অনলাইন ডেস্ক : বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে গ্রেপ্তার না করায় দুদকের ভূমিকায় বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এস কে সুর চৌধুরী, শাহ আলম এবং বিভিন্ন আসামির ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ৬ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পি কে হালদারের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুদক কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা একই সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেন। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৬ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলম ও খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

আদালত দুদক আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এস কে সুর চৌধুরী ও শাহ আলমের বিষয়ে কি করেছেন? কেন তাদের গ্রেপ্তার করছেন না? আপনারা না পারলে বলুন। আমরা আদেশ দিবো। আদালত বলেন, এরকম ব্যক্তিদের ডেকে মেহমানদারি করতে পারেন না। অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আদালত পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে দুদক ও এসবি’র পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে এবিষয়ে দুদকের লিখিত বক্তব্য দাখিলের নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমরা দেখতে চাই, পিকে হালদারের পালানোর পেছনে কার গাফিলতি ছিল?

এদিকে পি কে হালদার পালিয়ে যাবার দিনে বেনাপোল সীমান্তে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশের ৫৯ জন সদস্যের নামের তালিকা পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। এরপর তা প্রতিবেদন আকারে পুলিশ মহাপরিদর্শক(আইজিপি) হাইকোর্টে দাখিল করেন। এই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। আইজিপির পাঠানো প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, দুদক থেকে দেওয়া চিঠি বেনাপোল সীমান্তে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমেইলযোগে পাঠানো হয়। এই চিঠি পাবার দুইঘন্টা ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড আগেই বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার। তিনি বলেন, দুদক চিঠি দেওয়ার আগে এরকম জনগুরুত্বপূর্ন বিষয়ে ফোন করতে পারতো। কিন্তু তা করেনি। ওভার ফোনে জানালেও ব্যবস্থা নিতে পারতো এসবি। তিনি বলেন, দুদক চিঠি প্রস্তুত করছে এটা হয়তো জেনে গিয়েছিল পি কে হালদার। আমরা মনে করি, পি কে হালদারের বিষয়ে দুদকে অবহেলা ছিল।

রাষ্ট্রপক্ষের এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে দুদক আইনজীবী বলেন, আমাদের কাছে ডকুমেন্টস আছে। ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর পি কে হালদারসহ ২৪ জনের বিষয়ে এসবিকে চিঠি দেওয়া হয়। এসপি সদর দপ্তর চিঠি গ্রহণ করে ২৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টায়। এই চিঠি তারা পেয়েছে কীনা সেজন্য তা ২৩ অক্টোবর বেলা ২টা ৪৩ মিনিটে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শককে (এসবি) হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানানো হয়। এরও প্রায় এক ঘন্টা পর পি কে হালদার বেনাপোল সীমান্ত পার হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে দুদকের কোনো অবহেলা নেই। আর সরকারি অন্য কোনো সংস্থাকেও দোষারোপ করছি না। তিনি বলেন, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২৮ অক্টোবর অভিযোগ এসেছে। এরআগে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। দুদক নিজ উদ্যোগেই এসবিকে তার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয়। দুদক সন্দেহ করেই পি কে হালদারের নাম তালিকায় দেয়। দুদক তার নাম দেবার পরই পি কে হালদার লাইমলাইটে এসেছে।

এসময় আদালত বলেন, এসবি লিখিতভাবে প্রতিবেদন দিয়েছে। দুদক লিখিতভাবে দিন। আমরা দেখতে চাই এখানে কার গাফিলতি রয়েছে।

গ্রেপ্তার ও তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেওয়ার পরও কিভাবে পি কে হালদার দেশত্যাগ করলো তা নিয়ে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। ওইদিন আদালত পি কে হালদার যেদিন দেশত্যাগ করেন সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের কারা দায়িত্বরত ছিলেন তাদের নামের তালিকা দাখিল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজিপিকে নির্দেশ দেন। কিন্তু পি কে হালদার বিমানবন্দর দিয়ে নয়, বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে যাওয়া বেনাপোল সীমান্তে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের তালিকা দাখিল করা হয়।

পি কে হালদার নিয়ে গতবছর ১৮ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ সুয়োমোটো আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পি কে হালদারকে নিয়ে শুনানি অব্যাহত রয়েছে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনহাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগ এখন তদন্তাধীন। এনিয়ে হাইকোর্টের একাধিক বেঞ্চে শুনানিও চলছে। এরইমধ্যে পি কে হালদারের কয়েকজন সহযোগী আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন।

হাইকোর্ট থেকে পি কে হালদার ও তার সহযোগিদের পাসপোর্ট ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ রয়েছে। এরইমধ্যে নিম্ন আদালত পি কে হালদারের নামে থাকা কয়েক হাজার একর জমি জব্দেরও নির্দেশ দিয়েছে।