরিমান সরকারী আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেটা জেনে নিজেরাই হতবাক হয়ে যান। নি¤œ আয়ের মানুষের মধ্যে আর্থিক সাক্ষরতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করা অলাভজনক সংস্থা প্রসপার কানাডার সিইও এলিজাবেথ মুলহল্যান্ড এ কথা বলেছেন। মুলহল্যান্ড বলেন, তার সংস্থা আর্থিক পরিষেবা এবং সাক্ষরতা কর্মসূচী প্রদান করতে অন্যান্য স¤প্রদায়ের অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে, ট্যাক্স-ফাইলিং প্রোগ্রাম যা ওইসব কানাডিয়ানদের সাহায্য করে যারা তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারে না।

তিনি বলেন, কিছু লোক এই ধরনের পরিষেবাগুলো খুঁজছেন; তারা দেখতে পান যে তাদের হাজার হাজার ডলারের আর্থিক সুবিধা পাওনা হিসেবে জমা রয়েছে যা তারা সংগ্রহ করতে পারেননি। এই নতুন পাওয়া নগদ ক্যাশ অর্থ এবং আর্থিক পরিকল্পনা সম্পর্কে কথোপকথনের দরজা খুলতে পারে, বলেন মুলহল্যান্ড। একটি পরিবার তাদের পাওনা টাকা পাওয়ার পরে একটি কনডমিনিয়ামে ডাউন পেমেন্ট করতে সক্ষম হয়েছিল বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।

মুলহল্যান্ড বলেন, “প্রায়শই, প্রথম প্রশ্ন যেটি আসে: ‘আচ্ছা, আমি এত টাকা দিয়ে কী করব?” কানাডা হাউজিং বেনিফিটের সা¤প্রতিক টপ-আপ এবং জিএসটি ট্যাক্স ক্রেডিট অস্থায়ী দ্বিগুণ করাসহ ফেডারেল সরকার ব্যক্তিদের আয়-পরীক্ষিত সুবিধা প্রদানের জন্য কানাডা রেভিনিউ এজেন্সির (সিআরএ) উপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভর করছে।

যাইহোক, কিছু অসচেতন কানাডিয়ান অর্থপ্রদান থেকে বাদ পড়ছেন কারণ তারা তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন না। কানাডিয়ান করদাতাদের জন্য ন্যায়পাল ফ্রাঙ্কোইস বোইলিউ চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত তার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সমস্যাটি উত্থাপন করেছেন। গত মঙ্গলবার, ১৩ই ডিসেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বোইলিউ বলেছেন যে, তিনি কীভাবে এই সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে সে বিষয়ে সুপারিশ সহ সিআরএ সরবরাহ করার পরিকল্পনা করছেন।

আমরা এখনও সমস্যাটি সম্পূর্ণরূপে বোঝার চেষ্টা করছি এবং প্রকৃতপক্ষে কংক্রিট সমাধানের প্রস্তাব করছি, তাই এই বছর এ বিষয়ে কোন সুপারিশ নেই। তবে আপনি নিশ্চিত ধরতে পারেন যে এটি অন্য সময়ে হবে, বলেন বোইলিউ।

অটোয়ার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার সহযোগী অধ্যাপক জেনিফার রবসন কর ব্যবস্থায় নন-ফাইলারদের সমস্যা এবং আয়-পরীক্ষিত সুবিধা প্রদানের উপর এর প্রভাবের দিকে নজর দিচ্ছেন।

২০২০ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে কার্লেটনের স্কুল অফ পাবলিক পলিসির অধ্যাপক রবসন এবং সহ-লেখক শৌল শোয়ার্টজ দেখেছেন যে, প্রায় ১০ থেকে ১২ শতাংশ কানাডিয়ান তাদের ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করেন না। গবেষকরা অনুমান করেছেন যে, ২০১৫ সালে কর্মরত বয়সের নন-ফাইলাররা যে আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তার মোট পরিমান প্রায় ১.৭ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার।

মানুষ কেন তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয় না? এটি কিছুটা একাডেমিক রহস্য, রবসন বলছিলেন। মানুষ কেন রিটার্ন দাখিল করে না সে সম্পর্কে আমাদের এখনও ভাল কোন সম্পূর্ণ ধারণা নেই, তিনি বলেন। কেন লোকেরা রিটার্ন দাখিল করবে না; যদি এর মানে এই হয় যে, তারা আর্থিক সুবিধা ফেলে রেখে যাচ্ছে?

তার গবেষণাপত্র অনুসারে, নন-ফাইলাররা পুরুষ, তরুণ এবং অবিবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদিও তার গবেষণায় সব শ্রেণীর মানষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে এর মধ্যে নি¤œ আয়ের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যনীয় ছিলো। রবসন বলেন, লোকেরা সেই নগদ সুবিধাগুলোর মধ্যে কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন আয়ের বিষয়টি একটি বাস্তব সমস্যা। তিনি বলেন, অনেক প্রোগ্রাম যোগ্যতা যাচাই করার জন্য ট্যাক্স ফাইলিং ব্যবহার করে।

স্বল্প আয়ের লোকেদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, যারা তাদের কর জমা দেয়নি তাদের বিষয়ে, প্রসপার কানাডার মুলহল্যান্ড বলেন, ভাষাগত সমস্যা, পর্যাপ্ত জ্ঞান এমনকি সচেতনতার অভাবসহ অনেকগুলো কারণ রয়েছে এখানে। ২০১৫ সালে জাতীয় রাজস্ব মন্ত্রীর কাছে তৎকালীন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর ম্যান্ডেট চিঠিতে বলা হয়েছিল যে, সিআরএ সক্রিয়ভাবে কানাডিয়ানদের কাছে পৌঁছাতে; যারা ট্যাক্স সুবিধা পাওয়ার অধিকারী কিন্তু পাচ্ছেন না।

এটি আরও বলেছে যে, রাজস্ব সংস্থার কিছু কানাডিয়ান, বিশেষ করে যাদের আয় কম তাদের জন্য ট্যাক্স রিটার্ন সম্পূর্ণ করার জন্য কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া উচিত। সিআরএর একজন মুখপাত্র এক ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, প্রতি বছর সংস্থাটি নিম্ন আয়ের ৬ লাখের বেশি মানুষকে তাদের কর জমা দিতে সাহায্য করে। এজেন্সিটি বেনিফিট নেওয়ার বিষয়টি আরও ভালভাবে বুঝতে পরিসংখ্যান কানাডার সাথে কাজ করছে।

রবসন বলেন, নন-ফাইলারদের সমস্যা নিরসনের জন্য কোনও “রাতারাতি সমাধান” নেই, তবে একটি সূচনা বিন্দু হবে কানাডিয়ানদের জন্য সিআরএ প্রাক-সম্পূর্ণ ট্যাক্স রিটার্ন; যাদের তথ্য ইতিমধ্যে সংস্থার কাছে রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, সামাজিক সহায়তাপ্রাপ্ত ওইসব লোক যাদের বিষয়ে সিআরএ জানে যে তাদের আয় কেমন ছিল, তিনি বলছিলেন।

মুলহল্যান্ড বলেন, তিনি ফেডারেল এবং প্রাদেশিক সরকার বিভাগ এবং সংস্থাগুলোর পাশাপাশি স¤প্রদায়ের গোষ্ঠীগুলোতে আরও সমন্বয় দেখতে চান। এর মাধ্যমে ওইসব কানাডিয়ানদের কাছে পৌছানো যারা তাদের কর জমা না দেওয়ার কারণে সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সূত্র : সিবিসি নিউজ