নঈম নিজাম : লেখালেখিটাই করছি। আর তো কিছু করছি না। করোনাকালে অনেক আপনজন সতর্ক করলেন। বললেন, আপনারা কয়েকজন বেশি স্পষ্ট কথা বলছেন, লিখছেন ব্যাংক লুটেরা আর স্বাস্থ্য খাতের মাফিয়াদের বিরুদ্ধে। এভাবে বলতে নেই। এভাবে লিখতে নেই। ব্যাংকিং খাত ও স্বাস্থ্য খাতের লুটেরারা অনেক বেশি শক্তিশালী। ওরা গভীর জলে চলে। চারদিকে বিশাল নেটওয়ার্ক। হয়রানি করার চেষ্টা করবে অনেকভাবে। পরিকল্পনাও নিচ্ছে। জবাবে বললাম, সমুদ্রে রেখেছি পা, শিশিরে কি ভয়। জানি লুটেরারা ভয়ঙ্কর। তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করবেই। মামলা খেয়েছি ৪০টির বেশি। জামিন নিয়েছি ঢাকা ও বাইরের জেলায় গিয়ে। আরও অনেক ধরনের হুমকি আর হয়রানি মোকাবিলা করেই আজকের অবস্থানে। এখন হয়তো নতুনভাবে নতুন কায়দায় কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। করুক। ক্ষমতাসীন দলটির জন্য দুঃসময়ে আমাদের কিছুটা হলেও ভূমিকা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লুটেরাদের জন্য দেশটি স্বাধীন করেননি। এই করোনাকালে আমার মৃত্যু হতে পারত। মৃত্যুর পর কী জবাব দিতাম আল্লাহর কাছে? লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি, বলব। করোনায় মারা গেলে আল্লাহর কাছে ওদের নামে বলতাম। করোনাকে জয় করে প্রার্থনা করছি, ব্যাংকিং খাত ও স্বাস্থ্য খাতের লুটেরাদের কাছ থেকে যেন রক্ষা করেন দেশের সাধারণ মানুষকে। হয়রানির ভয়ে লেখালেখি বন্ধ হবে না। নিজের অবস্থান বদল হবে না। মানব না লুটেরাদের কর্মকান্ড।

ছোট্ট একটা জীবন। মৃত্যুর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। এবার মৃত্যু জীবনের পাশ দিয়ে ঘুরে গেছে। কড়া নেড়ে জানিয়ে গেছে পাশেই আছি। চলে আসতে পারি আবার। তাই হয়রানির চিন্তা করে লাভ কী? এই পেশাটা চ্যালেঞ্জের। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো কাজ করছি। কিছু অপ্রিয় সত্য উচ্চারণ না করলে তো কিছুই থাকে না। করোনা রোগী হিসেবে অনেক কিছু সামনে এসেছে। দুঃখ-কষ্ট বেদনার কঠিনতম সময় অতিক্রম করছি। চিকিৎসা নিয়ে হাহাকার দেখেছি। নিজের কাছে অসহায় মনে হয়েছে নিজেকে। বাস্তবতায় সামনে এসেছে দুটি জোনে আমাদের বাস। একটি ভিআইপি, আরেকটি ডেথ। ভিআইপি জোনের লোকদের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা নেই। তারা চাইলেই চিকিৎসা তাদের কাছে চলে যায়। প্রয়োজনে বিশেষ বিমান ভাড়া করে লন্ডন যাওয়া যায়। আর জীবন-মৃত্যুর মাঝে থাকা ডেথ জোনের বাসিন্দারা বুঝতে পারছে, অসুস্থ হলে কোনো উপায় নেই। হাসপাতালে গেলে ভর্তির সুযোগ নেই। আর কোনোভাবে কুর্মিটোলা, মুগদা, কুয়েত-মৈত্রীতে পেলেও চিকিৎসা পাবেন গ্যারান্টি নেই। আইসিইউ সংকট। অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপন হয়নি ঠিকভাবে। ঢাকা মেডিকেলের অবস্থা ভয়াবহ। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাপক রোগী থাকে ঢাকা মেডিকেলে। কিন্তু এখন কতজন আছেন? যারা আছেন, তারা পুরো সময়টা কাটান উৎকণ্ঠায়। ঢাকার বাইরের চিকিৎসা নিয়ে আলাপ করছি না। ৪৭ জেলা সদরে আইসিইউ নেই। আমাদের চিকিৎসা সেবার দীর্ঘদিনের কঠিন চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এসব দেখে কি কথা বলব না?

