সোনা কান্তি বড়ুয়া : হিন্দু মুসলমান অন্ধ সা¤প্রদায়িকতায় রক্তাক্ত পাক ভারত বিভাজন অপরাধ ছিল! রাষ্ট্র আর ধর্ম দুটো আলাদা জিনিষ। মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই কি ধর্মান্ধ হিন্দু মুসলমানদের বিভাজনের ধর্ম? রাজনীতির পিঠোপিঠি এসেছিল বিভাজন-উত্তর রাজনীতি, বিভাজনের পাশাপাশি ঘটেছিল “বিভাজনের মধ্যে বিভাজন”। হিন্দু মুসলমানদের হিংসা পুষে রাখা ভারত “ভাগ’ কথাটা এখানে রক্তে রাঙানো ১৯৪৭ সাল ১৪ আগস্ট এবং ১৫ আগস্ট! দেশভাগ’ এখানে সর্বাত্মক : দেশের ভাগ, মানচিত্রের ভাগ, আত্মা, সম্পর্ক, যোগাযোগ, এমন কি আমার লিখিত “আমি’টির ও ভাগ, পার্টিশন আমার সর্বস্ব; আমার সত্তাকেই বিভক্ত করে রেখেছে। দেশের ভাগ, মানচিত্রের ভাগ, আত্মা, সম্পর্ক, যোগাযোগ? ক্রমাগত ঐতিহাসিক হতে থাকা পাকিস্তান ভারত পার্টিশন ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থানের জন্য বিপক্ষীয় জাতিকে পৃথকীকরণ করা ও হিংসা পুষে রাখা তাদের বিরুদ্ধে। পার্টিশান-এর সর্বাত্মক কথা বলে, সব কিছু ভাগাভাগির কথা বলে। এই অর্থেই শেষ পর্যন্ত একটা তারিখ (১৪ আগস্ট-১৫ আগস্ট) হয়ে থাকে না, হয়ে ওঠে একটি প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর-প্রজন্মের বাঙালি পাঠকের কাছে পার্টিশনকে দেখা-জানা-ছোঁয়ার এখন কিন্তু প্রাসঙ্গিক সমস্যা ও বিশেষত্ব তৈরী হয়েছে যা নিয়ে নতুন কথা চালাচালি শুরু হওয়া দরকার। দেশভাগের মোট প্রজন্ম হন্তারক ঐতিহাসিকতা নিয়ে তো এই প্রজন্ম আসেনি।

ভারত তার নিজস্ব শক্তিবলে সেই সময় মুসলিম-প্রধান কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে রাখতে পারলো। তাহলে সেই শক্তিতে ভারত কি মুসলিম-প্রধান পাকিস্তান (Punjab, Sind, Beluchistan & N. W. Pradesh) এবং পূর্ব বঙ্গকে ভারতের মধ্যে UNITED STATES OF INDIA করে রাখতে পারতো না? কি দরকার ছিল UNITED ভারত ভাগের? হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টানসহ সকল মানব সন্তান মিলে আমাদের মানবজাতি। প্রতিবেশী ভারতের রাষ্ট্র প্রধান তিনজন মুসলমান হলে পাকিস্তান বাংলাদেশে একজনও হিন্দু বা সংখ্যালঘু নেতা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারছেন না কেন? স্বনামধন্য ভারতীয় লেখক টি. (তিরুমেল্লাই) এন. (নারায়ন আইয়ার) সেশন “ভারতের অধঃপতন” শীর্ষক বিখ্যাত গ্রন্থে ভারতীয় রাজনীতির চালচিত্র বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।

NATIONAL CONGRESS OF INDIA & PAKISTANI MUSLIM LEAGUE এই রাষ্ট্র ও ধর্ম এক করে ফেলছে। রাষ্ট্রের সংজ্ঞা এরা পাল্টে দিতে চাইছে, মনে হয়। সরকারের বিরোধিতার অর্থ রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। সরকারের তৈরী কোন আইনের বিরোধিতা ও রাষ্ট্রের বিরোধিতা নয়। রাষ্ট্রের সংজ্ঞাটা আমি নেতাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। রাষ্ট্রের চারটি উপাদান : ১) জনগণ। ২) ভূখণ্ড ৩) সার্বভৌমত্ব। ৪) সরকার! রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রেই এই চারটি বৈশিষ্ট্য জানেন। এই চারটি উপাদান মিলে হয় রাষ্ট্র। সরকার এই চারটি উপাদানের একটি মাত্র। শুধু সরকার অর্থ রাষ্ট্র নয়। এই সরকারের বিরোধিতা করাকেই, সরকারের তৈরী আইনের বিরোধিতা করাকেই রাষ্ট্রের বিরোধিতা বলে বলবৎ করতে চাইছে ও বলবৎ করছে। ইহা রাষ্ট্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। সরকার পাঁচ বৎসরের জন্য নির্বাচিত হয়। পাঁচ বছর পার হয়ে গেলে সরকারের পতন হয়। কিন্তু ভূখণ্ড রয়ে যায়, জনগণ রয়ে যায়, সার্বভৌমত্ব রয়ে যায়। এই তিনটি অপরিবর্তনীয়। কিন্তু সরকারের পরিবর্তন হয়।

