অনলাইন ডেস্ক : রপ্তানি নিষিদ্ধ করার প্রায় দশ মাস পর ভারতের সরকার প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ৫৫০ ডলারের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের (এমইপি) শর্ত বাতিল করেছে। একই সঙ্গে গত মে মাসে পেঁয়াজের চালানের ওপর আরোপিত ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। শুক্রবার পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সংক্রান্ত শর্ত বাতিলের এই আদেশ জারি করেছে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড।
দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ রপ্তানির শর্ত বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্ষা মৌসুমের পর ঘাটতির আশঙ্কায় দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। তবে প্রতিবেশি ও বন্ধুপ্রতীম কিছু দেশের কূটনৈতিক অনুরোধের ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল ভারতের সরকার।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হন। একই সঙ্গে বিশ্ববাজারেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়ে। রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভারতের কৃষকরা। প্রায় ৬ মাস পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার পর গত মে মাসে তা তুলে নেওয়া হয়। তবে সেই সময় প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ ও রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ করা হয়।
শুক্রবার দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের শর্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে একটি নির্দেশ জারি করে।
গত কয়েক মাসে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত জুলাই মাসে দেশটির বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি দাম প্রায় ৮৮ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে গত আগস্টে দেশটির বাজারে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, গত অক্টোবরে বাসমতি চাল রপ্তানিতে বেঁধে দেওয়া প্রতি টন চালের সর্বনিম্ন মূল্য ৯৫০ ডলারের শর্তও বাতিল করা হয়েছে। শুক্রবার দেশটির বাণিজ্য বিভাগের জারি করা পৃথক এক আদেশের মাধ্যমে এই শর্ত বাতিল করা হয়। শুক্রবার জারি করা আদেশে দেশটির কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (এপিইডিএ) বাসমতি চাল রপ্তানির ‘‘যেকোনও অবাস্তব মূল্য’’ সংক্রান্ত রপ্তানি চুক্তি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।
ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ।
ডিসেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামে ধস নামলেও বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে হু হু করে। বাংলাদেশের বাজারেও পেঁয়াজের দাম সেই সময় লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়।
ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিতেও পেঁয়াজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল, বিশেষ করে ভোটের বেলায়। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ওই নির্বাচনকে ‘পেঁয়াজের নির্বাচন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং কংগ্রেসের সভানেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল নয়াদিল্লিতে সে সময়ে আসীন কংগ্রেসবিরোধী সরকার।
নির্বাচনে জয়ের পর পেঁয়াজের ওপর থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় কংগ্রেস সরকার। এতে কৃষক ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে রীতিমতো পেঁয়াজ রপ্তানির হিড়িক পড়ে যায় এবং বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য ৬ রুপি পর্যন্ত উঠেছিল, যা ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে রীতিমতো ‘রাজকীয় মূল্য’।
সূত্র: দ্য হিন্দু, রয়টার্স।