অনলাইন ডেস্ক : শুরুতেই নষ্ট হলো সুযোগ। পরের কিছু আক্রমণও হলো না ঠিকঠাক। হবে, হচ্ছে করেও হচ্ছিল না গোল। অবশেষে বিরতির আগে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চিড় ধরাতে পারলেন রিপা ও শামসুন্নাহার। প্রতিশোধের মিশনে নামা নেপালকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা উৎসবে মাতল বাংলাদেশ।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ফাইনালে ৩-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। একটি করে গোল শাহেদা আক্তার রিপা, শামসুন্নাহার (জুনিয়র) ও উন্নতি খাতুনের।
সব মিলিয়ে তিন জয় ও এক ড্রয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো গোলাম রব্বানী ছোটনের দল। রাউন্ড রবিন লিগে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু করেছিল মেয়েরা; শেষটাও করল তাদেরকে হতাশায় ডুবিয়ে।
গত বছর সেপ্টেম্বরে দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে বাংলাদেশ। এবার সেই নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো হওয়া অনূর্ধ্ব-২০ বয়সীদের আসরেও বাজিমাত করল মেয়েরা।
চোট কাটিয়ে মাহফুজা খাতুন ও সোহাগী কিসকু একাদশে ফেরায় দলের শক্তি বাড়ে। আগের দিন বাংলাদেশ কোচও দিয়েছিলেন আক্রমণাত্মক ফুটবলের বার্তা। মেয়েরা শুরুটাও করে সেভাবে।
দ্বিতীয় মিনিটে সুযোগও মিলে যায়, কিন্তু ভেস্তে যায় তাড়াহুড়োর কারণে। সতীর্থের লং পাসের পেছনে ছুটছিলেন শামসুন্নাহার। বাংলাদেশ অধিনায়ক বল পাওয়ার আগে পোস্ট ছেড়ে নেপাল গোলরক্ষক ক্লিয়ার করেন। কিন্তু বল চলে যায় আকলিমার পায়ে; ফাঁকা পোস্ট পেয়েও উড়িয়ে মারেন এই ফরোয়ার্ড।
শুরুর ওই মিসের পর উল্লেখ করার মতো আক্রমণ শাণাতে পারছিল না বাংলাদেশ। রক্ষণ জমাট রেখে খেলা নেপাল মাঝেমধ্যে পাল্টা আক্রমণ করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। সপ্তদশ মিনিটে শামসুন্নহারের পাস ধরে রিপা বক্সে আড়াআড়ি পাস বাড়ান, আকলিমার শট গোলরক্ষক আটকানোর পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গ্লাভসে জমান।
৩৬তম মিনিটে উল্লেখযোগ্য প্রথম আক্রমণ করে নেপাল। বাঁ দিক থেকে মমতা পুনের আড়াআড়ি ক্রস ধরে শরীরটা ঘুরিয়ে নেওয়া আমিশা কারকির শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে যায়।
এরপর আক্রমণে জোর বাড়ায় বাংলাদেশ, কিন্তু গোলের দেখা মিলছিল না। শামসুন্নাহারের বক্সে বাড়ানো লম্বা ক্রস গোলরক্ষক প্রথম প্রচেষ্টায় ক্লিয়ার করতে না পারলেও সেখানে শট নেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। মাহফুজার থ্রু পাস ধরে রিপার শট দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়; আকলিমা ও শামসুন্নাহার কেউ ছুটে গিয়ে পাননি বলের নাগাল।
অবশেষে ৪২তম মিনিটে রিপার দারুণ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়া আকলিমাকে আটকালেও নেপালের ডিফেন্ডার কুমারি তামাং দুর্বল শটে বল তুলে দেন রিপার পায়ে। ফাঁকা পোস্টে বল জালে জড়ান এই ফরোয়ার্ড। আসরে এটি রিপার দ্বিতীয় গোল।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করার আনন্দে মেতে ওঠে গ্যালারি। রিপার লম্বা ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি নেপালের দুই ডিফেন্ডার। ফাঁকায় বল পেয়ে কিছুটা এগিয়ে নিখুঁত শটে গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন শামসুন্নাহার; সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়ও শীর্ষে উঠলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক (৫টি)।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে বলের নিয়ন্ত্রণে বেশি মনোযোগী হয় বাংলাদেশ। ৫৬তম মিনিটে সতীর্থের লম্বা পাস ধরে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বেরিয়ে গোলরক্ষকের চার্জে পড়ে যাওয়ার আগে শট নেন শামসুন্নাহার; কিন্তু বল যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। এরপর রিপা ও শামসুন্নাহারের দূরপাল্লার শট যায় বাইরে।
৭৯তম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট নিতে দেরি করে ফেলেন শামসুন্নাহার, নষ্ট হয় ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ। পরের মিনিটে নেপালের আমিশার নিচু শট ঝাঁপিয়ে এক হাত বাড়িয়ে আটকে বাংলাদেশকে জয়ের পথে রাখেন গোলকিপার রুপনা চাকমা।
দুই গোলে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশের যা একটু দোটানা ছিল, তার অবসানও হয়ে যায় ৮৭তম মিনিটে। বক্সের একটু উপর থেকে রিপার নেওয়া ফ্রি কিকে দূরের পোস্টে থাকা উন্নতি পা ছোঁয়ালে বল জালে জড়ায়। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় এই গোলে। চলতি টুর্নামেন্টে এই প্রথম গোল পেলেন উন্নতি।