অনলাইন ডেস্ক : সৌদি আরব ও অন্যান্য আরবদেশ রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৌদি ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন গোটা অঞ্চল গাজার বাসিন্দাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। কিছু ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘রসিকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম এই ধারণার কথা তুলেছিলেন।

আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত রবিবার বলেন, নেতানিয়াহুর এই ধারণা ‘অগ্রহণযোগ্য ও বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন’। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা ‘শুধু অলীক কল্পনা বা বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়’।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ইস্যুর গুরুত্ব পুরো আরববিশ্বের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

তারা বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে গাজায় যে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে করা এই ধরনের বক্তব্যকে সৌদি আরব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’

এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে যে নিন্দা, আপত্তি ও সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো প্রকাশ করেছে, সৌদি আরব তা স্বাগত জানায়।’

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার ডানপন্থী ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়াকভ বারডুগো সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এ সময় তিনি ভুল করে বলেন, সৌদি আরবের অবস্থান হলো ‘সৌদি রাষ্ট্র ছাড়া কোনো অগ্রগতি হবে না’।

নেতানিয়াহু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংশোধন করে বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র?’ এরপর মজা করে যোগ করেন, ‘যদি না আপনি চান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৌদি আরবে হোক। ওদের (সৌদি আরবের) তো প্রচুর জমি আছে।’

বারডুগো উত্তরে বলেন, ‘আমি এটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছি না।’

এরপর নেতানিয়াহু তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন, যার মাধ্যমে কয়েকটি আরবদেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের এই প্রক্রিয়াকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজা ও পশ্চিম তীরের বাইরে একটি রাষ্ট্র গঠনের ইঙ্গিত আঞ্চলিকভাবে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। কাতার, মিসর এবং ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘বর্ণবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকার’ রয়েছে, যা ইসরায়েলের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘নিন্দনীয় ও উসকানিমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং একে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।

ফিলিস্তিনিদের কাছে গাজা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের যেকোনো প্রচেষ্টা তাদের জন্য ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল, যা আরববিশ্ব ‘নাকবা’ নামে অভিহিত করে।

সৌদি আরব এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই চরমপন্থী, দখলদার মানসিকতা ফিলিস্তিনি ভূমির প্রকৃত তাৎপর্য বোঝে না। এই মানসিকতা মনে করে না যে ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কারণ তারা গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে মানবতা বা ন্যূনতম নৈতিক অনুভূতিও নেই।’

সূত্র : এএফপি