মোস্তফা কাজল : আগামী বছরের পবিত্র হজ পালনে কমছে সময়, বাড়ছে খরচ। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে চলতি বছর সীমিত পরিসরে পবিত্র হজ পালিত হয়েছে। কেবল সৌদি আরবে বসবাসরত প্রায় এক হাজার মুসল্লি এ সুযোগ পান। সারা বিশ্বের লাখ লাখ মুসল্লির মতো বাংলাদেশেরও ৬৪ হাজারের বেশি হজযাত্রী নিবন্ধন করেও শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। তবে ২০২০ সালের নিবন্ধনকারীরা আগামী বছর (২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য) হজ পালনে অগ্রাধিকার পাবেন। গতকাল সৌদি সরকারের ওমরা এবং হজ বিষয়ক উপমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিনতে গালফ নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ২০২১ সালের হজ পালনে এক মাসের স্থলে ১২ থেকে ১৫ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ হতে পারে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, আবাসনের ক্ষেত্রে এক কক্ষে চারজনের স্থলে দুজন থাকার নির্দেশনা আসছে। ফলে ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে। এ ছাড়া ৭২ ঘণ্টা আগের করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে যারা হজ পালনের জন্য টাকা জমা দিয়েছিলেন সরকার তাদের টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ দিলেও অনেকে তুলে নেননি। সরকারি-বেসরকারি
ব্যবস্থাপনায় ৬৪ হাজারেরও বেশি নিবন্ধনকারীর মধ্যে মাত্র দেড় হাজার মুসল্লি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে টাকা তুলে নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন অথবা গুরুতর অসুস্থ। অর্থাত টাকা জমা দানকারীদের ৯৮ শতাংশ মুসল্লি হজের টাকা ফেরতের আবেদন করেননি। এরই মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, যারা টাকা উত্তোলন করেননি তারা আগামী বছর হজ পালনে অগ্রাধিকার পাবেন। আর টাকা উত্তোলনকারীরা আগামী বছর হজে যেতে চাইলে নতুন করে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। সারা বছর ধরে চলবে এই রেজিস্ট্রেশন। ২০২১ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য প্রাকনিবন্ধন কার্যক্রম সারা বছর চালু থাকবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। আগামী বছর হজে যাওয়ার জন্য নতুন-পুরনো মিলিয়ে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৬২ হাজার ৩২০ জন প্রাকনিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৩৬০ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬০ জন। ঢাকার হজ অফিস পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজারসহ মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা নির্ধারিত ছিল। প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ প্রাকনিবন্ধন করেন। প্রাকনিবন্ধনের দুই মাস পার না হতেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে হজ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ভাটা পড়ে রেজিস্ট্রেশনে।
পবিত্র ওমরাহ শুরুর আগেই নতুন নিয়ম ও শর্ত : প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ওমরাহ কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব সরকার। চার ধাপে পুরোপুরি ওমরাহ কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানিয়েছে দেশটির ওমরাহ ও হজ মন্ত্রণালয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৪ অক্টোবর সৌদিতে অবস্থানকারী স্থানীয় ও প্রবাসীরা পবিত্র ওমরাহ শুরু করতে যাচ্ছেন। কিন্তু ওমরাহ শুরু না হতেই আবারও নতুন কিছু শর্ত ও নিয়ম আরোপ করেছেন সৌদি হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ। হারামাইন ডটইনফো তথ্যগুলো গতকাল তুলে ধরেছে। নতুন শর্ত ও নিয়ম অনুযায়ী শুধু ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষকে ওমরাহ করতে দেওয়া হবে। ওমরাহ আবেদনের পর মাসজিদুল হারামে প্রবেশের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বিনামূল্যে ওমরাহ পারমিট জারি করা হবে। আবেদনের আলোকে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ওমরাহ পালনকারীদের জন্য আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা করবে। ওমরাহ পালনকারীদের জন্য আবাসিক হোটেলগুলোয় আইসোলেশনের ব্যবস্থা থাকবে; যাতে কোনো লক্ষণ বা সমস্যা দেখা দিলেই ওমরাহ পালনকারীরা আইসোলেশন সুবিধা পেতে পারেন। অনুমোদিত অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করতে সমস্যা হলে ওমরাহ ও মাসজিদুল হারামে প্রবেশের জন্য অনুমতিলাভে বিকল্প ব্যবস্থাও থাকবে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় ১২টি গ্রুপ ওমরাহ পালন করতে পারবে। ওমরাহ পালনের জন্য ৩ ঘণ্টা সময়ের অনুমতি দেওয়া হবে। থাকবে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ব্যবস্থা। এ ছাড়া মাসজিদুল হারামে প্রবেশের ১৫ মিনিট আগে নির্ধারিত চেক পয়েন্টে যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে হবে।
বহির্বিশ্বের দেশগুলোর ক্ষেত্রে : বহির্বিশ্বের মানুষকে ঝুঁকিমুক্ত ওমরাহ পালনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত আরোপ করবে মন্ত্রণালয়। বহির্বিশ্বের লোকদের জন্য ওমরাহ পালনের বিশেষ ব্যবস্থা রাখবে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়।