কেন এমন অবস্থা হলো? স্বাধীনতার এত বছরে আমরা কী করেছি? উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জেলা সদর হাসপাতালে ২৫টি আইসিইউ, ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনে কয় টাকা লাগে? এখনকার বাজারের হিসাবে ৫০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনে আনুষঙ্গিক সবসহ ঠিকাদারের লাভসহ ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লাগবে। ২৫টি আইসিইউতে লাগতে পারে ১০ থেকে ১২ কোটি। টাকা পয়সা কম বেশি হতে পারে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলোতে ইসিজি, এক্স-রেসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপনের সামর্থ্য অবশ্যই আমাদের আছে। দরকার শুধু স্বপ্ন নিয়ে দৃঢ় চিন্তার মানুষের। সেই মানুষই নেই মন্ত্রণালয়গুলো ও অধিদফতরে। ভাবা যায় চট্টগ্রামে এত নেতা, এত বড় লোক তবুও তাদের হাসপাতালে আইসিইউ সংকট। এই সংকট দূর করা কি অসম্ভব? ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া কম সময়ে হাসপাতাল করে দেখিয়ে দিলেন সবাইকে। চাইলেই কাজ করা যায়। আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সব সময় চলে না। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিলেই হবে না। কাজ করার জন্য দক্ষ মানুষ লাগবে। সেই মানুষটা নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে দুঃসময়ের ছাত্রলীগ নেতা ডা. আবুল হাসনাত মিল্টন যতই আক্ষেপ করুন, বাস্তবতা কঠিন। স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর অবস্থার সমাধানের অনেক পথ খোলা আছে। নাবিককে হতে হবে বাস্তবমুখী মানুষ। দক্ষতা আর সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। নির্ভিকভাবে মানুষকে রাখতে হবে মাথায়। সংকীর্ণ চিন্তাগুলো বাদ দিতে হবে। কথায় কথায় সবাইকে হয়রানির চিন্তা বাদ দিতে হবে। উচ্চ মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে বদলে যাবে অনেক কিছু। এর আগেও বলেছি, এখনো বলছি মন্ত্রী সাহেবদের চিকিৎসা জেলা সদর হাসপাতালে করতে হবে। এমপি সাহেবের চিকিৎসা হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর সচিবসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চিকিৎসা সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে। এতে সব ঠিক হয়ে যাবে তা বলছি না। তবে অনেক পরিবর্তন আসবে। সবাই নিজের গরজেই কাজ করবেন। ঠিক রাখার চেষ্টা করবেন নিজের চিকিৎসার জায়গাটাকে। বেসরকারি হাসপাতাল নিয়েও ভাবতে হবে। সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে করোনার সীমিত চিকিৎসা সবাইকে দিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো তা মানছে না। মনিটরিং করে ব্যবস্থা নিতে হবে। মূল চিকিৎসা সেবার আওতায় আনতে হবে সবাইকে। ব্যবসা তারা করেছে, করুক। শুধু ছোট ক্লিনিকগুলো নয়, পাঁচতারা হাসপাতালগুলো কী করছে তা দেখতে হবে। আর্তমানবতার সেবার কোনো বিকল্প নেই।
বুঝতে হবে মানুষের হৃদয়ে ক্ষরণ চলছে। এখন কে ব্যাংকিং খাতের লুটেরাদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে হয়রানির চিন্তা করলে হবে না। ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্য খাতের লুটেরাদের ধরুন। মনে রাখুন, লোভ-লালসা সবখানে সর্বনাশ করে দিচ্ছে। এখন টাকা থাকলে স্ত্রীসহ এমপি হওয়া যায়। তিনি মীর কাশিম আলীর পার্টনার হলেও সমস্যা নেই। টাকা আর ক্ষমতার জোরে সব কিছু করা যায়। কাউকে হয়রানি করতেও সমস্যা নেই। ক্ষমতার জোরে মানুষদের অনেক চিন্তা না করলেও চলে। এই কঠিনতম সময়ে তারা অসুস্থ হলে এই হাসপাতাল মিলবে। আইসিইউ পাওয়া যাবে। অক্সিজেনের সমস্যা হবে না। নিরীহ রেড জোনের মানুষ সব বুঝে ফেলেছেন। আর বুঝছেন বলেই সমস্যা হচ্ছে। তারা সমাধান চান সব কিছুর। স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা দেখতে চায়। ব্যাংকিং খাতের লুট বন্ধ চায়। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণস্বাস্থ্যের ডা. বিজনের কিট চায়। পিপিই, মাস্ক কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চায়। আচ্ছা বলুন তো ডা. ফেরদৌসকে নিয়ে এত টানাটানির কী দরকার ছিল। লোকটা স্বাভাবিকভাবে এলে কী করতেন? ২/৩টি টিভিতে স্বাস্থ্য নিয়ে পরামর্শ, নিজের সঙ্গে আনা পিপিই-মাস্ক বিতরণ করা ছাড়া কাজ কী থাকত? দু-একটি মিডিয়াতে তার মাস্ক বিতরণের খবর থাকত। তাতে কী মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? কিছুই হতো না। বরং সবাই দেখত আমাদের চিকিৎসকরা যা বলেছেন তিনিও তা বলছেন। এন্টিবডি সার্টিফিকেট থাকার পরও বিমানবন্দর থেকে আইসোলেশনে নেওয়া, সঙ্গে আনা মাস্ক-পিপিই আটকে দিয়ে অকারণে বিতর্ক তৈরির দরকার ছিল না।

