অনলাইন ডেস্ক : আগামী ১১ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, প্রতিবারের মত কানাডা এবং অধিকাংশ কমনওয়েলথ দেশে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় পালিত হবে রিমেম্ব্রান্স ডে। বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর মানুষ দুটো ভয়ংকর বিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখি হন। প্রথমটি শুরু হয় ১৯১৪ সালে এবং শেষ হয় ১৯১৮ সালে। আমাদের কাছে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত সেই যুদ্ধে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশই অক্ষ শক্তি এবং মিত্র শক্তি নামে দুই শক্তি বলয়ের হয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে প্রায় বিশ মিলিয়ন মানুষ নিহত হন এবং আর বিশ মিলিয়ন মানুষ আহত হন। অধিকাংশ যুদ্ধের মত অতি তুচ্ছ কারণেই প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। চার বছরের যুদ্ধের ফলে যে ধ্বংসযজ্ঞ মানুষের সামনে সংঘটিত হয়, সেখান থেকে মুক্তি পেতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়া অক্ষ শক্তিকে পরাজয় বরণ করে নিতে হয়। পরাজয় বরণ আর চার বছরের যুদ্ধ থামানোর স্বাক্ষরটা হয়েছিল ১৯১৮ সালের ১১তম মাস অর্থাৎ নভেম্বর মাসের ১১ তারিখের সকাল ১১টায়। তাঁর পরের বছর অর্থাৎ ১৯১৯ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখের সকাল ১১টায় গ্রেট ব্রিটেনের সেই সময়ের রাজা পঞ্চম জর্জ বাকিংহাম প্রাসাদে যুদ্ধে নিহত ও আহতের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করেন। সেই থেকে পৃথিবীর অনেক দেশে বিশেষ করে অধিকাংশ কমনওয়েলথ দেশে নভেম্বর মাসের ১১ তারিখের সকাল ১১টায় যুদ্ধে নিহত ও আহত যোদ্ধাদের স্মরণ করা হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কানাডার মূল ভূখণ্ডে সংঘটিত না হলেও মিত্র শক্তির হয়ে কানাডার সেনারা যুদ্ধ করে মূলত ইউরোপ ভূখণ্ডে। ষাট হাজারের বেশি কানাডার সৈন্য সেই যুদ্ধে নিহত হন। সেই সময়ে কানাডার জনসংখ্যা ছিল প্রায় আট মিলিয়ন। কানাডায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধসহ অন্যান্য যুদ্ধে নিহত এবং ত্যাগী সৈন্যদের স্মরণে প্রতি বছর ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ সম্মানের সাথে এই দিনটি পালন করা হয়।
প্রতি বছর ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল ভবনে রিমাম্ব্রেন্স ডে’তে পতাকা উত্তোলিত করার সাথে সাথে দ্য রয়্যাল কানাডিয়ান লিজিয়ন এর পক্ষ থেকে থাকে বিভিন্ন কর্মসুচী। এ বছরে পতাকা উত্তোলিত করা হবে কি না, এবং সেটা কেমনভাবে করা হবে, সেটা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ব্রিটিশ কলম্বিয়ার কামলুপ্সসহ কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের বিভিন্ন জায়গার বন্ধ হয়ে যাওয়া ইন্ডিয়ান আবাসিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের গণকবর আবিষ্কারের পর, সেই সব হতভাগ্য আদিবাসী শিশুদের সম্মানে গত ৩০শে মে থেকে সব সরকারি ভবনের পতাকা অর্ধনিমিত রাখা হয়েছে। সেই সময় কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, পতাকা অর্ধনিমিতের বিষয়টি আদিবাসী নেতৃবৃন্দ যতদিন চাইবেন, সেটা ততদিন থাকবে। তবে, আশা করা হচ্ছে, প্রতিবারের মত এবারও ১১ই নভেম্বর যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন যুদ্ধে প্রাণ হারানো কানাডার সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পতাকা উত্তোলিত করা হবে এবং স্মৃতি সৌধে ফুল দেওয়া থেকে শুরু করে প্রাক্তন সৈন্যদের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
রিমেম্ব্রান্স ডে হচ্ছে, সব ত্যাগী সন্তানদের রক্ত গাঁথা এক দিন, যে দিন গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করা হয় পৃথিবীর শান্তি রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গকৃত প্রাণদের। এই প্রাণজ মানব সন্তানরা নিজেদের সর্বস্ব ত্যাগ করতে সামান্যটুকু কুণ্ঠিত হননি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী গড়তে। তাঁদের শরীরের লাল রক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের মাটির সাথে মিশে আবার রক্ত রাঙা পপি ফুল হয়ে দুলে দুলে উঠে মাঠের পর সব মাঠে।