ডিসেম্বর ১৯৪৯ খুলনা এবং ১৯৫০, ৮ই ফেব্রæয়ারি বরিশাল ও ঢাকায় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গা হবার পর এক লাখের কাছাকাছি মানুষ ভারতে চলে আসেন। এরপর আসেন ব্যবসাদার শ্রেণী। এর ফলে ৮ই এপ্রিল ১৯৫০ সালে নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি সম্পাদিত হয়। ১৯৫২ সালে পাসপোর্ট-ভিসা চালু হবার পর দু-লক্ষ এবং পরবর্তী মাসগুলোতে গড়ে ১০ হাজার করে মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে আসেন।

১৯৫৫ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় সীমান্ত পার হতে থাকেন মাসে ৩০ হাজার। ১৯৫৬ সালের থেকে মাইগ্রেসন ছাড়া ভারতে আসার অনুমতি দেওয়া হলো না। ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৬৩ শ্রীনগর হজরতবাল মসজিদ থেকে কেশ চুরি যাবার ঘটনায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে দাঙ্গা হয়। তখন বহু হিন্দুরা, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষেরা ভারতে আশ্রয় নেয়। ১৯৬৪ সালে যারা পশ্চিমবঙ্গে এলেন, তাদের জন্য কোনো ক্যাম্প খোলা হল না। রিসিভিং সেন্টার থেকে চিরকুট ধরিয়ে বিভিন্ন স্টেশন থেকে তাদের সরাসরি দণ্ডকারণ্যে পাঠানো হল। এরাই হচ্ছে সরকারের বাড়তি বোঝা এবং তথাকথিত “আপদ”। এই আপদগুলোকে মানুষ ভাবা হয়নি। তাই নানা শিবিরগুলোতে এদের জেলখানার আসামীদের চেয়েও চরম অব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছিল। ৮-১০ বছর নারকীয় ক্যাম্প জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে ফেলা হয়েছিল দণ্ডকারণ্যে।

দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ! কোন রাষ্ট্রধর্ম নয়:। ৪৭-এর দেশভাগ পরবর্তী খুন-ধর্ষণ, ছিন্নমূল মানুষদের পালানোর প্রচেষ্টা ইতিহাস, উদ্বাস্তু মানুষদের মিছিল আর শরীরী ভাষা চারিত্র্যের একেবারেই আলাদা। জঙ্গীবাদের মাফিয়াচক্রে ধর্মান্ধদের মস্তক বিক্রয় করে ধর্মের অপব্যবহারের কারণে জামায়াত এবং উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ্যবাদকে ধিক্কার! পাকিস্তান ভারত বিভাজনে সা¤প্রদায়িক যুদ্ধ শুরু হয়! বিশ্বমানবতার বাণী অহিংসা পরম ধর্ম!
মানুষ নিজের ভুবনে নিজেই সম্রাট। সেই ভুবনে বিচরণকারী অন্যান্য বাসিন্দারা পার্শ্ব চরিত্রমাত্র। ধর্মের নামে যে পশু আমাদের অন্তরে প্রবেশ করেছে সেই পশুকে মানবতার অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে মানবতার দেশ গড়ে তুলতে হবে। অহিংসার মহব্বতই মানবিক কর্মযজ্ঞ। অপেক্ষার সময় ফুরিয়ে গেছে। ভারতের মুসলমান এবং নেতাজি সুভাষ বসুর উপর কি সেই সময় সুবিচার করেছেন হিন্দি-বলয়ের নেতারা? নিপীড়িত মানবাত্মার জয়গানে মুখরিত এই চর্যাগুলো। বাঙালি সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায় : “টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত! অন্যায়কে সহ্য করা অপরাধ!