দরকার না থাকলেও এখন অনেক কিছু হয়। টানা ক্ষমতায় থাকলে একটা অহংকার চলে আসে। বাংলাদেশ এখন সেই অহংকারের নদীতে ভাসছে। এই করোনাকাল অনেক কিছু দেখছি। নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করছি। অসুস্থ থাকার সময় নিজের মনেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল যদি মারা যাই আমার লাশটা কোথায় দাফন হবে? প্রিয়জনরা দেখতেও পারবে না শেষবারের মতো। পরিবারের ওপর আস্থা ছিল, নাঙ্গলকোটের মানুষের প্রতিও। তারা হয়তো সীমিত পরিসরে জানাজা করে বাবার পাশে নিয়ে দাফন করতেন। অথবা এই শহরে কোনো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নিয়ে যেত আমাকে। এই জীবন বড় ঠুনকো। পৃথিবী বদলে গেছে। করোনাকালে হিংসা-বিদ্বেষ নয়, মানবতা ফিরিয়ে আনুন। অপরের মতকে বন্ধ করার কুটকৌশল নয়, জীবনকে জাগিয়ে তুলুন।

ভাবুন তো কোথায় ছিলাম আমরা? আর এখন কোথায় যাচ্ছি? বৈশি^ক মহামারী আমাদের শেষ করে দিচ্ছে। এই কঠিনতম সময়ে প্রার্থনা করছি, কেউ যাতে অসুস্থ না হন। করোনা নয়, কোনো রোগেই যেন আক্রান্ত না হন। কোথাও চিকিৎসা নেই। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। কঠিন বাস্তবতা নিয়ে এবার সব কিছু মোকাবিলা করছি। পরিবারের সেবা, ভালোবাসা দেশ-বিদেশের প্রিয়জনদের দোয়াতে পেয়েছি নতুন জীবন। শেষ পর্যন্ত রিপোর্ট নেগেটিভ। এর জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আমার সর্বশেষ গত সপ্তাহের লেখাতে করোনা কীভাবে জয় করেছি লিখেছি। মনোবলটা চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছি প্রথম দিন থেকে। ভেঙে পড়িনি। অধিকাংশ মানুষই মারা যাচ্ছেন ভয় এবং আতঙ্কে। সেই আতঙ্ক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছি।

আক্রান্তের ১৪ দিনের দিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহকে ফোন দিলাম। তিনি জানতে চাইলেন কী অবস্থা শরীরের? রিপোর্ট পেয়েছেন কী? বললাম, ১৪ দিন শেষে সবার রিপোর্ট আসে করোনা নেগেটিভ। আমার এলো পজিটিভ। আমার প্রতি করোনার এত ভালোবাসার কারণ কী? তিনি বললেন, মন ভাঙার কিছু নেই। এটা হতে পারে। ১৪ দিন শেষে করোনার মৃত কোষগুলো আপনার শরীরে থাকলে পজিটিভ দেখায় পরীক্ষায়। এতে সমস্যার কিছু নেই। তিন দিন পর টেস্ট করলে নেগেটিভ রিপোর্ট পাবেন। এ নিয়ে ভাবনার দরকার নেই। আরও সাতদিন রুমে থাকুন। ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করুন। আপনার কাছ থেকে এখন আর রোগ ছড়াবে না। তবুও ঘরে থাকা ভালো। চুপ হয়ে গেলাম কিছুক্ষণ। শাশুড়ির মৃত্যুর পর ফরিদার মন খারাপ। এ খবর তাকে আরও কষ্ট দিতে পারে। বিষয়টি জেনে ফরিদা ও আমার সন্তানরা সাহস জোগালেন। সবাই বলল, আবদুল্লাহ সাহেব ঠিক বলেছেন। তোমার একটা বিশ্রাম দরকার ছিল। এ কারণে প্রকৃতি দীর্ঘ ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। রুমে বসে ছুটি কাটাও। বই পড়। ফোনে ফোনে অফিস করলে আপত্তি নেই। শুরু হলো নতুন করে আবার লড়াই? আবার রুমবন্দী জীবন? শরীরে কোনো লক্ষণ নেই। শ্বাসকষ্ট নেই। জ্বর-ব্যথা কোনোটাই নেই। উপসর্গের কিছুই নেই। তবুও কেন? এভারকেয়ারের ডা. তানিয়া বললেন, আবদুল্লাহ স্যার ঠিক বলেছেন। সমস্যা নেই। চাইলে আপনি বের হতে পারেন মাস্ক পরে। ডা. সিয়াম ছোট ভাইয়ের মতো। দীর্ঘদিন থেকে জানি। সেও ফোন করে বলল, ভাই আপনি ঠিক হয়ে গেছেন। চিন্তার সময় প্রথম ১০ দিন। তারপর কারও ১৪ দিন। কারও ১৯-২০ দিন লাগে। খাওয়া-দাওয়া করেন ঠিকভাবে।