হিন্দু মুসলমান ধর্মের অপব্যবহারের কারণে জামায়াত (রাজাকার আলবদর চক্র ও তার দোসর পাক বাহিনী) এবং জাতিভেদ প্রথা মানুষ মানুষকে কাফের ও চন্ডাল বানিয়ে হত্যা করার ঘটনায় ইতিহাস রক্তাক্ত এবং ১৯৪৬ সাল থেকে বাঙালির বুকে আজও ধর্ম অপব্যবহারের বিষাদ সিন্ধু বিরাজমান। হিন্দুধর্মীয় সমাজপাঠে রাজনীতির কারণে জাতিভেদ প্রথার অভিশাপের বিরুদ্ধে গৌতমবুদ্ধের ‘পঞ্চশীল’ মানবতাবাদ (সহ পরে বৌদ্ধদের চর্যাপদ রচনা) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা “চন্ডালিকা” শীর্ষক নৃত্যনাট্যে বিশ্বমানবতার বাণী অহিংসা পরম সুধা প্রচার করেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে নিয়ে রাজনীতি করার ফলে পাকিস্তান আজ সর্বনাশের পথে চলেছে।

ভারতীয় সংবিধান বিরোধি বর্তমান ভারতের জাতিভেদ প্রথা (ব্রাহ্মণ ও দলিত বিতর্ক) এবং মনুস্মৃতি নামক হিন্দু আইন গ্রন্থের নীতিমালা। সকল ধর্মে মানুষ মানুষের আত্মীয় স্বজন। ভারত নামক রাষ্ট্রটি ভারতের জনতাকে (দলিত) নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারেনি। ধর্ম নামক ক্যান্সার বা মহামারি রোগে ভারত সরকার রোগগ্রস্থ হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কিভাবে লড়বে? ভারত মাতার দেশে আইনের শাসনে হিংস্র উচ্চবর্ণের হিন্দুরা ধর্মকে ঢাল তলোয়ারের মত ব্যবহার করছে! এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভিশাপে জাতিভেদ প্রথার কোন বিচার আজও হয়নি সমাপন। “কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)।” চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন এবং বাঙালি সমাজের এই করুণ ছবি দেখতে পাই ৩৩ নং চর্যায়। “টালত মোর ঘর নাঁহি পড়বেসী। হাড়ীতে ভাত নাঁহি নিতি আবেশী। এর মানে, নিজ টিলার উপর আমার ঘর। প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতে ভাত নাই, অথচ নিত্য ক্ষুধিত।”

মীরজাফরের সাথে ইংরাজ শাসদের চক্রান্তের মতো সেন রাজার রাষ্ট্রধর্মের মহামন্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়, Hindu Political Conspiracy to destroy Buddhism in India, এবং প্রাচীন বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন (প্রসঙ্গত : কথাশিল্পী শওকত আলীর লেখা প্রদোষে প্রাকৃত জন)।
“দলিতদেরই জীবনধারণের স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তা দেশ ও বিভাজন! বনা থেকে থেকে সমাজতত্বের বিশ্লেষণ জমতে পারে, সাহিত্য নয়। যে বদল পার্টিশনকে আর নির্মিত ঐতিহাসিকতার বোঝে না, বরং উপমহাদেশের মানবিক সঙ্কটের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সমকালের বিষয় করে তোলে। কখনো সেই বিভাজিত দেশ- সীমানা ভৌগোলিক, কখনো মানবিক, কখনো বা সামাজিকতার বিভিন্ন স্তরে সরে সরে যায়। নিয়ত স্থানাঙ্ক পরিবর্তনশীল এই বিভাজনের সীমান্তই পুরুষ নারী, ক্ষমতা-অক্ষমতা, বর্ণ-পতিত, দলিত-ব্রাহ্মণ, এপার-ওপর ইত্যাদি বিপ্রতীপতায় জায়মান থাকে আজকের সমাজে। উত্তর-প্রজন্মের দেশভাগের কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু তার চারপাশে ছড়িয়ে থাকে বাংলা উপভাষার এমন কিছু চিহ্ন যার সামাজিক পরিচয়ে মিশে থাকে উঁচু / নীচু, গৃহীত/ অগৃহীত, সম্মান/অসম্মানের স্বীকৃতি। চারপাশের সামাজিক পরিসরে ক্রমাগত সে চলে যেতে দেখছে এমন এমন ব্যক্তিত্বদের যাদের যে আশ্রয় বলে জেনেছিল। শহরের কলোনি এলাকায় তার অভিজ্ঞতার মধ্যে আসে পাড়া-মহল্লার উত্তেজক সমষ্টিবোধ- যার উত্তেজনায় সে নিজেকে সোঁপে দেয় ফুটবল-ক্রিকেট ম্যাচের আবহে। কলোনির সমষ্টিবদ্ধ জীবন তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ভোটার সময়- সে দেখে কিভাবে প্রতিদিন হাত বদল হয়ে যাচ্ছে তার উন্নয়নের মালিক। গণতন্ত্র তাকে দিয়েছে ভোটার অধিকার, সেই অধিকার ন্যূনতম মূল্যে বিক্রি করে সে হয়ে ওঠে গণতন্ত্রের বিধাতা । করাচি-ইসলামাবাদ-পশ্চিম পাঞ্জাবকে দেখতে হয়নি উত্তর-দাঙ্গা, উদ্বাস্তু মিছিল বা ধর্ষিতা নারীর লাশ।