ভাঙা মন নিয়ে প্রথম দিন ফোন বন্ধ রাখলাম। কারও সঙ্গে আর কথা বললাম না। ফরিদা ইয়াসমিন ও পরিবারের সদস্যরা আরও কঠিনভাবে পাশে দাঁড়াল। তারা বলল, সব টেনশন শেষ। এখন শুধু সময় পার করা। নিজের মাঝেও আবার প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি জেগে উঠল। ডাক্তার নতুন করে কোনো ওষুধ দেননি। জিংক আর ভিটামিন সি খেতে শুরু করি। ফরিদা ইয়াসমিন খাবার বাড়ালেন। মাংস-মাছসহ প্রোটিন বাড়ালেন। লেবু, কমলা ও মাল্টার শরবত, দুধ-চিনি ছাড়া লেবু, আদা, মসলার গরম চা বাড়ালেন। গার্গল আর গরম পানি পান বাড়ালাম। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের ফোন ধরা শুরু করি। গলার স্বর শুনে সবাই বলত ভালো হয়ে গেছেন। নিঃসঙ্গতা কাটাতে বই পড়া, সিনেমা দেখা বাড়িয়ে দিলাম। সকালে ব্যায়াম শুরু করি। ১০ জুন বুধবার পরীক্ষায় রিপোর্ট এলো নেগেটিভ। পুরো টেনশন ফ্রি হলাম আমি ও আমার পরিবার। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও আরও কিছু দিন বাসায় থাকব। তারপর আবার কর্মব্যস্ততা।

করোনা মুক্তি নিয়ে সর্বশেষ লেখায় বিস্তারিত ছিল। কীভাবে জয় করেছি তাও বলেছি। আজ হোক কাল হোক সব পরিবারে সর্দি-কাশির মতো করোনাভাইরাসও ছড়াতে পারে। এই কারণে রোগীকে দূরে সরাবেন না। নিরাপদ অবস্থানে থাকবেন। পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে পাশে থাকবেন। করোনা মোকাবিলায় দরকার পারিবারিক বন্ধন। রোগীকে ঠিকভাবে বাসায় সংযুক্ত বাথরুমসহ আলাদা রুমে রেখে যত্ন করলে ঠিক হয়ে যাবে। শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালে নিতে হবে। আমার জ¦র ভাব আসার পরই আলাদা রুমে চলে গিয়েছিলাম। এই কারণে পরিবারের কারও ছড়ায়নি। আপনারাও তাই করুন। রুমের সামনে ছোট্ট টেবিল রেখে খাবার দিতে হবে। মাস্ক পরে সেই খাবার আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়ে নেবেন। এতে অন্য কারও ভয়ের কিছু নেই। আর আশপাশের বাসা দূরে থাক নিজের বাসায়ও কারও হবে না। অহেতুক ভয় তৈরি করেই সমস্যা বাড়ে। আমার রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার পর স্কয়ারের একজন ডাক্তার আমার হাত থেকে ফোন নিলেন। সেই ফোনে তিনি অধ্যাপক আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বললেন। পরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করলেন। বললাম, আমি পজিটিভ। তিনি বললেন, তাতে সমস্যা কী? আমি তো হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিয়েছি।

আক্রান্তের পর ফোনে চিকিৎসকরা জানতে চেয়েছিলেন, অন্য কোনো অসুখ আছে কিনা। বিশেষ করে অ্যাজমা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনি ও ফুসফুসের কোনো সমস্যা। বললাম, কোনোটাই নেই। চিকিৎসকরা স্বস্তি পেলেন। বললেন, অন্য অসুখ থাকলেই সমস্যা। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে সমস্যা বাড়ে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি করে আতঙ্ক। অনেকে মারা যায় আতঙ্কে হৃদরোগে। ভীতিকর প্রচারণা করোনায় মৃত্যুর হার বাড়িয়েছে। আক্রান্তের খবর শুনে অনেকে ঘাবড়ে যান। মনোবল হারিয়ে নতুন অসুখ বাধিয়ে বসেন। সব কিছু সামাল দিতে পারেন না।

সব শেষে ধন্যবাদ এভারকেয়ারের জামিল সাহেবকে। সবগুলো টেস্টের বিশেষ ব্যবস্থা করার জন্য। কৃতজ্ঞতা সবার কাছে যারা খোঁজ নিয়েছেন উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেছেন।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।