ভারতবর্ষে পূর্ববঙ্গের বাঙালি উদ্বাস্তুদের জন্য সব থেকে বড় যে ট্রানজিট ক্যাম্প খোলা হয়েছিল তা তখনকার সময়ের মধ্যপ্রদেশের রায়পুর জেলার “মানা ক্যাম্প”। তার আশেপাশে মানার অন্তর্ভুক্ত আরও কতগুলি ক্যাম্প খোলা হয়েছিল, যেমন- ট্রানজিট ক্যাম্প। এই সমস্ত ক্যাম্পগুলি খোলা হয়েছিল মুরাম বিছানো মরুর বুকে মরুর বুকে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা ময়দানে। দুরন্ত তাপদাহে যে লাল কালো লৌহ সদৃশ্য মুরাম খনিতে কোনো উদ্ভিত জন্মাতে সাহস করে না, সেই নিষ্ঠুর বন্ধ্যা জমিতে অসংখ্য তাঁবু ফেলে শস্য-শ্যামল সোনার বাংলার মানুষগুলিকে এনে ছেড়ে দিয়েছিল তৎকালীন সরকারী প্রশাসকরা।

পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তুদের ভাগ্য নিয়ন্তাগণ যেভাবে ভাগ্য নির্ধারণ করেছিলেন, তার মধ্যে দুর্ভাগ্যের অশনি সংকেত পেয়ে ক্যাম্পগুলিতে উঠেছিল প্রবলভাবে প্রতিবাদের ঝড়। এই প্রতিবাদে সমস্ত ক্যাম্পের মানুষগুলি সমস্বরে বলে পিঠে “আমরা বাংলা মায়ের সন্তান। আমাদেরকে আমাদের মাতৃক্রোড়ে বঙ্গভূমিতে পুনর্বাসন দেওয়া হোক।” এই দাবিতে সমস্ত উদ্বাস্তুদের নিয়ে গড়ে ওঠে “উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতি” এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রী সতীশ মণ্ডল, শ্রী রঙ্গলাল গোলদার, শ্রী রাইচরণ বারুই, শ্রী অরবিন্দ মিস্ত্রী, প্রমুখ ব্যক্তিগণ। তখনকার সময় কর্তা ছিলেন কর্নেল নন্দী সাহেব। সমিতির পক্ষ থেকে নন্দী সাহেবের কাছে বঙ্গভূমিতে পুনর্বাসনের আবেদনপত্র দাখিল করা হয়। শুরু হয় বিশাল বিশাল মিছিল, অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট, আমরণ অনশন।

দণ্ডকারণ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরী হয়েছিল উড়িষ্যার কোরাপুট জেলা ও মাধ্যপ্রদেশের (বর্তমান ছত্রিশগড়) বস্তার জেলার ২৫০০০ বর্গমাইল অবহেলিত বন নিয়ে ১২ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ সালে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্বাস্তুদের এনে প্রথম পুনর্বাসন দেওয়া হয় বস্তার জেলার ফরাসগাঁও অঞ্চলে তিনটি গ্রামে ১৯৫৮ সালে। এখানে কৃষি জমিতে দেওয়া হয় ১০৫টি পরিবার ও ক্ষুদ্রশিল্পে ৪৫টি পরিবার। দ্বিতীয় পত্তন হয় উড়িষ্যার কোরাপুট জেলার উমরকোট অঞ্চলে। ১৪টি গ্রামে ১২৪০টি পরিবার বসানো হয়। রায়পুর অঞ্চলে বসানো হয় ২৪টি গ্রামে ১৫৪৫টি পরিবার। তৃতীয় পাখানজোড় জন্যে বসানো হয় ৪৫টি গ্রামে ২২৩৯টি পরিবার। সবশেষে পত্তন হয় মালকানগিরির ২৩টি গ্রামে ১০২৩টি পরিবার। এখানের এই জোনটি ছিল পরিকল্পনাহীন।

বাম রাজনীতির শিকার!
উদ্বাস্তু উন্নয়নশীল সমিতির পক্ষ থেকে সতীশবাবু চিঠিপত্রের মাধ্যমে সমস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের উদ্বাস্তুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করেছিল। ১৯৭৮ সালের জানুযারী মাসে বামফ্রন্ট সরকারের রাষ্ট্রমন্ত্রী রাম চ্যাটার্জী ও পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড বøকের সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ বহিঃবাংলার উদ্বাস্তু পুনর্বাসন কেন্দ্রে যথা মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুর, মধ্যপ্রদেশের পারুলকোট, অন্ধ্রপ্রদেশের কাগজনগর, উড়িষ্যার উমরকোট, মালকানগিরিতে গিয়ে বিভিন্ন জনসভায় ভাষণ দিয়ে বলেন, “কংগ্রেস সরকার আপনাদের দণ্ডকারণ্যে এনে পুনর্বাসিনের নামে যে নির্বাসন দিয়েছে, এটা আমরা স্বচক্ষে দেখলাম। আপনাদের এই অবর্ণনীয় দঃখদুর্দশা সত্যিই দেখা বা সহ্য করা যায় না।
বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনে দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগণ ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। ভারতীয় রাষ্ট্রীয় পতাকা এবং প্রতীক অশোক চক্রে (ধর্মচক্র) পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধের দর্শন (প্রতীত্যসমূৎপাদবা সমগ্র কার্যকারণ প্রবাহ) বিরাজমান!

স্বাধীন ভারতে হিন্দু ধর্মের নামে সা¤প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি দিন ৮ জন দলিত নারী ধর্ষিত হন। অবশ্যই এই সংখ্যা বাস্তবে আরও অনেক বেশি, কারণ অনেক দলিত মেয়ের ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় না। বাংলা ভাগ রহস্য (দিলীপ গায়েন)! ভারত তার নিজস্ব শক্তিবলে সেই সময় মুসলিম-প্রধান কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে রাখতে পারলো। তাহলে সেই শক্তিতে ভারত কি মুসলিম-প্রধান পূর্ব বঙ্গকে ভারতের মধ্যে রাখতে পারতো না? কি দরকার ছিল বাংলা ভাগের? সমগ্র বাংলা যদি দুটো ভাগে ভাগ করে ভারতের দুই অঙ্গ রাজ্য স্বরূপ রাখা যেত তাহলে প্রায় ২০০ জন বাঙালী এমপি দিল্লিতে যেতে পারতেন। দ্বিতীয়ত বাংলা ভাষাই হত সর্বাধিক জনগণের ভাষা। হয়তো রাষ্ট্র ভাষার দাবিদার হতে পারতো। আজ সি এ এ ইত্যাদি যেসব কাণ্ড চলছে, ডিটেনশন ক্যাম্প ইত্যাদি, এসব সমস্যার তো সৃষ্টি হত না।

অহিংসা মানুষের ধর্ম এবং হিংসা জাতিভেদ বৈদিক ব্রাহ্মণ্যসংস্কৃতি প্রথার পশুর ধর্ম। জাতিভেদ প্রথা ভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্ম মানবাধিকারকে ধ্বংস করা অমানবিক অপরাধ বলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায়, “গোত্র দেবতা গর্তে পুরিয়া, / এশিয়া মিলাল শাক্যমুনি (গৌতমবুদ্ধ)।” হিন্দু মুসলমান ধর্মের অপব্যবহারের কারনে জামায়াত (রাজাকার আলবদর চক্র ও তার দোসর পাক বাহিনী) এবং জাতিভেদ প্রথা মানুষ মানুষকে কাফের ও চন্ডাল বানিয়ে হত্যা করার ঘটনায় ইতিহাস রক্তাক্ত এবং ১৯৪৬ সাল থেকে বাঙালির বুকে আজ ও ধর্ম অপব্যবহারের বিষাদ সিন্ধু বিরাজমান।

মূলত বাঙালীদের সর্বনাশ করার জন্যই তো বাংলা ভাগ ও সি এ এ ইত্যাদি করা হচ্ছে। এর ফলে হিন্দি-ভাষীদের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বিষয়টি এখনকার পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা না বুঝলে তাদের মাথায় টুপি পরাবে হিন্দি-বলয়ের কুচক্রীরা। সমগ্র বিষয় ভাবা দরকার। বাংলা বিপন্ন। বাঙালী বিপন্ন। নেতাজি সুভাষ বসুর উপর কি সেই সময় সুবিচার করেছেন হিন্দি-বলয়ের নেতারা? হায় অধম বাঙালী। কবে বুঝবে এসব রহস্য? যোগেন মণ্ডলের উপরও কি সুবিচার করেছেন ওই হিন্দি বলয় ও ব্রাহ্মণ্যবাদী নেতারা?

বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!